এক দশক পর ১২ পুলিশ ও এক আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে পরিবারের মামলা
Published: 22nd, April 2025 GMT
এক দশক আগে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি সাহাব উদ্দিনকে তুলে নিয়ে গুলি করে হত্যার অভিযোগে মামলা করেছে পরিবার। মামলায় চৌদ্দগ্রাম থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) ১২ পুলিশ সদস্য ও একজন আনসার সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে সাহাব উদ্দিনের বাবা জয়নাল আবদীন পাটোয়ারী বাদী হয়ে কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ মো.
মুহাম্মদ বদিউল আলম বলেন, আদালত শুনানি শেষে মামলার আবেদন গ্রহণ করেছেন। কাল এ ব্যাপারে আদেশ দেবেন বলে আদালত থেকে তাঁদের জানানো হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তৎকালীন সরকারের রাজনৈতিক ও প্রশাসনের চাপে এই হত্যার বিচার পায়নি সাহাব উদ্দিনের পরিবার। আশা করছে এবার পরিবার ন্যায়বিচার পাবে।
জয়নাল আবদীন পাটোয়ারী চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার চান্দিশকরা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষক এবং জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক। ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে সাহাব উদ্দিনকে তুলে নিয়ে যান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পরদিন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বজনেরা সাহাব উদ্দিনের মরদেহ পান। তাঁর মাথায় গুলি ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়েছিলেন স্বজনেরা।
মামলার আসামিরা হলেন চৌদ্দগ্রাম থানার তৎকালীন ওসি উত্তম কুমার চক্রবর্তী, পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল্লাহ আল-মাহফুজ, উপপরিদর্শক মো. নুরুজ্জামান হাওলাদার, মো. ইব্রাহীম, জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার তৎকালীন উপপরিদর্শক শাহ কামাল আকন্দ, মো. শহীদ, চৌদ্দগ্রাম থানার তৎকালীন কনস্টেবল নুর হোসেন, মহসিন মিয়া, আবু নাছের, শশাংক চাকমা, বিশেষ আনসার সদস্য মুরাদ হোসেন, জেলা পুলিশের এসএএফ শাখার মু. শরিফুল ইসলাম ও মোতাহের হোসেন। মামলায় আসামি করা না হলেও আরজিতে সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের নাম হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার আরজিতে বলা হয়, ঘটনার সময় আসামিরা ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে চৌদ্দগ্রাম থানায় গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করে বিরোধীপক্ষকে মামলা দিয়ে হয়রানি করেন। সাহাব উদ্দিন ইসলামী ছাত্রশিবিরের চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সভাপতি থাকায় রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মরত বিবাদীদের মাধ্যমে সাহাব উদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক পুলিশ বাহিনীর মাধ্যমে চৌদ্দগ্রাম এলাকায় বিরোধী দল নির্মূলের জন্য পরিকল্পনা নেন। সেই অনুযায়ী পুলিশের মাধ্যমে সাহাব উদ্দিকে হত্যার চক আঁকেন তিনি। ঘটনার দিন ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে মুজিবুল হকের হুকুমে প্রশাসনের কিছু লোকসহ অজ্ঞাতনামা বিবাদীরা সাহাব উদ্দিনের বাড়ি ঘেরাও করেন। এ সময় সাহাব উদ্দিনকে জোরপূর্বক পুলিশের লোকজনসহ তুলে নিয়ে যান। চৌদ্দগ্রাম থানা-পুলিশ সাহাব উদ্দিনকে প্রথমে চৌদ্দগ্রাম থানায় নেয়। পরে পুলিশ ও অন্যান্য বিবাদীরা সাহাব উদ্দিনকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান।
