আপনি ভেবে বসে থাকতে পারেন যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যাকুল। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত রাশিয়ার প্রায় সাত লাখ সেনা হতাহত হয়েছে। প্রতিদিন এক হাজারের বেশি সেনা হারাচ্ছে রাশিয়া। এর বিনিময়ে যৎসামান্য ভূখণ্ড নিজেদের দখলে নিতে পেরেছে দেশটি। রাশিয়ার অর্থনীতিতে স্থবিরতা নেমে এসেছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশ ছুঁয়েছে।

ব্যাপারটা হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন একটা চুক্তি করতে চাইছেন যেন পুতিনের পক্ষে গ্রহণ করা সহজ হয়। ‘শান্তির’ জন্য হন্যে হয়ে ছুটতে গিয়ে ট্রাম্প ক্রেমলিনের মিথ্যা প্রোপাগান্ডার কাছে নতিস্বীকার করছেন এবং আগাম ছাড় দিয়ে পুতিনকে আলোচনার টেবিলে আনার পথ প্রশস্ত করে দিচ্ছেন।

এই যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার নির্লজ্জ মিথ্যা বয়ান ও শর্তগুলোর বেশির ভাগই মেনে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যেমন রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে তার কারণ হলো ইউক্রেন ন্যাটোয় যুক্ত হতে চেয়েছিল। ইউক্রেনের যে ভূখণ্ড রাশিয়া দখলে নিয়েছে, সেটা রাশিয়াকে দিয়ে দেওয়া।

আরও পড়ুনট্রাম্পের যে বিশ্বাসঘাতকতায় পুতিন এখন আরও সাহসী১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কিন্তু উপহারগুলো পকেটে পুরে যুদ্ধবিরতি গ্রহণ করার বদলে পুতিন ভিন্ন কিছু ভাবছেন। ১১ এপ্রিল ট্রাম্পের দূত স্টিফেন উইটকফের সঙ্গে পুতিনের তৃতীয় দফার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। কিন্তু আগের দুই দফার চেয়ে এবারের অগ্রগতি সামান্য। এর দুই দিন পর গির্জায় প্রার্থনার জন্য সমবেত হওয়া ব্যক্তিদের ওপর মারাত্মক আক্রমণ চালায় রাশিয়া, যেখানে কয়েক ডজন নিহত হন। ট্রাম্পের ‘শান্তি’ প্রস্তাবে রাশিয়া যে রাজি নয়, এ ঘটনা তারই প্রদর্শন।

সর্বশেষ ব্যর্থ আলোচনার পর উইটকফ যে বার্তা পোস্ট করেন, সেখানে তাঁর হতাশা ফুটে উঠেছে। ‘রাশিয়াকে তো সামনে এগোতে হবে। অনেক বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে, সপ্তাহে হাজার হাজার, একটা ভয়াবহ ও অর্থহীন যুদ্ধ।’

ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসন এখন পর্যন্ত যেটা এড়িয়ে যাচ্ছেন, সেটা হলো ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় পুতিনের সত্যিকারের কোনো আগ্রহ নেই। ট্রাম্প প্রশাসন এই সরল সত্যকে দেখতে অক্ষম তিনটি অন্ধবিশ্বাসের কারণে। রাশিয়া সম্পর্কে অজ্ঞতা, নিজেদের ব্যক্তিগত মতামত সম্পর্কে সীমাহীন আস্থা, কর্তৃত্ববাদী শাসন চালানোর যে মতাদর্শ ও রাজনৈতিক প্রেরণা, সেটা বোঝার অক্ষমতা। এই তিন জায়গাতেই ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর পূর্বসূরি সব প্রেসিডেন্টকে পার করে ফেলেছেন।

