ড্রেসিংরুম থেকে যখন যে ব্যাটসম্যান বের হয়েছেন, প্রায় সব ক্রিকেটারের নাম ধরেই স্লোগান উঠল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারি থেকে। কখনো ‘লিটন’, ‘লিটন’ কখনো ‘শান্ত’, ‘শান্ত’। ব্যাটসম্যান উইকেটে পৌঁছাতেই গ্যালারিতে নেমে আসে নীরবতা।

সে নীরবতায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যাটে বল লাগার শব্দ, সেই শট বলকে বাউন্ডারি পর্যন্ত পাঠালে আবারও উচ্ছ্বাস গ্যালারিতে। ব্যাটসম্যানদের পর আজ তৃতীয় দিন শেষ বিকেলে সিলেটের দর্শকদের আনন্দের উপলক্ষ এনে দিয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররাও।

ঘরের মাঠে নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান করে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে লিড নিয়েছে ৩০১ রানের। শেষ বিকেলে ব্যাট করতে নেমে ৮৬ রান করতেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে আয়ারল্যান্ড। ২১৫ রানে পিছিয়ে থাকা সফরকারীদের ইনিংস হার এড়াতে এখনো পাড়ি দিতে হবে লম্বা পথ। বাংলাদেশ তৃতীয় দিন তাই শেষ করেছে জয়ের সুবাস নিয়ে।

সকালটা বাংলাদেশের শুরু হয়েছিল মাইলফলক হাতছাড়া করার হতাশাকে সঙ্গী করে। মাহমুদুল হাসানের সামনেই ছিল বড় মাইলফলক। দ্বিতীয় দিনে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা এই ওপেনার ১৬৯ রান নিয়ে দিন শুরু করেছিলেন, দাঁড়িয়ে ছিলেন ডাবল সেঞ্চুরির সামনে।

কিন্তু সকালে আর মাত্র ২ রান যোগ করেই তিনি স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন বেরি ম্যাকার্থির বলে। দিনের শুরুতে মুমিনুলকেও হাতছানি দিচ্ছিল সেঞ্চুরি সম্ভাবনা, কিন্তু তিনিও আজ যোগ করতে পারেন মাত্র দুই রানই!

থিতু হয়ে যাওয়া দুই ব্যাটসম্যানের বিদায়েও অবশ্য বাংলাদেশের ইনিংস থমকে যায়নি। সেটি টেনে নেওয়ার দায়িত্বটা কাঁধে তুলে নেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন। তৃতীয় উইকেটে মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে ৭৯ রান যোগ করেন। কিন্তু তৃতীয় দিনে রান তোলার গতিটা জোর পায় ২৩ রান করে মুশফিক আউট হয়ে যাওয়ার পর, নাজমুলের সঙ্গী তখন লিটন দাস।

দুজন মিলে ওভারপ্রতি সাড়ে পাঁচের বেশি গতিতে রান তোলেন ৭৯ রানের জুটিতে। উল্টো দিকে ঝাঁপিয়ে হ্যারি টেক্টরের নেওয়া দুর্দান্ত ক্যাচে লিটন ৬০ রানে আউট হয়ে গেলে তাঁদের জুটি ভেঙে যায়। তাঁর বিদায়ের পরও আরেক প্রান্তে থিতু হওয়া নাজমুল এগিয়ে নিতে থাকেন দলকে।

নাজমুল সব শটই খেলেছেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। ১৪ চারের ইনিংসে ১১৩ বলে অষ্টম সেঞ্চুরি পেয়েছেন তিনি। অধিনায়ক হিসেবে তাঁর সেঞ্চুরির সংখ্যা এখন ৪টি, গড় ৪০–এর বেশি।

অধিনায়ক হিসেবে চার সেঞ্চুরি আছে মুশফিকুর রহিমেরও। তবে তিনি তা খেলেছেন ৬১ ইনিংস, নাজমুল ২৭টি। শ্রীলঙ্কা সিরিজের পর অধিনায়কত্বের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিলেও এই সিরিজের আগেই দুই বছরের জন্য টেস্টের নেতৃত্ব পেয়েছেন নাজমুল। তাঁর সামনে তাই মুশফিককে ছাড়িয়ে যাওয়ার সব সম্ভাবনাই আছে।

