সরকারি খরচে এ বছর হজে যাচ্ছেন ৩০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী। তারা বৈদেশিক মুদ্রায় ভ্রমণভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন। এতে একজনের জন্য সরকারের ব্যয় হবে প্রায় ৮ লাখ টাকা। এ হিসাবে ৩০০ জনের পেছনে খরচ দাঁড়াবে প্রায় ২৪ কোটি টাকা।
সরকারি খরচে ঘুরেফিরে একই ব্যক্তি বারবার হজে যাচ্ছেন। অনেকের বিরুদ্ধে তদবির করার অভিযোগও রয়েছে। তালিকার অনেক ব্যক্তির হজ সম্পর্কে জ্ঞান নেই। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কয়েক কর্মকর্তা জানান, ধর্ম উপদেষ্টা ও সচিব নতুন হওয়ায় হজ শাখার কর্মকর্তারা তাদের পছন্দ অনুযায়ী তালিকা করেছেন। এতে ধর্ম উপদেষ্টার দপ্তরের চার গাড়িচালক ও এক সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর রয়েছেন। ধর্ম সচিবের দপ্তরের অফিস সহায়ক ও সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর জায়গা করে নিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এখন পর্যন্ত ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পিও আব্দুস সালাম ও আব্দুল জাব্বার, এও রাসেল মামুদ ও কম্পিউটার অপারেটর আশরাফুল ইসলাম ৯ বার করে হজে গেছেন। এ বছরও তালিকায় আছেন। একইভাবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত ব্যক্তিগত সহকারী জহিরুল ইসলাম ও অফিস সহায়ক আনোয়ার আটবার, পিও মাজহারুল ইসলাম ছয় এবং এও মোহাম্মদ আজিজুল হক পাঁচবার হজে গেছেন। সৌদি আরবের হজ অফিসে পদায়নে থেকেও তারা হজ করেছেন। পিও রুকনুজ্জামান সিরাজী তিনবার, পিও জাফর ইকবাল চারবার, চাকরির তিন বছরে ইমন মিয়া তিনবার, দুই বছরের মধ্যে আনোয়ার হোসেন ও তৌফিক গেছেন দু’বার করে হজে গেছেন। সবাই এবারও তালিকাভুক্ত হয়েছেন। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারী তিন থেকে চার বছর ধরে নিয়মিত হজে যাচ্ছেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, হজের প্রশাসনিক দলে রয়েছেন অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিবসহ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের ৫৮ কর্মকর্তা। হজ প্রশাসনিক সহায়তাকারী দলে রয়েছেন ৫০ পিওন-গাড়িচালকসহ নিম্ন পদের কর্মচারী। ২০ সদস্যের কারিগরি দলে আছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটার অপারেটররা। ধর্ম উপদেষ্টার নেতৃত্বে হজ মনিটরিং টিমে আছেন সাত কর্মকর্তা। সমন্বিত হজ চিকিৎসা দলে আছেন ১৬৫ জন। এর মধ্যে ৮০ চিকিৎসক, ৪৪ নার্স, ২৫ ফার্মাসিস্ট ও ১৬ ওটি/ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট। এসব কর্মকর্তার মধ্যে প্রথম ব্যাচে যাবেন ১৭০; দ্বিতীয় ব্যাচে ১৩০ জন। প্রথম ব্যাচের ৭০ জন আজ শুক্রবার এবং আগামীকাল শনিবার যাবেন ৯০ জন। তাদের মধ্যে কয়েকজন বিমানের বিজনেস ক্লাসের যাত্রী।

তালিকা নিয়ে লুকোচুরি
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হাজি সেবার নামে সরকারি টাকায় সৌদি আরব যাওয়া ব্যক্তির নামে প্রজ্ঞাপন হতো। এবার এখনও প্রজ্ঞাপন হয়নি। তবে যারা হজে যাচ্ছেন, তাদের মোবাইলে এসএসএস পাঠানো হয়েছে। যদিও কখন কার ফ্লাইট, তারা এখনও জানতে পারেননি।
ধর্ম উপদেষ্টা ড.

আ ফ ম খালিদ হোসেন সমকালকে বলেন, ‘উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সরকারিভাবে হজে গেলে বাড়তি মনোযোগ দিতে হয়। ফলে সাধারণ হাজিরা সেবা থেকে বঞ্চিত হন। এ জন্য এবার উচ্চ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তাকে নেওয়া হচ্ছে না। একই ব্যক্তি একাধিকবার হজে যাওয়ার সংখ্যা এবার খুব বেশি হবে না।’ প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি গোপন করা হচ্ছে না। বিমানে ওঠার আগেই প্রজ্ঞাপন হবে।’
সৌদি সরকার ২০২৩ সাল থেকে হাজি সেবা দলের সদস্যদের হজে নিষেধাজ্ঞা দিলেও, বিভিন্ন মাধ্যমে তদবির করে বাংলাদেশ সদস্যদের হজ করিয়েছেন। ধর্ম উপদেষ্টা বললেন, এবারও শেষ মুহূর্তে অনুমতি পাওয়া গেলে হজ দলের সদস্যরা হজ করবেন।

হজসেবায় ৪০০ প্রবাসী
হাজিদের সহায়তাকারী হিসেবে আরবি ভাষায় পারদর্শী ও স্থানীয় রাস্তাঘাট ভালো চেনেন– সৌদি আরবে বসবাসকারী এমন অন্তত ৪০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও প্রবাসী নিয়োগ হয়েছেন। এর পরও স্বাস্থ্যকর্মী বাদেই ১৩৫ জন হজে যাচ্ছেন।
বায়তুল মোকাররম মসজিদের জ্যেষ্ঠ পেশ ইমাম মিজানুর রহমান বলেন, হজযাত্রীদের সেবার জন্য যাদের প্রয়োজন, শুধু তাদের নেওয়া যেতে পারে। এর বাইরে সরকারি খরচে কাউকে নেওয়া ঠিক হবে না।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হজ কর মকর ত র ব র কর সদস য ইসল ম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