পুতিনকে নিয়ে দ্বিধার বড় কারণ হচ্ছে তার কাছে শান্তি অগ্রাধিকারের বিষয় নয়। বিজয়ই তাঁর অগ্রাধিকার। যুদ্ধ নিয়ে যেসব অস্থিরতা,কেবল একটা বিজয়ই তার অবসান ঘটাতে পারে। কেননা একটি বিজয়ই পারে সশস্ত্র দমনের পথে না গিয়ে যুদ্ধ–পরবর্তী সামাজিক অসন্তোষগুলো প্রশমন করতে। এ কারণেই পুতিন কেবল তখনই আলোচনার টেবিলে যাবেন, যখন তিনি দেখবেন যে যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়া ভালো অবস্থানে রয়েছে। সুতরাং, প্রলোভন কিংবা আলংকারিক শব্দে ভরা হুমকি পুতিনের আশার পারদকে নামাবে না।

পুতিন কেন শান্তিচুক্তি এখনই চান, তার সাত কারণ এখানে দেওয়া হলো।

এক.

পুতিনের একনায়কতন্ত্রের জন্য এই যুদ্ধ যৌক্তিকতা দিচ্ছে

একনায়কতন্ত্রের জন্য যুদ্ধের চেয়ে ভালো আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট আর নেই।

সোভিয়েত ইউনিয়নের শীতল যুদ্ধ ঠেকানোর একজন স্থপতি হলেন জর্জ কেনান। একবার তিনি বলেছিলেন, সোভিয়েত নেতারা বাইরের বিশ্বের সঙ্গে বৈরী আচরণ করেন তার কারণ হলো, তাঁদের একনায়কতান্ত্রিক শাসনের পক্ষে এটা একটা অজুহাত। আর স্বৈরশাসন ছাড়া তাঁরা জানেন না কীভাবে শাসন করতে হয়।’

আরও পড়ুনপুতিন এবার ট্রাম্পকে লেনিন পদক দেবেন!১০ মার্চ ২০২৫

প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুতিনের তৃতীয় দফা মেয়াদে (২০১২-২০১৮) রাশিয়ার অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি যখন শ্লথ হয়ে পড়েছিল, তখন তিনি তাঁর শাসনের ভিত্তি সামরিক-দেশপ্রেমে রূপান্তরিত করেন। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়ায় আগ্রাসনের সময় প্রথম এই বিষয়টি প্রথম ধরা পড়ে। এরপর ২০২২ সালে ইউক্রেন আগ্রাসন চালায় রাশিয়া।

পুতিনের জন্য এখনো যেটা দরকার, সেটা হলো শত্রুরা রাশিয়া ঘিরে ফেলছে—এ ধারণাকে ফেরি করা। তা না হলে তার সামরিক-দেশপ্রেমের কোনো ভিত্তি থাকে না। তার শাসন যে ক্রমবর্ধমান নিপীড়নের ওপর টিকে আছে, তারও কোনো ভিত্তি থাকে না।

দুই. পুতিন সামরিকবাদের ফাঁদ পছন্দ করেন
পুতিন ব্যক্তিগতভাবে স্তালিনের মতো সুপ্রিম কমান্ডার ইন চিফ উপাধি ধারণ করতে আনন্দিত বোধ করেন। সেনাদের সঙ্গে কুচকাওয়াজ করতে ও তাদেরকে মেডেল পরিয়ে দিতে আনন্দিত হন। যুদ্ধ শেষ হলে মাতৃভূমির রক্ষক হিসেবে এই প্রতীকী বেশভূষা থেকে তিনি বঞ্চিত হবেন।

তিন. রাশিয়ার অর্থনীতি যুদ্ধের ওপর নির্ভরশীল
২০২২ সালে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে রাশিয়ার অর্থনীতি যুদ্ধের সমর্থনে পুনর্গঠিত হয়েছে। শান্তিকালীন অর্থনীতিতে রূপান্তর হওয়ার কোনো চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না। ভোক্তারা এরই মধ্যে ভুগছেন। রুটি, মুরগি, আলুসহ প্রধান সব ভোগ্যপণ্যের দাম বছর বছর বেড়েই চলেছে। এ বছর রাশিয়ার জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে মাত্র ১ দশমিক ৪ থেকে ১ দশমিক ৬ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়ে ২১ শতাংশ করেছে। দ্রুত পুনরুদ্ধার হবে তার আশা সামান্যই।

