ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি শান্তি আলোচনার জন্য প্রস্তুত পুতিন
Published: 22nd, April 2025 GMT
চার বছর আগে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর, প্রথমবারের মতো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি শান্তি আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্য বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার (২১ এপ্রিল) রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুতিন ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার জন্য তিনি প্রস্তুত।
আরো পড়ুন:
রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে গিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তরুণের নিহতের খবর
ইউক্রেনে সুমি শহরে রাশিয়ার হামলায় নিহত ৩৪, ‘ভয়াবহ ঘটনা’ বললেন ট্রাম্প
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুই মাস ধরে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। দ্রুত শান্তি চুক্তিতে সম্মত হওয়ার জন্য উভয় পক্ষের ওপর চাপ বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বিবিসি লিখেছে, কিছুদিন আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, চলতি সপ্তাহেই রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি। পাশাপাশি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে মস্কোর উপর থেকে আর্থিক ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আমেরিকা প্রত্যাহার করে নেবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে পুতিনের এই বার্তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
সোমবার (২১ এপ্রিল) রুশ রাষ্ট্রীয় টিভির একজন প্রতিবেদককে পুতিন বলেন, “মস্কো যেকোনো শান্তি উদ্যোগের জন্য উন্মুক্ত এবং কিয়েভের কাছ থেকেও একই প্রত্যাশা করে।’
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, পুতিনের মন্তব্যে ইউক্রেনের সঙ্গে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা না চালানোর বিষয়ে সরাসরি আলোচনায় অংশ নেওয়ার ইচ্ছার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পুতিনের মন্তব্যের সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে বলেছেন, ইউক্রেন বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ‘যেকোনো আলোচনার জন্য প্রস্তুত’।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া যখন ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ শুরু করে, তখন থেকে উভয় পক্ষের মধ্যে সরাসরি কোনো আলোচনা হয়নি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর চার বছর ধরে চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি যুদ্ধের বিষয়ে রাশিয়ার বক্তব্য গ্রহণের জন্য ইউক্রেনের প্রতি তার দৃঢ় সমর্থন থেকে মার্কিন নীতি পুনর্নির্ধারণ করেছেন।
গত সপ্তাহে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের উৎসব ‘ইস্টার’ উপলক্ষে একদিনের (৩০ ঘণ্টার) যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিলেন পুতিন। তবে জেলেনস্কি অভিযোগ করেছিলেন, একদিনের যুদ্ধবিরতির কথা বলে আসলে শান্তির ‘ভান’ করেছেন পুতিন। ওই সাময়িক যুদ্ধবিরতির সময়ে রাশিয়া এবং ইউক্রেন উভয়েই একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছিল।
জেলেনস্কি দাবি করেছিলেন, রাশিয়ান সেনারা প্রায় ৩ হাজার বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে, অন্যদিকে রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে শত শত ড্রোন এবং গোলাবর্ষণের অভিযোগ করেছিল। সেই ঘটনার কয়েক দিন যেতে না যেতেই এবার পুতিনের পক্ষ থেকে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব এলো।
বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, উভয় পক্ষই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান চাপের মুখোমুখি হচ্ছে। কয়েকদিন আগে ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন যে, শান্তি আলোচনায় মস্কো ও কিয়েভ কয়েক দিনের মধ্যে অগ্রগতি না দেখালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতা থেকে সরে দাঁড়াবে যুক্তরাষ্ট্র।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র ইউক র ন কর ছ ল র জন য প রস ত
এছাড়াও পড়ুন:
করিডোরের জন্য দু’দেশের সম্মতি লাগবে: জাতিসংঘ
রাখাইন রাজ্যের বেসামরিক নাগরিকের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠাতে করিডোরের বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সম্মতি প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
ঢাকার জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় সমকালকে এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশে জাতিসংঘ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে রাখাইনে মানবিক পরিস্থিতির অবনতি নিয়েও উদ্বিগ্ন তারা।
জাতিসংঘ অন্য অংশীদারকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন জোরদার করবে। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে যে কোনো মানবিক সহায়তা বা সরবরাহের জন্য প্রথমে দুই সরকারের মধ্যে সম্মতি প্রয়োজন। সীমান্ত অতিক্রম করে সহায়তা দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর অনুমতি নেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি ছাড়া জাতিসংঘের সরাসরি ভূমিকা সীমিত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গত রোববার এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, ‘নীতিগতভাবে আমরা রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোরের ব্যাপারে সম্মত। কারণ এটি একটি মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ হবে। তবে আমাদের কিছু শর্ত আছে। সেই শর্ত যদি পালন করা হয়, অবশ্যই আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’
এ খবর চাউর হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নের শঙ্কা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া সরকার কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তথাকথিত মানবিক করিডোর স্থাপন নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কারও সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনা হয়নি বলে দাবি করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
গত অক্টোবরে জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রকল্প (ইউএনডিপি) রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে ১২ পাতার একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে রাখাইনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়। রাখাইনের পণ্য প্রবেশের জন্য আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ রয়েছে, আয়ের কোনো উৎস নেই। ভয়াবহ মূল্যস্থিতি, অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদনে ধস, জরুরি সেবা এবং সামাজিক সুরক্ষায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা করছে জাতিসংঘ।