ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৃহস্পতিবার কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, হামলাকারী ও তাদের মদদদাতাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া হবে। ওই হামলায় অংশ নেওয়া বন্দুকধারীদের মধ্যে দুজন পাকিস্তানি নাগরিক বলে শনাক্ত করেছে ভারতীয় পুলিশ।

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য বিহারে এক সমাবেশে মোদি কাশ্মীরের পেহেলগামে নিহত ২৬ জনের স্মরণে হাত জোড় করে প্রার্থনা করেন। তিনি উপস্থিত হাজারও মানুষকে নিহত ব্যক্তিদের জন্য প্রার্থনা করার আহ্বান জানান।

হামলাকারীদের পরিচয় বা পাকিস্তানের নামোল্লেখ না করে মোদি বলেন, ‘আমরা হামলাকারীদের “পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত” তাড়া করে খুঁজে বের করব।’

কাশ্মীরের পেহেলগাম এলাকায় পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী হামলায় জড়িত সন্ত্রাসবাদীদের এবং তাদের সহযোগীদের শাস্তি দিতে ভারত সব জায়গায় খুঁজে বের করবে। পুলিশের তথ্যে জানা গেছে, ‘হামলাকারীদের মধ্যে দুজন পাকিস্তানি। আমরা তাদের পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত তাড়া করব।’ যদিও তিনি হামলাকারীদের পরিচয় বা পাকিস্তানের নাম উল্লেখ করেননি।

তবে মোদির এমন মন্তব্য পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে ভারত বুধবার রাতে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক সংকুচিত করার পর। ওই দিন ভারত ছয় দশকের পুরোনো পানিচুক্তি স্থগিত এবং দুই দেশের একমাত্র স্থলসীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

পাকিস্তানের বিদ্যুৎমন্ত্রী আওয়াইস লেখারি ভারতের সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করাকে ‘জলযুদ্ধ ঘোষণা’র শামিল বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এ পদক্ষেপ ‘কাপুরুষোচিত ও অবৈধ’।

কাশ্মীর পুলিশের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে হামলার সঙ্গে জড়িত দাবি করে তিনজন সন্দেহভাজন হামলাকারীর নাম ও স্কেচ প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের ধরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।

পুলিশের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এ তিনজনের মধ্যে দুজন পাকিস্তানি নাগরিক। তবে কীভাবে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে, তা তারা উল্লেখ করেনি।

ভারত কাশ্মীরের একাংশ ও পাকিস্তান আরেকাংশ নিয়ন্ত্রণ করলেও দুই দেশই পুরো অঞ্চলটি নিজেদের বলে দাবি করে থাকে।

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বুধবার বলেন, বুধবার মন্ত্রিসভা নিরাপত্তা কমিটিকে ওই হামলায় আন্তসীমান্ত সংযোগের বিষয়টি সম্পর্কে ব্রিফ করা হয়েছে। এই হামলাকে গত দুই দশকে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ পর্যায়ের এই কর্মকর্তা এসব সংযোগের কোনো প্রমাণ বা বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেননি।

মিশ্রি আরও বলেন, ইসলামাবাদ থেকে তাদের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টাদের প্রত্যাহার করে নিচ্ছে ভারত। একই সঙ্গে দূতাবাসের কর্মী সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ করা হচ্ছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের মতে, ভারত নয়াদিল্লির পাকিস্তানি দূতাবাসের প্রধান কূটনীতিককে তলব করেছে। মিশ্রি ঘোষিত পদক্ষেপগুলোর একটিতে পাকিস্তানি দূতাবাসে থাকা সব প্রতিরক্ষা উপদেষ্টাকে অবাঞ্ছিত ব্যক্তি (পারসোনা নন গ্রাটা) ঘোষণা করে এক সপ্তাহের মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মোদি আজ বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছে। এতে হামলার জবাবে মোদি সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে বিরোধী সব দলকে জানানো হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মন ত র ব র কর

এছাড়াও পড়ুন:

হামলার পর আশা ও আতঙ্কের মধ্যে পেহেলগামে ধীরে ধীরে ফিরছেন পর্যটকেরা

ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পাহাড়ি পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামের কাছে এক প্রাণঘাতী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার এক সপ্তাহ পর শহরটিতে এখনো থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। অবশ্য সেখানে অল্প অল্প করে পর্যটক ফিরতে শুরু করেছেন।

গত সপ্তাহে শহরের প্রধান মহাসড়ক একেবারে ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। দোকানপাট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, খালি হয়ে গিয়েছিল হোটেলগুলো। এখন সেখানে আবার অল্প অল্প করে প্রাণ ফিরছে।

গত মঙ্গলবার পেহেলগাম থেকে তিন মাইল (৫ কিলোমিটার) দূরে পাহাড়চূড়ার উপত্যকা বৈসারানে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের ওপর গুলি চালায় একদল বন্দুকধারী। এই বৈসারানকে অনেক সময় ‘ভারতের সুইজারল্যান্ড’ বলা হয়।

বৈসারানের হামলাকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অন্যতম ভয়াবহ ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যা অনেক পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে এবং ভারতজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

হামলার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তান সম্পর্কে উত্তেজনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কাশ্মীরের দুই অংশ দুই দেশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তরে পুরো অঞ্চলকে দুই দেশই নিজেদের বলে দাবি করে থাকে।

দিল্লি এ হামলার কোনো সামরিক জবাব দেবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে।

১৯৮৯ সালে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরুর পর থেকে কাশ্মীরে প্রায়ই হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। এসব ঘটনায় কখনো নিরাপত্তা বাহিনী আবার কখনো বেসামরিক নাগরিকদের নিশানা করা হয়েছে। কিন্তু পর্যটকদের এভাবে প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনা বিরল এবং তা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের হতবাক ও আতঙ্কিত করেছে।

১৯৮৯ সালে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরুর পর থেকে কাশ্মীরে প্রায়ই হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। এসব ঘটনায় কখনো নিরাপত্তা বাহিনী আবার কখনো বেসামরিক নাগরিকদের নিশানা করা হয়েছে। কিন্তু পর্যটকদের এভাবে প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনা বিরল এবং তা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের হতবাক ও আতঙ্কিত করেছে।

পেহেলগামের মতো এলাকার অর্থনীতি পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। হামলার জেরে সেখানে বহু মানুষের জীবিকা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুনকাশ্মীরে ব্যাপক ধরপাকড়, ভাঙা হচ্ছে বাড়ি: ‘আমার ভাই জড়িত থাকলেও পরিবারের অপরাধ কী’১৮ ঘণ্টা আগেহামলার পরদিন (২৩ এপ্রিল) ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা পেহেলগামের বৈসারান এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালান

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কাপ্তাই হ্রদের ‘দ্বীপে’ রিসোর্ট-কটেজ, টানছে পর্যটক
  • ভারতে অনলাইনে ছড়ানো হচ্ছে মুসলিমবিদ্বেষী গান, কনটেন্ট
  • হামলার পর আশা ও আতঙ্কের মধ্যে পেহেলগামে ধীরে ধীরে ফিরছেন পর্যটকেরা
  • কাশ্মীর সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে চতুর্থ দিনের মতো গোলাগুলি