সেঞ্চুরিটাকে অবশ্য বড় করতে পারেননি নাজমুল। আউট হয়ে গেছেন এক শ রানে থাকতেই। বাংলাদেশের প্রথম চার ব্যাটসম্যানই এই প্রথম ফিফটি করলেন, যার সৌজন্যে ৮ উইকেট হারিয়ে ৫৮৭ রান করে ইনিংস ঘোষণা। এখানেও বাংলাদেশ আজ রেকর্ড গড়েছে। ২০২০ সালে মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা ৫৬০ রান ছাড়িয়ে এটিই এখন ঘরের মাঠে তাদের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।

বাংলাদেশকে আবার ব্যাটিংয়ে নামাতে হলে দ্বিতীয় ইনিংসে অন্তত ৩০১ রান করতে হবে আয়ারল্যান্ডকে। আজই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলায় কাজটা বেশ কঠিনই হবে আইরিশদের জন্য। নাহিদ রানার বলে কেইড কারমাইকালের বোল্ড হয়ে যাওয়া দিয়েই সেই আভাস পাচ্ছিল বাংলাদেশ।

তবে দ্বিতীয় উইকেটে পল স্টার্লিং আর হ্যারি টেক্টরের ৪৭ রানের জুটিতে কিছুটা স্বস্তিতে ছিল আয়ারল্যান্ড। কিন্তু পল স্টার্লিংকে নাজমুলের করা দুর্দান্ত রান আউটের পর ভেঙে পড়তে শুরু করে আয়ারল্যান্ডের ব্যাটিং।

আজ আউট হওয়া পাঁচ ব্যাটসম্যানের তিনজনই ফিরেছেন এক অঙ্কের ঘরে থাকতে। দুটি উইকেট নিয়েছেন হাসান মুরাদ, একটি তাইজুল ইসলাম। হ্যারি টেক্টরেকে এলবিডব্লিউ করে তাইজুল পেয়েছেন তাঁর ৫০০তম প্রথম শ্রেণির উইকেটও।

অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনকে নিয়ে কাল দিন শুরু করবেন আয়ারল্যান্ডের অধিনায়ক বালবার্নি। ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন তাঁদের জন্য বেশ দূরের এখন। আপাতত ইনিংস হার এড়ানোটাই হবে বড় প্রাপ্তি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব য টসম য ন র ন কর প রথম উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশের ৫০টি স্মরণীয় ক্রিকেট ম্যাচের টিকিট নিয়ে স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ

টেস্ট ক্রিকেটে রজতজয়ন্তী উদ্‌যাপন করছে বাংলাদেশ। ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর প্রথম টেস্ট খেলার ২৫ বছর পূর্তি আজ। এমন দিনে বাংলাদেশ ক্রিকেট মিউজিয়াম প্রকাশ করেছে বিশেষ স্মারকগ্রন্থ ‘মেমোরেবল ম্যাচ টিকিটস’।

ক্রিকেট স্মারক সংগ্রাহক জুনায়েদ পাইকারের ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে বাছাই করা ৫০টি ঐতিহাসিক ম্যাচের টিকিট নিয়ে সাজানো এই গ্রন্থে ফুটে উঠেছে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পথচলার আড়াই দশকের আবেগ, স্মৃতি ও গৌরব। এ ছাড়া দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের নানা মাইলফলক ও স্মরণীয় ম্যাচের নস্টালজিক ভ্রমণ তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে।

বইটি নিয়ে শুভেচ্ছা বার্তায় বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ‘‘মেমোরেবল ম্যাচ টিকিটস’’ প্রকাশের এই অসাধারণ উদ্যোগের জন্য জুনায়েদ পাইকার এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট মিউজিয়ামকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের টেস্ট ক্রিকেটের উত্তরাধিকারকে এই বিরল টিকিট স্মারকগুলোর মাধ্যমে অসাধারণভাবে তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিটি টিকিটই একটি গল্প—মুহূর্ত, মাইলফলক ও আবেগের গল্প, যা আমাদের ক্রিকেট পরিচয়কে গড়ে তুলেছে।’

বইয়ের ভেতরের ছবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৫০০-তে বাংলাদেশের তৃতীয় তাইজুল
  • বাংলাদেশের ৫০টি স্মরণীয় ক্রিকেট ম্যাচের টিকিট নিয়ে স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