পড়েন এক কলেজে, অন্য কলেজে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক
Published: 19th, April 2025 GMT
নোয়াখালীর সদর উপজেলার নেয়াজপুর ইউনিয়নে ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজ। এই কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন মুরাদ হোসেন ওরফে রাব্বি। তিনি কলেজটিরই ছাত্র নন। মুরাদ হোসেন নোয়াখালী সরকারি কলেজে স্নাতক (পাস) দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন।
গত ২৩ মার্চ কেন্দ্রীয় ছাত্রদল এই কলেজ শাখার কমিটি ঘোষণা করে। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো.
জানা গেছে, বর্তমানে কলেজটির ছাত্র না হলেও এইচএসসিতে ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজে পড়েছেন মুরাদ হোসেন। ২০২০ সালে তিনি কলেজটি থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে ২০২০–২১ শিক্ষাবর্ষে নোয়াখালী সরকারি কলেজের বিবিএস (স্নাতক) প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে তিনি দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়ন করছেন। তাঁর রোল নম্বর ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর যাচাই করে এর সত্যতা পাওয়া যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজ শাখা ছাত্রদলের বর্তমান ও সাবেক একাধিক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, কলেজ শাখার কমিটিতে পদ পেতে হলে ওই কলেজের শিক্ষার্থী হতে হবে, এটি অনেকটা অলিখিত সাংগঠনিক নিয়ম ও ঐতিহ্য হিসেবে পালন হয়ে আসছে। কিন্তু ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হয়নি। এই কলেজের শিক্ষার্থী বাদ দিয়ে অন্য কলেজের শিক্ষার্থীকে সাধারণ সম্পাদক করা দুঃখজনক।
জানতে চাইলে ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজে ছাত্রদলের রাজনীতি করে আসছেন। সেখান থেকে এইচএসসি পাস করে নোয়াখালী সরকারি কলেজে ভর্তি হয়েছেন। তবে একই সঙ্গে তিনি ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তির প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ‘নোয়াখালী সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার আগেই ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজ কমিটিতে আমার নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়। কিন্তু কমিটির অনুমোদন হতে দেরি হয়েছে।’
বর্তমানে নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের কোনো কমিটি নেই। তবে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান মো. নোমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক কলেজের ছাত্র আরেক কলেজ কমিটির নেতা হতে পারবেন না, এমন কথা ছাত্রদলের গঠনতন্ত্রে উল্লেখ নেই। তা ছাড়া মুরাদ হোসেন এর আগে ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।’ কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীনকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি বিষয়টি দেখছেন, পরে এ বিষয়ে জানাবেন।’ তবে পরে আর তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি।
জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন খান প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের চর্চা অতীতে হয়নি। তবে ভুলক্রমে যদি এটি হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে এটিকে বিতর্ক তৈরির সুযোগ না দিয়ে শুদ্ধ করা উচিত। তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, ওই ছাত্রনেতা এরই মধ্যে নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে তাঁর ছাত্রত্ব স্থানান্তরের আবেদন করেছেন। কিন্তু দাপ্তরিক কারণে সেটি বিলম্ব হচ্ছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র স প রথম আল ক কল জ শ খ কল জ র কম ট র র কম ট সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
তিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৫ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ
সম্পূরক বৃত্তি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণাসহ তিন দফা দাবিতে অনশনে বসা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে দুজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন তাঁরা।
এর আগে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়।
তিন দফা দাবির অন্যটি হলো ক্যাফেটেরিয়ায় ভর্তুকি প্রদান ও স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করা এবং কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা চালু।
আজ বুধবার দুপুরে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে তিন দফা দাবিতে অনশন চালিয়ে যেতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনশনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে তাঁদের খোঁজখবর নিতে দেখা যায়।
অনশনে বসা পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন উদ্ভিদবিজ্ঞানের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ফয়সাল মুরাদ ও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ফেরদৌস শেখ, ইতিহাস বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শাহীন মিয়া এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের অপু মুন্সী।
অনশনকারীদের মধ্যে ফয়সাল মুরাদ ও এ কে এম রাকিব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের পেটে ব্যথা, রক্তচাপ কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে।
অনশনকারী অপু মুন্সী বলেন, পারিবারিক কারণে তাঁকে গ্রামে চলে যেতে হয়েছে। তাই গতকাল রাতে তিনি অবস্থান করতে পারেননি।
আজ অনশনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে অনশনকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করবেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ কারণে শিক্ষার্থীদের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে উপস্থিত হতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
অনশনে অংশ নেওয়া শাহীন মিয়া বলেন, প্রশাসন আগের মতোই বাহানা করে যাচ্ছে। হচ্ছে, হবে এ বক্তব্য থেকে বের হতে পারেনি প্রশাসন। আর কোনো টালবাহানা তাঁরা শুনবেন না। তাঁদের দাবি অবশ্যই মানতে হবে। তা না হলে প্রশাসনকে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে।
আরেক অনশনকারী ফয়সাল মুরাদ বলেন, প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে অনশন চলছে, কিন্তু প্রশাসন এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ইতিমধ্যে তিনিসহ আরও একজন অনশনকারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
অনশনকারী এ কে এম রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অবস্থানসহ বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করেছি, কিন্তু তাতে প্রশাসন কর্ণপাত করেনি। তাই অনশনে যেতে বাধ্য হয়েছি। এ ছাড়া আমাদের উপায় ছিল না। এই নখদন্তহীন প্রশাসন হয়তো আমাদের দাবি মেনে নেবে, নয়তো তাদের নিজেদের রাস্তা মাপতে হবে।’
আরও পড়ুনসম্পূরক বৃত্তি ও জকসু নির্বাচনের রূপরেখাসহ তিন দাবিতে অনশনে ৫ শিক্ষার্থী১৯ ঘণ্টা আগেযতক্ষণ তিন দফা দাবি আদায় না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত অনশন চলবে জানিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যতক্ষণ শরীরে শেষ রক্তবিন্দু আছে ততক্ষণ তাঁরা অনশন চালিয়ে যাবেন। ক্লাস-পরীক্ষা শেষ করে অনেকেই এসে সংহতি প্রকাশ করছেন। সকাল থেকে এ সংখ্যা বাড়ছে।
এদিকে গতকাল রাতে অনশনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে উপস্থিত হন। এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম ডিসেম্বরের মধ্যে জকসু নির্বাচন আয়োজনের এবং জানুয়ারি মাস থেকে সম্পূরক বৃত্তি দেওয়ার আশ্বাস দেন।
তবে সুস্পষ্ট রূপরেখা ছাড়া ও প্রশাসন থেকে লিখিত না পাওয়া পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে উপাচার্যকে জানিয়েছেন অনশনকারী শিক্ষার্থীরা।