চার. যুদ্ধকালীন বোনাস ও অন্যান্য সুবিধা বন্ধ হলে সামাজিক অস্থিরতা দেখা দেবে
সমাজ যখন কোনো বিষয়ে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে, হঠাৎ করেই সেটা সরিয়ে নেওয়া যেকোনো সরকারের জন্যই কঠিন। বোনাস, সেনাদের বেতন, নিহত সেনাদের পরিবারগুলোর জন্য আর্থিক সহায়তা হঠাৎ করে বন্ধ করে দিলে বড় ধরনের সামাজিক অসন্তোষ তৈরি হতে পারে। কেননা এই আর্থিক সুবিধাগুলো রাশিয়ার গড় জাতীয় আয়ের চেয়ে বেশি। আবার এই অর্থ কিছু অঞ্চলে দায়িত্ব হঠাতে ভূমিকা রেখেছে।

পাঁচ. যেকোনো পরিবর্তন কর্তৃত্ববাদী শাসনকে অস্থিতিশীল করবে
নীতির ক্ষেত্রে যেকোনো বড় পরিবর্তন, সেটা ভালো কোনো উদ্দেশ্যে হলেও রাজনৈতিক নেতাদের ক্যারিয়ার ঝুঁকির মুখে ফেলে। বিশেষ করে কর্তৃত্ববাদী শাসনের ক্ষেত্রে এটা সত্যি।

ছয়. পুতিন একজন সুবিধাবাদী ও ঝুঁকি নিতে পারঙ্গম ব্যক্তি
পুতিনকে যত ছাড় দেওয়া যাবে, ততই তিনি নির্লজ্জের মতো নতুন নতুন দাবি নিয়ে আসবেন। ট্রাম্প প্রশাসন যত বেশি প্রণোদনা দিতে চাইবে,পুতিন আরও বেশি চাইতে থাকবেন। এটাই পুতিনের চুক্তির শিল্প।

সাত. পুতিনের বিজয় দরকার, শান্তি নয়
পুতিনকে নিয়ে দ্বিধার বড় কারণ হচ্ছে তার কাছে শান্তি অগ্রাধিকারের বিষয় নয়। বিজয়ই তাঁর অগ্রাধিকার। যুদ্ধ নিয়ে যেসব অস্থিরতা,কেবল একটা বিজয়ই তার অবসান ঘটাতে পারে। কেননা একটি বিজয়ই পারে সশস্ত্র দমনের পথে না গিয়ে যুদ্ধ–পরবর্তী সামাজিক অসন্তোষগুলো প্রশমন করতে। এ কারণেই পুতিন কেবল তখনই আলোচনার টেবিলে যাবেন, যখন তিনি দেখবেন যে যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়া ভালো অবস্থানে রয়েছে। সুতরাং, প্রলোভন কিংবা আলংকারিক শব্দে ভরা হুমকি পুতিনের আশার পারদকে নামাবে না।

লিওন অ্যারন আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো
পলিটিকো ম্যাগাজিন থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

পশ্চিমবঙ্গের চার শ্রমিককে বিদেশি বলে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা ভারতের

আসাম রাজ্যের পর গোটা ভারত থেকেই বাংলাদেশি বলে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো (পুশইন) হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা–ই নয়, প্রমাণের অভাবে আবার তাঁদের অনেককে ফিরিয়েও আনতে হচ্ছে বলে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চল থেকে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গেরই সংবাদমাধ্যম।

দক্ষিণ ও মধ্য বাংলার দুই জেলা বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের চার পরিযায়ী শ্রমিক মহারাষ্ট্রে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে মহারাষ্ট্র পুলিশ তাঁদের ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তুলে দেয়। এরপর বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। এ চারজনই আবার মুসলমান।

