ইতিহাসের সবচেয়ে সংস্কারবাদী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর এখন বেছে নেওয়া হবে একজন নতুন পোপকে। এই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ভোটের মালিক ক্যাথলিক চার্চের শীর্ষ ধর্মযাজকরা।
বিশ্বের ১৪০ কোটি ক্যাথলিক খ্রিষ্টানের প্রধান ধর্মগুরুকে বলা হয় পোপ। অর্থাৎ পোপ একটি উপাধি, ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা এই উপাধিতে ভূষিত হন; যার কিছু সুনির্দিষ্ট কাজ রয়েছে।
রোমান ক্যাথলিকরা বিশ্বাস করেন, তাদের প্রধান আত্ম্যাধিক ধর্মগুরু যিশু খ্রিষ্টের বংশধারার সরাসরি প্রতিনিধিত্ব করেন। তাকে সেন্ট পিটারের জীবন্ত উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আরো পড়ুন:
রাজবাড়ীতে বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু
কিশোরগঞ্জে বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু
ধর্মপ্রচার শুরু করার প্রথম দিকে যে কয়েকজন ব্যক্তি যিশু খ্রিষ্টের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন, সেন্ট পিটার তাদের অগ্রগণ্য। তাকে খ্রিষ্টান ধর্মপ্রচারকদের নেতা মানা হয়।
সেন্ট পিটারের জীবন্ত উত্তরসূরি হিসেবে একজন পোপ ক্যাথলিক গির্জাগুলোর প্রধান আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
গির্জাগুলোর পাশাপাশি সারা বিশ্বের প্রায় ১৪০ কোটি ক্যাথলিক খ্রিষ্টান তার নির্দেশনা মেনে ধর্মীয় রীতি-নীতি পালন করে থাকে।
বিবিসি লিখেছে, খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারীরা সাধারণত বাইবেলের আদর্শ অনুযায়ী জীবন যাপনের চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে তারা পোপের কাছ থেকে ধর্মীয় বিভিন্ন শিক্ষা-দীক্ষা ও পরামর্শ পেয়ে থাকেন।
বিবিসি তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে খ্রিষ্টান ধর্মের যত অনুসারী আছে, তাদের প্রায় অর্ধেকই রোমান ক্যাথলিক। এ ছাড়া প্রোটেস্ট্যান্ট, অর্থোডক্সসহ আরো বেশ কয়েক ধরনের খ্রিষ্টান রয়েছেন, তবে তারা পোপের কর্তৃত্বকে স্বীকার করেন না।
পোপের বসবাস বিশ্বের সবচেয়ে ছোট রাষ্ট্র ভ্যাটিকান সিটিতে, যার চারপাশ ঘিরে রয়েছে ইতালির রাজধানী রোম।
ধর্মগুরু হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য পোপ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বেতন পান না। তবে তার জীবনযাপন ও ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যয় বহন করে ভ্যাটিকান সিটি।
ভ্যাটিকান সিটির স্থানীয় সময় সোমবার (২১ এপ্রিল) সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে মারা যান পোপ ফ্রান্সিস। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। দক্ষিণ আমেরিকার কোনো দেশ থেকে নির্বাচিত প্রথম পোপ ছিলেন তিনি।
পোপ ফ্রান্সিসের আগে ইউরোপের বাইরের কোনো দেশ থেকে পোপ হওয়ার একমাত্র রেকর্ড ছিল তৃতীয় গ্রেগরির। তিনি ৭৪১ খ্রিষ্টাব্দে মারা যান।
ক্যাথলিক চার্চের পোপ হওয়ার পর অনেক কিছুই প্রথমবার করলেও ফ্রান্সিস কখনো চার্চের সংস্কার কার্যক্রম বন্ধ করেননি।
এরপরও পুরোনোকে আঁকড়ে ধরা ঐহিত্যবাদীদের মধ্যেও পোপ ফ্রান্সিস সমানভাবে জনপ্রিয় ছিলেন।
পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর প্রায় ১২ বছর রোমান ক্যাথলিক চার্চের আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে ধর্মের সেবার করার সুযোগ পেয়েছেন ফ্রান্সিস।
ঢাকা/রাসেল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
টিভির লাইসেন্স নিয়ে সারজিস ও আজাদ মজুমদারের বক্তব্যে যে বিষয় নেই
অন্তর্বর্তী সরকার দুটি বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলের লাইসেন্স দিয়েছে। একটি নেক্সট টিভি, যার লাইসেন্স পেয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক মো. আরিফুর রহমান তুহিন। অন্যটি লাইভ টিভি। এটির লাইসেন্স পেয়েছেন আরেক আরিফুর রহমান, যিনি জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ছিলেন।
প্রথম আলোয় গতকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও জনপরিসরে নানা প্রতিক্রিয়া আসছে। এক পক্ষ বলছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সক্রিয় ব্যক্তিদের একাংশ বিশেষ সুবিধা নিয়েছে। তার উদাহরণ দুটি টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স।
