দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, সামনের দিনের সাংগঠনিক কর্মসূচি, নীতিমালা কেমন হবে ইত্যাদি বিষয়ে সাধারণ সভা করেছে তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এতে কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকেই তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন-জবাবদিহিতার মুখে পড়েছেন। সভায় উপস্থিত নেতাদের কাছ থেকে এসব বিষয়ে জানা গেছে। এ ছাড়া সভায় গণপরিষদ নির্বাচন, সাংগঠনিক কার্যক্রমের বিস্তৃতি নিয়ে মাঠের কর্মসূচিতে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

শুক্রবার দুপুর ৩টায় শুরু হয়ে রাত ২টা পর্যন্ত ১১ ঘণ্টাব্যাপী এ আলোচনা সভা এনসিপির অস্থায়ী  কার্যালয় রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ন টাওয়ারে অনুষ্ঠিত হয়। এনসিপির তৃতীয় সাধারণ সভায় দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সভাপতিত্ব করেন। সঞ্চালনা করেন দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন।

সভায় অংশ নেওয়া সংগঠক পর্যায়ের এক নেতা সমকালকে বলেন, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহসহ কয়েকজন নেতা প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন। তিনি কীভাবে বিশাল গাড়ি বহর নিয়ে শোডাউন দিয়েছেন। সংগঠনের অধিকাংশ নেতাই কোনো আর্থিক সাহায্য পান না সংগঠন থেকে, কিন্তু দেখা যায় অনেকে প্রচুর টাকা খরচ করছেন। এসব টাকা কোথা থেকে আসছে, এসব বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছে। তাদের কারণে দলের বাকিদেরও সমালোচনায় পড়তে হচ্ছে, দলের দুর্নাম হচ্ছে। মোট কথা ছোট থেকে জ্যেষ্ঠ নেতা সবাই জবাবদিহির সম্মুখীন হয়েছেন। আশা করা যায়, সামনে তারা সতর্ক থাকবেন।

এদিকে সভা শেষে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাতের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাধারণ সভায় এনসিপির অঞ্চলভিত্তিক সাংগঠনিক নীতিমালা নির্ধারণ, সংস্কারবিষয়ক প্রস্তাব প্রণয়ন, গণহত্যায় জড়িত আওয়ামী লীগের বিচার ও গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি নির্ধারণ, সীমান্ত হত্যা বন্ধে কার্যকর নীতি গ্রহণে সরকারকে দাবি জানানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান ইসরায়েলি সহিংসতা ও ভারতে ওয়াকফ বিলের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে দমন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করে জনমনে স্বস্তি আনতে সরকারকে জোর দাবি জানানোর বিষয়েও আলোচনা করা হয়েছে।

সভায় এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব গাজী সালাউদ্দীন তানভীরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়েও অনেকে কথা বলেন। তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা দেখা গেছে। সভায় এক নেতা জানতে চান, গাজী সালাউদ্দীন নাগরিক কমিটিতেও ছিলেন না, আবার আন্দোলনেও সমন্বয়ক পর্যায়ে  ছিলেন না। তবুও তাকে এনসিপির বড় পদে কেন দেওয়া হয়েছে? এ ছাড়া সভায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেন, তার প্রেস সচিব মাহফুজুল আলমের ব্যাপারেও আলাপ ওঠে। পরে এসব বিষয়ে দলের একটি শৃঙ্খলা কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও জনপরিসরে এনসিপির বেশকিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাংগঠনিক ‘শৃঙ্খলা ও তদন্ত’ কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রোববার এই কমিটি গঠিত হবে।

এ প্রসঙ্গে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব সমকালকে বলেন, আমরা সভায় ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতি নয়, দলের রাজনীতির কথা বলেছি। সভায় দলের সদস্যরা প্রায় সবাই কথা বলেছেন। সবাইকেই জবাবদিহির আওতায় থাকতে হবে এ কথা সবাই বলেছেন। সেজন্য অনেকের কাছে জবাবদিহিতা চাওয়া হয়েছে এবং একটি শৃঙ্খলা কমিটি গঠিত হয়েছে।

দীর্ঘ সভায় এনসিপির আগামীর রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় দলের জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে আহ্বায়ক পদে সর্বনিম্ন ৪০ বছর বয়স হতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া সাংগঠনিক কাজের স্বার্থে ৬৪টি জেলাকে ১৯টি জোনে ভাগ করা হয়। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে জেলা পর্যায়ে সর্বনিম্ন ৩১ থেকে সর্বোচ্চ ৫১ সদস্যের এবং উপজেলা পর্যায়ে সর্বনিম্ন ২১ থেকে সর্বোচ্চ ৪১ সদস্যের কমিটি গঠিত হবে। কমিটিগুলো অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক এবং সদস্য সচিবের স্বাক্ষরে অনুমোদিত হবে সিদ্ধান্ত হয়।  

