‘গঙ্গা-মেঘনা দিয়ে দিনে ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সাগরে যায়’
Published: 21st, April 2025 GMT
উজানের প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আন্তঃসংযুক্ত নদী ব্যবস্থার মাধ্যমে ২৪ গুণ বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য গ্রহণ করে বাংলাদেশ। অনুমান করা হয়, ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা ও মেঘনা নদীর মাধ্যমে প্রতিদিন ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে। ফলে বাংলাদেশের পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর মাছের পেটে মিলেছে মাইক্রোপ্লাস্টিক।
মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণে আক্রান্ত নদীর মাছের মাধ্যমে মানুষের শরীরে যাচ্ছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। ফলে বাড়ছে স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যা। একইসঙ্গে এসব নদীর পানি, পলি এবং বাতাসেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের আশঙ্কাজনক উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের বিজ্ঞানীদের সম্মিলিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে এসব তথ্য। প্রথমবারের মতো তিন দেশের যৌথ গবেষণায় এসব নদীর পানি, পলি এবং বাতাসে মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণার হিসাব করা হয়।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড.
গবেষকরা বলছেন, পাঁচ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট প্লাস্টিকের কণাকে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলা হয়। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি অব্যবস্থাপিত প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে ভারত দ্বিতীয় এবং চীন পঞ্চম। এ দেশগুলো কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা না থাকায় তাদের নদীগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়। পানি ও পলির সঙ্গে মিলে মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণা মিশছে বঙ্গোপসাগরে।
গবেষণা দলের প্রধান অধ্যাপক ড. হারুনুর রশীদ বলেন, “বাংলাদেশ অংশে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর প্রতি বর্গ কিলোমিটার পানিতে ২৫ লাখের অধিক ভাসমান মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। নদীত তলদেশের প্রতি কেজি পলিতে ৪৫০ পর্যন্ত মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যায়। এসব নদ-নদীর বিভিন্ন অংশ থেকে সংগৃহীত মাছের পেটেও বিভিন্ন ধরনের মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি দেখা গেছে গবেষণায়।”
গবেষণা প্রকল্প পরিচালনার বিষয়ে অধ্যাপক বলেন, প্লাস্টিক দূষণের দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম। এখানে প্রচুর পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা এবং ইরাবতী নদীর মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে যাচ্ছে। বিগত ২ বছর ধরে এ গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে ভুটানের তিনটি পাহাড়ি নদী (হারাছু, মানস ও তোরসা), যেগুলো ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিশেছে। ভারতের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্রের পাঁচটি মোহনা (টুটিং, দিব্রুগড়, তেজপুর, গোয়াহাটি ও ধুবরি) এবং বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পাঁচটি মোহনা (কুড়িগ্রাম, সুন্দরগঞ্জ, সারিয়াকান্দি, সিরাজগঞ্জ ও হুমুরিয়া) থেকে গবেষণা প্রকল্পের নমুনা (পানি, নদীর তলদেশের পলি ও মাছ) সংগ্রহ করা হয়েছিল। সেইসঙ্গে বায়ুতে মাইক্রোপ্লাস্টিক পরীক্ষা করা হয়।”
তিনি আরো বলেন, “গবেষণায় দেখা যায়, ভুটানের নদীগুলোর পানি ও পলিতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের দূষণ খুবই কম। কিন্তু উজানে ভারত ও ভাটির বাংলাদেশ অংশে ব্রহ্মপুত্র এবং যমুনা নদীর পানি, পলি ও মাছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের দূষণের মাত্রা উল্লেখযোগ্য। কোনো কোনো ক্ষেত্রে উদ্বেগজনকহারে বেশি। নদীতে মাইক্রোপ্লাস্টিক অনেক ধরনের মানবসৃষ্ট উৎস থেকে আসে যেমন প্রসাধনী সামগ্রী কসমেটিকস, ফেস স্ক্রাব, সানস্ক্রিন, শ্যাম্পু, লোশন, সিন্থেটিক কাপড় উৎপাদন কারখানা ও প্রতিদিন ধোয়া, গাড়ির টায়ারের ক্ষয়, ভবন ও রাস্তার রঙের ক্ষয়, সিন্থেটিক আবরণ উপাদান, পলিমার-আবৃত সার ও কীটনাশক, ক্ষয়কারী পরিষ্কারের সামগ্রী, শিল্প ও জাহাজে ব্যবহৃত ব্লাস্টিং মিডিয়া, মিউনিসিপাল স্যুয়েজ স্লাজ ইত্যাদি। যা দৈনন্দিন ব্যবহারের প্লাস্টিকের সঙ্গে মিশে যায়।”
