‘গোল্ডেন ডোম’ তৈরি করছে যুক্তরাষ্ট্র, কাজ পেতে পারে মাস্কের প্রতিষ্ঠান
Published: 17th, April 2025 GMT
শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষায় তৎপর দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতায় বসার পর ইতিমধ্যেই ‘গোল্ডেন ডোম’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ঢাল তৈরির জন্য নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন তিনি। এই কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সসহ আরও দুটি প্রতিষ্ঠান। ভিন্ন ছয়টি সূত্র রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্রগুলোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী স্পেসএক্স বাদে বাকি দুটি প্রতিষ্ঠান হলো সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘প্যালান্টিয়ার’ ও ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘অ্যান্ডুরিল’। তিনটি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারাই ট্রাম্পের বড় রাজনৈতিক সমর্থক। তাঁদের মধ্যে ইলন মাস্ক গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে বিপুল পরিমাণ অর্থসহায়তা দিয়েছেন। তিনি বর্তমানে ট্রাম্পের বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
স্পেসএক্সের গোল্ডেন ডোমের কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছে। তারপরও কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে যে এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া এখনো শুরুর দিকে রয়েছে। প্রতিরক্ষাব্যবস্থাটির কাঠামো শেষ পর্যন্ত কেমন হবে এবং এটি তৈরির কাজে কাকে নির্বাচন করা হবে, তা আগামী মাসগুলোয় নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হতে পারে।
নিজেদের পরিকল্পনা তুলে ধরতে বিগত সপ্তাহগুলোয় ট্রাম্প প্রশাসন ও পেন্টাগনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তিন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। সূত্র জানিয়েছে, গোল্ডেন ডোম প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র ও সেগুলোর গতিবিধি শনাক্ত করার জন্য ৪০০ থেকে ১ হাজারের বেশি স্যাটেলাইট তৈরি করে পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠানো হতে পারে।
এ ছাড়া গোল্ডেন ডোমের আওতায় হামলা চালানোর জন্য আলাদা ২০০টি স্যাটেলাইটের বহর কক্ষপথে পাঠানো হতে পারে। স্যাটেলাইটগুলোয় ক্ষেপণাস্ত্র বা লেজার মোতায়েন থাকবে বলে জানিয়েছে তিনটি সূত্র। তবে স্যাটেলাইটে অস্ত্র মোতায়েনের কাজের সঙ্গে স্পেসএক্সকে যুক্ত করা হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গোল্ডেন ডোমের কাজ পাওয়া নিয়ে স্পেসএক্স, প্যালান্টিয়ার, অ্যান্ডুরিল ও হোয়াইট হাউসের কাছে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করেনি তারা। রয়টার্সকে বিস্তারিত কিছু জানায়নি পেন্টাগনও। শুধু বলেছে যে নির্বাহী আদেশ ও হোয়াইট হাউসের নীতিমালা মেনে তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তালিকা মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে দেবে। সেখান থেকে কাদের বেছে নেওয়া হবে, সে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্ট।
উল্লেখ্য, ইসরায়েলের তৈরি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আয়রন ডোম। অত্যাধুনিক এ ব্যবস্থা দিয়ে দেশটি হাজার হাজার রকেট আকাশেই ধ্বংস করে দেয়। ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বারবার ইসরায়েলের আয়রন ডোমৈর মতো একটিআকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নির্মাণ করার কথা বলেছিলেন।
গোল্ডেন ডোমের ‘গ্রাহক হবে’ সরকার
সূত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সরকারকে দেওয়া স্পেসএক্সের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, তারা গোল্ডেন ডোম তৈরির পর তা ব্যবহারের জন্য মার্কিন সরকারকে এর গ্রাহক হতে হবে। অর্থাৎ, অর্থ দিয়ে এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থার সুবিধা নিতে পারবে সরকার। তবে এতে করে গোল্ডন ডোম নির্মাণ ও মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে সরকার।
গ্রাহকভিত্তিক গোল্ডেন ডোম প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীলতা নিয়ে পেন্টাগনের কয়েকজন কর্মকর্তা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছে দুটি সূত্র। এ ধরনের বিশাল ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় এ ধরনের নির্ভরশীলতা অস্বাভাবিক বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তারা।
গোল্ডেন ডোমের আংশিক মালিকানা বা পরিচালনার দায়িত্ব স্পেসএক্সকে দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা করছেন মার্কিন মহাকাশ বাহিনীর জেনালের মাইকেল গুয়েটলাইন। এ ছাড়া অন্য বিকল্পের কথাও ভাবা হচ্ছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্র সরকারই এর মালিকানা ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে অথবা সরকার এর মালিকানায় থাকবে আর পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে অন্য প্রতিষ্ঠানকে।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে প্রতিরক্ষাব্যবস্থাটি তৈরির জন্য পেন্টাগনের কাছে ১৮০টির বেশি প্রতিষ্ঠান আগ্রহের কথা জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে এপিরাস, উরসা মেজর, আর্মাডার ইত্যাদি। সূত্র জানিয়েছে, কিছু প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে নিজেদের সক্ষমতা হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের কাছে তুলে ধরেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স য ট ল ইট স প সএক স কর মকর ত র র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হই হই অবস্থা, প্রস্তুতি না নেওয়া আত্মঘাতী
