জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (জকসু) নীতিমালা সিন্ডিকেটে অনুমোদিত হয় গত ২ জানুয়ারি। এরপর আইনি প্রক্রিয়া শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়ে নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করার কথা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। কিন্তু নীতিমালা অনুমোদনের তিন মাস পর এখন বলা হচ্ছে, জকসু নীতিমালার খসড়াটি ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করার কাজ এখনো সম্পূর্ণ হয়নি।

সিন্ডিকেটে খসড়া নীতিমালা গৃহীত হওয়ার তিন মাস পার হয়ে গেলেও কোনো অগ্রগতি না দেখে গত বুধবার (১৬ এপ্রিল) ছাত্র প্রতিনিধিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সাক্ষাৎ শেষে ছাত্র প্রতিনিধিরা বলেন, জকসু নীতিমালার যে খসড়া, তা এখনো সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়নি। খসড়াটি প্রস্তুত হওয়ার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় অথবা ইউজিসির মাধ্যমে অনুমোদনের প্রক্রিয়া শেষ হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া অধ্যাদেশে কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয় এই শতবর্ষী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ ’-এ ছাত্র সংসদের বিষয়টি যুক্ত ছিল না। প্রতিষ্ঠার পর প্রায় ১৯ বছরেও ছাত্র সংসদ বিধান যুক্ত করা হয়নি। এ কারণে নির্বাচনও হয়নি। যদিও ২০১৯ সালে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে জকসু গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটি করা হয়েছিল। সেই কমিটি গঠনতন্ত্রের খসড়া প্রণয়ন করে জমা দিলেও সিন্ডিকেটে তা পাস হয়নি।

গত ৫ আগস্টের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জকসু নির্বাচনের জোরালো দাবি তোলেন। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রইস উদদীনকে আহ্বায়ক করে জকসুর নীতিমালা প্রণয়নে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি একটি খসড়া নীতিমালা জমা দেয়। পরে ২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৯তম সিন্ডিকেটে খসড়া নীতিমালার অনুমোদন দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ সাবিনা শরমীনকে আহ্বায়ক করে কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। পাঁচ সদস্যের এই কমিটিতে আছেন বাণিজ্য অনুষদের ডিন অধ্যাপক মনজুর মোর্শেদ ভূঁইয়া, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রইস উদদীন, ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ বিলাল হোসাইন ও আইন কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার দাস।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জকসু নীতিমালা ইংরেজিতে করায় একটু জটিলতা দেখা দিয়েছিল। শিক্ষার্থীদের বোঝার সুবিধার্থে এখন তা বাংলায় প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রস্তুতকৃত নীতিমালা জকসু নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির সদস্যরা যাচাই-বাছাই করবেন। এরপর শিক্ষার্থী প্রতিনিধি, সাংবাদিক, ক্রিয়াশীল সংগঠনের নেতৃত্বের পরামর্শক্রমে (সংযোজন-বিয়োজন) তা চূড়ান্ত করা হবে। চূড়ান্ত নীতিমালা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখানে পাস হলে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।

জকসু নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক সাবিনা শরমীন প্রথম আলোকে বলেন, নীতিমালাটি বাংলায় তৈরির কাজ চলছে। প্রথম ধাপে কিছু পরিমার্জন করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপেও নতুন কিছু বিষয়ে সংশোধন আনা হয়েছে। এ সংশোধনী চলতি সপ্তাহে জমা দেওয়া হবে। এরপর চূড়ান্ত করে তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, গত ২ জানুয়ারি সিন্ডিকেটের যে নীতিমালা পাস হয়েছিল, সেটি প্রাথমিক ছিল। সেখানে একটা কমিটি গঠন করা হয়েছিল, যাতে কিছু বাদ না পড়ে। যেহেতু প্রথমবার নীতিমালা তৈরি হচ্ছে, তাই নীতিমালাটি শক্তিশালী করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে আরও পরিমার্জন, সংশোধন হয়েছে। বলা যায়, চূড়ান্ত নীতিমালা সর্বশেষ পর্যায়ে আছে। চূড়ান্ত নীতিমালা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আইন আকারে পাস হলে, নির্বাচনের বিষয়ে জানানো হবে।

শিক্ষার্থীরা যা বলছেন

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মায়িশা ফাহমিদা ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জকসু নির্বাচন এখন সময়ের দাবি। কারণ, এটি শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এই বিশ্ববিদ্যালয় অনাবাসিক। তাই বিভিন্ন জায়গায় অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও নানাবিধ সমস্যার সমাধানে কার্যকর প্রতিনিধি দরকার। জকসু থাকলে প্রশাসনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সেতুবন্ধ গড়ে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের চাওয়া হলো অবিলম্বে জকসু নির্বাচন আয়োজন। সংবিধান অনুযায়ী ছাত্রদের মতপ্রকাশের অধিকার ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করাই প্রশাসনের দায়িত্ব।’

হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যব্যবস্থা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা শিক্ষার্থীদের আবাসন। এ ছাড়া বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়। জকসু নির্বাচন হলে পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারব। আশা করি, তাঁরা আমাদের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণে ভূমিকা রাখবেন এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করবেন। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, দ্রুত জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।’

নীতিমালাটি বাংলায় তৈরির কাজ চলছে। প্রথম ধাপে কিছু পরিমার্জন করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপেও নতুন কিছু বিষয়ে সংশোধন আনা হয়েছে। এ সংশোধনী চলতি সপ্তাহে জমা দেওয়া হবে। এরপর চূড়ান্ত করে তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবেসাবিনা শরমীন, জকসু নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক

মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জকসু নির্বাচন হলে শিক্ষার্থীরা নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে নিজেদের দাবি উপস্থাপন করতে পারবেন। ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কৃতির বাইরে নতুন প্রতিনিধি পাবেন শিক্ষার্থীরা। আমরা চাই অতি দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হোক। দেশে যে ভোটহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, আমরা চাই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে তা দূর হয়ে যাক।’

আরও পড়ুনআইনি প্রক্রিয়ায় আটকে আছে জকসু নির্বাচন১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ছাত্রসংগঠনগুলো যা বলছে

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সংগঠক ফয়সাল মুরাদ প্রথম আলোকে বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪ থেকে ১৫ হাজার শিক্ষার্থী। অথচ তাঁদের কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই। জকসু থাকলে গণতান্ত্রিক উপায়ে ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকতেন, যাঁরা সিন্ডিকেটসহ নীতিনির্ধারণী পর্ষদে শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরতে পারতেন। শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা সমাধানেও জকসু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারত। এতে দখলদারি, শোডাউন ও আধিপত্যবাদী রাজনীতির অবসান ঘটত এবং একটি দায়িত্বশীল ছাত্রনেতৃত্ব গড়ে উঠত।

ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি এ কে এম রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সঙ্গে গড়িমসি করছে। তিন মাস আগে সিন্ডিকেটে খসড়া গেলেও, এখনো মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নিয়ে আসতে পারেনি। এটা প্রশাসনের ব্যর্থতা। আমরা শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে একটা নির্দিষ্ট সময় জানিয়ে দেব। এর মধ্যে প্রশাসনকে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে জকসু আইন অনুমোদন নিয়ে আসতে হবে।’

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাসিবাদের দোসরদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া, প্রশাসনিক কাঠামোর সংস্কার করতে হবে। সব শিক্ষার্থীর মতামতের ভিত্তিতে সবার জন্য সমান সুযোগ রেখে জকসু নির্বাচন আয়োজনের পথ তৈরি করা যেতে পারে।’

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মো.

রিয়াজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো এক অদৃশ্য শক্তি নীতিমালাটিকে আটকে রেখেছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্রিয়াশীল সংগঠনের সঙ্গে বসে কীভাবে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করা যায়, সে রূপরেখা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জমা দেব।’

আরও পড়ুনজকসু নীতিমালা প্রকাশসহ ৮ দফা দাবি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের১৭ এপ্রিল ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম প রথম আল ক প রস ত ত অন ম দ ন ত কর ইসল ম সদস য সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

২০২৭ সালে কি নতুন শিক্ষাক্রম পাওয়া যাবে

২০২২ সালে সর্বশেষ যে নতুন শিক্ষাক্রম প্রণীত হয়েছিল, অন্তর্বর্তী সরকার আসার পরে তা বাতিল করা হয়। কারণ, এই শিক্ষাক্রমের ব্যাপারে প্রবল জন–অসন্তোষ ছিল। বিপরীতে ঘোষণা দেওয়া হয়, ২০২৭ সালে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চালু করা হবে। কিন্তু এ জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম পাওয়া আদৌ সম্ভব হবে কি না।

একটি শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করার জন্য কতটুকু সময় লাগতে পারে, সেটি বলা মুশকিল। কারণ, শিক্ষাক্রমের কতটা বদল করা হবে এবং কারা, কীভাবে এই সংস্কারের কাজ করবেন, তার ওপর সময়ের ব্যাপ্তি নির্ভর করে। অন্য দেশের শিক্ষাক্রম গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সময় বেশি লাগে; কারণ তখন এর ভালো-মন্দ পাইলটিং করে যাচাই করার দরকার হয়। শিক্ষাক্রম প্রণয়ন বা সংস্কারে অর্থের জোগানদাতা অন্য রাষ্ট্র বা বিদেশি সংস্থা হলেও সময় বেশি লাগতে পারে। আবার বিদ্যমান শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে কেবল সংশোধনের কাজ করলে সময় কম লাগে। ২০২৭ সালের শিক্ষাক্রমে বদল কতটুকু, কীভাবে আনা হবে, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা দেওয়া হয়নি।

