Samakal:
2025-11-03@07:52:00 GMT

একের পর এক খুন আসামিরা অজ্ঞাত

Published: 24th, April 2025 GMT

একের পর এক খুন আসামিরা অজ্ঞাত

চট্টগ্রামের রাউজানে গত শনিবার মধ্যরাতে খাওয়ার সময় মুখে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয় যুবদলকর্মী মানিক আবদুল্লাহকে। এ ঘটনায় সোমবার সন্ধ্যায় মামলা করেন মানিকের স্ত্রী চেমন আরা। এর পর ভয়ে সন্তানদের নিয়ে রাউজান ছেড়ে বোয়ালখালী উপজেলায় বাবার বাড়ি চলে যান। 

গত ২৪ জানুয়ারি সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন রাউজানের নোয়াপাড়ার ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম। আসামির নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করার পর পরিবার নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে চলে যান তাঁর স্ত্রী। 

শুধু মানিক আবদুল্লাহ কিংবা জাহাঙ্গীরের পরিবার নয়; স্বজন খুন হওয়ার পর মামলা করে ভয়ে এলাকা ছাড়তে হয়েছে এমন চারটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছে সমকাল। প্রত্যেকে ভয় আর আতঙ্কের কথা বলেছেন। 

গত আট মাসে রাউজানে ১২টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। কাউকে গুলি করে, কাউকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। তিনজনের লাশ মিলেছে কয়েক দিন নিখোঁজ থাকার পর। নিখোঁজ হওয়ার কথা জানলেও তাদের উদ্ধারে পুলিশের বাড়তি তৎপরতা ছিল না। এসব হত্য়ার ঘটনায় করা মামলার এজাহার ঘেঁটে দেখা যায়, ৯টি হত্যার ঘটনায় আসামির ঘরে লেখা ‘অজ্ঞাতনামা’। ১২ খুনের মামলার ১০টিতে কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।তদন্ত প্রক্রিয়ায়ও পুলিশের উদাসীনতা রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অন্তত ছয়জন বাদী। এসব বিষয় নিয়ে পাঁচ তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে সমকাল। তারা কেউ স্বনামে কথা বলতে রাজি হননি। 

যে কয়েকটি মামলায় আসামির নাম রয়েছে, সেগুলোর বাদীরা বলছেন, আসামিরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরছে। তাদের ধরার ব্যাপারে পুলিশের তৎপরতা নেই। অন্যদিকে তদন্ত কর্মকর্তাদের দাবি, আসামি ধরতে গেলেই আসে রাজনৈতিক চাপ। আসামির বেশির ভাগ বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার অনুসারী। তাদের প্রতিনিধি বসে থাকে থানায়। কাকে আসামি করা যাবে, কাকে করা যাবে না– ঠিক করে দেন তারাই। বিএনপির ওই দুই শীর্ষ নেতা হলেন গিয়াস কাদের চৌধুরী ও গোলাম আকবর খোন্দকার। সরেজমিন থানায় গিয়ে এ কথার সত্যতা পেয়েছে সমকাল। গত আট মাসে চারবার ওসি বদল হয়েছে 

রাউজানে। তারপরও খুনের তালিকায় দাঁড়ি টানতে পারছে না প্রশাসন। রাউজানে খুনোখুনি নিয়ে গতকাল বুধবার চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অনেক সময় সন্ত্রাসীরা অপকর্ম করে পাহাড়ের দিকে চলে যায়।’ এক সাংবাদিক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে জানান, হত্যায় জড়িতরা এলাকায় প্রকাশ্যে আছে। তখন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি এলাকায় থাকে এখনই রেঞ্জ ডিআইজিকে নির্দেশ দিয়ে গেলাম। তাদের বিষয়ে যেন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’ 

এ ব্যাপারে কথা বলতে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতুকে ফোন করা হলেও তা রিসিভ করা হয়নি। তবে রাউজানের পরিস্থিতি নিয়ে এর আগে তিনি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।

অজ্ঞাতনামা আসামি

৫ আগস্ট রাজনৈতিক পালাবদলের পর থেকে বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা গিয়াস কাদের চৌধুরী ও গোলাম আকবর খোন্দকার রাউজানে আধিপত্য বিস্তারে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তাদের বলয়ে আশ্রয় নিতে থাকে নেতাকর্মী, এমনকি সন্ত্রাসীরা। এক পর্যায়ে থানা নিয়ন্ত্রণে তৎপর হয়ে ওঠেন দুই নেতা। যদিও এ দুই নেতা সমকালের কাছে একাধিকবার এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁরা দাবি করেছেন, অভিযুক্ত ও সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার না করতে তারা থানাকে চাপ দেন না। উল্টো থানার পুলিশ কেন নিষ্ক্রিয়– প্রশ্ন তোলেন তারা। 

পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা চাপে আছেন। তাদের এ কথার প্রতিফলন দেখা যায় মামলার এজাহারে। মাত্র তিনটি মামলায় বাদীরা আসামিদের নাম-পরিচয় উল্লেখ করে মামলা করেছেন থানায়। এর একটি মানিক আবদুল্লাহ খুনের মামলা। অন্য দুটি হলো- কমর উদ্দিন জিতু হত্যা মামলা ও নূর আলম বকুল হত্যা মামলা। অবশ্য বকুল হত্যাকাণ্ড পারিবারিক বিরোধের জেরে হয়েছে বলে জানা গেছে। 

যেভাবে ১২ খুন

আবদুল মান্নান : প্রকাশ্যে মান্নানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় গত ২৮ আগস্ট। পরে রাউজানের চৌধুরী মার্কেট এলাকায় সড়কের পাশের জঙ্গল থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মান্নান রাঙামাটির কাউখালীর বেতবুনিয়া ইউনিয়নের কবির আহাম্মদের ছেলে। তিনি বেতবুনিয়া ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি ছিলেন। মান্নানের পরিবারের অভিযোগ, এ ঘটনার পর রাউজান থানায় গেলে সেই সময়ের ওসি জাহিদ হোসেন মামলা নেননি। পরে তারা কাউখালী থানায় এজাহার দেন, সেখানেও মামলা হয়নি। 
সর্বশেষ চট্টগ্রাম আদালতে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে একটি মামলা করার কথা জানিয়েছেন মান্নানের স্ত্রী জান্নাতুল নুর। এ হত্যায় জড়িত কেউ শনাক্ত বা গ্রেপ্তার হয়নি এখনও।

মো.

ইউসুফ মিয়া : রাউজানের সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে করিমের বাগানবাড়ি থেকে গত ১ সেপ্টেম্বর ইউসুফের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগের দিন তিনি নিখোঁজ হন। তিনি রাউজানের প্রয়াত শামসু মিয়ার ছেলে এবং সাবেক এমপির বাগানবাড়ির কর্মচারী ছিলেন। এ ঘটনায় মামলা না করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তাঁর স্বজন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়ায় পুলিশও হত্যার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়নি। কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আজম খান : নিখোঁজের চার দিন পর গত ২৯ অক্টোবর দুপুরে রাউজানের উরকিরচর ইউনিয়নের মইশকরম এলাকা থেকে পুলিশ আজমের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে রাউজান থানায় হত্যা মামলা করেন আজমের স্ত্রী লাকী আকতার। এ মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মাওলানা আবু তাহের : নিখোঁজের তিন দিনের মাথায় চিকদাইর ইউনিয়নের কালাচাঁন চৌধুরী ব্রিজ-সংলগ্ন সর্তাখাল থেকে গত ১১ নভেম্বর তাহেরের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ওলামা লীগের সদস্য ছিলেন। 

নিরাপত্তার ভয়ে পরিবার মামলা করতে রাজি না হওয়ায় অপমৃত্যু মামলা করে পুলিশ। এখন পর্যন্ত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি বলে জানায় পুলিশ। স্থানীয়দের দাবি, তাঁকে হত্যা করার পর লাশ খালে ফেলে রাখা হয়েছিল। 

জাহাঙ্গীর আলম : মোটরসাইকেলে চেপে জুমার নামাজ আদায় করতে যাওয়ার সময় গত ২৪ জানুয়ারি জাহাঙ্গীর সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। তিনি রাউজানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নের আবু সৈয়দ মেম্বারের ছেলে। পরিবারের তরফ থেকে হত্যা মামলা করার পর পুলিশ বিএনপি নেতা গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী যুবদল নেতা আরফাত মামুন, রমজান আলী, বিপ্লব বড়ুয়া ও গিয়াস উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।

মোহাম্মদ হাসান : রাউজানে যুবলীগকর্মী মুহাম্মদ হাসানকে ১৯ ফেব্রুয়ারি ঘর থেকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে এক দল দুর্বৃত্ত। হাসান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের বজল আহমেদের ছেলে। তাঁর পরিবার মামলা করেনি। ঘটনার এক মাস পর রাউজান থানার বর্তমান সেকেন্ড অফিসার কাউসার হামিদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের রিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। 


