হার্ভার্ডের ওপরেও ট্রাম্পের খবরদারি!
Published: 20th, April 2025 GMT
বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাবলম্বীর মধ্যে পরস্পর যুক্ত হওয়ার সংস্কৃতি কীভাবে আরও কার্যকরভাবে গড়ে তোলা যায়, তা সাম্প্রতিক জনপরিসরের বিতর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হিসেবে হাজির হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেয়ে কোথাও এমন সংস্কৃতি গড়ে ওঠা কঠিন। কয়েক দশক ধরে মূলত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত। যেখানে বিতর্কের পরিসর অনেকটা নিয়ন্ত্রিত এই অর্থে যে, অধিকাংশ মানুষ প্রায় একই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। এ কারণে তারা আক্রমণাত্মক বা ক্ষতিকারক বিষয়ে সতর্ক থাকে। বুদ্ধিবৃত্তিক অংশগ্রহণ ও বিতর্কের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি তৈরির আকাঙ্ক্ষাও এখন রাজনৈতিক বিষয়ে পরিণত। যার উদাহরণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যকার বর্তমান অচলাবস্থা। ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য অভিজাত কলেজকে তাদের পরিচালন প্রক্রিয়া ও অন্য কার্যক্রম পুনর্গঠনের দাবি পাঠিয়েছে। যেসব বিভাগকে বেশি র্যাডিক্যাল মনে হয়, সেগুলোরও সংস্কার দাবি করা হয়েছে।
এ হলো একাডেমিক কার্যক্রমের ওপর রাজনৈতিক খবরদারি আরোপের এক প্রচেষ্টা। গুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলোর মধ্যে আছে, কোনো বিভাগে বৈচিত্র্যের কমতি হলে সেখানে অবশ্যই নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবশ্যই রাজনৈতিক মত ‘নিরীক্ষা’ করতে হবে এবং কেবল তাদেরই নিয়োগ দিতে হবে যাদের রাজনীতি বৃহত্তর বৈচিত্র্যের পক্ষে। রাজনৈতিক ভারসাম্য মানে কী? সেখানে কতজন রক্ষণশীল থাকবে, কতজন মার্কসিস্ট? ফিলিস্তিনি লড়াইয়ে সমর্থন দেওয়ার জন্য ইহুদিদের মধ্যে কি কোনো কোটা থাকবে? কিংবা হামাসকে ঘৃণা করার মতো মুসলমান?
মতের বৈচিত্র্য যখন দাবি, তখন হোয়াইট হাউস জোর করছে ‘হার্ভার্ডকে অবশ্যই তার ভর্তি ও নিয়োগে সব মানদণ্ড, অগ্রাধিকার ও অনুশীলন বাদ দিতে হবে, যা আদর্শিক লিটমাস টেস্ট হিসেবে কাজ করে।’ বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে তাদের সম্ভাব্য নিয়োগে রাজনৈতিক মতামতের তথ্য বের করতে পারে? এমন অনুশীলন কি গ্রহণযোগ্য? ট্রাম্প যেমনটা দাবি করছেন, সব বিভাগে আদর্শিক পুনর্নির্মাণ কি সম্ভব?