আরজিতে আরও বলা হয়, মামলার বাদী ও স্বজনেরা সাহাব উদ্দিনের খোঁজে চৌদ্দগ্রাম থানা, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানা, ডিবি, র্যাব ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করেন। চৌদ্দগ্রাম থানা-পুলিশ প্রথমে সাহাব উদ্দিনের কথা স্বীকার করলেও পরে অস্বীকার করে। পরদিন ৬ ফেব্রুয়ারি সকালে বাদী জানতে পারেন, সাহাব উদ্দিনের লাশ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছে। বাদী ও স্বজনেরা সেখানে গিয়ে সাহাব উদ্দিনের মরদেহের মাথায় গুলির চিহ্ন ও শরীরের বিভিন্ন অংশে জখমের চিহ্ন দেখতে পান। বাদী পরে জানতে পারেন সাহাব উদ্দিনকে অপহরণ করে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুজিবুল হক, তৎকালীন পৌর মেয়র মিজানুর রহমান, তৎকালীন র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ও তৎকালীন পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তীর হুকুমে সব বিবাদীর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহায়তায় পুলিশ সাহাব উদ্দিনকে মাথায় গুলি করে হত্যা করেছে। সাহাব উদ্দিনকে হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে এসআই ইব্রাহীম বাদী হয়ে অস্ত্র আইনসহ সাজানো ঘটনায় চৌদ্দগ্রাম থানায় দুটি মিথ্যা মামলা করেন, যেখানে সাহাব উদ্দিনকেও আসামি করা হয়।
মামলার বাদী জয়নাল আবদীন পাটোয়ারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলেকে ওই সময়ের ক্ষমতাসীনদের নির্দেশে পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমি খুনিদের বিচার চাই।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম জ ব ল হক র তৎক ল ন স বজন র র সদস য পর ব র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
ঝিনাইদহে বেওয়ারিশ কুকুরের কামড়ে আহত ২০
ঝিনাইদহ পৌর এলাকায় বেওয়ারিশ কুকুরের কামড়ে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার দুপুর থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে একাধিক কুকুর পথচারীদের আক্রমণ করে কামড় দেয়। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ১৫ জন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রিয়ন্তী বসাক, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের কর্মকর্তা শাহিনুর রহমানসহ অন্তত ১৫ জনকে হাসপাতালে টিকাসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
হামদহ মোল্লাপাড়া এলাকার বাসিন্দা দীপু মিয়া বলেন, ‘বিকেলে আমাদের এলাকায় এক পথচারীকে একটি পাগলা কুকুর কামড় দেয়। কুকুরটি কয়েকজন পথচারীকে কামড় দিয়েছে, এমনকি বাড়ির ভেতরে ঢুকে শিশুদেরও আক্রমণ করেছে। দীর্ঘদিন শহরের বেওয়ারিশ কুকুরগুলোকে টিকা দেওয়া হয় না। এখন শহরে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু হামদহ মোল্লাপাড়াই নয়, শহরের বিভিন্ন জায়গায় পাগলা কুকুর মানুষের ওপর হামলা চালিয়েছে। সন্ধ্যায় সরকারি বালক বিদ্যালয়ের সামনে এক শিশুকে বাঁচাতে গেলে জামির নামে এক যুবক কুকুরের কামড়ে আহত হন। একইভাবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে ঢুকে শাহিনুর রহমান নামে এক কর্মকর্তাকে কামড় দেয় কুকুরটি। আর কাঠপট্টি এলাকায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রিয়ন্তী বসাকও কুকুরের কামড়ে আহত হন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এসএএও শাহিনুর রহমান বলেন, ‘অফিস শেষ করে গ্যারেজ থেকে মোটরসাইকেল নিচ্ছিলাম। হঠাৎ গাড়ির নিচ থেকে একটি কুকুর দ্রুত আমার দিকে আসে। তাড়ানোর চেষ্টা করলে সেটি আমার পায়ে কামড়ে দেয়। পরে অনেক চেষ্টা করে কুকুরটিকে তাড়াতে পারি। পরে হাসপাতালে এসে টিকা নিয়েছি।’
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী প্রিয়ন্তী বসাক বলেন, ‘ঝিনাইদহ শহর থেকে ফিরে সড়ক ভবনসংলগ্ন কাঠপট্টি এলাকায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ একটি কুকুর এসে আমার ডান হাতে কামড় দেয়। এখন হাতে প্রচণ্ড যন্ত্রণা করছে। হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছি।’
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ছোয়া ইসরাইল বলেন, কুকুরে কামড়ানো রোগীদের টিকাসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের শারীরিক অবস্থা শঙ্কামুক্ত।
ঝিনাইদহ পৌরসভার প্রশাসক রথীন্দ্রনাথ রায় বলেন, সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে পৌর এলাকার বেওয়ারিশ কুকুরদের ধরে টিকা দেওয়া হতো। করোনার সময় থেকে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেছে। তবে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে জরুরি ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে কী করা যায়, তা দেখা হচ্ছে।