ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের সম্ভাব্য চুক্তি ঝুঁকিতে ফেলেছেন জেলেনস্কি: ট্রাম্প
Published: 24th, April 2025 GMT
ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে একটি সম্ভাব্য শান্তিচুক্তিকে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই সঙ্গে তিনি ইঙ্গিত দেন, যেকোনো চুক্তির অংশ হিসেবে ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার দখলদারির স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্য দিয়ে এ বিষয়ে এবারই প্রথম কোনো স্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, যুদ্ধ শেষ করার একটি চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ চুক্তির বিষয়ে মূলত ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
এদিকে ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা গতকাল বুধবার লন্ডনে একটি বৈঠকে মিলিত হয়েছিল। তারা কীভাবে ওই চুক্তির প্রতিক্রিয়া জানাবে, তা স্পষ্ট নয়। কারণ, এটি মূলত তাদের অনুপস্থিতিতেই তৈরি হয়েছে। জেলেনস্কি পাল্টা প্রস্তাব হিসেবে উভয় পক্ষের জন্য শর্তহীন একটি সাধারণ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
যদি তিনি (জেলেনস্কি) ক্রিমিয়া ফেরত চান, তবে ১১ বছর আগে যখন একটিও গুলি না ছুড়ে অঞ্চলটি রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল, তখন তারা লড়াই করেনি কেন? রাশিয়া যুদ্ধ শেষ করতে একটি চুক্তিতে রাজি হয়েছে। কিন্তু এখন জেলেনস্কিই মূল বাধা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকিন্তু দিনভর গুঞ্জন ও আংশিকভাবে চুক্তির শর্ত ফাঁস হওয়ার পর ট্রাম্প মুখ খোলেন। ইউক্রেন রাশিয়াকে ক্রিমিয়া অঞ্চলটি ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় জেলেনস্কিকে আক্রমণ করেন ট্রাম্প। ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার দখলদারি মেনে নেওয়ার বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়া চুক্তির সবচেয়ে বিতর্কিত অংশ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘২০১৪ সালে বারাক ওবামা মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকাকালেই ক্রিমিয়ার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে ইউক্রেন। এর নিয়ন্ত্রণ আলোচনার বিষয়ই নয়।’ এ কথা বলার মাধ্যমে তিনি সম্ভবত এ বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরুর তিন বছরেও কিয়েভ ক্রিমিয়া পুনরুদ্ধার করতে পারেনি।
ওয়াশিংটন রাশিয়ার অধীন অঞ্চল হিসেবে ক্রিমিয়াকে স্বীকৃতি দিতে পারে, এমন খবর কয়েক দিন ধরেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছিল। এর জবাবে গত মঙ্গলবার জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেন কখনো ক্রিমিয়ায় দখলদারি স্বীকৃতি দেবে না।’ এটি তাঁর দেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ওয়াশিংটন রাশিয়ার অধীন অঞ্চল হিসেবে ক্রিমিয়াকে স্বীকৃতি দিতে পারে, এমন খবর কয়েক দিন ধরেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছিল। এর জবাবে গত মঙ্গলবার জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেন কখনো ক্রিমিয়ায় দখলদারি স্বীকৃতি দেবে না।’ এটি তাঁর দেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।জেলেনস্কির এ মন্তব্য সম্পর্কে একটি প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প গতকাল লেখেন, ‘এ বক্তব্য রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।’ ইউক্রেনের নেতা উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করে ট্রাম্প বলেন, এসব বক্তব্যের কারণে যুদ্ধ শেষ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘কেউই জেলেনস্কিকে বলছে না ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অঞ্চল হিসেবে স্বীকার করে নিতে।’ এখানে ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, যুক্তরাষ্ট্র তা করতে প্রস্তুত। ক্রিমিয়া রক্ষা না করতে পারার জন্য ইউক্রেনকেই দোষারোপ করেন তিনি।
আরও পড়ুনশিগগির অগ্রগতি না হলে যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতা বাদ দেবে যুক্তরাষ্ট্র১৮ এপ্রিল ২০২৫ট্রাম্প বলেন, ‘যদি তিনি (জেলেনস্কি) ক্রিমিয়া ফেরত চান, তবে ১১ বছর আগে যখন একটিও গুলি না ছুড়ে অঞ্চলটি রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল, তখন তারা লড়াই করেনি কেন?’ পরে ট্রাম্প বলেন, তিনি মনে করেন, রাশিয়া যুদ্ধ শেষ করতে একটি চুক্তিতে রাজি হয়েছে, কিন্তু এখন জেলেনস্কিই মূল বাধা।
ট্রাম্প ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মনে করি, রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের একটি চুক্তি হয়েছে। এখন আমাদের জেলেনস্কির সঙ্গে একটি চুক্তি করতে হবে। আমি ভেবেছিলাম, জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনা সহজ হবে। এখন পর্যন্ত তা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।’
২০১৪ সালের মার্চে রাশিয়া একতরফাভাবে ক্রিমিয়া দখল করে নিয়েছিল। ওই সময় ইউক্রেনে রাজনৈতিক সংকট চলাকালে দেশটির রাশিয়াপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ অপসারিত হয়েছিলেন। সশস্ত্র লোকেরা স্থানীয় পার্লামেন্ট ও বিমানবন্দর দখল করেন এবং পরে গণভোটে অঞ্চলটির রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে ৯৭ শতাংশ ভোট পড়ে। তখন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ওই ভোটকে বৈধ বলে স্বীকৃতি দেয়নি।
আরও পড়ুনজেলেনস্কির বিদায় চান ট্রাম্প-পুতিন দুজনই, তা কি সম্ভব১১ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনজেলেনস্কির সঙ্গে সরাসরি আলোচনার ইঙ্গিত পুতিনের২২ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য দ ধ শ ষ কর ইউক র ন দখলদ র
এছাড়াও পড়ুন:
মতলবের দুই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি-দখলদারির অভিযোগ, দল থেকে বহিষ্কার
চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার বিএনপির দুই নেতাকে দলের সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
চাঁদাবাজি, দখলদারি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা ধরনের অপকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগে ওই দুজনের বিরুদ্ধে এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
বহিষ্কৃত নেতারা হলেন মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌর বিএনপির সহসভাপতি আবদুল মান্নান লস্কর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া। এর মধ্যে মতলব উত্তরের আবদুল মান্নান লস্করকে চাঁদাবাজির মামলায় গত সোমবার রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আবদুল মান্নান লস্কর ও আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়াকে চাঁদাবাজি, দখলদারি ও মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগে দলের প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই একই অভিযোগে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইমাম হোসেন গাজীকেও দলের সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহম্মেদের (মানিক) মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে মতলব উত্তর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম বলেন, ওই দুই নেতাকে বহিষ্কারের বিষয়টি জেনেছেন। তবে এ ব্যাপারে চিঠি এখনো পাননি। যেকোনো বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এটি অন্যান্য নেতার জন্যও একটি বার্তা ও শিক্ষা।