চীন–ভারত ও মিয়ানমার প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা
Published: 20th, April 2025 GMT
মার্কিন দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী চলতি সপ্তাহে তিন দিনের সফরে বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন। দুই দেশের সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে চীন, ভারত ও মিয়ানমারের সাম্প্রতিক সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে ওই প্রতিনিধিদল জানতে ও বুঝতে চেয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ সরকারের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছে।
গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিক ঢাকায় আসেন। পরদিন বুধবার আরেকটি ফ্লাইটে ঢাকায় আসেন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হেরাপ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে মার্কিন দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন। একই দিনে এর আগে তাঁরা পৃথকভাবে পররাষ্ট্র উপদেস্টা মো.
বাসস জানায়, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় মার্কিন দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের কথা জানান। তাঁদের আলোচনায় আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নসংক্রান্ত প্রসঙ্গগুলো আসে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, দুই উপসহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরকারের সঙ্গে আলোচনায় যেসব বিষয় তুলেছেন, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের বর্তমান পরিস্থিতি, বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশ ও ভারতের দুই শীর্ষ নেতার আলোচনা, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতা, মিয়ানমারের সামরিক জান্তার জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে প্রধান উপদেস্টার বৈঠক ও রোহিঙ্গা সংকট।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে, ওয়াশিংটনের ওই দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রধান উপদেস্টাসহ সরকারের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারপ্রক্রিয়া, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপসহ ব্যবসাবাণিজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) সহায়তা পুনর্বিবেচনা ইত্যাদি প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছেন। শুল্ক আরোপের প্রেক্ষাপটে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য–ঘাটতি কাটাতে যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং থেকে উড়োজাহাজ কেনাকাটার প্রসঙ্গটি আলোচনায় এসেছে।
জানা গেছে, মিয়ানমারের পরিস্থিতি, বিশেষ করে সামরিক শাসন জারির পর থেকে দেশটির বিভিন্ন অংশ সরকারবিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে—বিষয়টি বাংলাদেশ কীভাবে বিবেচনা করছে, তা আলোচনায় এসেছে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যের অধিকাংশ এলাকা আরাকান আর্মির দখলে। আবার দেশটিতে নির্বাচনের সময়সূচিও ঘোষণা করেছে জান্তা সরকার। এমন এক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং আরাকান আর্মির যোগাযোগ বা যুক্ততা কতটা হচ্ছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে চীনের মধ্যস্থতায় ত্রিপক্ষীয় আলোচনার সর্বশেষ অগ্রগতি কী হয়েছে, তা জানতে চেয়েছিল মার্কিন প্রতিনিধিদল। তাদের কৌতূহল ছিল বাংলাদেশ এখন মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির সামরিক সরকারের পাশাপাশি আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে কি না। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকটের কারণে বাংলাদেশ এই সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে পারছে না, সেটি বলেছে। এ জন্য মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ।
৪ এপ্রিল ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেস্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা মিন অং হ্লাইংয়ের আলোচনা হয়েছিল। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ওই বৈঠক নিয়ে মার্কিন কৌতূহলের জবাব দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, আগামী দুই বছরের জন্য বিমসটেকের সভাপতি রাষ্ট্র বাংলাদেশ। ফলে সভাপতিত্বকারী দেশের সরকারপ্রধান হিসেবে সব কটি সদস্যরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তিনি দেখা করেছেন।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনায় প্রসঙ্গক্রমে ঢাকা–দিল্লি সম্পর্কের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে কথা হয়েছে। এ সময় বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম হয়ে অপতথ্য ও মিথ্যা তথ্য বিস্তারের প্রসঙ্গটি আসে। এ সময় মার্কিন প্রতিনিধিরা অভিমত দেন, যেহেতু আন্তর্জাতিক পরিসরেও এসব অপতথ্য আর ভুল তথ্যের বিস্তার ঘটছে, তাই বাস্তব চিত্রটা সরকারের তুলে ধরার জন্য উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
মার্কিন প্রতিনিধিদল তাদের আলোচনায় চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতা বা যুক্ততা প্রসঙ্গে জানতে চেয়েছে। তখন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই মুহূর্তে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে চীনকে যুক্ত করে সহযোগিতার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।
সরকারের সঙ্গে আলোচনার আগে দুই মার্কিন প্রতিনিধিদল পৃথকভাবে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সংস্কার, নির্বাচন, আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ দুই দেশের সম্পর্কের বিষয়গুলো এসেছে। মার্কিন দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত শুক্রবার বাংলাদেশ সফর শেষে ফিরে গেছেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম র ক ন দ ই উপসহক র পরর ষ ট রমন ত র ক টন ত ক স ত র সরক র র স পরর ষ ট র র প রসঙ গ পর স থ ত উপদ স ট
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা বিভিন্ন দলের
ইরানে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন দল। অবিলম্বে এই হামলা ও গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবি জানিয়ে এ বিষয়ে দুনিয়ার শান্তিকামী দেশ ও বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে তারা। গতকাল রোববার পৃথক বিবৃতিতে এসব দলের নেতারা এই দাবি জানান। তারা ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণা এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ-ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ ও ইরানের জনগণের পাশে দাঁড়াতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদুল হাসান মানিক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুর আহমদ বকুল এক বিবৃতিতে বলেন, বর্তমান সময়ের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তার নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংকট সৃষ্টি করে রেখেছে। একতরফা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে ইরানের রাজনৈতিক সামরিক অগ্রযাত্রাকে রুখতে চেষ্টা করছে। যুদ্ধবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে এখনই থামতে হবে। অন্যায়ভাবে ইরানের শিশু-নারী ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর বোমা ও মিসাইল হামলা বন্ধ করতে হবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক পৃথক বিবৃতিতে বলেন, ইরানের পরমাণু স্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অঞ্চল লক্ষ্য করে ইসরায়েলের বেপরোয়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা রাষ্ট্রীয় ভয়ানক সন্ত্রাসী তৎপরতা। পরিকল্পিত এই হামলা আন্তর্জাতিক সব ধরনের বিধিবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল। জাতিসংঘকেও এরা পুরোপুরি ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করেছে।