৩৩ বছরে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের তথ্য প্রকাশে নিষ্ক্রিয়তা প্রশ্নে রুল
Published: 21st, April 2025 GMT
দেশে গত ৩৩ বছরে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনসংক্রান্ত নথি (রেকর্ড) প্রকাশে নিষ্ক্রিয়তা প্রশ্নে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ রুল দেন।
১৯৯১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত আইনগত ভিত্তি ও কারণসহ রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন (দণ্ড স্থগিত বা মওকুফ, হ্রাস) সংক্রান্ত নথি প্রকাশে নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ও জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
এর আগে গত ৩৩ বছরে দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রপতিরা কতজনের দণ্ড মাফ করেছেন, তা জানতে চেয়ে গত বছরের ২৫ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ওমর ফারুক আইনি নোটিশ পাঠান। নোটিশে ১৯৯১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে গত বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে কতজন দণ্ড পাওয়া আসামির কারাদণ্ড স্থগিত বা মওকুফ করেছেন, সেই তালিকা ১৫ দিনের মধ্যে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
ওই নোটিশের জবাব না পেয়ে গত মাসে আইনজীবী ওমর ফারুক রিটটি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বদিউজ্জামান তপাদার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জে আর খান রবিন।
পরে আইনজীবী ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, জনগণের অভিগম্যতা নিশ্চিতে রাষ্ট্রপতি যেসব মামলায় ক্ষমা প্রদর্শন করে দণ্ড মওকুফ বা কমিয়েছেন, সে ক্ষেত্রে ন্যায্যতাসহ সব মামলার তালিকা–সংবলিত একটি ডেটাবেজ (তথ্যভান্ডার) প্রতিষ্ঠা করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তা–ও জানতে চাওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রপতির কোনো অপরাধীর ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে সুপারিশের জন্য বিচারক, ফৌজদারি আইন ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি বোর্ড কেন গঠন করা হবে না, সে বিষয়েও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রসচিব, আইন সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের জনবিভাগের সচিবকে রুলের জবাব দিতে হবে।
সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ভাষ্য, কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের দেওয়া যেকোন দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করার এবং যেকোনো দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকবে।
রিট আবেদনকারীর ভাষ্য, রাষ্ট্রপতি কীভাবে, কোন প্রক্রিয়ায়, কাদের সুপারিশ বা তদবিরে দাগি, ঘৃণিত, কুখ্যাত সাজাপ্রাপ্তদের ক্ষমা করেছেন, তা জানার অধিকার জনগণের আছে। কয়েক বছর ধরে রাষ্ট্রপতি বহু অপরাধী, হত্যা মামলার দণ্ডপ্রাপ্তদের ক্ষমা করেছেন। কোন প্রক্রিয়ায় সাজাপ্রাপ্তদের দণ্ড মওকুফ করেন, দণ্ড মওকুফের মানদণ্ড কী, সেটা মানুষের জানার অধিকার রয়েছে, যে কারণে রিটটি করা হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ষ ট রপত র ক কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন, শুনানি হতে পারে রোববার
জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এই আবেদনের ওপর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আগামী রোববার শুনানি হতে পারে।
চিন্ময় দাসের জামিন প্রশ্নে রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট আজ বুধবার রায় দেন। রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি মো. আলী রেজার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। এর ফলে ওই মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস জামিন পান।
এই জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে, যা চেম্বার আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরিদ উদ্দিন খান।
পরে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ প্রথম আলোকে বলেন, আবেদনটি জমা দেওয়া হয়েছে। শুনানি হয়নি। চেম্বার আদালত আগামী রোববার আবেদনটি শুনবেন।
এর আগে ওই মামলায় চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ গত ২ জানুয়ারি চিন্ময়ের জামিন আবেদন খারিজ করে আদেশ দিয়েছিলেন। এ নিয়ে হাইকোর্টে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন চেয়ে গত ১২ জানুয়ারি আবেদনটি করেছিলেন চিন্ময় দাস। এ আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ৪ ফেব্রুয়ারি রুল দেন হাইকোর্ট। আবেদনকারীকে (চিন্ময়) কেন জামিন দেওয়া হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ রায় দেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টে চিন্ময় দাসের পক্ষে আইনজীবী জেড আই খান পান্না, প্রবীর হালদার ও অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ আবদুল জব্বার ভুঞা, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরিদ উদ্দিন খান উপস্থিত ছিলেন।
গত বছরের ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ওই মামলা করেন। পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
চিন্ময় দাসের জামিন নামঞ্জুর হওয়া নিয়ে গত বছরের ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষ হয়েছিল। এ সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। জামিন নামঞ্জুর হওয়ার পর চিন্ময় দাসকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন জামিন শুনানির দিন ধার্য থাকলেও আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে কর্মবিরতির ডাক দিলে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। পরে আদালত গত ৩ ডিসেম্বর শুনানির দিন রাখেন। সেদিন চিন্ময়ের কোনো আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় আদালত শুনানির জন্য ২ জানুয়ারি পরবর্তী দিন রাখেন। সেদিন তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়।
আরও পড়ুনরাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় দাসের জামিন৩ ঘণ্টা আগে