মুম্বাইয়ে কাজ করতে যাওয়া মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানের এই চার পরিযায়ী শ্রমিককে মহারাষ্ট্র পুলিশ বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। কোনো রকম যাচাই না করেই তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজ্য পুলিশের উদ্যোগে গতকাল রোববার বিকেলে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কাছ থেকে ওই তিন নাগরিককে ফেরত নিয়ে বিএসএফ তাঁদের কোচবিহার জেলার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল। তাঁরা প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে তাঁরা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। হেফাজতে নেওয়ার পাঁচ দিন পর তাঁদের উদ্ধার করা হলো বলে জানানো হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। দুই দিন ধরে তাঁরা কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থেকে কিছুটা দূরে জিরো পয়েন্টে ছিলেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় মুঠোফোন থেকে ভিডিও বার্তায় ওই চার শ্রমিক তাঁদের দুর্দশার কথা জানান। তারপরেই তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু করেন পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলামসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা। পুলিশও বিষয়টি বিএসএএফকে জানায়।

হরিহরপাড়ার বাসিন্দা শামীম রহমান গণমাধ্যমে বলেন, ‘স্থানীয় তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়। তারপর তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়। তাঁরা উদ্ধার হয়ে ঘরে ফিরছেন ভেবে ভালো লাগছে।’

সূত্রের খবর, বাংলাদেশি সন্দেহে চারজনকে আটক করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে ১০ জুন বিএসএফের হাতে তুলে দেয় মহারাষ্ট্র পুলিশ। তাঁদের মুম্বাই থেকে আগরতলা ও পরে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে পাঠানো হয়। ওই শ্রমিকদের টাকা, মুঠোফোনও কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন দুই বছর ধরে মুম্বাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। গতকাল সকালে তাঁর স্ত্রী পিংকি বিবি হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখের সঙ্গে দেখা করেন। বিধায়কের মাধ্যমে বৈধ নথি সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলাম ও প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। তারপরই তাঁদের ঘরে ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়।

হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ বলেন, নাজিমুদ্দিন এ দেশেরই নাগরিক। তাঁর বৈধ নথি ও নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র রয়েছে।

বিধায়ক নিয়ামত শেখ আরও বলেন, ‘তাঁর মতো আরও তিনজনকে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় কেন্দ্রের বিএসএফ। গতকাল বিকেলে তাঁরা বিএসএফের হেফাজতে আসেন। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা ঘরে ফিরবেন।’

এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশের তরফে গতকাল জানানো হয়, আটক ব্যক্তিদের কাগজপত্র রোববার বিএসএফের হাতে তুলে দেয় রাজ্য পুলিশ। এরপরে বিএসএফ যাবতীয় কাগজপত্র রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে যাচাইয়ের পরে তা বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) হাতে তুলে দেয়।

এরপর বিএসএফ সবাইকে ফেরানোর ব্যবস্থা করে এবং কোচবিহার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মুর্শিদাবাদ ও বর্তমানের জেলা পুলিশের একটি দল ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আজ সোমবার তাঁদের নিজে নিজে জেলায় ফেরানো হবে বলে জানা গেছে।

চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল।

বাঙালি বলে হেনস্তা পশ্চিমবঙ্গে

তবে শুধু দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকই নন, পশ্চিমবঙ্গে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত অনেকেই সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, তাঁদের অন্যভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।

দিল্লির এক অধ্যাপিকা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক মাসে চারবার দক্ষিণ কলকাতার প্রধান পাসপোর্ট অফিসে গিয়েও তিনি তাঁর ২০০৭ সালের পুরোনো পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেননি।

এই অধ্যাপিকা বলেন, ‘আমাকে পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, এখানে প্রচুর বাংলাদেশি ঢুকেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সে কারণে আমাদের যাঁদের প্রায় ২০ বছর ধরে বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে, তাঁদেরও সহজে পাসপোর্ট নবায়ন করা হচ্ছে না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