কমর উদ্দিন জিতু : স্থানীয় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া নিয়ে প্রতিপক্ষের পিটুনি ও ছুরিকাঘাতে গত ১৫ মার্চ নিহত হন জিতু। তিনি ওই ইউনিয়নের উত্তরসর্তা গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে। তাঁর স্ত্রী ডেইজি আকতার রাউজান থানায় ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেছেন। এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। 

বাদী ডেইজি আকতার বলেন, ‘আমার স্বামীকে বাজারে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়েছে। আমি নাম উল্লেখ করে মামলা করলেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না।’ রাউজান থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে বলে দাবি করেন।

মো. রুবেল : রাউজানের পূর্বগুজরা ইউনিয়নের বৃহত্তর হোয়ারাপাড়া এলাকার মোবারক খালের পূর্ব পাশের জমি থেকে গত ২১ মার্চ রুবেলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গরুচোর সন্দেহে তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে দাবি পুলিশের। রুবেল চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানার প্রয়াত নুরুল আলমের ছেলে। তাঁর ভাই সোহেল বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। হত্যায় জড়িত কাউকে এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি।

নূর আলম বকুল : পারিবারিক দ্বন্দ্বে দুই ভাইয়ের ধারালো অস্ত্র ও রডের আঘাতে গত ৪ এপ্রিল খুন হন প্রকৌশলী মো. নূর আলম বকুল। তিনি রাউজানের হলদিয়া ইউনিয়নের ইয়াসিননগর গ্রামের মো. মুছার ছেলে। এ ঘটনায় বকুলের আরেক ভাই রাজু থানায় হত্যা মামলা করেন। এখন পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। 

মো. জাফর : রাউজানের পাহাড়তলী ইউনিয়নের মাহামুনি দীঘি থেকে গত ১৭ এপ্রিল জাফরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জাফর পাহাড়তলী ইউনিয়নের খানপাড়া গ্রামের মো. ইব্রাহিমের ছেলে। তাঁকে হত্যা করে দীঘিতে লাশ ফেলে দেওয়া হয়। হত্যার আলামত পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন জাফরের ভাই সাইফুল ইসলাম। কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

মানিক আবদুল্লাহ : রাতের খাবার খাওয়ার সময় গত শনিবার মুখের ভেতর অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে মানিককে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় রাউজান থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন তাঁর স্ত্রী চেমন আরা। 

মোহাম্মদ ইব্রাহিম : যুবদলকর্মী ইব্রাহিমকে গত মঙ্গলবার দুপুরে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি রাউজান সদর ইউনিয়নের শমশেরনগর গাজীপাড়া এলাকার মোহাম্মদ আলমের ছেলে। ইব্রাহিম হত্যার পর সন্ত্রাসীরা দুই কিলোমিটার দূরে আরও একটি কিলিং মিশনে গিয়ে অটোরিকশাচালককে হাতে-পায়ে গুলি চালিয়ে ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে। গুলিবিদ্ধ অটোরিকশাচালক নাঈম উদ্দিনকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 
রাউজান থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়নি।

মামলা নিতে গড়িমসি : গত শনিবার মধ্যরাতে যুবদলকর্মী মানিক আবদুল্লাহ খুনের পর সোমবার বেলা ১১টার দিকে রাউজান থানায় মামলা করতে যান মানিকের স্ত্রী চেমন আরা। দুই ছেলেমেয়েসহ সঙ্গে ছিলেন দু’জন রাজনৈতিক নেতা, এক প্রতিবেশী। থানাতেই কথা হয় তাদের সঙ্গে। প্রতিবেশী মোহাম্মদ রানা বলেন, ‘বেলা ১১টায় থানায় এসেছি। এখন বিকেল সাড়ে ৫টা বাজে। এখনও মামলা নেয়নি পুলিশ। কেন মামলা নিতে গড়িমসি করছে, জানি না।’ সন্ধ্যা ৭টার দিকে মামলা করে বাড়ি ফেরেন তারা।

