বসুন্ধরায় ভবনের ছাদ থেকে পড়ে তরুণের মৃত্যু
Published: 24th, April 2025 GMT
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি ভবনের নিচ থেকে গতকাল বুধবার রাতে এক তরুণের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাঁর নাম সিয়াম আযম (২০)। তিনি আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এআইইউবি) ব্যবসায় প্রশাসনে (বিবিএ) প্রথম বর্ষে পড়তেন।
ভাটারা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সৌমিক ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার জি ব্লকে ৬ তলা একটি ভবনের চিলেকোঠায় সিয়াম থাকতেন। সেই ভবনের দুই তলায় তাঁর আরও কয়েকজন বন্ধুও থাকেন। গতকাল রাত ৯টার দিকে এক বন্ধু বাসার নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় সিয়ামকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেন। এটি দেখে তিনি অন্য বন্ধুদের ও বাসার বাড়িওয়ালাকে জানান। বাড়ির মালিক ৯৯৯–এ ফোন করে পুলিশকে বিষয়টি জানান। পুলিশ এসে মরদেহের সুরতহাল করে মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়।
সৌমিক ইসলাম আরও জানান, তদন্ত শেষে ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ণয় করা যাবে। এ ব্যাপারে ভাটারা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারকে আজ বৃহস্পতিবার হস্তান্তর করা হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে সিয়ামের আত্মীয় আবদুর রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘যতটুকু জেনেছি, সিয়াম যে বাড়িতে থাকতেন বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ওই ভবনের ছাদ থেকে অসাবধানতাবশত নিচে পড়ে যান এবং ঘটনাস্থলে মারা যান।
সিয়ামের বাড়ি দিনাজপুরের সদর উপজেলার উপশহর শেখপুরায়। তাঁর বাবা আবদুল মান্নাফ। দুই ভাইয়ের মধ্যে সিয়াম ছোট ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’
ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।
হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।
আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’
গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’
আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই।