পুরো বন্ধের পথে টেকনাফ স্থলবন্দরের কার্যক্রম
Published: 24th, April 2025 GMT
টেকনাফ স্থলবন্দরে জেটি ঘাটে বৃহস্পতিবার দুপুরে নোঙর করা দুটি বোট থেকে বালু নামাচ্ছিলেন শ্রমিকেরা। দুটি বোটের যাওয়ার কথা ছিল মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরে। ওই রাজ্যটি দখলে নেওয়া আরাকান আর্মি বোট দুটিকে ওই শহরে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। বাধ্য হয়ে রপ্তানিকারকেরা শ্রমিক দিয়ে বোট দুটি থেকে আলুভর্তি বস্তা নামিয়ে ফেলেন।
আলু ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ১২ দিন টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এখানে আলু পড়ে আছে ২ হাজার ৭০০ বস্তা। প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি করে মোট আলু সেখানে আটকা পড়েছে ১৩৫ টন। এর মধ্যে ২ হাজার ১০০ বস্তা সবুজ অ্যান্ড ব্রাদার্সের নূরুল কায়েস সাদ্দামের ও ৬০০ বস্তা এক্সপ্রেস এজেন্সির ওমর ফারুকের। এ ছাড়া গুদামে পড়ে আছে ২২ হাজার বস্তা সিমেন্ট। এ ছাড়া পানি, চিপস, চানাচুর, বিস্কুট, পানি ও প্লাস্টিকজাত পণ্যও গুদামে পড়ে আছে। সব মিলিয়ে এসব পণ্যের দাম পাঁচ কোটি টাকার ওপর।
বন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্য দখলের পর তিন মাস ধরে টেকনাফ থেকে সীমান্তবাণিজ্য থমকে যায়। গত মার্চে ওই রাজ্য থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে ৬৭৫ দশমিক ৪৩ টন পণ্য আমদানি হয়। এতে সরকারের রাজস্ব আদায় হয় ৭ কোটি ৯৬ লাখ ৫ হাজার ২৬৫ টাকা। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রায় তিন লাখ ৩৪ হাজার ৫২৪ দশমিক ৫২ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। টনের হিসাবে যা তিন হাজার ৪৫৫ দশমিক ৯৮৪ টন। রপ্তানিপণ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আলু, বিস্কুট, পানি ও প্লাস্টিকজাত পণ্য।
সর্বশেষ ১২ এপ্রিল রাখাইন থেকে ১৩৮ পিসের একটি কাঠবাহী বোট এসেছিল। এরপর থেকে কোনো পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়নি। এসব কারণে শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বলে জানান বন্দরের শ্রমিক নেতা মনির আহমেদ। তিনি বলেন, বেকার শ্রমিকেরা দুর্দিনে পড়েছেন। রপ্তানির উদ্দেশ্যে আনা আলুসহ বিভিন্ন পণ্যে পচন ধরেছে।
ব্যবসায়ী নুরুল কায়েছ সাদ্দাম বলেন, তাঁর অর্ধকোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করতে না পেরে গুদামে রেখেছেন। এর মধ্যে আলুসহ অনেক পণ্যে পচন ধরেছে। রাখাইনেও তাঁর কাঠ, ডাল, শুঁটকিসহ বিপুল পরিমাণ পণ্য মজুত আছে।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এক্সপ্রেস এজেন্সির প্রতিনিধি মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ১০-১২ দিন ধরে মালপত্র আমদানি-রপ্তানি বন্ধ। আরাকান আর্মির অনুমতি না পাওয়ায় এখান থেকে পণ্য যাচ্ছে না, সেখান থেকেও কোনো পণ্য আসছে না। রপ্তানির জন্য আনা তাদের দুই হাজারের বেশি বস্তা আলু, ১০ হাজার বস্তা সিমেন্ট পড়ে আছে। পচনশীল হওয়ায় আলু নষ্ট হওয়ার পথে। এতে ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়ছেন।
ইয়াঙ্গুন থেকে তিন মাস আগে পণ্য আনা-নেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এবার আরাকান আর্মির দখলে থাকা রাখাইন থেকেও আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে জানিয়ে টেকনাফ স্থলবন্দর রাজস্ব কর্মকর্তা মো.
জানা গেছে, এই বন্দরে সর্বশেষ আনুষ্ঠানিক আমদানি হয় ১২ এপ্রিল। সেদিন রাখাইন থেকে কাঠবোঝাই বোট এসেছিল। এরপর ১৬ এপ্রিল রাখাইন থেকে আসার পথে একটি কাঠবাহী বোট হেফাজতে নেয় বিজিবি। সেটিতে কোনো লোকজন ছিল না। মালিকবিহীন বোটটি আছে স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের হেফাজতে। এ প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, টেকনাফ-মংডু সীমান্তবাণিজ্য এখন পুরোদমে বন্ধ। আরাকান আর্মির সবুজসংকেত না পাওয়ায় আপাতত ব্যবসায়ীরা কোনো পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে পারছেন না। ফলে গুদামে বিপুল পরিমাণ পণ্য মজুত রাখতে হচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ট কন ফ আর ক ন আর ম র খ ইন থ ক ব যবস য় আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
ভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা
পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্নের ঘোষণা ট্রাম্পের
ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।
ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”
প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।
মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”
মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলি অভিযান সমর্থন করেছিলেন।
গ্যালাপের মতে, মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন দিয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