সাধারণ সভায় প্রশ্নের মুখে এনসিপির কয়েক জ্যেষ্ঠ নেতা
Published: 19th, April 2025 GMT
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, সামনের দিনের সাংগঠনিক কর্মসূচি, নীতিমালা কেমন হবে ইত্যাদি বিষয়ে সাধারণ সভা করেছে তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এতে কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকেই তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন-জবাবদিহিতার মুখে পড়েছেন। সভায় উপস্থিত নেতাদের কাছ থেকে এসব বিষয়ে জানা গেছে। এ ছাড়া সভায় গণপরিষদ নির্বাচন, সাংগঠনিক কার্যক্রমের বিস্তৃতি নিয়ে মাঠের কর্মসূচিতে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
শুক্রবার দুপুর ৩টায় শুরু হয়ে রাত ২টা পর্যন্ত ১১ ঘণ্টাব্যাপী এ আলোচনা সভা এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয় রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ন টাওয়ারে অনুষ্ঠিত হয়। এনসিপির তৃতীয় সাধারণ সভায় দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সভাপতিত্ব করেন। সঞ্চালনা করেন দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
সভায় অংশ নেওয়া সংগঠক পর্যায়ের এক নেতা সমকালকে বলেন, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহসহ কয়েকজন নেতা প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন। তিনি কীভাবে বিশাল গাড়ি বহর নিয়ে শোডাউন দিয়েছেন। সংগঠনের অধিকাংশ নেতাই কোনো আর্থিক সাহায্য পান না সংগঠন থেকে, কিন্তু দেখা যায় অনেকে প্রচুর টাকা খরচ করছেন। এসব টাকা কোথা থেকে আসছে, এসব বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছে। তাদের কারণে দলের বাকিদেরও সমালোচনায় পড়তে হচ্ছে, দলের দুর্নাম হচ্ছে। মোট কথা ছোট থেকে জ্যেষ্ঠ নেতা সবাই জবাবদিহির সম্মুখীন হয়েছেন। আশা করা যায়, সামনে তারা সতর্ক থাকবেন।
এদিকে সভা শেষে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাতের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাধারণ সভায় এনসিপির অঞ্চলভিত্তিক সাংগঠনিক নীতিমালা নির্ধারণ, সংস্কারবিষয়ক প্রস্তাব প্রণয়ন, গণহত্যায় জড়িত আওয়ামী লীগের বিচার ও গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি নির্ধারণ, সীমান্ত হত্যা বন্ধে কার্যকর নীতি গ্রহণে সরকারকে দাবি জানানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান ইসরায়েলি সহিংসতা ও ভারতে ওয়াকফ বিলের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে দমন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করে জনমনে স্বস্তি আনতে সরকারকে জোর দাবি জানানোর বিষয়েও আলোচনা করা হয়েছে।
সভায় এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব গাজী সালাউদ্দীন তানভীরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়েও অনেকে কথা বলেন। তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা দেখা গেছে। সভায় এক নেতা জানতে চান, গাজী সালাউদ্দীন নাগরিক কমিটিতেও ছিলেন না, আবার আন্দোলনেও সমন্বয়ক পর্যায়ে ছিলেন না। তবুও তাকে এনসিপির বড় পদে কেন দেওয়া হয়েছে? এ ছাড়া সভায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেন, তার প্রেস সচিব মাহফুজুল আলমের ব্যাপারেও আলাপ ওঠে। পরে এসব বিষয়ে দলের একটি শৃঙ্খলা কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও জনপরিসরে এনসিপির বেশকিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাংগঠনিক ‘শৃঙ্খলা ও তদন্ত’ কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রোববার এই কমিটি গঠিত হবে।
এ প্রসঙ্গে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব সমকালকে বলেন, আমরা সভায় ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতি নয়, দলের রাজনীতির কথা বলেছি। সভায় দলের সদস্যরা প্রায় সবাই কথা বলেছেন। সবাইকেই জবাবদিহির আওতায় থাকতে হবে এ কথা সবাই বলেছেন। সেজন্য অনেকের কাছে জবাবদিহিতা চাওয়া হয়েছে এবং একটি শৃঙ্খলা কমিটি গঠিত হয়েছে।
দীর্ঘ সভায় এনসিপির আগামীর রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় দলের জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে আহ্বায়ক পদে সর্বনিম্ন ৪০ বছর বয়স হতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া সাংগঠনিক কাজের স্বার্থে ৬৪টি জেলাকে ১৯টি জোনে ভাগ করা হয়। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে জেলা পর্যায়ে সর্বনিম্ন ৩১ থেকে সর্বোচ্চ ৫১ সদস্যের এবং উপজেলা পর্যায়ে সর্বনিম্ন ২১ থেকে সর্বোচ্চ ৪১ সদস্যের কমিটি গঠিত হবে। কমিটিগুলো অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক এবং সদস্য সচিবের স্বাক্ষরে অনুমোদিত হবে সিদ্ধান্ত হয়।
যেখানে দলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং সদস্য সচিব আখতার হোসেনের বয়স ৩০ বছরের বেশি নয়, সেখানে জেলা-উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক ৪০ বছরের নিচে নয় কেন, এমন প্রশ্নে আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, সবাই মনে করছে এটা শুধু ৩০ বছর বয়সীদের সংগঠন। আমরা সব বয়সের মানুষদের যুক্ত করার জন্য বা বয়স্কদের উৎসাহিত করার জন্য এটা করা হয়েছে।
এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ভীম্পাল্লী ডেভিড রাজু সমকালকে বলেন, সভায় নির্বাচন নিয়ে তেমন কথা হয়নি। তবে আমরা এনসিপিও নির্বাচনের পক্ষে। তবে তার আগে বিচার প্রক্রিয়া, সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে হবে। আর দলের শৃঙ্খলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। এটা যেন নষ্ট না হয় সে বিষয়ে কথা হয়েছে।
এদিকে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় দলের সাংগঠনিক গতিশীলতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রস্তাব করেন মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ। এ ছাড়া বিচার, সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিতে চলতি সপ্তাহে এনসিপির ঢাকা মহানগর শাখা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে বলে জানানো হয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনস প ম খ য স গঠক এনস প র য় দল র র র জন পর য য় ইসল ম গঠন ক
এছাড়াও পড়ুন:
৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে
জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং দ্রুত স্থায়ী বিধানে যুক্ত করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় ৯ ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রেখেছেন ‘জুলাই যোদ্ধারা’। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের (আহত) ব্যানারে তাঁরা এ ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছেন।
রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। এসব সড়কে দিনভর ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ফলে বৃষ্টির মধ্যে জীবনের তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে চলে গণপরিবহন, অনেক যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে হেঁটে হেঁটে। বিশেষ করে অফিসফেরত মানুষকে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
বেলা ১১টায় শাহবাগ মোড়ের সঙ্গে যুক্ত সব সড়কের মুখ আটকে দিয়ে সড়কের মাঝখানে অবস্থান নেন অবরোধকারীরা। এ সময় তাঁরা জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি জানান। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই যোদ্ধা সংসদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম ওই কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়। এ সময় অবরোধকারীরা ‘জুলাই নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘জুলাইয়ের চেতনা দিতে হবে ঘোষণা’, ‘জুলাই সনদ দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন।
বন্ধ হয়ে পড়ে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাব ও গুলিস্তানগামী প্রধান সড়কগুলোও। ফলে সকাল থেকেই এসব এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এসব সড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো বিকল্প পথে চলাচল করে।
বেলা তিনটার দিকে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ–সংলগ্ন মূল সড়কে পুলিশের ব্যারিকেড ও বাঁশ ব্যবহার করে সড়ক আটকে রেখেছেন অবরোধকারীরা। শাহবাগ থানার সামনের সড়কেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন তাঁরা।
বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব নূরে আলম বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে যাব। কোনো বাস পাচ্ছি না। রিকশায় যে কিছু দূর যাব, তারাও ভাড়া বেশি চাচ্ছে।’ একপর্যায়ে হেঁটেই রওনা দেন তিনি।
এক পথচারী ইমরান হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুই দিন পরপর সড়ক অবরোধ হয়। এর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।’
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হতে দেখা যায় মোটরবাইক আরোহীদের। শাহবাগ থানার সামনে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাকে বাধা দিলে চালক বলেন, ‘এত দাবিদাওয়া এত দিন আছিলো কই।’ তবে গণপরিবহন আটকে দেওয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যানবাহন এবং তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স শুরু থেকেই চলাচল করতে দেখা গেছে।
অবরোধকারীদের দাবি
অবরোধকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি; শহীদ পরিবার ও আহতদের আজীবন সম্মান; চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করা; আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও কল্যাণমূলক ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করা; আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তাকেন্দ্র গঠন করা; শহীদ ও আহতদের ওপর সংগঠিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচারকাজ সম্পন্ন করা এবং একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন গঠন করা।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুর বলেন, সকাল থেকেই শাহবাগে অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শাহবাগ থানা-পুলিশ আলোচনার মাধ্যমে অবরোধকারীদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
তবে জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা জানান, তাঁদের আন্দোলন চলছে। সনদ ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাঁরা এখানেই থাকবেন।