জীবনের প্রথম ট্রফি জয় থেকে মাত্র দুই ম্যাচ দূরে হ্যারি কেইন
Published: 21st, April 2025 GMT
শেষ পর্যন্ত তবে ঘটনা ঘটছেই! হ্যারি কেইন তাহলে জীবনের প্রথম ট্রফিটা জিততে যাচ্ছেন! কিছুটা অবাক করার মতো হলেও এটাই কিন্তু বাস্তব। কেইন এখন সিনিয়র পেশাদার ক্যারিয়ারের প্রথম ট্রফি থেকে মাত্র দুই ম্যাচ দূরে। বুন্দেসলিগায় আর মাত্র দুই ম্যাচ জিতলেই লিগ নিশ্চিত হবে বায়ার্ন মিউনিখের, যা হবে কেইনের ক্যারিয়ারের প্রথম শিরোপা।
বায়ার্নের মতো শিরোপার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে লিভারপুলও। লিভারপুলের অবশ্য দুই ম্যাচ নয়, এক ম্যাচ জিতলেই চলবে। তবে বুন্দেসলিগা ও প্রিমিয়ার লিগের মতো হিসাবটা সহজ নয় সিরি আ ও লা লিগায়। এই দুই লিগেই জমে উঠেছে লড়াই। এমনকি এই দুই লিগের শিরোপা লড়াই গড়াতে পারে শেষ দিন পর্যন্ত।
কেইনের প্রথম শিরোপার অপেক্ষাকেইনের ট্রফি জয়ের আশা সম্ভবত তাঁর অন্ধ ভক্তরাও একসময় ছেড়ে দিয়েছিলেন। টটেনহামে ১৪ বছরের ক্যারিয়ারে নিজেকে বিশ্বের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলেও জেতা হয়নি কোনো শিরোপা। ইংল্যান্ডের হয়ে পরপর দুবার ইউরোর ফাইনালে খেলেও শিরোপাহীন থাকতে হয়েছিল কেইনকে। এমনকি কেইন আশার পর প্রথম মৌসুমটা শিরোপাহীন কেটেছে জার্মান ক্লাব বায়ার্নেরও। তবে সেই গেড়ো বোধ হয় অবশেষে খুলতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুনবার্সাকে জবাব দেওয়া ‘কামব্যাকে’ শিরোপার লড়াইয়ে টিকে থাকল রিয়াল ৫ ঘণ্টা আগেনিজের জীবনের প্রথম শিরোপা থেকে এখন মাত্র দুই ম্যাচ দূরে দাঁড়িয়ে কেইন। বুন্দেসলিগায় হফেনহেইমের বিপক্ষে ৪–০ গোলের জয়ের পর বায়ার্নের পয়েন্ট এখন ৩০ ম্যাচে ৭২। অন্যদিকে সেন্ট পাউলির সঙ্গে ১–১ গোলে ড্র করা লেভারকুসেনের পয়েন্ট এখন ৩০ ম্যাচে ৬৪। লিগে এখন বাকি আছে ৪ ম্যাচ। যেখানে পরের দুই ম্যাচ জিতলে কোনো হিসাব ছাড়াই চ্যাম্পিয়ন হবে বায়ার্ন। আর লেভারকুসেন যদি নিজেদের ম্যাচে পয়েন্ট হারায়, তবে আরও আগেই শিরোপা উদ্যাপনে মাততে পারবে বায়ার্ন।
ইন্টার–নাপোলি সমানে সমানএই মুহূর্তে ইউরোপের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ শিরোপা লড়াইটা চলছে ইতালিতে। ইন্টার মিলান ও নাপোলি দুই দলেরই আছে ট্রফি জয়ের সমান সম্ভাবনা। সর্বশেষ মনৎসাকে হারানোর পর ৩৩ ম্যাচ শেষে নাপোলির পয়েন্ট ৭১। গতকাল রাতে ইন্টার মিলানের সুযোগ ছিল নাপোলিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। কিন্তু বোলোনিয়ার কাছে ইন্টার হেরে গেছে ১–০ গোলে। যার ফলে এখন ইন্টারের পয়েন্টও ৭১। এই পরিস্থিতিতে শেষ ৫ ম্যাচ দিয়েই নির্ধারিত হবে লিগ শিরোপা। যেখানে ইন্টারের সামনে আছে রোমা ও লাৎসিওর মতো প্রতিপক্ষ। আর নাপোলি চ্যালেঞ্জে পড়তে পারে তুরিনো এবং জেনোয়ার বিপক্ষে।