সমালোচকদের মধ্যে রয়েছেন গণ–অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী তিনি বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে (টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স) এ সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যে অস্বচ্ছতা ও পক্ষপাতমূলক মনোভাব রয়েছে, সেগুলো বোধ হয় প্রকাশ পেয়েছে।
অন্য পক্ষ টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স দিলে সমস্যা কী, সে প্রশ্ন তুলছে। বিগত সরকারের আমলে কীভাবে দলীয় বিবেচনায় লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, তা সামনে আনছে।
প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার আজ বুধবার ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন। তিনি কী লিখেছেন, তা পুরোটাই তুলে ধরা হলো।
আজাদ মজুমদার লিখেছেন, ‘নতুন দুটি টিভি চ্যানেলকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে গতকাল প্রথম আলো রিপোর্ট করেছে। ভালো রিপোর্ট। আমার কাছে বেশি ভালো লেগেছে এই কারণে যে চাইলে আমরা এখন এই রিপোর্টকে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবেও ব্যবহার করতে পারি।
‘টিভি লাইসেন্স কারা পায় সেটা নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ আছে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে এই রিপোর্ট ঠিকই আছে। এই রিপোর্ট থেকেই জানা যাচ্ছে বাংলাদেশে এর আগে ৫০টি টিভি চ্যানেলকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে অপারেশনে আছে ৩৬টি।’
আজাদ মজুমদার আরও লিখেছেন, ‘এই ৩৬টি চ্যানেলের মালিক কারা এটা নিয়ে অনেকের মোটামুটি ধারণা আছে। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন এই মালিকদের নাম পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেছে তাদের রিপোর্টে। সৈনিক লীগের সভাপতি থেকে মুরগির ফার্মের মালিক অনেকেই লাইসেন্স পেয়েছে। সরকারি দলের সাংসদ, সাংসদদের ভাই-ভাতিজা, ভাবি তাদের কথা তো বাদই দিলাম। আরও অনেকেই টিভি লাইসেন্স পেয়েছে মূলত রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে। আমাদের মিডিয়াগুলো এটা নিয়ে একটুও শব্দ করে নাই। হয় তাদের সদিচ্ছা ছিল না, অথবা স্বাধীনতা ছিল না। এখন তারা করতে পারছে তার কারণ গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে রিপোর্ট করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করব গণমাধ্যম তাদের এই স্বাধীনতাকে কাজে লাগিয়ে এখন যদি কোনো নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে সেটা যেমন রিপোর্ট করবে, তেমনি স্বাধীনতার অভাবে অতীতে তারা যেসব রিপোর্ট করতে পারেনি, সেই রিপোর্টগুলোর প্রতিও আলোকপাত করবে। সংবাদমাধ্যমের এই স্বাধীনতা আমাদের সমাজের স্বচ্ছতার জন্য খুবই জরুরি।’
আরও পড়ুনপুরোনো প্রক্রিয়ায় নতুন দুটি টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স, কারা পেল ০৭ অক্টোবর ২০২৫সারজিস যা বললেনজাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম গতকাল রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এখন দেশে ৫০টি মিডিয়া থাকলে ৪০টিতেই প্রভাব খাটাচ্ছে বিএনপি।’
সারজিস আলম আরও বলেন, ‘কোনো একটা টেলিভিশনের অনুমোদন হয়েছে, আমরা যেটা জেনেছি, সেখানে এনসিপির একজন আছেন। কিন্তু একজন দিয়ে তো টেলিভিশনের অনুমোদন পাওয়া যায় না। আমরা যেটা শুনেছি, সেখানে বিএনপির লোকজনও আছেন, জামায়াতের ও স্বতন্ত্র লোকও আছেন। কেন শুধু এনসিপিকে ফোকাসড করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা।’
এদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রেস উইংয়ে মিনিস্টার (প্রেস) নিয়োগ পাওয়া সাংবাদিক গোলাম মোর্তোজা আজ ফেসবুকে টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘পত্রিকা প্রকাশের ডিকলারেশন তো একজন সাংবাদিকেরই পাওয়ার কথা, ব্যবসায়ীর না—তাই না? একটি নিউজ চ্যানেলের লাইসেন্সও তো সাংবাদিকেরই পাওয়ার কথা। বলা হচ্ছে, এখনও আগের মতই মানে ফ্যাসিস্ট হাসিনার মতই স্যাটেলাইট চ্যানেলের লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। আসলে কি তাই?
‘হাসিনা তো লাইসেন্স দিয়েছে ব্যবসায়ীদের, সাংবাদিকদের নয়। একাত্তর নামে চ্যানেল চেয়েছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক এবিএম মুসা। কিন্তু চ্যানেল দেওয়া হয়েছিল মোজাম্মেল বাবুকে। রিপোর্টার থেকে উদ্যোক্তা হবেন বলে রসিকতা করছেন অনেকে। তো রিপোর্টার উদ্যোক্তা মানে চ্যানেলের মালিক হলে সমস্যা কী।’
গোলাম মোর্তোজা আরও লিখেছেন, ‘যাঁরা লাইসেন্স পেয়েছেন তাদের বিষয়ে তেমন একটা জানি না। তাঁরা ঠিকমত চালাতে পারলে টিকে থাকবেন, না পারলে হারিয়ে যাবেন। কিন্ত তাঁদের চ্যানেলের লাইসেন্স দেওয়ায় ও পাওয়ায় সমস্যা কোথায়?’
আরও পড়ুনবেসরকারি টেলিভিশনের রাজনৈতিক লাইসেন্স১৯ অক্টোবর ২০১৩তাঁদের বক্তব্যে যে বিষয় নেইগোলাম মোর্তোজা, আজাদ মজুমদার ও সারজিস আলম যে বিষয় এড়িয়ে গেছেন অথবা তাঁদের নজরে পড়েনি, সেটি হলো, প্রথম আলোর প্রতিবেদনে মূলত প্রশ্ন তোলা হয়েছে পুরোনো প্রক্রিয়ায় লাইসেন্স দেওয়া নিয়ে। প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল ‘পুরোনো প্রক্রিয়ায় নতুন দুটি টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স’।
বিগত সরকারের আমলে টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স দেওয়া মূলত সরকারের ইচ্ছাধীন ছিল। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি ছাড়া যে কিছুই হতো না, সেটা সবার জানা। কিছু আনুষ্ঠানিকতা ছিল। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হতো, নথিপত্র জমা দিতে হতো।
অনুমোদন হয়ে গেলে চ্যানেল চালু করে দেওয়া যেত, তা-ও নয়। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছ থেকে তরঙ্গ পেতে হতো। সেই তরঙ্গ পেতে আবার গোয়েন্দা সংস্থার ইতিবাচক প্রতিবেদন লাগে। সেটাও নির্ভর করত সরকারের সবুজ সংকেতের ওপর।
অতীতে কেউ কেউ টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স পেয়ে শেয়ারের বড় অংশ বিক্রি করে দিয়েছিলেন—এমন উদাহরণও আছে। আবার একটি টেলিভিশন চ্যানেল চালু করতে যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন, তার উৎস নিয়েও অতীতে প্রশ্ন উঠেছিল।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বেসরকারি টেলিভিশন বিষয়ে বলা হয়েছে, বেসরকারি খাতে টেলিভিশন চ্যানেল চালুর অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় আনুগত্য, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে অর্থনীতি ও বাজারের চাহিদা ও সক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যায় লাইসেন্স দিয়ে একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঅর্ধেক টিভি চ্যানেল মরে যাবে বা চাঁদাবাজি করবে - টিভি মালিকদের শঙ্কা০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪আমরা আশা করেছিলাম, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সব ক্ষেত্রেই মৌলিক কিছু পরিবর্তন আনবে। টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশমতো একটি গণমাধ্যম কমিশন গঠন করা এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত। অন্তত সরকার খাতসংশ্লিষ্ট নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে আবেদনগুলো যাচাই–বাছাই করতে পারত।
কিন্তু পুরোনো প্রক্রিয়ায় কেন লাইসেন্স দেওয়া হলো, কী বিবেচনা ছিল, কেন অন্যদের আবেদন বিবেচনায় নেওয়া হলো না—এ বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন ওঠা কি অস্বাভাবিক?
‘একটি নিউজ চ্যানেলের লাইসেন্সও তো সাংবাদিকেরই পাওয়ার কথা’—গোলাম মোর্তোজার এ বক্তব্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু জানিয়ে রাখা ভালো, যে দুজন লাইসেন্স পেয়েছেন, তাঁদের একজন আরিফুর রহমান তুহিন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর সাংবাদিকতা ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন। এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। অন্যজন (আরিফুর রহমান) একটি ইংরেজি দৈনিকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ছিলেন। অনেক দিন ধরেই তিনি সাংবাদিকতায় নেই। সরকারি চাকরির জন্য পড়াশোনা করছিলেন। অনেক আবেদনের মধ্য থেকে একজন সাবেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদকের আবেদন কোনো ধরনের স্বজনপ্রীতি ছাড়া বিবেচনায় নিয়ে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে—এটাও বিশ্বাস করতে হবে?
শুধু এনসিপিকে ‘ফোকাসড’ করা হচ্ছে বলে সারজিসের যে অভিযোগ, তা–ও প্রথম আলোর প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে সঠিক নয়। প্রতিবেদনে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তির পরিচয় উল্লেখ করতে গিয়ে এনসিপির প্রসঙ্গটি এসেছে। নেক্সট টিভির জন্য যে প্রতিষ্ঠান গড়া হয়েছে, সেটির সঙ্গে বিএনপি নেতা যুক্ত, তা–ও নামসহ উল্লেখ করা হয়েছে।
‘এখন দেশে ৫০টি মিডিয়া থাকলে ৪০টিতেই প্রভাব খাটাচ্ছে বিএনপি’—সারজিসের এ বক্তব্যে মানুষের মনে হতে পারে, তাঁরাও (সারজিস) নিজেদের প্রচারযন্ত্র তৈরি করতে চাইছেন।
আরও পড়ুনমন্ত্রী-সাংসদসহ পাঁচজনকে নতুন টিভি চ্যানেল২০ জানুয়ারি ২০১৭নতুন বন্দোবস্ত কোথায়আজাদ মজুমদার ‘সৈনিক লীগের সভাপতি থেকে মুরগির ফার্মের মালিকের’ টিভি লাইসেন্স পাওয়া প্রসঙ্গে ‘আমাদের মিডিয়াগুলো এটা নিয়ে একটুও শব্দ করে নাই’ বলে যে দাবি করেছেন, তা অন্তত প্রথম আলোর ক্ষেত্রে সঠিক নয়।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ যখন টিভির লাইসেন্স দিয়েছে, তখন সেটা নিয়ে প্রথম আলো প্রশ্ন তুলেছে। উদাহরণ ‘বেসরকারি টেলিভিশনের রাজনৈতিক লাইসেন্স’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি (২০১৩)। এ রকম আরও উদাহরণ রয়েছে। চাইলেই প্রতিবেতনটি পড়ে দেখতে পারেন।
বিগত সরকারের আমলে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, গুম, খুন ইত্যাদির কারণেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ও সরকারের লোকদের পরিণতি আমরা জানি। আমাদের যে নতুন বন্দোবস্তের কথা বলা হয়েছিল, সেটা সব জায়গায় দেখতে চাই। নতুন বন্দোবস্ত মানে নিশ্চয়ই এই নয় যে পুরোনো প্রক্রিয়ায় নতুন কাউকে টিভির লাইসেন্স দেওয়া।