কিশোরগঞ্জের ভৈরবের মৌটুপি গ্রামের কর্তাবাড়ি ও সরকারবাড়ির বিরোধের জেরে সংঘর্ষে টেঁটাবিদ্ধ হয়ে মিজান মিয়া (৪০) নামের এক স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নিহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার দুপুরে পাশের ভবানীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

নিহত মিজান উপজেলার ভবানীপুর সুলায়মানপুর গ্রামের মৃত রবিউল মিয়ার ছেলে। তিনি উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব ছিলেন। তিনি সরকারবাড়ির পক্ষের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের ভৈরব ও কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘটনাস্থলে আছেন ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার ফুয়াদ রুহানী। তিনি বলেন, সরকারবাড়ি ও কর্তাবাড়ি—দুই বংশের অনুসারী ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন গ্রামে। দুটি বংশের বিরাজমান সংঘাত নিয়ন্ত্রণে আনতে না আনতেই দুই বাড়ির অনুসারীরা নিজেদের গ্রামে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছেন। আজ ভবানীপুরের সংঘর্ষ কর্তাবাড়ি ও সরকারবাড়ির মধ্যকার সংঘর্ষের ধারাবাহিকতা। এ অবস্থার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা না করা গেলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়তে পারে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মৌটুপি গ্রামের অবস্থান উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ৫৬ বছর ধরে গ্রামটির কর্তাবাড়ি ও সরকারবাড়ির লোকজনের মধ্যে বিরোধ চলছে। বর্তমানে কর্তাবাড়ির নেতৃত্বে আছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও সাদেকপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন। সরকারবাড়ির নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান শেফায়েত উল্লাহ সরকার। গত পাঁচ দশকে বংশ দুটির বিরোধে দুই পক্ষের অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন। মামলা হয়েছে শতাধিক। সংঘর্ষ ছাড়া বছর পার হয়েছে—এমন বছর মনে করতে পারেন না গ্রামবাসী। দুই বংশের বিরোধের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পাশের গ্রামগুলোতেও। ওই গ্রামগুলোর বাসিন্দারা কোনো না কোনো পক্ষের হয়ে সংঘর্ষে অংশ নেন। এ পর্যন্ত দুই বংশের বিরোধের জেরে লাগোয়া কয়েকটি গ্রামে একাধিকবার সংঘর্ষ হয়েছে।

আরও পড়ুনদুই বংশের ৫৬ বছরের বিরোধ মেটাতে ‘শান্তি কমিটি’ গঠনের পরও সংঘর্ষ, আহত ৩০১৫ এপ্রিল ২০২৫

গত মঙ্গলবার কর্তাবাড়ি ও সরকারবাড়ির সংঘর্ষের জেরে বৃহস্পতিবার পাশের ভবানীপুর গ্রামে সংঘর্ষ হয়। গ্রামটির মইদর বংশের লোকজন সরকারবাড়ি ও বুদর বংশের লোকজন কর্তাবাড়ির পক্ষ নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। মীমাংসার জন্য আজ সকালে ভবানীপুরের চকবাজারে সালিস বসে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সালিসে দুই পক্ষের মধ্যে কথা–কাটাকাটি থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে মিজান টেঁটাবিদ্ধ হন। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

আরও পড়ুনভৈরবে দুই বংশের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত৩১ অক্টোবর ২০২৪

এলাকাবাসী জানান, গত বছরের ঈদুল আজহার আগের দিন ফুটবল খেলা নিয়ে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে আহত কর্তাবাড়ির নাদিম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ওই ঘটনার সূত্র ধরে কয়েক দিন পর সংঘর্ষে সরকারবাড়ির ইকবাল হোসেন নামের একজন মারা যান। দুই বাড়ির দুজন খুন হওয়ার পর এক পক্ষ আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে। দুই মামলার আসামিরা দীর্ঘদিন গ্রামের বাইরে অবস্থান করছিলেন। কয়েক মাস আগে উভয় পক্ষ জামিন পায়। জামিন পাওয়ার পর সরকারবাড়ির লোকজন গ্রামে ফিরে এলেও কর্তাবাড়ির লোকজন ফিরতে পারছিলেন না। দুই সপ্তাহ আগে কয়েক গ্রামের লোকজন দলবদ্ধ হয়ে দুই বংশের লোকদের নিয়ে গ্রামে শান্তি কমিটি করেন। উদ্দেশ্য, দুই বংশের মধ্যে যাতে আবার সংঘর্ষ না হয়। এরপর কর্তাবাড়ির লোকজন গ্রামে ফিরতে শুরু করেন। গ্রামে ফেরা নিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে উভয় পক্ষ দা-বল্লম নিয়ে আবার সংঘর্ষে জড়ায়।