অ্যানফিল্ডেই তবে লিভারপুলের উদ্যাপনলিভারপুল শিরোপা জিততে পারত গতকাল রোববার রাতেই। ইপসউইচ টাউনের বিপক্ষে আর্সেনাল হারলেই হতো। কিন্তু অবনমন অঞ্চলের দল ইপসউইচকে ৪–০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে আর্সেনাল। যার ফলে লেস্টার সিটির বিপক্ষে জিতেও এখন অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে লিভারপুলকে। তবে লিভারপুলের ট্রফি জয়ের অপেক্ষা শেষ হতে পারে আগামী রোববার ঘরের মাঠ অ্যানফিল্ডে।
আরও পড়ুনশিরোপা থেকে ১ জয়ের দূরত্বে লিভারপুল, ফিরেই নায়ক আলেকজান্ডার–আরনল্ড১৪ ঘণ্টা আগেসেদিন টটেনহামের বিপক্ষে জয় পেলে আর কোনো হিসাবে না গিয়েই চ্যাম্পিয়নস হবে ‘অল রেড’রা। লিভারপুল অবশ্য মাঠে না নেমেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারে। সে জন্য বুধবার রাতে ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে পয়েন্ট হারতে হবে আর্সেনালকে। বর্তমানে ৩৩ ম্যাচ শেষে শীর্ষে থাকা লিভারপুলের পয়েন্ট ৭৯। আর সমান ম্যাচে আর্সেনালের পয়েন্ট ৬৬।
এল ক্লাসিকোতেই কি শিরোপা নির্ধারণলা লিগায় নিজেদের শেষ ম্যাচে ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতেছে বার্সেলানা ও রিয়াল মাদ্রিদ। সেল্তা ভিগোর বিপক্ষে ৪–৩ গোলের জয়ের পর বার্সার পয়েন্ট এখন ৩২ ম্যাচে ৭৩। আর গতকাল রাতে অ্যাথলেটিক বিলবাওকে হারানো রিয়ালের পয়েন্ট এখন সমান ৩২ ম্যাচে ৬৯। লিগে এখন ৬ ম্যাচ করে বাকি।
আরও পড়ুনখাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বার্সার অবিশ্বাস্য জয় ১৯ এপ্রিল ২০২৫আর ৬ ম্যাচে রিয়ালকে শিরোপা জিততে ঘোচাতে হবে ৪ পয়েন্টের পার্থক্য। এ ক্ষেত্র আগামী ১১ মের রিয়াল–বার্সার এল ক্লাসিকোই হয়তো নির্ধারণ করে দিতে পারে লিগ শিরোপা। আবার শিরোপা জিততে অপেক্ষা করতে হতে পারে একেবারে শেষ দিন পর্যন্তও। তবে যেটাই হোক, লা লিগা যে আগামী কদিন রোমাঞ্চ উপহার দেবে সেটা বলাই যায়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর স ন ল র প রথম ইন ট র
এছাড়াও পড়ুন:
সন্তানের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস
বাবা সন্তানের ওপর ছায়ার মতো স্নেহময় এক উপস্থিতি। নিঃশর্ত ভরসার প্রতীক। সন্তানের ভবিষ্যৎ গঠনের প্রয়োজনে নিজের বর্তমান, এমনকি নিজের স্বপ্নও নীরবে উৎসর্গ করে দিতে পারেন যিনি– আজ তাদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানানোর দিন। বাবা দিবস উপলক্ষে সমতা’র বিশেষ আয়োজন। গ্রন্থনা শাহেরীন আরাফাত
আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা বৃহত্তর বরিশালে। এখন সেই জায়গাটা পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি পৌরসভার সমুদয়কাঠি গ্রাম। তখনকার সামাজিক পরিসরে আমাদের পরিবারের অবস্থা সাধারণ মানুষের চেয়ে একটু ভালো ছিল। আমার বাবা বিজয় কুমার আইচ তখন পিরোজপুরে কাজ করতেন। তাঁর রেশনের দোকান ছিল। প্রতি শনিবার বাড়ি আসতেন। আমরা বাবার আশায় বসে থাকতাম। এটি ছিল আমাদের জন্য একরকম আশীর্বাদের মতো।
