হালদায় ডুবলেন মঞ্জু সঙ্গে পরিবারের স্বপ্নও
Published: 17th, April 2025 GMT
মনের মানুষ মিনা আকতারকে ২০ মার্চ বিয়ে করেছিলেন নুর উদ্দিন মঞ্জু। এ জন্যই ফিরেছিলেন প্রবাস থেকে। নববধূকে বাড়িতে উঠিয়ে আনা হলেও রমজানের মধ্যে বৌভাতের অনুষ্ঠান হয়নি। অসমাপ্ত সেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় মঙ্গলবার। পরদিন বুধবার সন্ধ্যায় এক দুর্ঘটনায় নতুন জীবনের সমাপ্তি টেনেছেন মঞ্জু।
এদিন বন্ধু তাজুদ্দিনের সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে মঞ্জু ফিরছিলেন ফটিকছড়ির সুন্দরপুর ইউনিয়নের পাঁচ পুকুরিয়া চাঁদেরঘোনা গ্রামের বাড়িতে। পথে সিদ্ধাশ্রম ঘাট এলাকায় নির্মিত বাঁশের সাঁকো থেকে দু’জনই মোটরসাইকেল নিয়ে পড়ে যান হালদা নদীতে। চার ঘণ্টা তল্লাশির পর রাত সোয়া ২টার দিকে পাওয়া যায় মঞ্জুর মরদেহ। এ সংবাদে পুরো বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে যায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এলাকায় গিয়ে জানা যায়, পাঁচপুকুরিয়া চাঁদেরঘোনা গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের একমাত্র ছেলে ছিলেন নুর উদ্দিন মঞ্জু। তাঁর বোন আছে তিনটি। সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে এইচএসসি পাসের পর তিনি পাড়ি জমান সংযুক্ত আরব আমিরাতে। সর্বশেষ দেশে ফেরেন জানুয়ারি মাসে। ১ মে কর্মস্থলের উদ্দেশে ফেরার কথা ছিল তাঁর।
নাজিরহাট পৌরসভার দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা মিনা আক্তারের সঙ্গে ২০ মার্চ পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় মঞ্জুর। রোজার জন্য বৌভাত আয়োজন করা হয়নি। মঙ্গলবার সেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় মহাধুমধামে। মঞ্জুর বন্ধু সাহেদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘মঞ্জুবন্ধু তাজুদ্দিনের সঙ্গে সাঁকো পার হচ্ছিল। হঠাৎই তারা মোটরসাইকেল নিয়ে পড়ে যায়। তাজুদ্দিন কোনোমতে সাঁতরে কিনারে উঠতে পারলেও মঞ্জু স্রোতের টানে হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর গভীর রাতে ওর লাশটা পেলাম।’
ছেলের শোকে পাগলপ্রায় মা আবু তারা বেগম। কখনও জ্ঞান হারাচ্ছেন, কখনও তাকিয়ে থাকছেন শূন্য দৃষ্টিতে; কখনও বুক চাপড়ে বিলাপ করছেন, ‘আমার বুকের মানিককে কেড়ে নেওয়ার আগে আল্লাহ কেন আমার মরণ দিল না!’ তাঁর পাশে স্বামীর শোকে পাথরপ্রায় নববধূ মিনা আকতার। হাতে মেহেদির রং এখনও টাটকা তাঁর। অবিরাম বিলাপের সুরে নিজ ভাগ্যকে দোষারোপ করছেন মিনা।
প্রতিবেশী সোহেলের ভাষ্য, ‘ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে সবেমাত্র ঘর বেঁধেছিলেন মঞ্জু। তাঁর এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে শত শত মানুষ হালদাতীরে আহাজারি শুরু করেন।’
নিকটাত্মীয় লোকমানের ভাষ্য, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন মঞ্জু। তিন বোন ও নববধূর ভবিষ্যৎ এখন ঘোর অন্ধকারে পড়েছে। এই মৃত্যু শুধু একটা পরিবারের শোক নয়, এটি গ্রামের মানুষের মনেও গভীর ক্ষত হয়ে থাকবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত
বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ।
সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।
আরো পড়ুন:
একা বাস করতে পারে যে পাখি
কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?
সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।
তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না।
এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।
বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস।
তিনি জানেন, প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে। বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।
সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন।
একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।
সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।
চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।
গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা/লিপি