নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ১২ শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সোমবার উপজেলার খলিলুর রহমান ডিগ্রি কলেজ ও জয়াগ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে শিক্ষকদের উপস্থিতিতে পরীক্ষা কেন্দ্রের নিয়ম ভঙ্গ করে শিক্ষার্থীরা হট্টগোল করায় ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ ওঠে।

অব্যাহতিপ্রাপ্ত শিক্ষকরা হচ্ছেন, উপজেলার নজরুল একাডেমি উচ্চ বিদ্যাললের সহকারী শিক্ষক শ্যামল কুমার, নুরুল ইসলাম, কেশারপাড় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষক মোস্তফা সুজন, সোনাপুর আলী আকবর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুল আলম, মো.

তাজুল ইসলাম, শিক্ষিকা ফেরদাউস আক্তার, খলিলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষিকা নূর-এ-জান্নাত, শিক্ষক জাবেদ হোসেন, মাহাবুবের নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহাদাত বানু, আজিমুল ইসলাম, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাকির হোসেন।

সোনাইমুড়ী উপজেলা কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দ্বীন আল জান্নাত বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, সোমবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার খলিলুর রহমান ডিগ্রি কলেজ ও জয়াগ উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্র গণিত পরীক্ষা চলছিল। ওই সময় কেন্দ্র পরিদর্শনে যাই আমি। কেন্দ্রে গিয়ে দেখি শিক্ষকদের উপস্থিতি দু’টি কেন্দ্রে শিক্ষার্থীরা হট্টগোল করছে। এ সময় শিক্ষকরা নীরব ছিলেন। বিষয়টি আমার নজরে এলে দায়িত্ব অবহেলার প্রমাণ পেয়ে দু’টি পরীক্ষা কেন্দ্রের ১২ শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে কেন্দ্র প্রধানরা অব্যাহতি দেন। অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষকরা এ বছর বাকি পরীক্ষাগুলোর সময় কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে পারবে না।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ক ষ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য

কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।

মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।

দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।

লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।

দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।

জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।

রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।

দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