জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন শ্রমিকরা। এতে বছর বছর দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু হলেও টনক নড়ছে না কর্তৃপক্ষের। শ্রমিকদের সুরক্ষায় প্রতিটি ভবন নির্মাণ কাজের ইন্স্যুরেন্স করা বাধ্যতামূলক। এটি নিশ্চিত করা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল শাখার দায়িত্ব হলেও তা নিয়ে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে।

চলতি বছরের ২২ মার্চ বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ১০তলা একটি ভবন থেকে পড়ে সাদিকুল ইসলাম (৪৮) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। নিহত সাদিকুল রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মহিশালবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা।

সাদিকুলের পরিবারের তথ্যমতে, তাঁর দুই সন্তান রাজশাহীতে পড়ালেখা করে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হিসেবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১০তলা ভবনে কাজ করতে এসেছিলেন তিনি। ভবনের ১০তলা থেকে পা পিছলে পড়ে মারা গেলেও আইনি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে ত্রিশাল থানার ওসি মনসুর আহাম্মদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অথবা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিষয়টি তাদের জানায়নি।

প্রক্টর ড.

মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ঘটনার সময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। পরে আমি খবর পেয়ে থানায় জানিয়েছি। তারা আমাকে জানায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় লাশ নিয়ে গেছে পরিবার। আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা না গেলেও নিহতের পরিবারকে সহযোগিতার জন্য আলোচনা হয়েছে।’

সাদিকুলের মৃত্যুর বিষয়ে তাঁর জামাতা নূর হোসাইন সমকালকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এতটা অমানবিক হবে তা জানা ছিল না। তাঁর মৃত্যুর পর শুধু লাশটি বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে চলে গেছেন তারা। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পুরো পরিবার না খেয়ে থাকার মতো অবস্থা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সাহায্য করা হয়নি।

জানা গেছে, বিগত বছরগুলোতেও কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে একাধিক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তবে নিহত এসব শ্রমিকের কোনো তথ্যই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করেনি।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে গণপূর্ত বিভাগের একজন নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, সরকারি যে কোনো ভবনের কাজ হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে তাঁর শ্রমিকের নিরাপত্তার জন্য ইন্স্যুরেন্স করতে হয়। এ ইন্স্যুরেন্সের কাগজপত্র অবশ্যই নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশল শাখায় জমা রাখতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকের। কাজ চলাকালীন কোনো শ্রমিক দুর্ঘটনার শিকার হলে ইন্স্যুরেন্সের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ আদায় করে শ্রমিকের পরিবারকে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল শাখার বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক জোবায়ের হোসেন ভুল স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ভবনের ইন্স্যুরেন্সের কপি প্রকৌশল দপ্তরে সংরক্ষণ করার নিয়ম আছে। কিন্তু ভুলক্রমে এখন আমাদের কাছে এগুলো রাখা হয়নি।’

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ময়মনসিংহের শ্রম পরিদর্শক (সেফটি) তুহিনুর রহমান জানান, কাজ করা অবস্থায় কোনো শ্রমিকের মৃত্যু হলে তাঁর নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা যায়। এ ক্ষেত্রে নিহতের পরিবারকে ২ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এ ছাড়া কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মাধ্যমে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে আবেদন করলেও ২ লাখ টাকার অধিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হয়।

সাদিকুলের মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনএইচ কনস্ট্রাকশনের নির্মাণাধীন ভবনে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির কাছে সমকালের পরিচয় দিয়ে ইন্স্যুরেন্সের কপিটি চাওয়া হলে দিতে গড়িমসি করেন। জানা গেছে, এনএইচ এন্টারপ্রাইজের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল সেন্টার ও টিএসসি ভবনের প্রায় ৫০ কোটি টাকার কাজ চলছে।

