অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে একটি স্কুলকে আশ্রয়শিবিরে পরিণত করা হয়েছিল বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জন্য। ওই স্কুলে গতকাল বুধবার ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। হামলার পর ভবনটিতে আগুন লেগে যায়। এতে দগ্ধ হয়ে শিশুসহ অন্তত ১০ জন নিহত হন। এদিন ‍গাজার অন্যান্য স্থানেও হামলা হয়েছে। এতে কমপক্ষে ৩৯ জন নিহত ও ১০৫ জন আহত হন। 

ভোরে উত্তর গাজার তুফফায় ভয়াবহ হামলা ও অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ছবি ও ভিডিও ফুটেজে ভবনের বেশ কয়েকটি ফ্লোর কালো হয়ে যেতে দেখা যায়। এ ঘটনায় আহত ফিলিস্তিনি আহমেদ বাসাল বলেন, ‘আমার তিন চাচাতো ভাই ও তিন সন্তান মারা গেছে। তাদের ধ্বসস্তূপ থেকে বের করে আনা হয়েছে; তারা সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।’

ওই স্কুলের ভেতরে আশ্রয় খুঁজতে থাকা বেইত হানুন থেকে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি বিসান আল-কাফারনেহ বলেন, ‘আমরা ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ তীব্র আলোর স্ফুরণ দেখতে পাই– সর্বত্র আগুন। আমি আমার মেয়েদের নিয়ে দৌড়ে বের হই। তারাও আহত হয়েছে। সবাই চিৎকার করছিল।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যখন পালিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন তারা (ইসরায়েল) আবার স্কুলে বোমা হামলা চালায়। মানুষ চিৎকার করছিল, নারীরা কাঁদছিলেন এবং তাদের স্বজনকে খুঁজছিলেন। আমি জানি না, কী বলব! এখানে বহু মানুষ পুড়ে গেছে, জীবন্ত পুড়ে গেছে।’ 

গাজার ওই শরণার্থী নারী বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে আহত হয়েছে। একজন পিঠে ও আরেকজন পায়ে। কিন্তু আল-শিফা হাসপাতালের চিকিৎসকরা কেবল ক্ষতগুলো জীবাণুমুক্ত করেছেন। তারা আর কোনো চিকিৎসা দিতে পারেননি। তাদের ব্যবহারের জন্য কোনো ব্যান্ডেজ ছিল না। এসব ব্যান্ডেজও পরিচ্ছন্ন ছিল না। লোকজন মাটিতে পড়ে ছিল।’ 

তুফফায় হামলার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, স্বজনহারা এক ব্যক্তি গাজা ইস্যুতে আরব বিশ্ব ও মুসলিম দেশগুলোর নিষ্ক্রিয়তার কঠোর সমালোচনা করছেন। ওই ব্যক্তি বলেন, ‘শিশুরা যখন মারা যাচ্ছে, তখন চুপ দেখতে থাকা মুসলিমদের লজ্জা কোথায়?’

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যুদ্ধ বা সংঘাত চলাকালে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে বেসামরিক নাগরিক ও সৈনিকদের অবশ্যই চিহ্নিত করতে হবে। বেসামরিক নাগরিকদের অবশ্যই লক্ষ্যে পরিণত করা যাবে না। 

হামলার পাশাপাশি গাজায় ত্রাণ সরবরাহও বন্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। এতে সেখানে ভয়াবহ মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। আলজাজিরা জানায়, এ প্রসঙ্গে বুধবার ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। এতে তারা ত্রাণ সরবরাহের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন মানতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানান। সম্প্রতি গাজা থেকে অব্যাহতভাবে স্থানীয়দের আটক করছে ইসরায়েল। এক দিনে তারা আরও ৫০ জনকে আটক করে। আটকদের মধ্যে নারী-শিশু ও যুদ্ধবিরতির শর্তে মুক্ত করা বন্দিও রয়েছেন। পাশাপাশি তারা অধিকৃত পশ্চিম তীরেও আটক অভিযান অব্যাহত রেখেছে। 

ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা তাস জানায়, গাজা উপত্যকার সংঘাত-উত্তর ভবিষ্যৎ প্রশাসনে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসকে কোনোভাবে অংশ নিতে দেবে না যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। এক সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেন, সংঘাত-পরবর্তী গাজা শাসনে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে কিনা। ট্রাম্প সোজাসাপটা জবাব দেন, ‘আমরা হামাসকে সেটা করতে দেব না।’ তিনি বলেন, ‘গাজার কী হয়, সেটা দেখা যাবে। তবে আমরা মধ্যপ্রাচ্যে অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছি।’ ৭ অক্টোবরের হামলা প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘সেই বিশেষ দিন– ৭ অক্টোবর ঘটার কথা ছিল না। আমি প্রেসিডেন্ট থাকলে সেটা ঘটত না। তবে আমরা পুরো পরিস্থিতিকে থামিয়ে দিতে যাচ্ছি।’ 

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে ও ২৫০ জনকে জিম্মি করে হামাস। এর পর নজিরবিহীন ও বেপরোয়া হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এতে এ পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ৫১ হাজার ৩০৫ জন নিহত হয়েছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