বাবার একটি ব্যবসাও ছিল। এ থেকে মূলত আমাদের পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে। গ্রামের সাধারণ মানুষের চেয়ে সম্ভবত বাবার জ্ঞান বা বোধ উন্নততর ছিল। তাঁর ব্যক্তিত্বের জন্য দশ গ্রামের লোকজন তাঁকে মানত। গ্রামে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়া লেগেই থাকত। বাবার সঙ্গে কথা না বলে কেউ থানা-পুলিশ করতে যেত না। বাবা সবাইকে খুব বুঝিয়ে বলত– মামলা করলে কে জিতবে, কে হারবে– এটি অনেক পরের কথা। মামলা নিয়ে বরিশাল-পিরোজপুরে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে দুই পক্ষই নিঃস্ব হয়ে পড়বে। তারচেয়ে বরং তোমরা নিজেরা মিটমাট করে ফেল।
গ্রামের পণ্ডিতরা তখন তালপাতায় অ-আ-ক-খ শেখাতেন হাত ধরে ধরে। আমার সেটি একদম পছন্দ হতো না। বাবা কী করলেন, তিনি একটা স্লেট ও পেন্সিল দিয়ে ছবি আঁকতে শুরু করলেন। অ-আ-ক-খ দিয়ে যত ছবি আঁকা হয়, তা শেখাতেন। এর মধ্যে আমার যে ছবিটা পছন্দ হতো, সেটি আমি মনের মধ্যে গেঁথে নিতাম। যার ফলে বাবার মাধ্যমে অত্যন্ত আনন্দদায়ক এক শিক্ষা পেয়েছি আমি।
আমার বাবারা ছিলেন ৪ ভাই। এর মধ্যে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় দু’জন পশ্চিমবঙ্গে চলে যান। আমার বাবা ও এক কাকা বাড়ি ছেড়ে যাননি। আমরা ছিলাম ৬ ভাই ৩ বোন। কাকাতো ভাই ৪ জন, বোন একজন। মোট ১৪ ভাইবোন। কাকা কম বয়সেই গত হন। বিলাসী জীবন আমাদের ছিল না। তবে গ্রামের মানুষের কাছে আমরা ছিলাম বড়লোক। পরিবারে অনেক সদস্য থাকলেও খাবারের অভাব হতো না কখনোই। এমনকি দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থায়ও খাবারের কষ্ট করতে হয়নি। আমাদের একটা গুদামঘর ছিল। সেখানে বাবা পাশের বন্দর কাউখালী থেকে সারা বছরের চাল, ডাল, পাউডার দুধ, চিনি, লবণ, গুড় এনে ড্রামে ভরে রাখতেন। বাইরে যত সংকটই থাকুক না কেন, বছরজুড়ে খাবারের অভাব হতো না। সমস্যা হতো ঝড়ের সময়। উপকূলীয় অঞ্চলে এমন ঝড় মাঝে মাঝেই আসত। কখনও ঘরের চাল উড়ে গেলে আমরা সমস্যায় পড়ে যেতাম।
অন্যদের সামনে বাবা নিজের অবস্থানের জন্যই বেশি হাসি-তামাশা করতেন না। যখন আমাদের সঙ্গে থাকতেন, তখন তিনি একজন সাধারণ মানুষের মতো হাসি-খুশি থাকতেন। তখনকার বাবাদের আমরা মারধর করতে দেখেছি, এমনকি খড়ম দিয়ে পেটাতে দেখেছি। বাবা আমার গালে জীবনেও একটা চড় মারেনি। কোনো ভাইবোনকেও মারধর করতে দেখিনি। তখন হয়তো আরও এমন বাবা ছিলেন। তবে গ্রামে আমি এমন বাবা আর দেখিনি। সন্তানের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস। সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরলেও তিনি কখনও জিজ্ঞেস করতেন না, কেন দেরি করে ঘরে ফিরেছি।