যেখানে দলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং সদস্য সচিব আখতার হোসেনের বয়স ৩০ বছরের বেশি নয়, সেখানে জেলা-উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক ৪০ বছরের নিচে নয় কেন, এমন প্রশ্নে আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, সবাই মনে করছে এটা শুধু ৩০ বছর বয়সীদের সংগঠন। আমরা সব বয়সের মানুষদের যুক্ত করার জন্য বা বয়স্কদের উৎসাহিত করার জন্য এটা করা হয়েছে।

এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ভীম্পাল্লী ডেভিড রাজু সমকালকে বলেন, সভায় নির্বাচন নিয়ে তেমন কথা হয়নি। তবে আমরা এনসিপিও নির্বাচনের পক্ষে। তবে তার আগে বিচার প্রক্রিয়া, সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে হবে। আর দলের শৃঙ্খলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। এটা যেন নষ্ট না হয় সে বিষয়ে কথা হয়েছে।

এদিকে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় দলের সাংগঠনিক গতিশীলতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রস্তাব করেন মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ। এ ছাড়া বিচার, সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিতে চলতি সপ্তাহে এনসিপির ঢাকা মহানগর শাখা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে বলে জানানো হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনস প ম খ য স গঠক এনস প র য় দল র র র জন পর য য় ইসল ম গঠন ক

এছাড়াও পড়ুন:

‘শত শত বাস আসছে, পা ফেলানোর জায়গা নাই’

টাঙ্গাইলের কালিহাতীর নারান্দিয়ার বাসিন্দা শেফালী বেগম। সাভারের বাইপাইল এলাকার একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন তিনি। ঈদুল আজহার ছুটি শেষ হওয়ায় শনিবার (১৪ জুন) বিকেলে প্রায় চার ঘণ্টা কালিহাতীর এলেঙ্গায় বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন এই নারী। বাসে উঠতে না পেরে কর্মস্থলে যেতে তাকে উঠতে হয় পিকআপ ভ্যানে। ২০০ টাকার জায়গায় ৩৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে রওনা হন গন্তব্যে। 

যাত্রা শুরুর আগে শেফালী বলেন, “গরম ও সড়কের ধুলাবালিতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। সড়কে চার ঘণ্টা দাঁড়িয় থেকে উপায় না পেয়ে পিকআপে করে ঢাকায় যেতে হচ্ছে।” 

শুধু শেফালী নয়, তার মতো লাখ লাখ মানুষ আজ দিনভর ভোগান্তি নিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে দিয়ে ঢাকায় কর্মস্থলে ফিরছেন। শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে শত শত মানুষকে গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। কেউ ২ ঘণ্টা, কেউ ৩ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছিলেন গণপরিবহনের জন্য।

আরো পড়ুন:

গাজীপুরে মহাসড়কে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের চাপ

সিরাজগঞ্জে গাড়ির অপেক্ষায় কর্মস্থলে ফেরা মানুষ

জুলেখা বেগম বলেন, “আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। উত্তরবঙ্গ থেকে শত শত বাস আসছে, কিন্তু কোনো বাসেই পা ফেলানোর মতো জায়গা নাই। গরমও সহ্য হচ্ছে না।”

কর্মস্থলে ফিরতে বাসের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের একাংশ 

ইকবাল আলী বলেন, “মহাসড়কে ভোগান্তি ছাড়া কিছুই দেখছি না। পরিবহনগুলোতে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।”

হারুন মিয়া নামে এক ট্রাক চালক বলেন, “সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত আসতে ১০ ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। স্বাভাবিক সময় লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা।”

এর আগে, গতকাল শুক্রবার মধ্যরাত থেকে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, একাধিক সড়ক দুর্ঘটনা ও যানবাহন বিকল হওয়ায় যমুনা সেতুর টোলপ্লাজা থেকে টাঙ্গাইলের রাবনা পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে তা কমে ১৪ কিলোমিটারে আসে। এছাড়া, মহাসড়কে গণপরিবহনের সংকট থাকায় কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খোলা ট্রাক ও পিকআপে গন্তব্যে যাচ্ছে মানুষ। সব মিলিয়ে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৯ হাজার ১৮২টি যানবাহন যমুনা সেতা পারাপার করেছে। এ থেকে টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ১৩ হাজার ২০০ টাকা।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, “মহাসড়কে যানজট নিরসনে পুলিশ কাজ করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।” 

ঢাকা/কাওছার/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘শত শত বাস আসছে, পা ফেলানোর জায়গা নাই’