ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে একটি সম্ভাব্য শান্তিচুক্তিকে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই সঙ্গে তিনি ইঙ্গিত দেন, যেকোনো চুক্তির অংশ হিসেবে ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার দখলদারির স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্য দিয়ে এ বিষয়ে এবারই প্রথম কোনো স্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেন তিনি।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, যুদ্ধ শেষ করার একটি চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ চুক্তির বিষয়ে মূলত ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

এদিকে ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা গতকাল বুধবার লন্ডনে একটি বৈঠকে মিলিত হয়েছিল। তারা কীভাবে ওই চুক্তির প্রতিক্রিয়া জানাবে, তা স্পষ্ট নয়। কারণ, এটি মূলত তাদের অনুপস্থিতিতেই তৈরি হয়েছে। জেলেনস্কি পাল্টা প্রস্তাব হিসেবে উভয় পক্ষের জন্য শর্তহীন একটি সাধারণ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

যদি তিনি (জেলেনস্কি) ক্রিমিয়া ফেরত চান, তবে ১১ বছর আগে যখন একটিও গুলি না ছুড়ে অঞ্চলটি রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল, তখন তারা লড়াই করেনি কেন? রাশিয়া যুদ্ধ শেষ করতে একটি চুক্তিতে রাজি হয়েছে। কিন্তু এখন জেলেনস্কিই মূল বাধা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট

কিন্তু দিনভর গুঞ্জন ও আংশিকভাবে চুক্তির শর্ত ফাঁস হওয়ার পর ট্রাম্প মুখ খোলেন। ইউক্রেন রাশিয়াকে ক্রিমিয়া অঞ্চলটি ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় জেলেনস্কিকে আক্রমণ করেন ট্রাম্প। ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার দখলদারি মেনে নেওয়ার বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়া চুক্তির সবচেয়ে বিতর্কিত অংশ।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘২০১৪ সালে বারাক ওবামা মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকাকালেই ক্রিমিয়ার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে ইউক্রেন। এর নিয়ন্ত্রণ আলোচনার বিষয়ই নয়।’ এ কথা বলার মাধ্যমে তিনি সম্ভবত এ বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরুর তিন বছরেও কিয়েভ ক্রিমিয়া পুনরুদ্ধার করতে পারেনি।

ওয়াশিংটন রাশিয়ার অধীন অঞ্চল হিসেবে ক্রিমিয়াকে স্বীকৃতি দিতে পারে, এমন খবর কয়েক দিন ধরেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছিল। এর জবাবে গত মঙ্গলবার জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেন কখনো ক্রিমিয়ায় দখলদারি স্বীকৃতি দেবে না।’ এটি তাঁর দেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ওয়াশিংটন রাশিয়ার অধীন অঞ্চল হিসেবে ক্রিমিয়াকে স্বীকৃতি দিতে পারে, এমন খবর কয়েক দিন ধরেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছিল। এর জবাবে গত মঙ্গলবার জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেন কখনো ক্রিমিয়ায় দখলদারি স্বীকৃতি দেবে না।’ এটি তাঁর দেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জেলেনস্কির এ মন্তব্য সম্পর্কে একটি প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প গতকাল লেখেন, ‘এ বক্তব্য রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।’ ইউক্রেনের নেতা উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করে ট্রাম্প বলেন, এসব বক্তব্যের কারণে যুদ্ধ শেষ করা কঠিন হয়ে পড়বে।

ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘কেউই জেলেনস্কিকে বলছে না ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অঞ্চল হিসেবে স্বীকার করে নিতে।’ এখানে ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, যুক্তরাষ্ট্র তা করতে প্রস্তুত। ক্রিমিয়া রক্ষা না করতে পারার জন্য ইউক্রেনকেই দোষারোপ করেন তিনি।

আরও পড়ুনশিগগির অগ্রগতি না হলে যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতা বাদ দেবে যুক্তরাষ্ট্র১৮ এপ্রিল ২০২৫

ট্রাম্প বলেন, ‘যদি তিনি (জেলেনস্কি) ক্রিমিয়া ফেরত চান, তবে ১১ বছর আগে যখন একটিও গুলি না ছুড়ে অঞ্চলটি রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল, তখন তারা লড়াই করেনি কেন?’ পরে ট্রাম্প বলেন, তিনি মনে করেন, রাশিয়া যুদ্ধ শেষ করতে একটি চুক্তিতে রাজি হয়েছে, কিন্তু এখন জেলেনস্কিই মূল বাধা।

ট্রাম্প ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মনে করি, রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের একটি চুক্তি হয়েছে। এখন আমাদের জেলেনস্কির সঙ্গে একটি চুক্তি করতে হবে। আমি ভেবেছিলাম, জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনা সহজ হবে। এখন পর্যন্ত তা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।’