চারবার ওসি বদল : রাউজানের পরিস্থিতি নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছেন চট্টগ্রামের এসপি। এর আগে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় ওসিকে আরও কঠোর হতে বলেছিলেন তিনি। রাজনৈতিক তদবির উপেক্ষা করে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে নির্দেশও দেন। দুই মামলায় আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এ পর্যন্ত। 
রাউজান থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, রাউজানের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও হত্যাকাণ্ড ঠেকানো যাচ্ছে না। কারণ, প্রতিটি হত্যা পরিকল্পিতভাবে হচ্ছে। অন্যান্য অপরাধ প্রতিরোধ করা যতটা সহজ, হত্যাকাণ্ড ততটা সহজ নয়। আসামিদের গ্রেপ্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আসার আগে অনেক ঘটনা ঘটেছে। তার পরও জড়িতদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অপর ধ ম ন ক আবদ ল ল হ গ র প ত র কর ম হ ম মদ পর স থ ত র পর ব র র জন ত ক এ ঘটন য় ল ইসল ম কর ছ ন এল ক য় র র পর ন র পর র পর স য বদল সমক ল তদন ত ব এনপ র আলম

এছাড়াও পড়ুন:

সার্চ দুনিয়ার নতুন দিগন্ত জিইও: দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কী প্

ইন্টারনেট সার্চ দুনিয়ায় চলছে নীরব এক বিপ্লব। তথ্য খোঁজার ধরন বদলে যাচ্ছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত। আগে যেখানে গুগলে উচ্চ র‌্যাংকিং মানেই ছিল সাফল্য, এখন সেই জায়গা নিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-নির্ভর সার্চ টুল।

সার্চ জগতের নতুন চ্যালেঞ্জ

চ্যাটজিপিটি, গুগল জেমিনি, মাইক্রোসফট কপিলট কিংবা পারপ্লেক্সিটি এআই-এগুলো আর শুধু সার্চ ইঞ্জিন নয়, বরং উত্তর তৈরিকারক ইঞ্জিন। ব্যবহারকারী এখন শুধু ‘লিংক’ নয়, বরং সরাসরি উত্তর পেতে চায়। আর এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্যই এসেছে নতুন এক কৌশল- জিইও বা জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন।

জিইও কী?

জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে আপনার ওয়েবসাইট ও কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো হয় যাতে এআই-চালিত সার্চ ইঞ্জিন সহজেই আপনার তথ্য চিনতে, বুঝতে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে সেটি অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।

আগে ব্র্যান্ডগুলোর ফোকাস ছিল গুগলের প্রথম পাতায় জায়গা করে নেওয়া। কিন্তু এখন গুরুত্ব পাচ্ছে- চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-এর উত্তরে আপনার ব্র্যান্ডের নাম আসছে কি না!

এসইও বনাম জিইও: সার্চ দুনিয়ার নতুন যুগের পালাবদল

অনেকেই এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এবং জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এক মনে করেন, কিন্তু এদের মধ্যে মূলত লক্ষ্য ও কৌশল ভিন্ন। এসইও হচ্ছে পুরোনো পদ্ধতি, অন্যদিকে জিইও হচ্ছে নতুন পদ্ধতি।

* মূল লক্ষ্য
এসইও: সার্চ ইঞ্জিনে র‌্যাংক বাড়ানো
জিইও: এআই সার্চের উত্তরে দৃশ্যমান হওয়া

* কাজের ধরন
এসইও: কিওয়ার্ড ও ব্যাকলিংক ভিত্তিক
জিইও: কনটেক্সট, প্রাসঙ্গিকতা ও ব্র্যান্ড অথরিটি নির্ভর

* ফলাফল
এসইও: ক্লিক ও ট্রাফিক বৃদ্ধি
জিইও: ব্র্যান্ড উল্লেখ ও আস্থা বৃদ্ধি

* প্ল্যাটফর্ম
এসইও: গুগল, বিং ইত্যাদি সার্চ ইঞ্জিন
জিইও: চ্যাটজিপিটি, জেমিনি, পারপ্লেক্সিটি, এসজিই ইত্যাদি এআই সার্চ

এসইও এখনও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ভবিষ্যতের সার্চ ইকোসিস্টেমে জিইও সমান অপরিহার্য হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশি ব্যবসার জন্য জিইও-এর গুরুত্ব

বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিক্ষা, ট্রাভেল, স্বাস্থ্যসেবা, ই-কমার্স, রিয়েল এস্টেট- প্রায় প্রতিটি খাতেই ব্যবসা অনলাইনে আরো দৃশ্যমান হতে চাচ্ছে। কিন্তু বদলেছে মানুষের সার্চ করার ধরন। এখন তারা শুধু গুগলে সার্চ করেই সন্তুষ্ট থাকছে না, তারা এআই-চালিত সার্চ টুলগুলো যেমন চ্যাটজিপিটি, জেমিনি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মাধ্যমে সরাসরি উত্তর খুঁজছে। 

