বাংলাদেশের বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের শতাধিক প্রকল্পে ১৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), যার অধিকাংশই জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক। এমন একমুখী বিনিয়োগ নীতিতে দেশের জ্বালানি খাতে ঝুঁকি বাড়ছে।

মঙ্গলবার রাজধানীতে এনজিও ফোরাম অন এডিবি ও কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল অ্যাকশন নেটওয়ার্কের (ক্লিন) সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব তথ্য জানান। তারা জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে এডিবির প্রতি আহ্বান জানান।

এনজিও ফোরামের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯৭৩ সাল থেকে এডিবি বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের ১০৬ প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে এডিবি অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত ঝুঁকি বিবেচনায় নেয়নি। ফলে এডিবির ৯ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ৬৭টি জ্বালানি প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া সংস্থাটির একাধিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও গ্যাস সঞ্চালন লাইন বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এডিবির ৬৫ শতাংশ (১১ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন) প্রকল্পে কোনো প্রকার সুরক্ষা শ্রেণীকরণ নেই, যা স্পষ্টতই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশগত প্রকল্পে বরাদ্দ ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আর বাস্তুচ্যুতি ও স্থানীয়দের সুরক্ষায় বরাদ্দ মাত্র শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ (৬০ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন ডলার)।

এনজিও ফোরাম অব এডিবির জীবাশ্ম জ্বালানি প্রচারাভিযানকারী শারমিন বৃষ্টি বলেন, এসব পরিসংখ্যান এডিবির টেকসই উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিকে গভীরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে। সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক রায়ান হাসান বলেন, এডিবি বাংলাদেশে ২ হাজার ৮৮৪ দশমিক ৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ৪ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে ৮২ দশমিক ৯ শতাংশ অর্থায়ন জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর প্রকল্পে; মাত্র ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ সৌরবিদ্যুতে। বায়ুবিদ্যুতে এখন পর্যন্ত কোনো বিনিয়োগ নেই। প্রতি মেগাওয়াটে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক প্রকল্পে বিনিয়োগ ২ দশমিক ০৪ মিলিয়ন ডলার, যেখানে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে মাত্র শূন্য দশমিক ৫১ মিলিয়ন ডলার, এটি উদ্বেগজনক।

তিনি বলেন, এডিবির জরুরি ভিত্তিতে জ্বালানি নীতি সংস্কার প্রয়োজন। তাদের সক্রিয়ভাবে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ধীরে ধীরে বন্ধ করার কৌশল গ্রহণ করতে হবে এবং ন্যায়সংগত ও সমতাভিত্তিক জ্বালানি রূপান্তরের নেতৃত্ব দিতে হবে। কার্বননির্ভরতা রোধে প্যারিস চুক্তির সঙ্গে অর্থায়নকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে।

ক্লিনের প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী বলেন, এডিবি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে খুলনা পর্যন্ত ১৬৫ কিলোমিটারের দীর্ঘ গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। বাংলাদেশে পর্যাপ্ত গ্যাস নেই জেনেও তারা কাজটি করেছে। কল্পিত গ্যাসের ওপর নির্ভর করে আবার খুলনায় ২২৫ ও ৮০০ মেগাওয়াটের দুটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ করেছে। বহুজাতিক উন্নয়ন ব্যাংক হিসেবে এডিবি কাজটি করতে পারে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু সংকটের সম্মুখভাগে রয়েছে। অথচ এডিবি এখনও জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। এটি আমাদের বাসযোগ্য ভবিষ্যৎ কেড়ে নিচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে এডিবির কাছে তিনটি দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো– জীবাশ্ম জ্বালানিতে সব অর্থায়ন বন্ধ এবং ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তরে সমর্থন, প্রকৃত সুরক্ষা বাস্তবায়ন ও এফপিআইসি (ফ্রি, প্রায়োর এবং ইনফর্মড কনসেন্ট) নিশ্চিত এবং মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতি রাখা, কার্বন মার্কেট, গ্রিন ওয়াশিং ও করপোরেট স্বার্থের নামে ছদ্ম জলবায়ু সমাধান প্রত্যাখ্যান করা।


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এড ব প রকল প গ কর ছ দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

জাপানের রাস্তায় রাস্তায়  ‘হিটেড বেঞ্চ’

জাপানের টোকিও, সাপোরো এবং ওসাকার মতো বড় বড় শহরগুলোর রাস্তায় হিটেড বেঞ্চ বসানো হয়েছে। তীব্র শীতের রাতে গৃহহীন মানুষদের উষ্ণতা এবং স্বস্তি দেওয়াই এই উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য।এই বেঞ্চগুলো সৌরশক্তি চালিত হয়ে থাকে।

হিটেড বেঞ্জগুলো দিনের বেলায় সূর্যের আলো থেকে তাপ সংগ্রহ করে বিশেষ "ফেজ-চেঞ্জ মেটেরিয়াল" ব্যবহার করে তা সংরক্ষণ করে।  এরপর সংরক্ষিত তাপ রাতে ধীরে ধীরে নির্গত হয় এবং প্রায় ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত উষ্ণতা সরবরাহ করতে পারে। এটি পরিবেশবান্ধব এবং সাশ্রয়ী। 

আরো পড়ুন:

কারা বেশি কাঁদেন? 

যেসব কারণে মানুষ স্বর্ণ জমায়

হিটেড বেঞ্চের জন্য কোনো অতিরিক্ত জ্বালানী বা বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না। এই মানবিক উদ্যোগটি জাপান সরকারের একটি সহানুভূতিশীল পদক্ষেপ, যা নগর পরিকল্পনায় উদ্ভাবন এবং সামাজিক কল্যাণের এক চমৎকার উদাহরণ বলছেন দেশটির নাগরিকেরা। 

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