২০১৪ সালের মার্চে রাশিয়া একতরফাভাবে ক্রিমিয়া দখল করে নিয়েছিল। ওই সময় ইউক্রেনে রাজনৈতিক সংকট চলাকালে দেশটির রাশিয়াপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ অপসারিত হয়েছিলেন। সশস্ত্র লোকেরা স্থানীয় পার্লামেন্ট ও বিমানবন্দর দখল করেন এবং পরে গণভোটে অঞ্চলটির রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে ৯৭ শতাংশ ভোট পড়ে। তখন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ওই ভোটকে বৈধ বলে স্বীকৃতি দেয়নি।

আরও পড়ুনজেলেনস্কির বিদায় চান ট্রাম্প-পুতিন দুজনই, তা কি সম্ভব১১ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনজেলেনস্কির সঙ্গে সরাসরি আলোচনার ইঙ্গিত পুতিনের২২ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য দ ধ শ ষ কর ইউক র ন দখলদ র

এছাড়াও পড়ুন:

এটি ভাগাড় নয়, একটি খাল

প্রথম দৃষ্টিতে এটিকে ভাগাড়ই মনে হবে। অথচ এটি একটি খাল। দখল-দূষণে খালটির এই পরিণতি। দখলের ফলে এর পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। যতটুকু অংশ রক্ষা পেয়েছে, সেখানে আবর্জনার স্তূপ।
খালটি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার রামগতি বাজারসংলগ্ন। ময়লা-আবর্জনার স্তূপে প্রায় মজে গেছে খালটি। এতে সামান্য বৃষ্টিতেই বাজারে জমে হাঁটুপানি। সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগে পড়েন ব্যবসায়ীরা। বছরের পর বছর এভাবে চলতে থাকায় খালের অস্তিত্বই হুমকির মুখে।
সম্প্রতি এ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, রামগতি বাজারসংলগ্ন খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে দুই শতাধিক দোকান। দখলদারদের কবলে পড়ে খালে পানির প্রবাহ নেই। খালে ফেলা হচ্ছে বাজারের আবর্জনা। সেগুলো পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বাজারের পানি নিষ্কাশনের জন্য নালা নেই। কিছু অংশে নালা থাকলেও তা মজে গিয়েও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই পানি উপচে পড়ে। বর্ষাজুড়েই জলাবদ্ধ থাকে এলাকাটি। এ সময় মশা-মাছির উপদ্রব বাড়ে। 
ব্যবসায়ীরা জানান, খালের ওপর দোকানপাট হওয়ায় পানি নিষ্কাশনের জায়গা নেই। যে যার মতো দখল নিচ্ছে। ফলে বাড়ছে জলাবদ্ধতা ও ভোগান্তি। এতে ব্যবসার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। 
বড়খেরী ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. সাবিদ জানান, বর্ষা মৌসুমে রামগতি বাজারে আসতে ইচ্ছে করে না। কাদামাটির সঙ্গে বাজারের ময়লা-আবর্জনা মিশে চলাচল করাটা কঠিন হয়ে পড়ে।
বাজারের ব্যবসায়ী মতিলাল দাস জানান, বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায় বাজার। দখলদারদের কারণে খাল উপচে পানি ঢুকে বাজারসহ আশপাশের দোকানগুলোতে। খালটি দ্রুত দখলমুক্ত করে সংস্কার করার দাবি তাঁর।
ওষুধ ব্যবসায়ী বিপ্লব মজুমদার জানান, খালটি মজে যাওয়ায় বাজারের পানি নামতে পারে না। বৃষ্টি হলেই তাঁর দোকানে পানি ঢোকে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির সময় তাদের দোকানের ভেতর দিয়ে পানি গড়িয়ে খালে প্রবেশ করে। 
খাল দখল করে দোকানঘর করা রুহুল আমিন জানান, তাঁর দোকানের কিছু অংশ খালের ওপর পড়েছে। সরকার চাইলে তিনি জায়গা ছেড়ে দেবেন।
রামগতি বাজার উন্নয়ন কমিটির সদস্য গরীব হোসেন রাসেল জানান, কলেজের সামনে থেকে রামগতি দক্ষিণ বাজার পর্যন্ত দুই শতাধিক দোকান প্রায় ১৮ বছর ধরে অবৈধভাবে খাল দখল করে আছে। নজরদারি না থাকায় এতগুলো দোকানের মালিক নিজেদের ইচ্ছেমতো সীমানা বাড়িয়ে নিয়েছেন। 
বড়খেরী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও বাজার উন্নয়ন কমিটির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মিজানুর রহমান বলেন, অবৈধ দখলদারদের বারবার সতর্ক করা হয়েছে। উচ্ছেদের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানও হচ্ছে না, খাল সংস্কারও হচ্ছে না। ফলে বাজারে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঝান্টু বিকাশ চাকমা বলেন, খালের ওপর দোকান নির্মাণের অনুমতি কাউকে দেওয়া হয়নি। খালের দখল করা ভূমি ইতোমধ্যে সরেজমিন দেখেছেন। দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইউএনও সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, খাল দখলদারদের চিহ্নিত করা হয়েছে। শিগগির উচ্ছেদ অভিযান হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসরায়েলের ৯ ভবন ধ্বংস করল ইরান
  • এটি ভাগাড় নয়, একটি খাল