ওয়াক্ফ আইন স্থগিত এবং নতুন চ্যালেঞ্জ
Published: 18th, April 2025 GMT
গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট ওয়াক্ফ আইন, ২০২৫-কে চ্যালেঞ্জ করে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে ইতোমধ্যে দাখিল করা আবেদনের ওপর অন্তর্বর্তী সিদ্ধান্ত ৫ মে পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আইনের পক্ষে হলফনামা দাখিলের জন্য সময় চেয়েছিল। কিন্তু আদালতকে আশ্বস্ত করেছিল– পরবর্তী শুনানির আগে তারা ওয়াক্ফ বোর্ডে অমুসলিমদের নিয়োগ দেবে না বা কোনো ওয়াক্ফের চরিত্র বা মর্যাদা পরিবর্তন করবে না।
১৬ এপ্রিল ভারতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বে বিচারপতি পি ভি সঞ্জয় কুমার ও কে ভি বিশ্বনাথনের সমন্বয়ে গঠিত তিন বিচারপতির বেঞ্চ বিতর্কিত নতুন আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন। এতে তারা ৬৫টি আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করেন। দুই ঘণ্টা ধরে চলা শুনানিতে বেঞ্চ কেন্দ্রের ব্যাপারে প্রশ্ন তোলেন। পাশাপাশি আবেদনকারীদের ব্যাপারে বলেন, ‘আইনের কিছু ভালো দিক রয়েছে।’
আবেদনকারীদের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনকারী জ্যেষ্ঠ অ্যাডভোকেট কপিল সিবাল মূলত আইনটিকে সংবিধানের ২৬ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন হিসেবে উপস্থাপন করেন। তাঁর মতে, এর মধ্য দিয়ে সংসদ ‘ধর্মবিশ্বাসের অপরিহার্য ও অবিচ্ছেদ্য অংশ’-এর ওপর হস্তক্ষেপ করেছে। সংবিধানের ৩ নম্বর অংশের অধীনে ২৬ অনুচ্ছেদ একটি মৌলিক অধিকার, যা নাগরিকদের ধর্মাচার পরিচালনার স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়। অনুচ্ছেদটি শুধু তিনটি বিধিনিষেধের এখতিয়ার রাখে– জনশৃঙ্খলা, নৈতিকতা ও স্বাস্থ্য।
আবেদনকারীরা ২০২৫ সালের আইনের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে রয়েছে– ‘ব্যবহার অনুসারে ওয়াক্ফ’ ধারণাটি বাতিল করা। এই ধারণামতে, দীর্ঘ সময় ধরে মুসলিম ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত জমিকে ওয়াক্ফ হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে, এমনকি যদি এটি নিবন্ধিত নাও হয়। ২০২৫ সালের আইনটি ভবিষ্যতে উৎসর্গ করার জন্য ওয়াক্ফ করার সুযোগ বাতিল করে এবং এটি শুধু সেই সম্পত্তিগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ, যা ইতোমধ্যে ওয়াক্ফ হিসেবে নিবন্ধিত। আইনে আরও বলা হয়েছে, যেখানে কোনো বিরোধ রয়েছে অথবা যদি কোনো সম্পত্তি সরকারের মালিকানাধীন বলে অভিযোগ করা হয়, তাহলে প্রশ্নবিদ্ধ জমিটিকে ওয়াক্ফ ব্যবহার হিসেবে গণ্য করা হবে না।
সরকারের যুক্তি হলো, ওয়াক্ফের নামে প্রায়ই জমি দখল করা হয়। এ কারণে সমস্যাটি নিরসনে বিদ্যমান আইনি ব্যবস্থা বাতিল করা প্রয়োজন। এ ছাড়া সরকারের এই পদক্ষেপ বেশ কিছু ওয়াক্ফ হিসেবে ব্যবহারযোগ্য সম্পত্তি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে মসজিদ বা কবরস্থান থাকলেও এগুলো ওয়াক্ফ হিসেবে নিবন্ধিত হয়নি। আবেদনকারীদের যুক্তি হলো, ওয়াক্ফ ব্যবহারযোগ্য জমি নিবন্ধন করা কঠিন। প্রধান বিচারপতি খান্নাও এই অনুভূতির প্রতিধ্বনি করে কেন্দ্রকে জিজ্ঞাসা করেছেন, কেউ কীভাবে এমন একটি জমি নিবন্ধন করতে পারে, যা ৩০০ বছর ধরে ওয়াক্ফ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে?
প্রধান বিচারপতি খান্না বলেন, ‘যতদূর ওয়াক্ফ ব্যবহারকারীর কথা বলা হচ্ছে, এটি নিবন্ধন করা খুব কঠিন হবে। তাই এখানে অস্পষ্টতা রয়েছে। আপনার হয়তো একটা যুক্তি থাকতে পারে যে (এটির) অপব্যবহার হচ্ছে.
২০২৫ সালের আইন অনুসারে, জেলা কালেক্টর যদি ওয়াক্ফ হিসেবে ব্যবহৃত জমিকে সরকারি জমি হিসেবে চিহ্নিত করেন, তাহলে আদালতে বিরোধের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এটি ওয়াক্ফ জমি হিসেবে থাকবে না। আইনের ধারা ৩(গ)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত থেকে প্রবাহিত এই ক্ষমতা আদালত ওয়াক্ফ জমির অবস্থা নির্ধারণের আগেই তার অবস্থা পরিবর্তন করতে পারে। যদিও এই বিধান এখনও স্থগিত করা হয়নি, তবে বৃহস্পতিবারের আদেশে কেন্দ্রের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যে কোনো ওয়াক্ফের ‘চরিত্র বা অবস্থা’ পরিবর্তন করা হবে না।
এ ছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হলো, ওয়াক্ফ বোর্ডে অমুসলিমদের অন্তর্ভুক্তি। আবেদনকারীরা যুক্তি দিয়েছিলেন, ২০২৫ সালের আইন অমুসলিমদের ওয়াক্ফ বোর্ড ও ওয়াক্ফ কাউন্সিলের অংশ হওয়ার সুযোগ দেয়। অথচ এই পদক্ষেপ সংবিধানের ২৬(খ), ২৬(গ) ও ২৬(ঘ) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে, যা যথাক্রমে একটি সম্প্রদায়ের ‘ধর্মীয় বিষয়ে নিজস্ব বিষয় পরিচালনা’, ‘স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির মালিকানা ও অর্জন’ এবং ‘আইন অনুসারে এই জাতীয় সম্পত্তি পরিচালনা’ করার অধিকার নিশ্চিত করে। কেন্দ্র থেকে যুক্তি দেওয়া হয়, ওয়াক্ফের ব্যাপারে অমুসলিমদের অনুমতি দেওয়াটা সম্প্রদায়ের ভেটো অধিকারকে প্রভাবিত করবে না। আবেদনকারীরা বলেছিলেন, এ ক্ষেত্রে ‘একজনও (অমুসলিম) অনেক বড় ব্যাপার।’
এ বিষয়ে বেঞ্চ কেন্দ্রকে প্রশ্ন করেন। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে এমন একটি উদাহরণের নাম বলতে বলেন, যেখানে সংসদ অন্য ধর্মের সদস্যদের একটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বিষয় পরিচালনাকারী বোর্ডে যোগদানের অনুমতি দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি কি বলছেন যে, এখন থেকে আপনি মুসলিমদের হিন্দু এনডাওমেন্ট বা উত্তরাধিকার সংক্রান্ত সম্পত্তি বোর্ডের অংশ হতে দেবেন? বিষয়টি খোলাখুলিভাবে বলুন।’
অপূর্ব বিশ্বনাথ: নয়াদিল্লিতে দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ‘জাতীয় আইন সম্পাদক’; দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ২০২৫ স ল র আইন ফ ব যবহ র অন চ ছ দ ন বন ধ আইন র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
এমি অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫: বিজয়ী হলেন যারা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের পিকক থিয়েটারে স্থানীয় সময় সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে অনুষ্ঠিত হয় প্রাইমটাইম এমি অ্যাওয়ার্ডসের ৭৭তম আসর। এবারের আসরে ১৩টি পুরস্কার জিতে বাজিমাত করেছে ‘দ্য স্টুডিও’। এর মধ্যে সেরা কমেডি সিরিজের পুরস্কারও রয়েছে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নেট বারগেৎজি।
এমি বিজয়ী হলেন যারা—
সেরা কমেডি সিরিজ: দ্য স্টুডিও
সেরা ড্রামা সিরিজ: দ্য পিট
সেরা লিমিটেড বা অ্যানথোলজি সিরিজ: অ্যাডোলেসেন্স
আরো পড়ুন:
সত্যিই কি ফের বাবা হয়েছেন তাহসান?
রিসোর্ট খুঁজছেন ফারিয়া, সারজিস কী পরামর্শ দিলেন?
সেরা অভিনেতা (ড্রামা সিরিজ): নোয়া হয়াইল, (দ্য পিট)
সেরা অভিনেতা (কমেডি সিরিজ): সেঠ রোগেন (দ্য স্টুডিও)
সেরা অভিনেত্রী (ড্রামা সিরিজ): ব্রিট লোয়ার (সেভারেন্স)
সেরা অভিনেত্রী (কমেডি সিরিজ): জিন স্মার্ট (হ্যাকস)
সেরা অভিনেতা (লিমিটেড/অ্যানথোলজি সিরিজ): স্টিফেন গ্রাহাম (অ্যাডোলেসেন্স)
সেরা অভিনেত্রী (লিমিটেড সিরিজ/মুভি): ক্রিস্টিন মিলিওতি (দ্য পেঙ্গুইন)
সেরা পরিচালক (ড্রামা সিরিজ): অ্যাডাম র্যানডাল, (স্লো হর্সেস, হ্যালো গুডবাই)
সেরা পরিচালক (কমেডি সিরিজ): সেঠ রোগেন ও ইভান গোল্ডবার্গ (দ্য স্টুডিও, দ্য অনার)
সেরা পরিচালক (লিমিটেড সিরিজ): ফিলিপ বারান্তিনি (অ্যাডোলেসেন্স)
সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী (কমেডি): হান্না আইনবাইন্ডার (হ্যাকস)
সেরা পার্শ্ব অভিনেতা (কমেডি): জেফ হিলার (সামবডি সামহোয়ার)
সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী (ড্রামা): ক্যাথেরিন লানাসা (দ্য পিট)
সেরা পার্শ্ব অভিনেতা (ড্রামা): ট্রামেল টিলম্যান (সেভারেন্স)
সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী (লিমিটেড সিরিজ অথবা টিভি চলচ্চিত্র): এরিন ডোহার্টি (অ্যাডোলেসেন্স)
সেরা পার্শ্ব অভিনেতা (লিমিটেড সিরিজ অথবা টিভি চলচ্চিত্র): ওয়েন কুপার (অ্যাডোলেসেন্স)
ভ্যারাইটি টক সিরিজ: দ্য লেট শো
ভ্যারাইটি স্ক্রিপ্টেড সিরিজ: লাস্ট উইক টুনাইট উইথ জন অলিভার
তথ্যসূত্র: ভ্যারাইটি
ঢাকা/শান্ত