ভারত শাসিত কাশ্মিরের পহেলগামে বন্দুকধারীরা হামলা চালানোর সময় নারী-পুরুষদের আলাদা করে বেছে বেছে পুরুষদের লক্ষ্য করে গুলি করছিল।

পর্যটক বাস থেকে নামার পর বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা ভয়াবহ মুহূর্তগুলোর বর্ণনা দিচ্ছিলেন। কোনো গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।

বন্দুকধারীদের গুলিতে কমপক্ষে ২৪ জন পর্যটক নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আহতদের সংখ্যা অনেক, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

পহেলগাম থেকে তিন মাইল দূরে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত বৈসারণে এই হামলার ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী একজন নারীর বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদপত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস খবর প্রকাশ করেছে। ওই নারীর স্বামীও মাথায় গুলি লেগে মারা যায়।

তিনি জানাচ্ছিলেন, "আক্রমণকারীরা পুরুষদের লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছিল। তার স্বামীও মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।''

মঙ্গলবার জম্মু ও কাশ্মিরের পহেলগামে পর্যটকদের উপর সন্ত্রাসী হামলার পর, বিশ্বের শীর্ষ নেতারা এই হামলার নিন্দা জানিয়ে ভারতের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, এই হামলায় জড়িতদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না।

প্রধানমন্ত্রী মোদী সৌদি আরব সফরে ছিলেন। কিন্তু এই হামলার পর তিনি সফর সংক্ষিপ্ত করে দ্রুতই দেশে ফিরেছেন।

এদিকে এই হামলার পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে ফোনে কথা বলেছেন।

'পুরুষদের লক্ষ্য করেই গুলি'
হামলার প্রত্যক্ষদর্শীরা স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বন্দুকধারীরা স্পষ্টতই পুরুষদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছিল এবং নারীদের ছেড়ে দিচ্ছিল।

"জঙ্গিরা, আমি বলতে পারছি না ঠিক কতজন, একটি খোলা ছোট তৃণভূমির কাছের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে গুলি চালাতে শুরু করে" বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানাচ্ছিলেন একজন নারী।

তিনি বলেন, "স্পষ্টতই তারা মহিলাদের ছাড় দিচ্ছিলেন এবং পুরুষদের দিকে গুলি চালাতে থাকল, কখনও একটি একটি করে, আবার কখনো একাধারে গুলি চলছিল ঠিক ঝড়ের মতো," তিনি বলছিলেন।

ভারতীয় সংবাদপত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পল্লবী রায় নামে আরেক নারীকে চিহ্নিত করেছে। যার স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতদের মধ্যে ছিলেন। তিনিও বলেছেন যে পুরুষদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।

পর্যটক বাস থেকে নামার পর বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা ভয়াবহ মুহূর্তগুলোর বর্ণনা দিচ্ছিলেন। প্রথম গুলির শব্দের পর মানুষ চিৎকার করতে এবং দৌড়াতে শুরু করে।

যদিও কাশ্মীর দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের কেন্দ্রস্থল, তবুও পর্যটকদের উপর আক্রমণের ঘটনা বিরল।

এই অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন, মঙ্গলবারের হামলা "সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বেসামরিক নাগরিকদের উপর পরিচালিত যেকোনো হামলার চেয়ে অনেক বড়।"

বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া
এই হামলার নিন্দা জানিয়ে ভারতের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিশ্বনেতারা।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে ফোনে কথা বলেছেন।

ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, "রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন এবং এই জঘন্য হামলার অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য ভারতের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারত ও আমেরিকা একসাথে দাঁড়িয়ে আছে।"

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এটিকে বর্বরোচিত আক্রমণ বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন যে তিনি চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের পাশে থাকবেন।

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বর্তমানে তার পরিবারের সাথে ভারত সফরে আছেন এবং তিনি নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

জেডি ভ্যান্স তার এক্স অ্যাকাউন্টে লিখেছেন "ভারতের পহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার শিকারদের আমি সমবেদনা জানাই"।

সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এটিকে 'সন্ত্রাসী হামলা' বলে অভিহিত করেছে এবং এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে সংযুক্ত আরব আমিরাত এই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় 'ভারত সরকার এবং এই জঘন্য হামলার শিকারদের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা ও সহানুভূতি প্রকাশ করেছে।'

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান 'ভয়াবহ হামলার' তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং হতাহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।

বাড়ানো হয়েছে কড়া নিরাপত্তা
পহেলগামে পর্যটকদের উপর সন্ত্রাসী হামলার পর উপত্যকা থেকে দিল্লি পর্যন্ত কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, মঙ্গলবার জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর দিল্লিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। হামলার পর দিল্লি পুলিশ শহরজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করেছে।

বিশেষ করে পর্যটন স্থান এবং শহরের সীমান্তে, কঠোর তল্লাশি এবং নজরদারি চালানো হচ্ছে যাতে যেকোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপ তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা যায়।

অন্যদিকে, উপত্যকার নিরাপত্তা কর্মীরা বিভিন্ন স্থানে যানবাহন তল্লাশি করছেন এবং রাস্তাগুলিতে ব্যাপক ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে।

জম্মু ও কাশ্মীরের অনেক এলাকা থেকেও হামলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ছবি এবং ভিডিও প্রকাশিত হচ্ছে।

সূত্র: বিবিসি

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বল ছ ন র পর ব ত কর ছ র উপর

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’

পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে। 

যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।

বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে। 

রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”

তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।

শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’

ঢাকা/শহিদুল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত
  • অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খোলা, ছাড়েনি জাহাজ
  • পর্যটন শিল্প বিকাশে আইকন গ্লোবাল ট্যুর অপারেটর আল মামুন
  • সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
  • কক্সবাজার সৈকতে ঘোড়া, কুকুর ও গরু, স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটুকু
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খুলছে শনিবার, জাহাজ চালাবেন না মালিকরা