তাঁরা তিন ভাই: একজন বাংলাদেশে, একজন ভারতে, একজন পাকিস্তানে
Published: 18th, April 2025 GMT
‘আমরা তিন ভাই; কিন্তু আছি তিন দেশে’—কারেন ভাইয়েরা মজা করে এই কথা বলতেই পারেন।
পেশাগত কারণে অনেককেই তো বিদেশবিভুঁইয়ে থাকতে হয়। বেন কারেন, স্যাম কারেন ও টম কারেনও ক্রিকেটীয় কারণে আছেন তিন দেশে। তবে তিন ভাইয়ের বর্তমান ঠিকানা প্রতিবেশী তিন দেশ বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান।
দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশে এসেছে জিম্বাবুয়ে দল। সিলেটে প্রথম টেস্ট শুরু আগামী রোববার। কারেন ভাইদের মেজ জন বেন জিম্বাবুয়ে দলের সঙ্গে এই মুহূর্তে সিলেটে আছেন।
এই তিন ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত মুখ স্যাম এখন আছেন ভারতে। আইপিএলে খেলছেন চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে। আর বড়জন টম কারেন আছেন পাকিস্তানে। পিএসএলে তাঁকে নিয়েছে লাহোর কালান্দার্স। অর্থাৎ, টম এখন বাংলাদেশের লেগ স্পিন অলরাউন্ডার রিশাদ হোসেনের সতীর্থ।
আপাদমস্তক ক্রিকেট পরিবার বলতে যা বোঝায়, কারেন পরিবার তেমনই। এই পরিবারের তিন প্রজন্ম ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কারেন ভাইদের দাদা প্যাট্রিক কারেন ছিলেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার, বাবা কেভিন কারেন জিম্বাবুয়ের হয়ে ১১টি ওয়ানডে খেলেছেন। তবে টম কারেন ও স্যাম কারেন ইংল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করছেন। ইংল্যান্ডের হয়ে দুজন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নও হয়েছেন—২০১৯ সালে টম জিতেছেন ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ২০২২ সালে স্যাম জিতেছেন টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
বড় আর ছোট ভাইয়ের মতো বেন কারেনও ঘরোয়া ক্যারিয়ার ইংল্যান্ডে শুরু করেছিলেন। তবে জাতীয় দল বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি বাবার পথে হেঁটে জিম্বাবুয়ের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ২৮ বছর বয়সী এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান জিম্বাবুয়ের হয়ে এখন পর্যন্ত ৩টি টেস্ট ও ৬টি ওয়ানডে খেলেছেন। ১টি করে ফিফটি ও সেঞ্চুরিতে করেছেন ৩৬৯ রান। বাংলাদেশে তিনি এবারই প্রথম এসেছেন। সিলেটে সময়টা তাঁর ভালোই কাটার কথা।
তবে ভারত ও পাকিস্তানে স্যাম ও টমের সময়টা ভালো কাটছে না। ২০২২ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি পাওয়ার পর আইপিএলে স্যামের কদর বেড়ে গিয়েছিল। সেই বছর নিলামে স্যামকে ১৮ কোটি ৫০ লাখ রুপিতে কিনেছিল প্রীতি জিনতার দল পাঞ্জাব কিংস, যা তাঁকে আইপিএল ইতিহাসের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় করে তুলেছিল।
কিন্তু গত বছর থেকে ফর্ম হারাতে শুরু করেন স্যাম। বাদ পড়েন জাতীয় দল থেকে। সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ইংল্যান্ড দলেও তাঁর জায়গা হয়নি। আইপিএলেও স্যামের দামে অস্বাভাবিক পতন হয়েছে। সাড়ে ১৮ কোটি স্যামকে এবার মেগা নিলামে ২ কোটি ৪০ লাখ রুপিতে পেয়ে গেছে মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস। আইপিএলে চেন্নাইয়ের প্রথম দুই ম্যাচে এই বাঁহাতি অলরাউন্ডারকে খেলানোও হয়েছে। কিন্তু ভালো করতে না পারায় (ব্যাটিংয়ে ৪ ও ৮ রান, বোলিংয়ে নেই কোনো উইকেট) আপাতত বেঞ্চ গরম করতে হচ্ছে।
ফর্ম বিবেচনায় টম কারেন আছেন আরও বাজে অবস্থায়। ইংল্যান্ড জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছেন সেই ২০২১ সালে। পিএসএল ড্রাফট থেকে লাহোর কালান্দার্স এই বোলিং অলরাউন্ডারকে ৫০ হাজার মার্কিন ডলারে (৬০ লাখ ৭০ হাজার টাকা) কিনলেও এখনো কোনো ম্যাচ খেলায়নি। লাহোরের স্কোয়াড এবার বিদেশি অলরাউন্ডারে ঠাসা—বাংলাদেশের রিশাদের সঙ্গে জিম্বাবুয়ের সিকান্দার রাজা, নামিবিয়ার ডেভিড ভিসা ও ইংল্যান্ডের টম কারেন।