শিক্ষাকে যুগোপযোগী রাখার স্বার্থেই শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকের বদল আনতে হবে। তবে যেকোনো কিছু নতুন করে প্রতিষ্ঠা করার কাজটি সব সময় সহজ হয় না। বিদ্যমান কাঠামোকে বিবেচনায় নিয়েই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো হবে।

২০২২ সালের শিক্ষাক্রম প্রণয়নের জন্য প্রায় চার বছর সময় লেগেছিল। এই শিক্ষাক্রমে পাঠদানের পদ্ধতি, শিখন কার্যক্রম ও মূল্যায়নের প্রক্রিয়ায় আমূল পরিবর্তন আনা হয়। মূলত ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থাকে অনুসরণ করে এই শিক্ষাক্রম প্রণীত হয়েছিল। অতীতের পাঠদানের পদ্ধতিতে শিক্ষকের লেকচার বা বক্তৃতাদানের প্রাধান্য ছিল। সে ক্ষেত্রে শিক্ষাদানের ব্যাপারটি ছিল একমুখী। নতুন পদ্ধতিতে শুরুতে শিক্ষার্থীদের বিষয় উপস্থাপনের সুযোগ রাখা হয়, যাতে এর মাধ্যমে শিক্ষক তাঁদের জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন। শিক্ষকের পড়ানোর কাজটি এর পরে শুরু করার নির্দেশনা ছিল।

 মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও আনা হয় ব্যাপক পরিবর্তন। গ্রেড ও নম্বরের বদলে যোগ্যতার স্তরভিত্তিক মূল্যায়নব্যবস্থা চালু করা হয়। অভিভাবকদের সবচেয়ে আপত্তি ছিল এখানে। তাঁরা জোর দিয়ে বলেছেন, নম্বর ও গ্রেড না থাকার কারণে বুঝতে পারছেন না শিক্ষার্থীর পড়াশোনার অবস্থা কী। তবে সবচেয়ে বেশি আপত্তি ছিল শিক্ষাক্রমকে অনুসরণ করে রচিত পাঠ্যবইয়ের বিভিন্ন কনটেন্ট বা উপকরণ নিয়ে। যেমন সমাজ বইয়ের ক্ষেত্রে অনেকেই বলেছেন, সেখানে বাংলাদেশের ইতিহাসকে একপেশে করে তুলে ধরা হয়েছে। বিজ্ঞান বইয়ের ক্ষেত্রে ওয়েবসাইট থেকে হুবহু অনুকরণের অভিযোগ ছিল। এ ছাড়া পাঠ্যবইয়ের বানান ও তথ্যগত প্রচুরসংখ্যক ভুল নিয়েও সমালোচনা হয়েছে।

আরও পড়ুনশিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই: পরিমার্জন ও সংস্কারের আগে যা বিবেচনায় নিতে হবে১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে পাঠ্যবই প্রণীত হয়। বর্তমানে ২০২৫ ও ২০২৬ সালে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত যেসব পাঠ্যবই পড়ানো হয়েছে কিংবা ছাপার কাজ চলছে, সেগুলো মূলত ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে রচিত। পুরোনো বই কিছু সংশোধন করেই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এই সংশোধন-পরিমার্জনসহ অন্যান্য কাজে এবারও এত বেশি সময় লেগেছে যে আগামী শিক্ষাবছরে যথাসময়ে সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হবে কি না, সে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

এখন যদি পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে ২০২৭ সালে নতুন পাঠ্যবই প্রণয়ন করতে হয়, তবে আরও আগে এর রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা হাজির করার দরকার ছিল। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার এ কাজে হাত না দিয়ে নতুন সরকারের ওপর দায়িত্ব বর্তাতে চায়। সে ক্ষেত্রে কয়েক মাসের মধ্যে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন এবং সেই ভিত্তিতে পাঠ্যক্রম রচনা ও প্রকাশের উদ্যোগ নিলে লেজেগোবরে অবস্থা হবে। তা ছাড়া এনসিটিবির চেয়ারম্যান ও সদস্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোও ২০২৪-এর জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে শূন্য থেকেছে। এর ফলে নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের কাজটিও গতিশীল হয়নি। সুতরাং ভালো পরিবর্তন চাইলে আরেকটু সময় নেওয়া উচিত। আর শিক্ষাক্রমের ব্যাপারটিই এমন, একসঙ্গে সব কটি শ্রেণিতে এর প্রয়োগ করা যায় না—নিচের ক্লাস থেকে ধীরে ধীরে ওপরে উঠতে হয়।

শিক্ষাকে যুগোপযোগী রাখার স্বার্থেই শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকের বদল আনতে হবে। তবে যেকোনো কিছু নতুন করে প্রতিষ্ঠা করার কাজটি সব সময় সহজ হয় না। বিদ্যমান কাঠামোকে বিবেচনায় নিয়েই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো হবে।

তারিক মনজুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কম্বাইন্ড ডিগ্রি কারিকুলাম বিলম্বে উদ্বেগ বাকৃবিতে
  • ২০২৭ সালে কি নতুন শিক্ষাক্রম পাওয়া যাবে