চার বছর আগে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর, প্রথমবারের মতো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি শান্তি আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্য বিবিসি। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার (২১ এপ্রিল) রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুতিন ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার জন্য তিনি প্রস্তুত।

আরো পড়ুন:

রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে গিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তরুণের নিহতের খবর

ইউক্রেনে সুমি শহরে রাশিয়ার হামলায় নিহত ৩৪, ‘ভয়াবহ ঘটনা’ বললেন ট্রাম্প

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুই মাস ধরে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। দ্রুত শান্তি চুক্তিতে সম্মত হওয়ার জন্য উভয় পক্ষের ওপর চাপ বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। 

বিবিসি লিখেছে, কিছুদিন আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, চলতি সপ্তাহেই রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি। পাশাপাশি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে মস্কোর উপর থেকে আর্থিক ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আমেরিকা প্রত্যাহার করে নেবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে পুতিনের এই বার্তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

সোমবার (২১ এপ্রিল) রুশ রাষ্ট্রীয় টিভির একজন প্রতিবেদককে পুতিন বলেন, “মস্কো যেকোনো শান্তি উদ্যোগের জন্য উন্মুক্ত এবং কিয়েভের কাছ থেকেও একই প্রত্যাশা করে।’

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, পুতিনের মন্তব্যে ইউক্রেনের সঙ্গে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা না চালানোর বিষয়ে সরাসরি আলোচনায় অংশ নেওয়ার ইচ্ছার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পুতিনের মন্তব্যের সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে বলেছেন, ইউক্রেন বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ‘যেকোনো আলোচনার জন্য প্রস্তুত’।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া যখন ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ শুরু করে, তখন থেকে উভয় পক্ষের মধ্যে সরাসরি কোনো আলোচনা হয়নি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর চার বছর ধরে চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি যুদ্ধের বিষয়ে রাশিয়ার বক্তব্য গ্রহণের জন্য ইউক্রেনের প্রতি তার দৃঢ় সমর্থন থেকে মার্কিন নীতি পুনর্নির্ধারণ করেছেন।

গত সপ্তাহে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের উৎসব ‘ইস্টার’ উপলক্ষে একদিনের (৩০ ঘণ্টার) যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিলেন পুতিন। তবে জেলেনস্কি অভিযোগ করেছিলেন, একদিনের যুদ্ধবিরতির কথা বলে আসলে শান্তির ‘ভান’ করেছেন পুতিন। ওই সাময়িক যুদ্ধবিরতির সময়ে রাশিয়া এবং ইউক্রেন উভয়েই একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছিল।

জেলেনস্কি দাবি করেছিলেন, রাশিয়ান সেনারা প্রায় ৩ হাজার বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে, অন্যদিকে রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে শত শত ড্রোন এবং গোলাবর্ষণের অভিযোগ করেছিল। সেই ঘটনার কয়েক দিন যেতে না যেতেই এবার পুতিনের পক্ষ থেকে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব এলো।  

বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, উভয় পক্ষই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান চাপের মুখোমুখি হচ্ছে। কয়েকদিন আগে ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন যে, শান্তি আলোচনায় মস্কো ও কিয়েভ কয়েক দিনের মধ্যে অগ্রগতি না দেখালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতা থেকে সরে দাঁড়াবে যুক্তরাষ্ট্র। 

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র ইউক র ন কর ছ ল র জন য প রস ত

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