মাইক্রোপ্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিক নিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, “মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণে আক্রান্ত নদীর মাছের মাধ্যমে মানুষের শরীরে যাচ্ছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। রান্নার পরও এটি থেকে যাচ্ছে এবং খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে পেটে যাচ্ছে। যা মানুষের অন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি, হরমোনের ক্রিয়াকাণ্ডে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।”
অধ্যাপক আরো বলেন, “এটা আমাদের অন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলোকে ব্যাহত করে দিতে পারে। এছাড়া পেটে ফোলা ভাব, অস্বস্তি ও হজমের সমস্যার পাশাপাশি ক্লান্তিসহ নানা শারীরিক জটিলতা হয়ে থাকে। বাতাসে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতির কারণে কাশি ও শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যার পাশাপাশি শরীরের হরমোনের স্বা ভাবিক কার্যক্রমও ব্যাহত হতে পারে। এর ফলে ওজন কমে যাওয়া, স্মৃতি বিভ্রাটসহ হাতের কাঁপুনিও হতে পারে।”
এ ছাড়া গবেষণায় কয়েকটি নদ-নদীতে ন্যানো প্লাস্টিকের দেখা মিলেছে বলেও উল্লেখ করেন অধ্যাপক হারুনুর রশীদ। তিনি বলেন, “মাছের মাধ্যমে এই ন্যানো প্লাস্টিক মানুষের কোষে প্রবেশ করতে সক্ষম। এর ফলে মানুষের যকৃৎ ও কিডনির মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কাজের ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে।”
প্লাস্টিকের পরিবর্তে আমরা যদি পাট বা সুতি ব্যাগ ব্যবহার করতে পারি এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতল ও প্যাকেজিং এড়াতে পারি তবেই প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধ সম্ভব বলে দাবি গবেষক দলের।
ঢাকা/লিখন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ল স ট ক বর জ য ব যবস থ উপস থ ত নদ র ম নদ র প ব যবহ
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনের দিন অমোচনীয় কালি সরবরাহ না হলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে: ছাত্রদল
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনে অমোচনীয় কালি সরবরাহ না করলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতারা। এ ছাড়া এমফিল কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ছাত্রদলকে ভোট প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
রোববার উপাচার্যের সভাকক্ষে রাজনৈতিক ও সক্রিয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫–এর আচরণবিধিবিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় ছাত্রদলের নেতারা এমন মন্তব্য করেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘নির্বাচনে যদি কোনো ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটে, তাহলে আমরা একচুল ছাড় দেব না। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, যদি কোনো ধরনের অনিয়ম হয়— কোনো ছাড় হবে না। নির্বাচনের সময় অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে হবে। যদি নির্বাচন কমিশন অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে।’
ভোটের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ‘ম্যানুয়ালি’ ভোট গণনার দাবি জানিয়ে শামসুল আরেফিন বলেন, ‘কত ব্যালট ছাপানো হলো, কত ভোট গণনা হলো, কত ব্যালট নষ্ট হলো—এসব তথ্য স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রকাশ করতে হবে। কারণ, আমরা ডাকসুতে ব্যালট কেলেঙ্কারির অভিযোগ সম্পর্কে জানি।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ বিধিমালায় এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ছাত্রদলকে ‘মাইনাস’ করার একটি মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জকসু গঠন ও পরিচালনা বিধিমালায় বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর নিয়মিত শিক্ষার্থী ভোটার কিংবা প্রার্থী ছাড়া কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। অন্যদিকে এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থীর যোগ্যতা না দিয়ে আমাদের মাইনাস করা ছিল মাস্টারপ্ল্যান—আর সেই মাস্টারপ্ল্যান সফল হয়েছে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসানের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য রেজাউল করিম, প্রক্টর, সিন্ডিকেটের সদস্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর নির্বাচন কমিশনার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।