পূর্বসূরিরা যেভাবে ‘চিন্তা’র ইবাদত করতেন
Published: 23rd, April 2025 GMT
পূর্বসূরিদের জবান থেকে বহু বক্তব্য বর্ণিত হয়েছে, যার মাধ্যমে তারা কীভাবে আল্লাহর সৃষ্টি বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করতেন, তার খোঁজ পাওয়া যায়। সৃষ্টিজগতের গূঢ় রহস্য সম্পর্কে ভাবা এবং আল্লাহর প্রতি আস্থাশীল হওয়াকে তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত মনে করতেন।
আল্লাহর কোরআনে বলেছেন, ‘নিশ্চয় আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের আর্বতনে বহু নিদর্শন রয়েছে বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন লোকদের জন্য।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯০)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.
আবু সুলাইমান দারানি (রহ.) বলেন, ‘আমি ঘর থেকে বের হওয়ার পর যে জিনিসে দৃষ্টি পড়ে, দেখি আমার ওপর রয়েছে আল্লাহর নেয়ামত এবং আমার জন্য রয়েছে শিক্ষণীয় বিষয়।’
সুফিয়ান ইবনে উয়াইনাহ (রহ.) বলেন, ‘চিন্তা একটি আলো, যা মানুষের অন্তরে প্রবেশ করে।’
ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহর স্মরণ-সম্পৃক্ত আলোচনা একটি ভালো কাজ বটে। তবে আল্লাহর নেয়ামত নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা উত্তম ইবাদত।’ তার সম্পর্কে আরও বর্ণিত আছে, ‘একবার সাথিবর্গের সামনে তিনি কাঁদছিলেন। কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, পৃথিবী ও এর আস্বাদ ও কামনা নিয়ে ভাবলাম, তাতে এই শিক্ষা পেলাম যে, সমস্ত আস্বাদ ও কামনা শেষ হয়ে যাবে। একপর্যায়ে তা বিস্বাদে পরিণত হতো, তাতে যদি যে শিক্ষা গ্রহণ করতে চায়, তার জন্য শিক্ষা না থাকত। নিশ্চয় পৃথিবীতে রয়েছে উপদেশ গ্রহণকারীর জন্য উপদেশ।’
এ ছাড়া ইহইয়াউ উলুমিদ দীন (২/৪২৯) গ্রন্থে আছে, মুহাম্মদ ইবনে ওয়াসি (রহ.) বলেন, ‘বসরার এক ব্যক্তি আবু যর (রা.)-এর মৃত্যুর পর তার স্ত্রীর কাছে গিয়ে আবু যর এর ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, তিনি সারা দিন ঘরের কোণে বসে চিন্তা-ভাবনা করতেন।
সূত্র: মিন মায়িনিশ শামায়েল
অনুবাদ: মনযূরুল হক
আরও পড়ুনসাহাবিদের বিয়ের আয়োজন ছিল সাদামাটা২৩ জানুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মানুষের ‘দ্বিতীয় ঘুম’এর যুগ সম্পর্কে কতটা জানেন
তেলের বাতি, গ্যাসের বাতি এবং বৈদ্যুতিক বাতি ক্রমে সভ্যতায় যোগ হয়েছে। এর আগে মানুষ প্রাকৃতিক আলোর সঙ্গে মানিয়ে জীবন যাপন করতো। প্রাক-শিল্প যুগের সমাজে ‘দ্বিতীয় ঘুম’-এর অভ্যাস ছিলো মানুষের।
দ্বিতীয় ঘুম বলতে ঐতিহাসিকভাবে প্রচলিত এমন এক ধরনের ঘুমের ধরণকে বোঝায়, যেখানে মানুষ রাতে একটানা আট ঘণ্টা না ঘুমিয়ে ঘুমকে দুটি ভাগে ভাগ করে নিত। একে দ্বি-পর্যায়ের ঘুম বা খণ্ডিত ঘুম বলা হয়। দেখা যেত যে— সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পর মানুষজন বিছানায় যেত এবং প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত।
আরো পড়ুন:
রক্তস্বল্পতা দূর করতে এই শাক খেতে পারেন
টানা ৬ মাস রাতের খাবার দেরিতে খেলে যা হয়
প্রথম ঘুমের পর তারা প্রায় এক ঘণ্টা জেগে থাকত। এই সময়ে বাড়ির হালকা কাজ করা, প্রার্থনা করা, পড়াশোনা করা, প্রতিবেশীদের সাথে গল্প করা বা অন্তরঙ্গ কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার মতো কাজগুলো করতো।
তারা আবার বিছানায় ফিরে যেত এবং ভোরের আলো ফোটা পর্যন্ত আরও ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত, যাকে ‘দ্বিতীয় ঘুম’ বা ‘ভোরের ঘুম’ বলা হত।
গত দুই শতাব্দী ধরে সামাজিক জীবনে আসা পরিবর্তনের কারণে মানুষের দ্বিতীয় ঘুমের অদৃশ্য হয়ে গেছে। যেসব কারণে মানুষ দ্বিতীয় ঘুমের অভ্যাস হারিয়ে ফেলেছে, তার একটি হলো ‘কৃত্রিম আলো ব্যবহার।’
১৭০০ এবং ১৮০০ এর দশকে, প্রথমে তেলের বাতি, তারপর গ্যাসের আলো এবং অবশেষে বৈদ্যুতিক আলো রাতকে আরও ব্যবহারযোগ্য করে তুলেছে। ফলে রাতও মানুষের কাছে জাগ্রত সময়ে পরিণত হতে শুরু করে।
সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পরে ঘুমাতে যাওয়ার পরিবর্তে, মানুষ প্রদীপের আলোতে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেগে থাকতে শুরু করে। জৈবিকভাবে, রাতে উজ্জ্বল আলো আমাদের অভ্যন্তরীণ ঘড়িগুলোকে (আমাদের সার্কাডিয়ান ছন্দ) পরিবর্তন করে এবং কয়েক ঘণ্টা ঘুমের পরে আমাদের শরীরকে জাগ্রত করার প্রবণতা কমিয়ে দেয়।
ঘুমানোর আগে সাধারণ ‘ঘরের’ আলো মেলাটোনিনকে দমন করে এবং বিলম্বিত করে। শিল্প বিপ্লব কেবল মানুষের কাজ করার পদ্ধতিই নয় বরং তারা কীভাবে ঘুমায় তাও বদলে দিয়েছে।
২০১৭ সালে বিদ্যুৎবিহীন মাদাগাস্কান কৃষি সম্প্রদায়ের ওপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে লোকেরা এখনও বেশিরভাগ সময় দুই ভাগে ঘুমায়, প্রায় মধ্যরাতে ঘুম থেকে ওঠে।
সূত্র: ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস অবলম্বনে
ঢাকা/লিপি