ভৈরবে দুই বংশের মধ্যে আবার সংঘর্ষ, টেঁটাবিদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নিহত
Published: 18th, April 2025 GMT
কিশোরগঞ্জের ভৈরবের মৌটুপি গ্রামের কর্তাবাড়ি ও সরকারবাড়ির বিরোধের জেরে সংঘর্ষে টেঁটাবিদ্ধ হয়ে মিজান মিয়া (৪০) নামের এক স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নিহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার দুপুরে পাশের ভবানীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
নিহত মিজান উপজেলার ভবানীপুর সুলায়মানপুর গ্রামের মৃত রবিউল মিয়ার ছেলে। তিনি উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব ছিলেন। তিনি সরকারবাড়ির পক্ষের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের ভৈরব ও কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে আছেন ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার ফুয়াদ রুহানী। তিনি বলেন, সরকারবাড়ি ও কর্তাবাড়ি—দুই বংশের অনুসারী ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন গ্রামে। দুটি বংশের বিরাজমান সংঘাত নিয়ন্ত্রণে আনতে না আনতেই দুই বাড়ির অনুসারীরা নিজেদের গ্রামে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছেন। আজ ভবানীপুরের সংঘর্ষ কর্তাবাড়ি ও সরকারবাড়ির মধ্যকার সংঘর্ষের ধারাবাহিকতা। এ অবস্থার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা না করা গেলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়তে পারে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মৌটুপি গ্রামের অবস্থান উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ৫৬ বছর ধরে গ্রামটির কর্তাবাড়ি ও সরকারবাড়ির লোকজনের মধ্যে বিরোধ চলছে। বর্তমানে কর্তাবাড়ির নেতৃত্বে আছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও সাদেকপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন। সরকারবাড়ির নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান শেফায়েত উল্লাহ সরকার। গত পাঁচ দশকে বংশ দুটির বিরোধে দুই পক্ষের অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন। মামলা হয়েছে শতাধিক। সংঘর্ষ ছাড়া বছর পার হয়েছে—এমন বছর মনে করতে পারেন না গ্রামবাসী। দুই বংশের বিরোধের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পাশের গ্রামগুলোতেও। ওই গ্রামগুলোর বাসিন্দারা কোনো না কোনো পক্ষের হয়ে সংঘর্ষে অংশ নেন। এ পর্যন্ত দুই বংশের বিরোধের জেরে লাগোয়া কয়েকটি গ্রামে একাধিকবার সংঘর্ষ হয়েছে।
আরও পড়ুনদুই বংশের ৫৬ বছরের বিরোধ মেটাতে ‘শান্তি কমিটি’ গঠনের পরও সংঘর্ষ, আহত ৩০১৫ এপ্রিল ২০২৫গত মঙ্গলবার কর্তাবাড়ি ও সরকারবাড়ির সংঘর্ষের জেরে বৃহস্পতিবার পাশের ভবানীপুর গ্রামে সংঘর্ষ হয়। গ্রামটির মইদর বংশের লোকজন সরকারবাড়ি ও বুদর বংশের লোকজন কর্তাবাড়ির পক্ষ নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। মীমাংসার জন্য আজ সকালে ভবানীপুরের চকবাজারে সালিস বসে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সালিসে দুই পক্ষের মধ্যে কথা–কাটাকাটি থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে মিজান টেঁটাবিদ্ধ হন। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
আরও পড়ুনভৈরবে দুই বংশের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত৩১ অক্টোবর ২০২৪এলাকাবাসী জানান, গত বছরের ঈদুল আজহার আগের দিন ফুটবল খেলা নিয়ে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে আহত কর্তাবাড়ির নাদিম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ওই ঘটনার সূত্র ধরে কয়েক দিন পর সংঘর্ষে সরকারবাড়ির ইকবাল হোসেন নামের একজন মারা যান। দুই বাড়ির দুজন খুন হওয়ার পর এক পক্ষ আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে। দুই মামলার আসামিরা দীর্ঘদিন গ্রামের বাইরে অবস্থান করছিলেন। কয়েক মাস আগে উভয় পক্ষ জামিন পায়। জামিন পাওয়ার পর সরকারবাড়ির লোকজন গ্রামে ফিরে এলেও কর্তাবাড়ির লোকজন ফিরতে পারছিলেন না। দুই সপ্তাহ আগে কয়েক গ্রামের লোকজন দলবদ্ধ হয়ে দুই বংশের লোকদের নিয়ে গ্রামে শান্তি কমিটি করেন। উদ্দেশ্য, দুই বংশের মধ্যে যাতে আবার সংঘর্ষ না হয়। এরপর কর্তাবাড়ির লোকজন গ্রামে ফিরতে শুরু করেন। গ্রামে ফেরা নিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে উভয় পক্ষ দা-বল্লম নিয়ে আবার সংঘর্ষে জড়ায়।