আমেরিকাকে আবার মহান করার বিষয়টির মধ্যে যেমন সমস্যা ও দ্বন্দ্ব আছে, তেমনি মতের বৈচিত্র্যেরও চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। মতের বৈচিত্র্য কত থাকার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তবে যেসব সমাধানের কথা বলা হয়েছে, তা এ সমস্যাকে আরও বড় করবে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবির মূল অর্থ হলো, বিশ্ববিদ্যালয় ও সর্বত্র রক্ষণশীলদের জন্য ইতিবাচক ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং বৈচিত্র্যময় নীতি বাদ দেওয়া।
বিচিত্র মতকে উৎসাহিত করা, বিতর্কের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি লালন করা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতায় উৎসাহিত করা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতের পক্ষে কাজ করা, ব্যক্তির রাজনৈতিক পরিচয়কে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ এবং ভর্তি ও নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্বাসকেই স্বীকার করার মাধ্যমে যে সমাধানের কথা বলা হচ্ছে তাকে নৃতাত্ত্বিক বিজ্ঞানী রিচার্ড শিউডার খুব সমস্যাজনক বলে মনে করেন।
ম্যাক্স ওয়েবার সম্ভবত ২০ শতকের সবচেয়ে প্রভাবশালী সমাজবিজ্ঞানী। তিনি ‘মূল্যনিরপেক্ষ পদ্ধতি’র প্রস্তাব করেছিলেন, যার মাধ্যমে একজনের রাজনৈতিক মতাদর্শের পার্থক্য সত্ত্বেও একে অপরের প্রতি বস্তুনিষ্ঠ থাকা উচিত। অনেকেই ওয়েবারের পদ্ধতিকে নিষ্পাপ বলে মনে করেন। কারণ ‘কেউই ব্যক্তি বা দলের পূর্বধারণা নির্মূল করার কোনো উপায় খুঁজে পায়নি’। হেইট ও তাঁর সহকর্মীরাও এমন যুক্তি দিয়েছেন। তাদের পরামর্শ হলো, ক্ষেত্রটি এমনভাবে বৈচিত্র্যময় করা, যেখানে ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির পক্ষপাতিত্বের সুযোগ থাকবে না।’
অন্য কথায়, গবেষণায় উদারপন্থি পক্ষপাতিত্ব যেন রক্ষণশীল পক্ষপাতিত্ব দ্বারা মুছে যায়। এটি অনেক পরিস্থিতিতে কার্যকর হতে পারে, কিন্তু অন্য কিছু ক্ষেত্রে এটি উত্তর খুঁজে পাওয়ার প্রক্রিয়াকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে।
এ সমস্যা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমাবদ্ধ নয়, কিংবা আটলান্টিকের একদিকে নয়। এটি সাংস্কৃতিক পরিবর্তন, যা আমাদের সবাইকে মোকাবিলা করতে হবে। এগুলো এমন পরিবর্তন, যা রাষ্ট্রীয় আদেশ বা প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় সমাধান করা সম্ভব নয়। আমাদের প্রয়োজন তা হলো, সামাজিক এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণের অর্থ পুনরায় চিন্তা করা
এবং মানবমনের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি অনুধাবন করার ক্ষমতাকে উৎসাহিত ও উদযাপন করা।
কেনান মালিক: গার্ডিয়ানের কলাম লেখক; ইংরেজি থেকে ঈষৎ সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর মাহফুজুর রহমান মানিক
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে ফের ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়লো ইরান
ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। রবিবার মধ্যরাতে ইসরায়েলজুড়ে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানোর পর, সোমবার (১৬ জুন) ভোর হতে না হতেই দ্বিতীয় দফায় ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে তেহরান।সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলে ইরানের এটি দশম আক্রমণ।
টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, সোমবার ভোরে ইরান নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পরপরই ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) হোম ফ্রন্ট কমান্ড সাধারণ ইসরায়েলিদের বোমা শেল্টার ও আশ্রয়কেন্দ্রে প্রবেশের নির্দেশ দিয়েছে।
তেহরান টাইমস জানিয়েছে, রবিবার রাতে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বন্দরনগরী হাইফায় সরাসরি আঘাত হানে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কঠোর সেন্সরশিপ সত্ত্বেও, অনলাইনে প্রচারিত ফুটেজে হাইফায় একটি বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র আগুনে পুড়ে গেছে বলে দেখা গেছে। অঞ্চল জুড়ে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাটের খবর পাওয়া গেছে। তেল আবিবের একাধিক স্থানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরো পড়ুন:
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
রবিবার রাতে ইরান ইসরায়েলের নেগেভ মরুভূমি এবং কিরিয়াত গাটের কৌশলগত স্থানগুলোর পাশাপাশি হাইফার অন্যান্য অঞ্চলগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করেছে। এতে ইসরায়েলের সামরিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে তেহরান।
আগের দিনগুলোতে, ইরান ইসরায়েলের বৃহত্তম তেল শোধনাগার এবং ১৫০টিরও বেশি সামরিক ও গোয়েন্দা স্থাপনায় হামলা চালানোর দাবি করেছে।
শুক্রবার ভোরে তেহরানের আবাসিক ভবন ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ইসরায়েলের ব্যাপক হামলা চালানোর পর ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়।
তেহরান জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৭ জন ইরানি সামরিক কর্মকর্তা, ৯ জন পরমাণু বিজ্ঞানী এবং ২২০ জনেরও বেশি ইরানি বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।
ইরান ইসরায়েলকে ‘অসহায়’ না করা পর্যন্ত আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