মনের মানুষ মিনা আকতারকে ২০ মার্চ বিয়ে করেছিলেন নুর উদ্দিন মঞ্জু। এ জন্যই ফিরেছিলেন প্রবাস থেকে। নববধূকে বাড়িতে উঠিয়ে আনা হলেও রমজানের মধ্যে বৌভাতের অনুষ্ঠান হয়নি। অসমাপ্ত সেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় মঙ্গলবার। পরদিন বুধবার সন্ধ্যায় এক দুর্ঘটনায় নতুন জীবনের সমাপ্তি টেনেছেন মঞ্জু। 
এদিন বন্ধু তাজুদ্দিনের সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে মঞ্জু ফিরছিলেন ফটিকছড়ির সুন্দরপুর ইউনিয়নের পাঁচ পুকুরিয়া চাঁদেরঘোনা গ্রামের বাড়িতে। পথে সিদ্ধাশ্রম ঘাট এলাকায় নির্মিত বাঁশের সাঁকো থেকে দু’জনই মোটরসাইকেল নিয়ে পড়ে যান হালদা নদীতে। চার ঘণ্টা তল্লাশির পর রাত সোয়া ২টার দিকে পাওয়া যায় মঞ্জুর মরদেহ। এ সংবাদে পুরো বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে যায়। 
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এলাকায় গিয়ে জানা যায়, পাঁচপুকুরিয়া চাঁদেরঘোনা গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের একমাত্র ছেলে ছিলেন নুর উদ্দিন মঞ্জু। তাঁর বোন আছে তিনটি। সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে এইচএসসি পাসের পর তিনি পাড়ি জমান সংযুক্ত আরব আমিরাতে। সর্বশেষ দেশে ফেরেন জানুয়ারি মাসে। ১ মে কর্মস্থলের উদ্দেশে ফেরার কথা ছিল তাঁর। 
নাজিরহাট পৌরসভার দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা মিনা আক্তারের সঙ্গে ২০ মার্চ পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় মঞ্জুর। রোজার জন্য বৌভাত আয়োজন করা হয়নি। মঙ্গলবার সেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় মহাধুমধামে। মঞ্জুর বন্ধু সাহেদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘মঞ্জুবন্ধু তাজুদ্দিনের সঙ্গে সাঁকো পার হচ্ছিল। হঠাৎই তারা মোটরসাইকেল নিয়ে পড়ে যায়। তাজুদ্দিন কোনোমতে সাঁতরে কিনারে উঠতে পারলেও মঞ্জু স্রোতের টানে হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর গভীর রাতে ওর লাশটা পেলাম।’
ছেলের শোকে পাগলপ্রায় মা আবু তারা বেগম। কখনও জ্ঞান হারাচ্ছেন, কখনও তাকিয়ে থাকছেন শূন্য দৃষ্টিতে; কখনও বুক চাপড়ে বিলাপ করছেন, ‘আমার বুকের মানিককে কেড়ে নেওয়ার আগে আল্লাহ কেন আমার মরণ দিল না!’ তাঁর পাশে স্বামীর শোকে পাথরপ্রায় নববধূ মিনা আকতার। হাতে মেহেদির রং এখনও টাটকা তাঁর। অবিরাম বিলাপের সুরে নিজ ভাগ্যকে দোষারোপ করছেন মিনা।
প্রতিবেশী সোহেলের ভাষ্য, ‘ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে সবেমাত্র ঘর বেঁধেছিলেন মঞ্জু। তাঁর এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে শত শত মানুষ হালদাতীরে আহাজারি শুরু করেন।’
নিকটাত্মীয় লোকমানের ভাষ্য, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন মঞ্জু। তিন বোন ও নববধূর ভবিষ্যৎ এখন ঘোর অন্ধকারে পড়েছে। এই মৃত্যু শুধু একটা পরিবারের শোক নয়, এটি গ্রামের মানুষের মনেও গভীর ক্ষত হয়ে থাকবে। 
 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, পাহাড়ে ভূমিধসের শঙ্কা

আজ শ্রাবণের ১৬ তারিখ। প্রকৃতির নিয়মে এ মাসে বৃষ্টি বেশি ঝরে। আজও ঢাকার আকাশ মেঘলা। বুধবার রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনও ঝুম বৃষ্টি কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি। তবে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উপকূলীয় ও পাহাড়ি এলাকায় অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রয়েছে ভূমিধসের ঝুঁকি।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের ঝুঁকি রয়েছে।

আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অতিভারী বৃষ্টির কারণে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কিছু এলাকায় সাময়িক জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়াসহ বাস, রিকশা ও সাধারণ চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে।

বঙ্গোপসাগরে উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। নদী ও সমুদ্রবন্দর এলাকায় অবস্থানরত নৌযানগুলোকে সাবধানতার সঙ্গে চলাচলের নির্দেশ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সারা দেশে আজ দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে, রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।

শুক্রবার ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, এবং রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।

শনিবারও সারা দেশে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে অধিকাংশ এলাকায় এবং অন্যান্য বিভাগে অনেক জায়গায় দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিনের ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

রবিবার রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগে অনেক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও হতে পারে অতি ভারী বৃষ্টিপাত।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বর্ধিত পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী পাঁচ দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। 

গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজার ৬৮ মিলিমিটার। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সৈয়দপুরে ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, পাহাড়ে ভূমিধসের শঙ্কা