ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় ভুল চিকিৎসায় এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। 

শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের চর সোনাপুর গ্রামে সোনাপুর মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উত্তেজিত স্বজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা হাসপাতালটিতে ভাঙচুর চালিয়েছে।

নিহত নারীর নাম ফেরদৌস আরা (২৮)। তিনি সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের শাহাপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা এবং অটোরিকশা চালক নিজাম উদ্দিনের স্ত্রী। ফেরদৌস আরার জানাজা শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে অনুষ্ঠিত হয়। এরপরই ক্ষুব্ধ জনতা হাসপাতাল ঘেরাও করে হামলা চালায়।

পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, গত মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) রাতে প্রসববেদনা শুরু হলে ফেরদৌসকে স্থানীয় সোনাপুর মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রে নেওয়া হয়। সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেবিকা কল্পনা রানী দাস একটি পুত্রসন্তানের জন্ম গ্রহণ করান। কিন্তু নবজাতকের নাড়ি কাটার সময় ভুল করলে প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। 

স্বজনরা বারবার উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরের অনুরোধ করলেও সেবিকা সময়ক্ষেপণ করেন। পরে জোর করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে ফেরদৌস আরা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

ফেরদৌসের ভাবি সাফা আক্তার কাজল বলেন, “আমার ননদের রক্তে পুরো কক্ষ ভেসে গিয়েছিল, সময়মতো ব্যবস্থা নিলে সে হয়তো বেঁচে যেত।”

অভিযুক্ত সেবিকা কল্পনা রানী দাস দাবি করেন, “আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। প্রসবের পর কিছু জটিলতা তৈরি হলে আমরা রোগীকে ফেনীতে পাঠিয়ে দিই।”

সোনাগাজী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ইয়াকুব নবী বলেন, “তদন্তে চিকিৎসায় গাফিলতির প্রমাণ মিললে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

হামলার ঘটনায় সেবিকা কল্পনা রানী দাসকে মারধর এবং হাসপাতালের ভেতরে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। হাসপাতালটির পরিদর্শক অতসী বালা দাস জানান, হামলাকারীরা তার কক্ষে ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। এসময় তার মোবাইল ফোনটি চুরি হয়ে যায়।

সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বায়েজীদ হোসেন আকন বলেন, “ঘটনার পরপরই পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/সাহাব উদ্দিন/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

চুক্তি হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি সাপেক্ষে গোপনীয়তার বিষয়টি প্রকাশ করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির আলোচনায় যে গোপনীয়তার বিষয়টি ছিল, চুক্তি সই হয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি সাপেক্ষে তা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। তিনি বলেন, চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর শিগগিরই হয়তো যৌথ বিবৃতি আসবে। তথ্য অধিকারের আলোকে এটা করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তো‌জার সঙ্গে আলাপচারিতায় বাণিজ্য উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। গোলাম মোর্তোজা ব্যক্তিগত ভেরিফায়েড পেজে ভিডিওটি প্রকাশ করেছেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, বাণিজ্য চুক্তি কাজে লাগাতে হলে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে এ নিয়ে আত্মসন্তুষ্টির সুযোগ নেই।

গোপনীয়তার বিষয়ে শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, বিষয়টি আন্তর্জাতিক রীতিতে নির্দিষ্ট, শুধু তা–ই নয়, স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক ও বিমা চুক্তিতে উপনীত হয়, তখন এই গোপনীয়তার বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক। এমনকি দুজন ব্যক্তি সম্পদ হস্তান্তর করলেও এ ধরনের বিষয় থাকে।

শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, ‘এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র যেখানে চুক্তির মূল নিয়ামক হিসেবে নিজস্ব নিরাপত্তার কথা বলেছে, সেখানে আলোচনায় গোপনীয়তার শর্ত থাকা অবশ্যম্ভাবী। এর মাধ্যমে দেশের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করার কোনো উপাদান থাকলে আমরা সে চুক্তিতে করব না, সেটাই স্বভাবিক বলে মন্তব্য করেন শেখ বশিরউদ্দিন। নিজস্ব স্বার্থ বিসর্জন দেওয়ার সুযোগ নেই। নিজস্ব স্বার্থ জলাঞ্জলি দিলে সক্ষমতার ঘাটতি হবে। তাতে বাণিজ্য চুক্তি করে লাভ হবে না। স্বল্প মেয়াদে বা দীর্ঘ মেয়াদে যদি আমাদের বাণিজ্য সক্ষমতা হ্রাস পায়, কিংবা আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির কোনো ধরনের ক্ষতি হয়, সেই চুক্তি কোনোভাবেই পালনযোগ্য নয়।’

তবে আলোচনা চলাকালে দুঃখজনকভাবে চুক্তিটি ফাঁস হয়ে গিয়েছিল বলে মন্তব্য করেন শেখ বশিরউদ্দিন। সেখানে দেশের স্বার্থবিরোধী কিছু নেই। যেগুলো দেশের স্বার্থবিরোধী হতে পারত, সেখান থেকে বাংলাদেশ পরিষ্কারভাবে বের হয়ে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার প্রসঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বাণিজ্য আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র মোটেও বিষয়টি উত্থাপন করেনি। এই বিষয়টি একমুখী। গত বছর বোয়িং ১২টি বিমান বানিয়েছে। সুতরাং এই চুক্তি অনুযায়ী তারা হয়তো ২০৩৭ সালে প্রথম বিমান সরবরাহ করতে পারবে। বরং তাদের আগ্রহ ছিল কৃষিপণ্য নিয়ে। বাংলাদেশ প্রতি ১৫ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলারের খাদ্যপণ্য আমদানি করে। যুক্তরাষ্ট্রও কৃষিপণ্যের বৃহৎ উৎপাদক। বাংলাদেশ মূলত জ্বালানি ও কৃষিপণ্যের ভিত্তিতে বাণিজ্যঘাটতি কমানোর কথা বলেছে, যেসব পণ্য এমনিতেই বাংলাদেশকে আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি ৬ বিলিয়ন বা ৬০০ কোটি ডলারের মতো। ফলে বাংলাদেশে তুলা, সয়াবিন, ভুট্টা, গমজাতীয় পণ্য আমদানি বাড়িয়ে ২০০ কোটি ডলারের বাণিজ্যঘাটতি কমানোর চেষ্টা করতে পারে।

বোয়িং বিমান খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয় উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বিমানের পরিচালনা সক্ষমতা বৃদ্ধি না করে বিমান কিনে তেমন লাভ হবে না। অন্তর্বর্তী সরকার সেই চেষ্টা করছে। তবে বিমানের পক্ষে অতিরিক্ত এক কোটি যাত্রী পরিবহনের সুযোগ আছে। সেই বিবেচনায় ২৫টি বিমান খুব বেশি কিছু নয়। বিমানের পরিচালন সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি আশাবাদী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