যশোরে কম উচ্চতার আরেকটি সেতু নির্মাণ করছে এলজিইডি
Published: 24th, April 2025 GMT
যশোরে পাঁচ নদীতে আটটি সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। কম দীর্ঘ ও কম উচ্চতার অভিযোগে গত বছরের মে মাসে হাইকোর্ট এসব নির্মাণকাজ বন্ধে নিষেধাজ্ঞা দেন। এর পর থেকে সেতুগুলো অসম্পূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এরই মধ্যে যশোর সদরের পুলেরহাট-রাজগঞ্জ সড়কের গোয়ালদহ বাজারে হরিহর নদে একই ধরনের আরেকটি সেতু নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
এক কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের নভেম্বরে। আগামী নভেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে মোজাহার এন্টারপ্রাইজ, তাহের ব্রাদার্স ও মেসার্স শামীম চাকলাদার।
কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় হরিহর নদ পুনর্খনন করছে সেনাবাহিনী। স্থানীয়দের অভিযোগ, খননের সময় সেতুটি ঝুঁকিতে পড়বে। কারণ বর্তমান তলদেশ থেকে আরও সাত-আট ফুট গভীর করে খনন করা হবে। তখন সেতুটির দাঁড়িয়ে থাকা কঠিন হবে বলে আশঙ্কা জানিয়েছেন খোদ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রকৌশলীরা।
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ঐক্য-বন্ধনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, আগে এখানে কালভার্ট ছিল। এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু এটিও কালভার্টের আদলে করা হচ্ছে। আমরা বললেও এলজিইডি তা আমলে নিচ্ছে না।
যশোরের নদী বাঁচাও আন্দোলনের উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, এলজিইডি নিয়ম ভেঙে হরিহর নদের ওপর সেতুর নামে কালভার্ট তৈরি করছে। এভাবে নদীকে হত্যা করা হচ্ছে। কয়েক দফা চিঠি দিলেও তারা কাজ বন্ধ করেনি।
পাউবো যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেন, ভবদহের জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে হরিহরসহ চারটি নদনদী খনন করছে সরকার। আমাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই গোয়ালদহ বাজারে কম দীর্ঘ ও কম উচ্চতার সেতু নির্মাণ করছে এলজিইডি। তিনি বলেন, পুরোনো সেতুর ইট-সিমেন্টের অংশ নদের বক্ষে ফেলায় ভরাট হয়ে গেছে। এসব বর্জ্য অপসারণে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে এলজিইডি যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ মাহবুবুর রহমান বলেন, হরিহর নদের ওপর ৩০ মিটার দীর্ঘ সেতু তৈরি করা হচ্ছে। এর মধ্যে স্রোত যাওয়ার জন্য সেতুর মধ্যবর্তী স্থানে ১৫ মিটারের মতো জায়গা রাখা হয়েছে। নদীর তলদেশে পানির স্তর থেকে ২ দশমিক ৪৬ মিটার উচ্চতা থাকছে। নীতিমালা মেনেই সেতু তৈরি করা হচ্ছে। ৫৫ শতাংশ কাজ হয়েছে; নির্ধারিত সময়ে বাকিটা শেষ করা হবে।
আটটি সেতুর কাজ বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, মানুষের ভোগান্তি হলেও কিছু করার নেই। আদালত নির্দেশনা দিলে সে অনুযায়ী কাজ করা হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।
মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?
তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।
সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?
সরকারের পক্ষ থেকে রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।
যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।
এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন, সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।
এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!
এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।
যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]