রিশাদ ও রাজা দারুণ পারফর্ম করতে থাকায় তাঁদের ওপর আস্থা বেড়েছে লাহোর টিম ম্যানেজমেন্টের। ভিসা এক ম্যাচে খারাপ করার পর বাদ পড়েছেন। টম কারেন শিগগিরই খেলার সুযোগ পাবেন বলে মনে হয় না।
পাশাপাশি দেশ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানে অবস্থান করলেও তিন ভাইয়ের শিগগিরই এক বিন্দুতে মেলা সম্ভব হবে বলেও মনে হয় না।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতি মেয়ে
ফরিদপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহ্মুদা বেগমের মেয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা।গত মঙ্গলবার এনসিপির সদস্যসচিব আক্তার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ওই চিঠিতে ফরিদপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক করা হয়েছে মো. আব্দিুর রহমানকে এবং সংগঠক করা হয়েছে মো. রাকিব হোসেনকে।
এছাড়া ফরিদপুর অঞ্চলের পাঁচটি জেলা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী জেলার দু’জন করে ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফরিদপুর জেলার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে যে দু’জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের একজন হলেন সৈয়দা নীলিমা দোলা। তিনি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহ্মুদা বেগমের মেয়ে এবং জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোহাম্মদ নাসিরের ভাগনি। দোলার বাবা সৈয়দ গোলাম দস্তগীর পেশায় ব্যবসায়ী।
সৈয়দা নীলিমা ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগীত বিভাগে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি কিছুদিন একটি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে চাকরি করেন। বর্তমানে ‘সিনে কার্টেল’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী।
এ বিষয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা বলেন, ‘আমার পরিবারের সদস্যদের আওয়ামী রাজনীতি করা সংক্রান্ত কিছু পোস্ট আপনাদের সামনে আসতে পারে। আমি নিজে এর একটা ব্যাখ্যা রাজপথের সহযোদ্ধাদের দিয়ে রাখতে চাই। আমি ১০ বছর ধরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন করছি। নো মেট্রো অন ডিইউ মুভমেন্ট, রামপাল বিরোধী আন্দোলন, ডিএসএ বাতিলের আন্দোলন, সুফিয়া কামাল হলকে ছাত্রলীগ মুক্ত করাসহ অন্যান্য সকল আন্দোলনে আমি পরিচিত মুখ। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমার লেখালেখিও পুরনো। ২০১২ সালে পরিবার ছাড়ার পর রাজপথই আমার আসল পরিবার। জুলাইয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অন্যতম মামলা তাহির জামান প্রিয় হত্যা মামলার একজন প্রত্যক্ষদর্শী আমি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরাসরি ছাত্রলীগ করে অনেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। আমি কখনও ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না, তাই আমার নাগরিক কমিটির সদস্য হতে বাধা কোথায়? এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা জেনে-বুঝে এবং আমি ‘লিটমাস’ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই আমাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ নেত্রীর মেয়ে দায়িত্ব পেয়েছেন জেলার এনসিপি কমিটি গঠনে-এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব সোহেল রানা বলেন, ‘তার (সৈয়দা নীলিমা) পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড আওয়ামী লীগ। আমরা দেখেছি, গত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে তার মামা গোলাম নাসির কিভাবে আমাদের ওপর নির্বিচার গুলি ছুড়েছিল। তার মায়ের কর্মকাণ্ডও আমাদের অজানা নয়।’
সৈয়দা নীলিমা দোলার সঙ্গে আমাদের পরিচয় পর্যন্ত নেই মন্তব্য করে সোহেল রানা বলেন, ‘আসলে দায়িত্ব দেওয়ার আগে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে নেওয়া হলে ভাল হতো। যাচাই-বাছাই করা হলে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।’