গ্যাসের দাম পুনর্নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা
Published: 21st, April 2025 GMT
এবার শিল্প খাতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতা ও শিল্প উদ্যোক্তারা। তাঁরা বলেন, গ্যাসের এমন মূল্যবৃদ্ধি অযৌক্তিক ও অন্যায্য। গ্যাসের দাম বাড়ায় শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের মারাত্মক ক্ষতি হবে। এ জন্য অবিলম্বে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখে মূল্যহার পুনর্নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে লেখা এক চিঠিতে এসব দাবি জানিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ১১টি ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতা ও দুটি শিল্পগোষ্ঠীর উদ্যোক্তা।
চিঠিতে তাঁরা বলেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর হলে দেশের শিল্প খাতে তথা অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। এই পরিস্থিতিতে দেশের শিল্পমালিকেরা শিল্প সম্প্রসারণে সাহসী হবেন না; বিদেশি বিনিযোগকারীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন না। দেশের শিল্পক্ষেত্রে কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হবে।
ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর নেতা ও উদ্যোক্তারা গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ চিঠি জমা দেন। চিঠিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী, শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রশাসক মো.
প্রধান উপদেষ্টার কাছে লেখা চিঠিতে ব্যবসায়ীরা বলেন, বিদ্যুৎ–জ্বালানি খাতের নানা অনিয়মের কারণে সৃষ্ট দায় মেটানোর জন্য বিগত সরকার ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে কোনো পক্ষের সঙ্গে আলোচনা না করে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম একলাফে ১২ টাকা থেকে ৩০ টাকা করে। এটি দেশের উৎপাদন শিল্পের জন্য মারাত্মক আঘাত ছিল। অন্যদিকে বাড়তি দাম দিয়েও শিল্পকারখানায় গ্যাসের চাপ ঠিকভাবে পায়নি। এতে স্বাভাবিক উৎপাদনের চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কম উৎপাদন করতে বাধ্য হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর শিল্পকারখানা নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। সেই পরিস্থিতি মোটামুটি কাটিয়ে ওঠার মাঝেই পুনরায় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির আলোচনা ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের বিপক্ষে জোরালো ও তথ্যভিত্তিক বক্তব্য দেন। তাঁরা প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ২৪ টাকা ৩৯ পয়সা নির্ধারণের দাবি জানান।
ব্যবসায়ীরা বলেন, দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, শিল্পপ্রতিষ্ঠান টিকে থাকা, কর্মসংস্থান ঠিক রাখা প্রভৃতি বিষয় বিবেচনা না নিয়ে শুধু সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ১৩ এপ্রিল গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এটি একেবারেই অযৌক্তিক ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে অন্যায্য।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগে সমর্থন জানিয়ে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, দেশি-বিদেশি যেকোনো বিনিয়োগকারীর জন্য জ্বালানি ব্যয় অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। এ ক্ষেত্রে বিইআরসি সম্প্রতি গ্যাসের যে মূল্যহার নির্ধারণ করেছে, তা কোনোভাবেই বিনিয়োগের জন্য সহায়ক নয়, বরং এটি বিনিয়োগের জন্য প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা দেবে।
ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, গ্যাসের দাম বাড়লে শিল্প খাতে ও অর্থনীতিতে বিভিন্ন ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়বে। যেমন গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি হলে দেশের শিল্পমালিকেরা শিল্প সম্প্রসারণে সাহসী হবেন না। বিদেশি বিনিযোগকারীরাও বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন না। ফলে দেশের শিল্পক্ষেত্রে কর্মসংস্থান না বেড়ে কমার পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। বর্তমানে ব্যাংক ঋণের সুদের হার অনেক বেশি। শ্রমিকের মজুরিসহ ব্যবসার অন্যান্য খরচও অনেক বেড়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা শুল্কের ঘোষণা দিয়েছে, যা দেশের রপ্তানিকে নতুন চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলেছে। এসবের মধ্যে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ব্যবসা-বাণিজ্য ও রপ্তানিতে বাড়তি চাপ তৈরি করবে এবং পরিণতিতে দেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, বর্তমান মূল্যবৃদ্ধির বিজ্ঞপ্তিতে অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্রশিল্পের ক্ষেত্রেও একই হার রাখা হয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে স্বল্প পুঁজির উদ্যোক্তারা ব্যবসায় আসতে সাহস পাবেন না। নতুন উদ্যোক্তা তৈরির পথে এটি প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করবে।
এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব যাচাই করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ জানান ব্যবসায়ী নেতারা। তাঁরা প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব সম্পর্কে নিজে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিইআরসির গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করে মূল্য হার পুনর্নির্ধারণের নির্দেশনা দেবেন, এটি সব ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষ থেকে আপনার নিকট প্রত্যাশা।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত ব যবস য় র জন য হব ন ন
এছাড়াও পড়ুন:
বিজিএমইএর নতুন সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, সহসভাপতি হলেন যাঁরা
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন রাইজিং ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহমুদ হাসান খান। তাঁর নেতৃত্বাধীন নবনির্বাচিত পর্ষদ ২০২৫-২৭ সাল মেয়াদে পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ এই সংগঠনটি পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবেন।
রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কার্যালয়ে আজ শনিবার সংগঠনটির নতুন সভাপতিসহ সাতজন সহসভাপতি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বিজিএমইএর নির্বাচন বোর্ডের এক আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচন বোর্ড জানায়, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে প্রতিটি পদে কেবল একটি করে বৈধ মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে এবং কোনো আপিল দায়ের হয়নি। এ কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট গ্রহণের প্রয়োজন না হওয়ায় সব প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে।
নতুন কমিটিতে বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন কেডিএস গ্রুপের এমডি সেলিম রহমান। জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন অনন্ত গার্মেন্টসের এমডি ইনামুল হক খান। সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সফটেক্স সোয়েটারের এমডি মো. রেজওয়ান সেলিম, ফেব্রিকা নিট কম্পোজিটের এমডি মিজানুর রহমান (অর্থ), দেশ গার্মেন্টসের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক বা ডিএমডি ভিদিয়া অমৃত খান, এমিটি ডিজাইনের এমডি মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী এবং ফ্যাশন ওয়্যারের এমডি মোহাম্মদ রফিক চৌধুরী।
২০২৫-২৭ সাল মেয়াদে বিজিএমইএর পরিচালনা কমিটির নতুন সদস্য