‘অল ওয়েদার’ সড়ক নির্মাণে জড়িতদের শাস্তি হওয়া দরকার: ফরিদা আখতার
Published: 19th, April 2025 GMT
হাওরে অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, হাওরে ‘অল ওয়েদার’ সড়ক নির্মাণ করাটা ছিল অন্যায়। এটার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত।
‘সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি ২০০৯: হাওর অঞ্চলে বৈষম্য ও অব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় ফরিদা আখতার এ কথা বলেন। আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এ সভার আয়োজন করে।
উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘মিঠামইনে যে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে, সেটাকে বলা হচ্ছে অল ওয়েদার সড়ক। কারণটা কী? পরে জানলাম, সব ঋতুতে এই সড়ক সহনশীল। অথচ এই রাস্তা তৈরি করতে গিয়ে ওই এলাকার ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেছে। অনেক টাকা খরচ করে সড়কটা করা অন্যায় হয়েছে। আমি মনে করি, এই সড়ক নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিচার হওয়া দরকার।’
বাঁধ দেওয়াটাকেও হাওরের জন্য সমস্যা বলে চিহ্নিত করেন ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, ‘আরও একটা জায়গায় আমরা আটকে যাই, সেটা হলো বাঁধ। পানি উন্নয়ন বোর্ড কথায় কথায় বাঁধ দিয়ে দেয়। এখানে কৃষির সঙ্গে একটা কনফ্লিক্ট (সাংঘর্ষিক)।’
স্থানীয় জাতের ধানের পরিবর্তে আধুনিক চাষাবাদের প্রচলন হওয়ার কারণে হাওরে আগের মতো পানি, মাছ আর ধান হচ্ছে না জানিয়ে মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, কৃষিতে আগে হাওরে স্থানীয় জাতের ধান হতো। তাতে এত কীটনাশক, সার প্রয়োজন হতো না। এখন ওখানে করা হচ্ছে আধুনিক জাতের চাষ। আধুনিক জাতের চাষ করা মানে হচ্ছে কীটনাশক, সার দেওয়া। এগুলোকে বিপজ্জনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসবের কারণে ধান ও মাছ আগের মতো অত সহজভাবে হচ্ছে না।
হাওরে ইজারা প্রথা বন্ধ করার ওপর জোর দিয়ে ফরিদা আখতার বলেন, কোনো হাওরে ইজারা থাকা উচিত নয়। ইজারা বন্ধ করতে হবে। এগুলো সেখানকার মানুষের অধিকার।
ধরার আহ্বায়ক রাশেদা কে চৌধুরী সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ইটনা-মিঠামইন সড়ক নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন বাংলাদেশে আর না হয়। প্রতিপত্তি, প্রভাব খাটিয়ে কেউ যেন বাংলাদেশের মানুষের অধিকার খর্ব করতে না পারে।
ইজারা প্রথা বাতিলে উপদেষ্টার প্রস্তাবে একমত প্রকাশ করে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, জলমহালগুলোর একটা হালনাগাদ তথ্য দরকার। এ ছাড়া সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় হাওর অঞ্চলকে আনা জরুরি। রাষ্ট্রীয় সহায়তা খুব দরকার।
বাংলাদেশ রিসোর্চ সেন্টার ফর ইনডিজেনাস নলেজের (বারসিক) পরিচালক পাভেল পার্থ বলেন, মেঘালয় অঞ্চলে গহিন বন কেটে সাফ করে ফেলা হয়েছে। বড় বড় বাঁধ দেওয়া হয়েছে। অপরিকল্পিত খনি করা হয়েছে। উজানের এসব কর্মকাণ্ডের ফলে হাওরে পানির পরিমাণ কমে গেছে।
হাওর থেকে ইতিমধ্যে নানা প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার উদাহরণ তুলে ধরে বারসিকের পরিচালক বলেন, হিজলের পাতায় যে অনুজীব তৈরি হয়, সেটা মাছের খাবার। সে জন্য হাওরে জলাবন রক্ষা করতে হবে। তিনি হাওরকে যৌথ নদী কমিশনের অন্তর্ভুক্ত করতে সরকারকে পরামর্শ দেন।
ধরার সদস্যসচিব শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কৃষিসচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার, শিক্ষক ও গবেষক জাকিয়া শিশির প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট সড়ক ন দরক র আখত র
এছাড়াও পড়ুন:
দেশবাসী দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়: আমীর খসরু
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দেশের মানুষ ২০ বছর ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি এবং নতুন প্রজন্মও ভোট দিতে পারেনি। তাই, তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়।
সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক পথেই এগিয়ে যাবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে জনগণের যে ত্যাগ, সে পথেই দেশ অগ্রসর হবে।
প্রধান উপদেষ্টার মতো বিএনপিও রোজার আগে বিচার ও সংস্কারের অগ্রগতি চায় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সংস্কারের বিষয়টি ঐকমত্যের ওপর নির্ভরশীল। এ বিষয়ে ড. ইউনূস, তারেক রহমান এবং বিএনপির সকল নেতৃবৃন্দ আগেই বলেছেন।
তিনি মনে করেন, ঐকমত্য হতে এক থেকে দেড় মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়।
বিচার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটি চলমান প্রক্রিয়া এবং বিচার বিভাগের ওপর নির্ভর করে। বিচার বিভাগ বিচার করবে এবং বিচারের আওতায় আনারও বিষয় আছে। যারা বিচারের আওতায় আসবে, তার জন্য আরো প্রায় ছয় মাস সময় আছে। আর যারা এর মধ্যে আসবে না, তাদের জন্য তো আগামী সরকার আছে।
সরকারের কি এখন নির্বাচনমুখী কর্মকাণ্ডের দিকে এগিয়ে যাওয়া দরকার আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন ছাড়া গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক এবং জনগণের সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আর কোনো পথ নেই। এ বিষয়ে সবাই ঐকমত্য পোষণ করছেন।
জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির অভিযোগ, একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকার বিশেষ সম্পর্ক করছে, বিএনপি বিষয়টি কীভাবে দেখছে? এ প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, “আমি একটা জিনিস মনে করি, আমরা যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তাহলে এখানে সবার মতামত নেওয়ার সুযোগ আছে। সুতরাং, সবাই তাদের মতামত দিতে পারে। আমার মনে হয়, এটাই আমাদের গণতন্ত্রের বড় পাওয়া, সবাই নিজেদের মতামত দেবে। এর মধ্যে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”
বিএনপি এত দিন ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বললেও এখন কেন ফেব্রুয়ারিতে গেল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনেক সময়। এবং এত সময়ও লাগার কোনো কারণ নেই। বিএনপি আগে ডিসেম্বরের মধ্যেই এসব সমস্যার সমাধান করে নির্বাচনের কথা বলেছে। সুতরাং, ফেব্রুয়ারি আরো দীর্ঘ সময়। তবে, যদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হয়, তাতেও কোনো সমস্যা নেই।
আমীর খসরু বলেন, “আমি আগেও বলেছি, যত বেশি ঐকমত্যের মাধ্যমে আমরা নিজেদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারব, সেটা জাতির জন্য তত ভালো। আমরা যে ঐকমত্যের মধ্যে এসেছি, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়।”
তিনি আরো বলেন, “ঐকমত্য থাকার ফলেই আমরা স্বৈরাচারকে বিদায় করতে পেরেছি। সুতরাং, আমরা চেষ্টা করব, যেখানেই সম্ভব ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেব।”
তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠকে নির্বাচনে নিরপেক্ষতার বিষয়ে কোনো আলোচনা বা বার্তা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখনই নির্বাচন শুরু হবে, তখনই সরকার নিরপেক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের ধারণা হলো— একটি নিরপেক্ষ সরকার। সুতরাং, নির্বাচনে সেই নিরপেক্ষতা সরকার নিশ্চিত করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
বৈঠকে সংস্কারের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান বলেছেন, এখানে যতটুকু ঐকমত্য হবে, সংস্কারও ততটুকুই হবে। বাকি অংশটা নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির কাছে নিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া। এটি এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না, নির্বাচনের পরেও এটি চলমান থাকবে।
ঢাকা/রায়হান/রফিক