গার্টনারের এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ ভলিউম প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যাবে- কারণ ব্যবহারকারীরা দ্রুতই এআই-চালিত সার্চ ও চ্যাটবটের দিকে ঝুঁকছে। (তথ্যসূত্র: Gartner, “Search Engine Volume Will Drop 25% by 2026, Due to AI Chatbots and Other Virtual Agents)

তবে এই পরিবর্তনের প্রভাব ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন, কেউ চ্যাটজিপিটি-তে লিখল, ‘ঢাকায় সেরা অ্যাকাউন্টিং ফার্ম কোনটি?’ যদি আপনার কোম্পানির নাম বা কনটেন্ট এআই-এর তৈরি উত্তরে না আসে, তাহলে সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট ও ব্যবসার সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে।

মূলত এখানেই জিইও-এর গুরুত্ব উঠে আসে। জিইও ব্যবহার করে কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো যায় যাতে এআই সার্চ সিস্টেম আপনার ব্র্যান্ডকে সহজেই চিনতে পারে, বুঝতে পারে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখ করে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যবসা যদি এআই-এর দুনিয়ায় দৃশ্যমান থাকতে চায়, জিইও’র সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এখন আর বিকল্প নয়- এটি একান্ত প্রয়োজন।

জিইও’র জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?

জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) কোনো একদিনে শেখার মতো বিষয় না- এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যেখানে ব্যবসাগুলোকে নিজেদের কনটেন্ট, উপস্থিতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা এআই-বান্ধব করে গড়ে তুলতে হয়। নিচে ধাপে ধাপে দেখা যাক, কীভাবে আপনি জিইও’র পথে প্রস্তুত হতে পারবেন।

১. অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করুন

জিইও’র প্রথম ধাপ হলো আপনার ব্যবসা বা ব্র্যান্ডের বর্তমান অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করা। চ্যাটজিপিটি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মতো এআই-চালিত সার্চ টুলে সার্চ দিন ‘বাংলাদেশে সেরা (আপনার ইন্ডাস্ট্রি)-এর কোম্পানিগুলো কোনগুলো?’

যদি সার্চের উত্তরে আপনার নাম না আসে, বোঝা যাবে যে আপনার এআই-দৃশ্যমানতা এখনও সীমিত। এই ক্ষেত্রে আপনাকে জিইও অনুযায়ী কনটেন্ট ও অনলাইন উপস্থিতি বাড়াতে কাজ শুরু করতে হবে।

২. বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করুন

জেনারেটিভ এআই সার্চ সিস্টেম সেই উৎসকেই অগ্রাধিকার দেয়, যা নির্ভরযোগ্য ও যাচাইযোগ্য। তাই আপনার ওয়েবসাইটে ব্র্যান্ড, টিম, যোগাযোগ ও রিভিউসহ সব তথ্য সম্পূর্ণ ও স্বচ্ছ রাখুন।

গুগল বিজনেস প্রোফাইল নিয়মিত আপডেট করুন-  ঠিকানা, সময়, পোস্ট ও রিভিউসহ।

বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম ও ব্লগে ব্র্যান্ডের উল্লেখ বাড়ান।

E-E-A-T (Experience, Expertise, Authoritativeness, Trustworthiness) বজায় রাখুন।

এভাবেই এআই ও ব্যবহারকারীর কাছে আপনার ব্র্যান্ড একটি বিশ্বাসযোগ্য সোর্স হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে- যা জিইও সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

৩. কনভারসেশনাল কনটেন্ট লিখুন

এআই সার্চ এখন ব্যবহারকারীর প্রশ্নভিত্তিক অনুসন্ধানকে গুরুত্ব দেয়। তাই আপনার কনটেন্ট তৈরি করুন এমনভাবে যেন এটি প্রাকৃতিক প্রশ্ন ও কথোপকথনের মতো শোনায়। উদাহরণ: ‘Where can I find a trusted IELTS coaching center in Dhaka?’ ‘Where can I apply for a blue-collar job?’ এ ধরনের কনটেন্ট এআই-এর চোখে আরো সহজে বোঝার মতো হয় এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তর হিসেবে উল্লেখযোগ্য।

৪. বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থাকুন

এআই শুধু ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে না। এটি ফেসবুক, ইউটিউব, লিংকডইন, কোরা এবং অন্যান্য সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম থেকেও তথ্য সংগ্রহ করে। তাই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আপনার উপস্থিতি নিশ্চিত করা জিইও-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৫. এসইও এবং জিইও একসাথে ব্যবহার করুন

