এই মৌসুমে এসি মিলান তেমন কিছুই অর্জন করতে পারেনি, নেই ছন্দে। তবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইন্টার মিলানের বিপক্ষে খেললেই যেন তারা অন্য রূপ ধারণ করে। বুধবার (২৩ এপ্রিল) দিবাগত রাতের আগে ঘরের প্রতিপক্ষ ইন্টারের বিপক্ষে কোপা ইতালিয়ানের সেমি ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে জয় লাভ করে সার্জি কনসেইসাওয়ের মিলান।
বুধবার রাতে সান সিরোতে লুকা ইয়োভিচের জোড়া গোলে ইন্টারের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে জিতে দুই লেগ মিলিয়ে মিলান ৪-১ অ্যাগ্রিগেটে ফাইনালে ওঠে। কোপা ইতিলিয়ানের ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছে মিলান। তাতে সিমিওন ইনজাগির দলের ট্রেবল জয়ের স্বপ্ন ভেঙে যায়। এই মৌসুমে ইন্টারের বিপক্ষে তিন মোকাবেলাতেই শতভাগ জয় মিলানের। জানুয়ারিতে ইতালিয়ান সুপার কাপ ফাইনালেও তারা হারিয়েছিল নীল-কালোদের।
মিলান যদি আরেকটি শিরোপা জয় করতে পারে, তবে কোচ কনসেইসাওয়ের চাকরি রক্ষার একটা সম্ভাবনা থাকবে। যদিও সাতবারের ইউরোপ চ্যাম্পিয়নরা এখন সিরি আ’তে নবম অবস্থানে রয়েছে। আগামী মৌসুমে ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় খেলার সম্ভাবনা কম তাদের।
আরো পড়ুন:
ইন্টারের সঙ্গে চুক্তি বাড়ালেন লাউতারো
ডার্বি জিতে পাঁচ ম্যাচ আগেই ইন্টার মিলান চ্যাম্পিয়ন
ইন্টার ম্যাচের শুরুতে প্রভাব বিস্তার করছিল। প্রথমার্ধের মাঝামাঝি ফেদেরিকো ডিমারকোর একটি দুর্দান্ত শট বার কাঁপিয়ে দিলেও জালের ঠিকানা পায়নি। দশ মিনিট পর ইন্টার অধিনায়ক লউতারো মার্তিনেজ বক্সে একটি বল পেয়ে পান, কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন তিনি।
ম্যাচের ৩৬ মিনিটের সময় মিলান প্রথম সুযোগেই গোল করে বসে, আলেক্স হিমেনেজের ক্রসে ইয়োভিচ দারুণ হেডে বল জালে জড়িয়ে দেন। বিরতির পর খেলা শুরু হলে চতুর্থ মিনিটে কর্নার থেকে বল পেয়ে আবার গোল করেন সার্বিয়ান এই ফরোয়ার্ড। শেষ বাঁশি বাজার মিনিট পাঁচেক আগে ইন্টারের কফাইন শেষ পেরেক ঠুকে দেন তিজিয়ান রেইয়েন্ডার্স। মিলান ৩-০ গোলের জয় নিয়ে ফাইনালে উঠে যায়।
মিলানের হয়ে শেষ গোলটি করা ডাচ মিডফিল্ডার রেইয়েন্ডার্স বলেন, “আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বেশি। আমরা লিগে সমস্যায় আছি, কিন্তু জানি এই পথেই (জয়) সবচেয়ে দ্রুত ইউরোপে (প্রতিযোগিতার জন্য শীর্ষ ৬ এ থেকে) যাওয়া সম্ভব। আর যদি আজকের মতো খেলি, তবে আমরা এই শিরোপা জিততে পারি।”
ম্যাচে দুই গোল করা ইয়োভিচ বলেন, “এটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ম্যাচ ছিল। আমরা সিরি আ’তে খুব একটা ভালো করছি না। আজ আমাদের মান এবং মানসিকতা দেখাতে হতো। আমরা সেটা দেখিয়েছি এবং এখন আমরা রোমে যাচ্ছি।” ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে ১৪ মে, রোমে।
এটি ছিল ইন্টারের টানা দ্বিতীয় পরাজয়। রোববার সিরি আ’তে বোলোনিয়ার বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরেছিল তারা। ইন্টার এপ্রিলের ৩০ তারিখ চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালে বার্সেলোনার মুখোমুখি হবে।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইন ট র ম ল ন ইন ট র র ফ ইন ল
এছাড়াও পড়ুন:
পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পূর্ণ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও গণভোট ফিরিয়ে এনে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী সংক্রান্ত যে রায় হাইকোর্ট দিয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ চারজন। তাঁদের আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া বলেছেন, পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পূর্ণ বাতিল চেয়ে এই আবেদন করা হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন এনে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী এনেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনী আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ওই সংশোধনীতে সংবিধানে ৫৪টি ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছিল। বিলোপ হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাও।
জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে রিট আবেদন হলে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং গণভোট বাদ দেওয়া সংক্রান্ত সেই সংবিধান আইনের ২০ ও ২১ ধারা বাতিল ঘোষণা করা হয়। ওই দুটিসহ পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত ৭ক, ৭খ, ৪৪ (২) অনুচ্ছেদ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিলও ঘোষণা করেন আদালত।
চলতি বছরের ৮ জুলাই ১৩৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধেই সুজন সম্পাদকসহ চার বিশিষ্ট ব্যক্তি লিভ টু আপিল দায়ের করলেন। অন্য তিন ব্যক্তি হলেন এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।
আপিলের কারণ ব্যাখ্যা করে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর অংশবিশেষ অসাংবিধানিক ঘোষণা করে বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। পুরো সংশোধনীর বাতিল চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু পুরোটা বাতিল করেননি। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করে আবেদন করা হয়েছে। ‘যথাসময়ে’ এর শুনানি হবে।
শরীফ ভূঁইয়া বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা বাতিল করা হয়েছে। তবে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ফিরিয়ে আনতে পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের আরও কিছু ধারা বাতিল করা প্রয়োজন ছিল। হাইকোর্ট রায়ে সেসব ধারা বাতিল করেননি। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সম্পর্কিত ত্রয়োদশ সংশোধনীর সবগুলো বিধান সংবিধানে ফিরে আসেনি। পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস করার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত ত্রুটি ছিল। ত্রুটিগুলোর বিষয়ে আদালতও বলেছেন। তারপরে হাইকোর্ট পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পূর্ণ বাতিল না করে আংশিক বাতিল করেছেন। এতে করে সংবিধানে সংশোধনীর ব্যাপারে পদ্ধতিগত যে সুরক্ষা আছে, তা অকার্যকর হয়েছে। এসব কারণে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়েছে।’
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি অবৈধ ক্ষমতা দখল করলে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা এবং সংরক্ষিত নারী আসন ৫০-এ উন্নীত করা হয়। জাতির পিতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সংবিধানে জাতীয় চার মূলনীতি—জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনা হয়। সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয় বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১ সালের সাতই মার্চের ভাষণ, ছাব্বিশে মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র।
একই সঙ্গে অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে দোষী করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান যুক্ত করা হয়। আগে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনে নির্বাচন করার বিধান ছিল। পঞ্চদশ সংশোধনীতে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিষয়টি সংযোজন করা হয়।
পঞ্চদশ সংশোধনীর পুরো আইন ও আইনের কয়েকটি ধারার বৈধতা নিয়ে গত বছর হাইকোর্টে আলাদা দুটি রিট আবেদন হয়। সুজন সম্পাদকসহ পাঁচ ব্যক্তি একটি এবং আরেকজন ব্যক্তি আরেকটি রিট আবেদন করেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন।
রায়ে বলা হয়েছিল, পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা দুটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ধ্বংস করেছে। এই দুটিসহ আইনের ৪৭ ধারা, ৭ক ও ৭খ সন্নিবেশিত করা সংক্রান্ত আইনের ৭ ধারা এবং ৪৪(২) অনুচ্ছেদ সন্নিবেশিত করা সংক্রান্ত আইনের ১৮ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
রায়ে গণভোটের বিধান সংক্রান্ত ১৪২ অনুচ্ছেদ (দ্বাদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে আনা) পুনর্বহাল করা হয়েছিল। পঞ্চদশ সংশোধনী আইন সম্পূর্ণ বাতিল না করে বাকি বিধানগুলোর বিষয়ে আইন অনুসারে পরবর্তী সংসদ সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।