ইস্টার সানডে উপলক্ষে স্বল্পস্থায়ী যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার সাথে সাথে রাশিয়া ইউক্রেনের উপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। 

সোমবার (২১ এপ্রিল) ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়ান বাহিনী পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনে রাতভর ৯৬টি ড্রোন এবং তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। খবর আল জাজিরার।

ইউক্রেনের বিমান বাহিনী টেলিগ্রামে লিখেছে, রবিবার রাতভর খারকিভ, ডিনিপ্রোপেট্রোভস্ক ও চেরকাসি অঞ্চলে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনীয় বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী ৪২টি রুশ ড্রোন ধ্বংস করেছে এবং আরো ৪৭টি ড্রোনকে পুনঃনির্দেশিত করেছে।

এসব তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ইউক্রেনের দক্ষিণ বন্দর শহর মাইকোলাইভের কর্মকর্তারা রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

শনিবার সন্ধ্যায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ‘মানবিক বিবেচনার’ ভিত্তিতে ‘ইস্টার যুদ্ধবিরতি’ ঘোষণা করেছিলেন। রবিবার মধ্যরাত পর্যন্ত ৩০ ঘণ্টা পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি চলবে বলে জানিয়েছিলেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দফা আলোচনা পরও মস্কোকে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে হিমশিম খাচ্ছে।মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কয়েকদিন আগে সতর্ক করে বলেছিলেন, শান্তি আলোচনায় মস্কো ও কিয়েভ কয়েক দিনের মধ্যে অগ্রগতি না দেখালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতা থেকে সরে দাঁড়াবে যুক্তরাষ্ট্র। 

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণাকে ‘মানবজীবন নিয়ে খেলার পুতিনের আরেকটি প্রচেষ্টা’ বলে উড়িয়ে দেন এবং পাল্টা জবাব হিসেবে দীর্ঘ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান।

জেলেনস্কি বলেন, “এটি রাশিয়ার আসল উদ্দেশ্য প্রকাশ করবে, কারণ ৩০ ঘণ্টা যুদ্ধবিরতির ঘোষণা খবরের শিরোনাম সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট, কিন্তু প্রকৃত আস্থা তৈরির ব্যবস্থার জন্য নয়। রাশিয়াকে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতে ঘোষণা করতে হবে।”

রবিবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, তারা অস্থায়ী বিরতির মেয়াদ বাড়ানোর পদক্ষেপকে স্বাগত জানাবে।

কিন্তু ক্রেমলিন জানায়, এমন কোনো ঘোষণা দেওয়া হবে না। যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়।

পর্যবেক্ষকদের মতে, এই সংক্ষিপ্ত যুদ্ধবিরতি থেকে টেকসই যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করার প্রচেষ্টায় মার্কিন প্রশাসন খুব একটা উৎসাহ পাবে না। মস্কো এবং কিয়েভ উভয়ই একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অসংখ্য অভিযোগ করেছে।

রাশিয়া ৩০ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেও তা ব্যাপকভাবে লঙ্ঘন করেছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন।পোকরোভস্ক ফ্রন্টে রুশ বাহিনী ব্যাপক গোলাবর্ষণ করেছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেন। 

অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, যুদ্ধবিরতি সময়কালে ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ার অবস্থানগুলোতে ৪৪৪ বার গুলি চালিয়েছে এবং ৯০০টিরও বেশি ড্রোন হামলা চালিয়েছে।

তবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রবিবার (২০ এপ্রিল) আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, চলতি সপ্তাহেই একটি শান্তি চুক্তিতে একমত হতে পারে রাশিয়া-ইউক্রেন।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউক র ন র রব ব র

এছাড়াও পড়ুন:

হরমুজ প্রণালি বন্ধ করল ইরান, তেলের বাজারে উত্তেজনা

তেল আবিবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরপরই গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিয়েছে ইরান। দেশটির সশস্ত্র বাহিনী তাদের এক্স অ্যাকাউন্টে এক ঘোষণায় জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত হরমুজ প্রণালি দিয়ে কোনো জাহাজ চলতে পারবে না। এরই মধ্যে অপরিশোধিত তেলের দামও বেড়ে গেছে।

এই ঘোষণায় স্পষ্ট হয়ে গেছে, ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আরও জোরদার করবে এবং হরমুজ প্রণালিকে কৌশলগতভাবে ব্যবহার করবে, যা বিশ্ব জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ জলপথ।

হরমুজ প্রণালি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং কৌশলগতভাবে সংবেদনশীল একটি সমুদ্রপথ। এটি পারস্য উপসাগরকে ওমান উপসাগরের সঙ্গে যুক্ত করেছে এবং ইরান ও ওমানের মাঝখানে অবস্থিত।

প্রণালিটির প্রস্থ খুব বেশি নয়, সবচেয়ে সংকীর্ণ জায়গায় মাত্র ৩৯ কিলোমিটার, যার মধ্যে কেবল দুটি সংকীর্ণ চ্যানেল দিয়ে বড় জাহাজ চলাচল করতে পারে। তবে ছোট এই পানিপথ দিয়েই প্রতিদিন বিশ্বের মোট সমুদ্রপথে পরিবাহিত তেলের প্রায় ২০ শতাংশ যাতায়াত করে, যা একে বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

হরমুজ প্রণালি দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। ইরান প্রায়ই এই প্রণালিকে একটি কৌশলগত চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা বা সামরিক হুমকির জবাবে ইরান একাধিকবার হুমকি দিয়েছে, তারা হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিতে পারে, যা গোটা বিশ্বের জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থায় চরম বিপর্যয় ডেকে আনবে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বারবার এই প্রণালির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের নৌবাহিনী মোতায়েন করেছে।

ইরানে হামলার পরপরই হরমুজ প্রণালি নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ দেখা দেয়। খবর আলজাজিরার।

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হরমুজ প্রণালি বন্ধ করল ইরান, তেলের বাজারে উত্তেজনা