ডিজিটাল দুনিয়ায় এখন শুধু সার্চ র‌্যাংকই যথেষ্ট নয়। এসইও যেমন গুগল সার্চে আপনার কনটেন্টকে শীর্ষে নিয়ে আসে, তেমনি নতুন যুগের জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) আপনার ব্র্যান্ডকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সার্চে আরো দৃশ্যমান করে তোলে।

এসইও মূলত গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েবসাইটের অবস্থান উন্নত করে, আর জিইও শেখায়- কীভাবে এআই মডেলগুলো আপনার ব্র্যান্ডকে চিনবে, উল্লেখ করবে এবং বিশ্বাস করবে।

দুটি কৌশল একসাথে প্রয়োগ করলে অনলাইন উপস্থিতি অনেক বেশি শক্তিশালী হয়। একদিকে সার্চে দৃশ্যমানতা বাড়ে, অন্যদিকে এআই-নির্ভর প্ল্যাটফর্মগুলোতেও আপনার ব্র্যান্ডের নাম উঠে আসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে।

ভবিষ্যতের সার্চ জগতে টিকে থাকতে হলে এখনই সময়- এসইও এবং জিইও-কে একসাথে কাজে লাগানোর।

বাংলাদেশের ব্যবসার জন্য জিইও’র নতুন সম্ভাবনা

জিইও বাংলাদেশের ব্যবসাগুলোর জন্য হতে পারে এক গেম চেঞ্জার। আগে যেখানে অনলাইন দৃশ্যমানতা মানেই ছিল গুগলে র‌্যাংক করা, এখন সেটি ধীরে ধীরে স্থান ছেড়ে দিচ্ছে এআই সার্চ ভিজিবিলিটি–কে।

আজ যদি কোনো ব্যবহারকারী চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-তে জিজ্ঞেস করে- 

‘বাংলাদেশে নির্ভরযোগ্য অনলাইন বই বিক্রির সাইট কোনটা?’

অথবা, ‘ঢাকায় সেরা ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি কারা?’

যদি আপনার ব্র্যান্ডের নাম সেই উত্তরে উঠে আসে, সেটিই হবে প্রকৃত দৃশ্যমানতা- শুধু ক্লিক নয়, বরং আস্থা, প্রভাব ও ব্র্যান্ড অথরিটি–এর প্রতিফলন।

বাংলাদেশে এখন প্রতিদিন শত শত নতুন অনলাইন ব্যবসা শুরু হচ্ছে- ই–কমার্স, এডুকেশন, হেলথটেক, রিয়েল এস্টেট, ফাইন্যান্স, এমনকি ছোট স্টার্টআপরাও দ্রুত ডিজিটাল হচ্ছে। কিন্তু একইসঙ্গে প্রতিযোগিতাও বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণে।

এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শুধু এসইও নয়, জিইও–কেন্দ্রিক কৌশলও অপরিহার্য।

জিইও’র ভবিষ্যৎ

খুব শিগগিরই এআই সার্চ টেক্সটের বাইরে গিয়ে ভয়েস, ভিডিও ও ইমেজ কনটেন্ট থেকেও উত্তর তৈরি করবে। তখন জিইও কেবল ওয়েবসাইট নয়, বরং ভিডিও, পডকাস্ট, সোশ্যাল প্রোফাইল, নিউজ রিপোর্ট- সবকিছুর মধ্যেই প্রভাব ফেলবে।

তাই এখন থেকেই যারা জিইও-কেন্দ্রিক কৌশল গ্রহণ করবে, ভবিষ্যতের সার্চ রেভোলিউশনে নেতৃত্ব দেবে তারাই।

উপসংহার

জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) শুধু নতুন ট্রেন্ড নয়- এটি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের পরবর্তী অধ্যায়।

এসইও যেমন আপনাকে সার্চ রেজাল্টে নিয়ে যায়, জিইও তেমনি আপনাকে নিয়ে যাবে এআই–এর উত্তরে।

‘ভবিষ্যতের সার্চে র‌্যাংক নয়, ব্র্যান্ডের বিশ্বাসযোগ্যতাই হবে সাফল্যের আসল মাপকাঠি।’

লেখক: হেড অব ওয়েব অ্যানালাইসিস অ্যান্ড এসইও ডিরেক্টর, ইন্টেলেক আইটি এলএলসি (ইউএসএ অ্যান্ড বাংলাদেশ)

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