আরও পড়ুনভৈরবে আবার কর্তাবাড়ি ও সরকারবাড়ির মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ২৫১৩ নভেম্বর ২০২৪

কর্তাবাড়ির নেতৃত্বে থাকা তোফাজ্জল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মৌটুপি গ্রামের শান্তি শেষ। চেষ্টা করলে করতে পারে, পুলিশ কিংবা মানুষের পক্ষে আর শান্তি ফিরাইয়া আনা সম্ভব না। আল্লাহর সরাসরি হাত লাগব। আল্লাহর হস্তক্ষেপ আর কুদরত ছাড়া শান্তি কমিটির পক্ষে শান্তি ফিরিয়ে আনা অসম্ভব।’

সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর সরকারবাড়ির নেতৃত্বে থাকা ইউপি চেয়ারম্যান শেফায়েত উল্লাহ এলাকাছাড়া। তাঁকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি। শেফায়েত উল্লাহর অবর্তমানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আল আমিন। তিনি বলেন, ‘নিজ গ্রাম থেকে শান্তি তাড়াইয়া শান্ত হয় নাই কর্তাবাড়ির লোকজন। এখন ভিন্ন গ্রামে খেলা শুরু করছে। এর শেষ কোথায় কারও জানা নাই।’

ভৈরবে বংশবিরোধ: রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধে প্রশাসনের পদক্ষেপ চাই.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ড় র ল কজন কর ত ব ড় র র কর ত ব ড় র স ঘর ষ ন উপজ ল অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ শুরু হচ্ছে শনিবার মধ্যরাতে

তিন মাস দুই দিন পর কাপ্তাই হ্রদে শুরু হচ্ছে মৎস্য আহরণ। শনিবার (২ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরতে পারবেন জেলেরা। 

কাপ্তাই হ্রদে পর্যাপ্ত পানি থাকায় কয়েক বছরের মধ্যে এবার নির্দিষ্ট সময়ে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে জেলা প্রশাসন। অন্যান্য বছর ২-৩ দফা সময় বাড়িয়ে প্রায় চার মাস পর মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হতো। কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, প্রজনন এবং অবমুক্ত করা মাছের বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেয় জেলা প্রশাসন।

এদিকে, মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর শুধু জেলে পাড়া নয়, কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে জেলার সবচেয়ে বড় মৎস্য অবতরণকেন্দ্র বিএফডিসি ঘাট। মাছ পরিবহন ও সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ড্রাম, বরফ ভাঙার মেশিন। দীর্ঘ ৯২ দিনের কর্মহীন জীবনের অবসান ঘটাতে প্রহর গুনছেন জেলেরা। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)। 

বিএফডিসি সূত্র বলছে, কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন, অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য ১ মে থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়। এ সময়ে হ্রদে প্রায় ৬০ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় ২৬ হাজার জেলে। 

রাঙামাটির শহরের পুরান পাড়া জেলা পল্লীর বাসিন্দা নেপাল দাশ জানিয়েছেন, মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞাকালে যে সরকারি সহায়তা পাওয়া যায়, তাতে পরিবার নিয়ে চলা কঠিন। দীর্ঘ তিন মাস পর মাছ ধরতে নামতে পারব, এতে খুশি আমরা। 

নতুন পাড়ার জেলে অমর কান্তি দাশ বলেছেন, হ্রদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছগুলো বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। তবে, পানিতে ঢেউ থাকায় শুরুতে বেশি মাছ পাওয়া যাবে না। পানি কিছু কমে আসলে ও স্থির হলে ভালো মাছ পাব, আশা করি। হ্রদে নামার জন্য যা যা প্রস্তুতি, সবকিছু শেষ করেছি। জাল ও নৌকা মেরামত করা হয়েছে। এখন শুধু লেকে নামার অপেক্ষা। 

রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি উদয়ন বড়ুয়া বলেছেন, এবার নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকে পর্যাপ্ত বৃষ্টির ফলে কাপ্তাই হ্রদে যথেষ্ট পানি থাকায় মাছ প্রথম থেকেই প্রজনন এবং বড় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। আশা করছি, এবার পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যাবে। ব্যবসায়ীরা সব প্রস্ততি নিয়েছেন। রবিবার সকাল থেকে বিএফডিসি ঘাটে মাছ আসবে।

বিএফডিসির রাঙামাটি অঞ্চলের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. ফয়েজ আল করিম বলেছেন, নিষেধাজ্ঞাকালীন আমাদের উপকেন্দ্রগুলোর যেসব অবকাঠামো সংস্কারের প্রয়োজন ছিল, সেসব আমরা শেষ করেছি। অন্যান্য যেসব প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন, সেসবও শেষ হয়েছে। আশা করছি, গত বছরের মতো এবছরও ভালো মাছ পাওয়া যাবে।

ঢাকা/শংকর/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