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশেরও প্রস্তুতি নিয়ে রাখা দরকার বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘এমন বিশ্বে আমরা বাস করি, প্রতিনিয়ত যুদ্ধের হুমকি আমাদের ঘিরে থাকে। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হই হই অবস্থার মধ্যে রয়ে গেছে। সকালের খবরে দেখলাম, হয়তো গুজব, যে আজকেই শুরু হয়ে যাবে যুদ্ধ। প্রস্তুতি না নেওয়াটা আত্মঘাতী। আধাআধি প্রস্তুতির কোনো জায়গা নাই।’
গতকাল বুধবার রাজধানীর বীরউত্তম এ কে খন্দকার ঘাঁটিতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অনুশীলন পর্যবেক্ষণ অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা। খবর বিবিসি বাংলা ও বাসসের।
নিজেকে ‘যুদ্ধবিরোধী মানুষ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে যুদ্ধ হোক– এটা আমরা কামনা করি না।’ যুদ্ধের প্রস্তুতি অনেক সময় যুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়– এ রকম ধারণার বিষয়ে ঘোরতর আপত্তির কথা জানান ড. ইউনূস।
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রতি যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত আধুনিক বিমানবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
দেশপ্রেম ও পেশাদারিত্ব আগামী দিনের নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার মূল ভিত্তি উল্লেখ করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বিমানবাহিনীর সব সদস্যের প্রতি যুগোপযোগী ক্ষমতা ও দক্ষতা অর্জন এবং পেশাগত ও কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতি অব্যাহত মনোযোগ বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আমরা একটা নিরাপদ, উন্নত ও শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’
তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার, রাডার সংযোজনের জন্য বিমানবাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবে সরকার।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বের দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদস্যরা নিয়মিতভাবে বহুমাত্রিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও অনুশীলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জ্ঞান-দক্ষতাকে যুগোপযোগী করতে সদা সচেষ্ট রয়েছেন।’
তিনি দেশের বিমানবন্দরগুলোর সুষ্ঠু পরিচালনা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বিমানবাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।
মহড়া কেবল একটি সাময়িক অনুশীলনই নয় উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এটি আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিমানবাহিনীর পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার পরিচয় বহন করে। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী সময়োপযোগী পরিকল্পনা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কার্যকর আকাশ প্রতিরক্ষার পাশাপাশি বিস্তীর্ণ সমুদ্র এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
এর আগে বিমানঘাঁটিতে এসে পৌঁছলে প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান। অনুষ্ঠানস্থলে বিমানবাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল তাঁকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর বিতরণ প্রধান উপদেষ্টার
গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ আবাসন প্রকল্পে নির্মিত ঘর বিতরণ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। গতকাল সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি গত বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে এসব ঘর বিতরণ করেন।
ওই বন্যায় অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম। অসংখ্য বাড়িঘর সম্পূর্ণরূপে ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নির্মাণের সামর্থ্য নেই, এ রকম তিনশ পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ঘর পুনর্নির্মাণ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ফেনীতে ১১০টি, নোয়াখালীতে ৯০টি, কুমিল্লায় ৭০টি ও চট্টগ্রামে ৩০টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। দুটি কক্ষ, কমন স্পেস, শৌচাগার, রান্নাঘরসহ বারান্দা রয়েছে। ৪৯২ বর্গফুট আয়তনের ঘরে ৭ লাখ ২৫ হাজার ৬৯৪ টাকা এবং ৫০০ বর্গফুটের ঘরে প্রাক্কলিত ব্যয় ৭ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৮ টাকা বরাদ্দ করা হয়। সেনাবাহিনী ঘরগুলো নির্মাণ করেছে।
অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান বক্তব্য দেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত করার নির্দেশ
চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত ও বিশ্বমানের সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ নির্দেশ দেন তিনি। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক হয়।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বন্দর ব্যবস্থাপনায় এমন অপারেটরদের সম্পৃক্ত করতে হবে, যাতে এগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে।
বৈঠকে বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ‘দেশের নৌবন্দরগুলোর বর্তমান হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি বছরে ১ দশমিক ৩৭ মিলিয়ন ইউনিট, যা সঠিক পরিকল্পনা ও কর্মপন্থার মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে ৭ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন ইউনিটে উন্নীত করা সম্ভব।’