স্কুলে বানানো আশ্রয়কেন্দ্রে হামলা, পুড়ে ১০ মৃত্যু
Published: 24th, April 2025 GMT
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে একটি স্কুলকে আশ্রয়শিবিরে পরিণত করা হয়েছিল বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জন্য। ওই স্কুলে গতকাল বুধবার ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। হামলার পর ভবনটিতে আগুন লেগে যায়। এতে দগ্ধ হয়ে শিশুসহ অন্তত ১০ জন নিহত হন। এদিন গাজার অন্যান্য স্থানেও হামলা হয়েছে। এতে কমপক্ষে ৩৯ জন নিহত ও ১০৫ জন আহত হন।
ভোরে উত্তর গাজার তুফফায় ভয়াবহ হামলা ও অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ছবি ও ভিডিও ফুটেজে ভবনের বেশ কয়েকটি ফ্লোর কালো হয়ে যেতে দেখা যায়। এ ঘটনায় আহত ফিলিস্তিনি আহমেদ বাসাল বলেন, ‘আমার তিন চাচাতো ভাই ও তিন সন্তান মারা গেছে। তাদের ধ্বসস্তূপ থেকে বের করে আনা হয়েছে; তারা সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।’
ওই স্কুলের ভেতরে আশ্রয় খুঁজতে থাকা বেইত হানুন থেকে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি বিসান আল-কাফারনেহ বলেন, ‘আমরা ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ তীব্র আলোর স্ফুরণ দেখতে পাই– সর্বত্র আগুন। আমি আমার মেয়েদের নিয়ে দৌড়ে বের হই। তারাও আহত হয়েছে। সবাই চিৎকার করছিল।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যখন পালিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন তারা (ইসরায়েল) আবার স্কুলে বোমা হামলা চালায়। মানুষ চিৎকার করছিল, নারীরা কাঁদছিলেন এবং তাদের স্বজনকে খুঁজছিলেন। আমি জানি না, কী বলব! এখানে বহু মানুষ পুড়ে গেছে, জীবন্ত পুড়ে গেছে।’
গাজার ওই শরণার্থী নারী বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে আহত হয়েছে। একজন পিঠে ও আরেকজন পায়ে। কিন্তু আল-শিফা হাসপাতালের চিকিৎসকরা কেবল ক্ষতগুলো জীবাণুমুক্ত করেছেন। তারা আর কোনো চিকিৎসা দিতে পারেননি। তাদের ব্যবহারের জন্য কোনো ব্যান্ডেজ ছিল না। এসব ব্যান্ডেজও পরিচ্ছন্ন ছিল না। লোকজন মাটিতে পড়ে ছিল।’
তুফফায় হামলার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, স্বজনহারা এক ব্যক্তি গাজা ইস্যুতে আরব বিশ্ব ও মুসলিম দেশগুলোর নিষ্ক্রিয়তার কঠোর সমালোচনা করছেন। ওই ব্যক্তি বলেন, ‘শিশুরা যখন মারা যাচ্ছে, তখন চুপ দেখতে থাকা মুসলিমদের লজ্জা কোথায়?’
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যুদ্ধ বা সংঘাত চলাকালে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে বেসামরিক নাগরিক ও সৈনিকদের অবশ্যই চিহ্নিত করতে হবে। বেসামরিক নাগরিকদের অবশ্যই লক্ষ্যে পরিণত করা যাবে না।
হামলার পাশাপাশি গাজায় ত্রাণ সরবরাহও বন্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। এতে সেখানে ভয়াবহ মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। আলজাজিরা জানায়, এ প্রসঙ্গে বুধবার ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। এতে তারা ত্রাণ সরবরাহের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন মানতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানান। সম্প্রতি গাজা থেকে অব্যাহতভাবে স্থানীয়দের আটক করছে ইসরায়েল। এক দিনে তারা আরও ৫০ জনকে আটক করে। আটকদের মধ্যে নারী-শিশু ও যুদ্ধবিরতির শর্তে মুক্ত করা বন্দিও রয়েছেন। পাশাপাশি তারা অধিকৃত পশ্চিম তীরেও আটক অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা তাস জানায়, গাজা উপত্যকার সংঘাত-উত্তর ভবিষ্যৎ প্রশাসনে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসকে কোনোভাবে অংশ নিতে দেবে না যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। এক সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেন, সংঘাত-পরবর্তী গাজা শাসনে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে কিনা। ট্রাম্প সোজাসাপটা জবাব দেন, ‘আমরা হামাসকে সেটা করতে দেব না।’ তিনি বলেন, ‘গাজার কী হয়, সেটা দেখা যাবে। তবে আমরা মধ্যপ্রাচ্যে অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছি।’ ৭ অক্টোবরের হামলা প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘সেই বিশেষ দিন– ৭ অক্টোবর ঘটার কথা ছিল না। আমি প্রেসিডেন্ট থাকলে সেটা ঘটত না। তবে আমরা পুরো পরিস্থিতিকে থামিয়ে দিতে যাচ্ছি।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে ও ২৫০ জনকে জিম্মি করে হামাস। এর পর নজিরবিহীন ও বেপরোয়া হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এতে এ পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ৫১ হাজার ৩০৫ জন নিহত হয়েছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমার তো একেবারেই গন্ডারের চামড়া’
ভারতীয় বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীনন্দা শঙ্কর। সৃজিত মুখার্জির ‘এক যে ছিল রাজা’, সুমন ঘোষের ‘বসুপরিবার’-এর মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন এই তারকা। বলা যায়, টলিউডের প্রথম সারির সব নির্মাতার সঙ্গেই কাজ করেছেন এই নৃত্যশিল্পী।
গত কয়েক বছর ধরে কলকাতা ছেড়ে মুম্বাইয়ে বসবাস করছেন শ্রীনন্দা। সেখানে সংসার, কাজ নিয়ে সময় কাটছে তার। তবে অভিনয়ে নেই। অভিনয় থেকে দূরে থাকার কারণ কী? ফের কী অভিনয়ে ফিরবেন না শ্রীনন্দা?
ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে আলাপকালে এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শ্রীনন্দা। এ অভিনেত্রী বলেন, “টলিউডে যাদের সঙ্গেই কাজ করেছি, তাদের সঙ্গে এখনো আমার খুব ভালো সম্পর্ক। ভীষণ ভালো অভিজ্ঞতাও বলা চলে। মুশকিল হলো, বাংলা সিনেমায় তেমন বাজেট থাকে না। সত্যিই যদি খুব ভালো সিনেমা হয় বা এমন কোনো পরিচালক আমাকে অফার দেন যেখানে কোনো ভাবেই ‘না’ করব না। আমি নিশ্চয়ই আবার অভিনয়ে ফিরব।”
আরো পড়ুন:
কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি অভিনেত্রী
পরিচালকের আপত্তিকর মন্তব্য নিয়ে মুখ খুললেন শোলাঙ্কি
কিছু কিছু লোকের সঙ্গে কাজ করতে গিয়েও মাঝপথে থেমে গিয়েছেন শ্রীনন্দা। কারণ, তাদের সঙ্গে মানসিকভাবে মেলেনি। তার ভাষায়—“মুম্বাই, কলকাতা বা সাউথ ইন্ডাস্ট্রি যেখানেই হোক না কেন, আমি ভালো মানুষের সঙ্গে কাজ করতে চাই। কেউ এমন চরিত্রে সুযোগ দেন, যেখানে প্রয়োজনে টাকাটা ভুলে গিয়ে শুধু পরিচালকের নাম দেখেই কাজটা করব।”
কিছুটা ইঙ্গিপূর্ণভাবে শ্রীনন্দা বলেন, “কাজের পাশাপাশি আমার সংসারও রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবশ্যই পেতে হবে, যার জন্য সংসারটা ইগনোর করার কথা ভাবব। অর্থাৎ মনে হবে সংসার ফেলে এই সিনেমাটা আমাকে করতেই হবে। এই বয়েসে একটু কফি খেতে যাবেন? কাজ দেবেন? এগুলো করতে পারব না। সবাই তো চেনেই আমাকে। কাজ দিতে হলে দেবেন।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব শ্রীনন্দা। অনেকে ভেবেছিলেন, এ মাধ্যমে কাজ করে টাকা আয় করে থাকেন। তাদের উদ্দেশে শ্রীনন্দা বলেন, “অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা এটাও আমার পেশা। এখান থেকে অনেক টাকা উপার্জন করা যায়। আমি নিজেও আগে বিষয়টা জানতাম না। পোস্ট করতে করতে বুঝেছি। আমি এখন মুম্বাইয়ে মায়ের সঙ্গে পুরোদমে নাচের স্কুল চালাচ্ছি। এখন মোট ছয়টা ব্রাঞ্চ এবং ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও নেহাতই কম নয়। সব মিলিয়ে ভালো আছি।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রলের শিকার হন শ্রীনন্দা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার তো একেবারেই গন্ডারের চামড়া হয়ে গিয়েছে। কয়েকদিন আগে আমাকে একজন বলেছিলেন, ‘রিল মামনি’। আমি আর মা এটা শুনে হেসে গড়িয়ে পড়েছি। মাঝেমধ্যে এসব বেশ মজাও লাগে। তবে যে পরিমাণ ভালোবাসা পাচ্ছি, সেটা খুব মন থেকেই ভক্তরা দিচ্ছেন বলে আমার বিশ্বাস। আমি মনে করি, এটা আমার জীবনে আশীর্বাদ।”
ঢাকা/শান্ত