এনএইচ এন্টারপ্রাইজের মালিক নেজামুল হক তাদের প্রতিষ্ঠানের ইন্স্যুরেন্স কপি আছে বলে দাবি করলেও এক সপ্তাহ অপেক্ষা করিয়েও দেখাতে পারেননি। গতকাল বুধবার তাঁকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও রিসিভ করেননি।

সরেজমিন দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৮টি ভবনে ৮৫০ কোটি টাকার কাজ চলছে। এর মধ্যে একাডেমিক ভবন, ডরমিটরি, মেডিকেল সেন্টার ও হলের একাধিক ভবন রয়েছে। এসব ভবনে কাজ করছে কয়েক হাজার শ্রমিক। নির্মাণাধীন ভবনগুলোর কাছে গিয়ে দেখা যায়, এসব ভবনে শ্রমিকের নিরাপত্তার জন্য কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেই।

জানা গেছে, প্রতিটি ভবনে কাজ চলাকালীন শ্রমিকের নিরাপত্তার জন্য একটি বাজেট ধরা থাকলেও এটি খরচ করে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন একটি একাডেমিক ভবনের একজন সুপারভাইজার জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রমিকের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও অদৃশ্য কারণে বিষয়টি এড়িয়ে যায়। এতে মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের বিষয় জড়িত থাকে বলে জানান তিনি।

দায়িত্বে অবহেলার কথা স্বীকার করলেও আর্থিক লেনদেনের বিষয় অস্বীকার করেছেন প্রকল্প পরিচালক জোবায়ের হোসেন। তাঁর ভাষ্য, এখন থেকে সবগুলো প্রতিষ্ঠানের ইন্স্যুরেন্সের কাগজ জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ নিয়ে তিনি বলেন, সাবেক ভিসি মুস্তাফিজুর রহমানের আমলে এসব কাজের চুক্তি হয়। আগে নির্মাণসামগ্রীর দাম কম ছিল এখন অনেক বেড়ে গেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসান দিয়ে কাজ করছে। তাদের বেশি চাপ দিলে কাজ ফেলে চলে যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘নির্মাণাধীন ভবনগুলোর ইন্স্যুরেন্স দেখভালের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকের। তবে এটি তাদের কাছে আছে কিনা আমার জানা নেই। নিহত শ্রমিকের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতার বিষয়টি বিবেচনাধীন।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ময়মনস হ ইন স য র ন স র ক ন র ম ণ ধ ন ভবন র ইন স য র ন স র পর ব র ত র জন য ল ইসল ম ক জ করছ ক জ কর ভবন র

এছাড়াও পড়ুন:

কেইনের জোড়া গোলে চেলসিকে হারাল বায়ার্ন, চ্যাম্পিয়ন পিএসজির গোল উৎসব

বায়ার্ন মিউনিখ ৩–১ চেলসি

২০১২ সালে আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় ইতিহাস গড়েছিল চেলসি। ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখকে টাইব্রেকারে হারিয়ে প্রথমবারের মতো পরেছিল ইউরোপসেরার মুকুট।

 তবে এরপর থেকে বায়ার্নের সঙ্গে মুখোমুখি সব ম্যাচেই হেরেছে চেলসি। লন্ডনের ক্লাবটি পারল না আজও। হ্যারি কেইনের জোড়া গোলে চেলসিকে ৩–১ ব্যবধানে হারিয়েছে বায়ার্ন।

আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় ম্যাচের ২০ মিনিটে বায়ার্ন প্রথম গোলটা পেয়েছে উপহারসূচক। চেলসির সেন্টার–ব্যাক ট্রেভোহ চালোবাহ নিজেদের জালে বল জড়ালে এগিয়ে যায় বাভারিয়ানরা।

কিছুক্ষণ পরেই ব্যবধান দ্বিগুণ করেন কেইন। এবার ভুল করে বসেন চেলসির মইসেস কাইসেদো। নিজেদের বক্সে কেইনকে কাইসেদো অযথা ট্যাকল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।

নতুন মৌসুমে গোলের পর গোল করেই চলেছেন হ্যারি কেইন

সম্পর্কিত নিবন্ধ