আরও পড়ুনভৈরবে আবার কর্তাবাড়ি ও সরকারবাড়ির মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ২৫১৩ নভেম্বর ২০২৪কর্তাবাড়ির নেতৃত্বে থাকা তোফাজ্জল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মৌটুপি গ্রামের শান্তি শেষ। চেষ্টা করলে করতে পারে, পুলিশ কিংবা মানুষের পক্ষে আর শান্তি ফিরাইয়া আনা সম্ভব না। আল্লাহর সরাসরি হাত লাগব। আল্লাহর হস্তক্ষেপ আর কুদরত ছাড়া শান্তি কমিটির পক্ষে শান্তি ফিরিয়ে আনা অসম্ভব।’
সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর সরকারবাড়ির নেতৃত্বে থাকা ইউপি চেয়ারম্যান শেফায়েত উল্লাহ এলাকাছাড়া। তাঁকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি। শেফায়েত উল্লাহর অবর্তমানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আল আমিন। তিনি বলেন, ‘নিজ গ্রাম থেকে শান্তি তাড়াইয়া শান্ত হয় নাই কর্তাবাড়ির লোকজন। এখন ভিন্ন গ্রামে খেলা শুরু করছে। এর শেষ কোথায় কারও জানা নাই।’
ভৈরবে বংশবিরোধ: রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধে প্রশাসনের পদক্ষেপ চাই.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ড় র ল কজন কর ত ব ড় র র কর ত ব ড় র স ঘর ষ ন উপজ ল অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৩৫ কিলোমিটারজুটে যানজট
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার নিমশার থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটারজুড়ে যানজট দেখা দিয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকেরা। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি কাভার্ড ভ্যান উল্টে যাওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে এ যানজট দেখা দেয়।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরে মহাসড়কে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার নূরীতলা এলাকায় একটি কাভার্ড ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। ফেনী থেকে রেকার এনে কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধারের কাজ শুরু করে পুলিশ।
সকাল সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কে যানজট দেখা গেছে।
ঢাকাগামী রয়েল পরিবহনের চালক রমিজ উদ্দিন বলেন, সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা করে বুড়িচংয়ের নিমশার বাজারে যানজটে এক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে। ৫ মিনিট গাড়ি চললে ২০ মিনিট বসে থাকতে হয়। এভাবে ১০টা ৪০ মিনিটে চান্দিনায় পৌঁছেছি। এ সময়ে ঢাকার কাছাকাছি থাকার কথা ছিল।
নিমশার বাজারে আটকে থাকা প্রাইভেট কারের যাত্রী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভোর থেকে যানজট অথচ সড়কে হাইওয়ে পুলিশ দেখছি না।
ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুহুল আমিন বলেন, মহাসড়কের নূরীতলা এলাকায় উল্টে কাভার্ড ভ্যানটি আড়াআড়িভাবে পড়ে ছিল। পরে ঢাকামুখী লেনের বেশ কিছু গাড়ি উল্টো পথে ঢোকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফেনী থেকে ক্রেন এনে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।
হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিওনের পুলিশ সুপার অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খাইরুল আলম সমকালকে বলেন, দুর্ঘটনার কারণেই যানজট দেখা দিয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে।