বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে নিজেদের প্রথম তিন ম্যাচে তিন ‘ল্যান্ড’কে (থাইল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড) হারিয়ে মূল পর্বে খেলার খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিল বাংলাদেশ নারী দল। তবে লাহোরে গতকাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৩ উইকেটে হেরে যাওয়ায় অপেক্ষা বেড়েছে নিগার-রিতু-নাহিদাদের।

আগামীকাল সকালে বাছাইয়ের স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। এই ম্যাচ জিতলে বাছাইয়ের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বিশ্বকাপের টিকিট পেয়ে যাবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। তার আগে নিগারের দলের বড় একটা উপকার করেছে আয়ারল্যান্ড।

রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে আজ প্রতিবেশী স্কটল্যান্ডকে ১ উইকেটে হারিয়েছে আয়ারল্যান্ড। স্কটিশদের দেওয়া ২৬৯ রানের লক্ষ্য ম্যাচের শেষ বলে ছুঁয়েছে আইরিশরা। আগেই বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার স্বপ্ন শেষ হয়ে যাওয়া আয়ারল্যান্ড এ জয়ে স্কটল্যান্ডেরও সম্ভাবনা শেষ করে দিয়েছে। এতে লাভ হয়েছে বাংলাদেশের।

কারণ, স্কটল্যান্ড যদি আজ বড় ব্যবধানে জিতত, তাহলে বিশ্বকাপে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখার পাশাপাশি নেট রান রেটে বাংলাদেশকে টপকে যেতে। তেমনটা হলে বাংলাদেশ পয়েন্ট তালিকার তিনে নেমে যেত। যেহেতু বাছাইয়ের শীর্ষ দুই বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার সুযোগ পাবে, তাই আগামীকাল পাকিস্তানকে হারানো ছাড়া বাংলাদেশের জন্য বিকল্প পথ খোলা থাকত না।

কিন্তু স্কটল্যান্ড হেরে যাওয়ায় আপাতত তিনে থেকে (৫ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট) বাছাই অভিযান শেষ করল। বাংলাদেশ রয়ে গেল দুইয়েই (৪ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট)। টানা চার জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে সবার আগে বিশ্বকাপের টিকিট পেয়ে গেছে পাকিস্তান।

পয়েন্ট তালিকার চারে, পাঁচে ও ছয়ে আছে যথাক্রমে আয়ারল্যান্ড (৫ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট), ওয়েস্ট ইন্ডিজ (৪ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট) ও থাইল্যান্ড (৪ ম্যাচে ০ পয়েন্ট)। চার ম্যাচের সব কটিতে হারা থাই মেয়েরা আগামীকাল বাছাইয়ের শেষ ম্যাচে ক্যারিবিয়ান মেয়েদের মুখোমুখি হবে।

লাহোরের সিটি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচ শুরু হবে সকাল সাড়ে ১০টায়। গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-থাইল্যান্ড ম্যাচের প্রথম বল মাঠে গড়াবে বিকেল ৩টায়। আগে শুরু হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচ আগে শেষ হবে। এই ম্যাচে বাংলাদেশ জিতলে কোনো হিসাব-নিকাশ ছাড়াই বিশ্বকাপের টিকিট পেয়ে যাবে। পরের ম্যাচ হয়ে যাবে নিছক আনুষ্ঠানিকতার।

এ কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কাল বাংলাদেশের পরাজয় কামনা করবে। নিগারের দল যদি পাকিস্তানের কাছে হেরে যায় এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ যদি থাইল্যান্ডের বিপক্ষে বিশাল ব্যবধানে জেতে (আনুমানিক হিসাব এখনো জানা যায়নি), তাহলে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুই দলেরই পয়েন্ট হবে সমান ৬ করে।

সে ক্ষেত্রে নেট রান রেটে এগিয়ে থাকার সুবাদে পয়েন্ট তালিকার দুইয়ে উঠে আসতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তেমনটা হলে কপাল পুড়বে বাংলাদেশের।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স কটল য ন ড ব শ বক প র

এছাড়াও পড়ুন:

খেলাপি ঋণে বাংলাদেশ এশিয়ায় কেন শীর্ষে

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে মন্দ বা খেলাপি ঋণ অনেক দিনের বিরাট সমস্যা। শুরুতে শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় এ ব্যাধি বিদ্যমান হলেও পরবর্তী সময়ে বৃহৎ ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যাংকেও ছড়িয়ে পড়ে। এটি, তথা ঋণখেলাপির সংস্কৃতি ধীরে ধীরে এক মহিরুহ আকার ধারণ করেছে।

গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংক খাতের লুকানো খেলাপি ঋণ বের হয়ে আসছে। আবার অনেক আওয়ামী লীগ নেতা ও তাঁদের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের ঋণও খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। তাতে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ এক বছরের ব্যবধানে মোট ঋণের ১২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৮ শতাংশ ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংক খাতের বিতরণ করা ঋণের এক-চতুর্থাংশের বেশি এখন খেলাপি।

 সম্প্রতি প্রকাশিত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে খেলাপি ঋণের দিক থেকে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের শীর্ষে উঠে আসার বিষয়টি সামনে এসেছে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর আর্থিক বিভিন্ন সূচকের অবস্থা নিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। অবশ্য খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে ২০২৩ সালের তথ্য। তাতেই বাংলাদেশ শীর্ষে। এটি যে ২০২৫ সালে অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তা আমরা জানি।

আগে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কায়দায় বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ কম দেখানো হতো। অন্যদিকে সহজে ঋণ পুনঃ তফসিল ও পুনর্গঠন করার কারণেও খেলাপি ঋণ কম ছিল। এখন ঋণমানে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করা শুরু হয়েছে। আবার ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা ও আওয়ামী রাজনীতি–সমর্থিত ব্যক্তিদের ব্যবসা খারাপ হয়ে পড়ায় খেলাপি ঋণ বাড়ছে।

খেলাপি ঋণ এভাবে বাড়তে থাকলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে, সন্দেহ নেই। ব্যবসা-বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করতে উদ্যোগ নিতে হবে। যাঁরা ভালো ব্যবসায়ী, তাঁরা যেন আবার ব্যবসা শুরু করতে পারেন, সে ব্যবস্থা করতে হবে। সেটি নিয়ে সরকার কাজও করছে।

 এডিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। ২০২৩ সাল শেষে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সাল থেকে প্রতিবছরই বাংলাদেশের খেলাপি ঋণের হার বেড়েছে। ২০২১ সালে এই হার ছিল ৮ শতাংশ, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৭ শতাংশে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের মতো ২০২১ সাল থেকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে নেপাল ও শ্রীলঙ্কার।

দক্ষিণ এশিয়ার বাকি দেশগুলোর খেলাপি ঋণ কমেছে। যেমন ভুটানের খেলাপি ঋণের হার ২০২০ সালে ছিল ১১ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ২০২২ সালে কমে হয়েছে ৩ শতাংশ। ভারতের খেলাপি ঋণের হার ২০২০ সালে ছিল ৭ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে কমে হয়েছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। মালদ্বীপের খেলাপি ঋণ এই সময়ে ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। একই প্রতিবেদন অনুযায়ী, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম খেলাপি ঋণ তাইওয়ান ও কোরিয়ার। দেশ দুটির খেলাপি ঋণের হার যথাক্রমে শূন্য দশমিক ১ ও শূন্য দশমিক ২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০২৪ সাল শেষে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ছিল ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। ২০২৫ সালের জুন শেষে এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকায়, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ২৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংক খাতের বিতরণ করা মোট ঋণের চার ভাগের এক ভাগের বেশি খেলাপি হয়ে গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বলতে শুনেছি, গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে যে অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে, তা এখন খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হতে শুরু করেছে। আগেই বলেছি, ঋণখেলাপি হওয়ার নিয়ম আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার কারণেও দেশে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। যেসব ঋণ নবায়ন করা হয়, তার অনেকগুলো আদায় হচ্ছে না। অনিয়মের কারণে অনেক ঋণকে খেলাপি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগ। এতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে, যা সামনে আরও বাড়তে পারে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন মোট খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এর পর থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছিলেন, বিগত সরকারের ঘনিষ্ঠ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নানা অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বের করে নিয়ে যাচ্ছেন, যার একটা বড় অংশই বিদেশে পাচার হয়ে গেছে।

সূত্রগুলো বলছে, দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ও বহুল সমালোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়া ব্যাংকগুলোর ঋণের প্রকৃত চিত্র বের হতে শুরু করেছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। একইভাবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংকের খেলাপি ঋণও বেড়েছে। এই পাঁচ ব্যাংককে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই কাজ বাস্তবায়ন করতে এরই মধ্যে প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্তও হয়ে গেছে। পাশাপাশি সরকারি খাতের জনতা ও রূপালী এবং বেসরকারি খাতের ইউসিবি, আইএফআইসি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ট্রাস্ট ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের খেলাপি ঋণও বেড়েছে।

পত্রিকা সূত্রে জানা গেছে, খেলাপি হয়ে পড়া প্রায় ১ হাজার ২৫০ প্রতিষ্ঠান বিশেষ ব্যবস্থার অধীন ঋণ পুনর্গঠনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০০ প্রতিষ্ঠানের ঋণ নিয়মিত করার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন একটি বিস্তৃত নীতিমালা তৈরি করে ব্যাংকগুলোকে ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দিতে চাইছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জানা গেছে, এই নীতিমালায় নির্দিষ্ট অর্থ জমা দিয়ে ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া হবে। তবে ঋণ পরিশোধে যতটা সময় অবকাশ পাবে, ওই সময়ে সুদ পরিশোধ করতে হবে। এর ফলে খেলাপি ঋণ কমে আসবে বলে আশা করছেন অনেকে। তবে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী না করলে কিংবা ব্যবসা পরিচালনায় মনোযোগী না হলে তার উল্টোটাও ঘটতে পারে। সুযোগের অসৎ ব্যবহারের উদাহরণ বাংলাদেশে অনেক।

সামগ্রিক ঋণখেলাপির সংস্কৃতি থেকে মুক্তি পেতে গেলে আমাদের দুষ্ট রাজনৈতিক সংস্কৃতি তথা স্বজনতোষী পুঁজিবাদ থেকে যেমন বেরিয়ে আসতে হবে, তেমনি ঋণ সম্প্রসারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। কমাতে হবে পরিচালকদের অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ।

মামুন রশীদ ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক

মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