চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানি গ্রামীণফোনের কর–পরবর্তী মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৩৪ কোটি টাকা। যদিও গত বছরের একই সময়ে তাদের মুনাফা হয়েছিল ১ হাজার ৩৪০ কোট টাকা। সেই হিসাবে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে প্রায় ৫৩ শতাংশ।

আজ শুক্রবার গ্রামীণফোনের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে আয়, মুনাফাসহ অন্যান্য বিষয় জানায়। এতে গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মূলত সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির প্রভাব কোম্পানির আয়ে পড়েছে। তা ছাড়া ইন্টারনেটের দাম কমে যাওয়ার প্রভাবও রয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ও কোম্পানি আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী, চলতি ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) গ্রামীণফোন ৩ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা আয় করেছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আড়াই শতাংশ কম। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে গ্রামীণফোনের আয় ছিল ৩ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। তখন আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ।

গ্রামীণফোনের শেয়ারপ্রতি আয়ও কমেছে ৫ দশমিক ২২ টাকা। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে গ্রামীণফোনের শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৪ দশমিক ৬৯ টাকা। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রতি শেয়ারের বিপরীতে আয় ছিল ৯ দশমিক ৯১ টাকা।

গ্রামীণফোন জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানির মোট গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৪৮ লাখ। তাদের মোট গ্রাহকের ৫৭ শতাংশ; অর্থাৎ ৪ কোটি ৮৩ লাখ গ্রাহক ইন্টারনেট–সেবা ব্যবহার করেন।

গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান বলেন, ‘চ্যালেঞ্জিং অর্থনৈতিক পরিবেশের মধ্যেও কৌশলগত উদ্যোগের মাধ্যমে আমাদের আর্থিক কর্মক্ষমতা উন্নত হচ্ছে। এই প্রান্তিকেও ইন্টারনেটের গ্রাহকসংখ্যা ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে ইন্টারনেটের মূল্য ১৭ শতাংশ হ্রাসের প্রভাবে গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় রাজস্ব কমেছে।’ তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও নেটওয়ার্ক অবকাঠামো রূপান্তরের মধ্য দিয়ে আমরা উদ্ভাবনের এক নতুন যুগে প্রবেশ করছি, যা দেশে একটি ডেটা ও ডিজিটালকেন্দ্রিক অর্থনীতির ভিত্তি তৈরি করছে।

গ্রামীণফোনের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) অটো মাগনে রিসব্যাক বলেন, ‘অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের যে ইঙ্গিত গত প্রান্তিকে পেয়েছিলাম, তা ধীরে ধীরে বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। ফলে ডেটা ব্যবহারে প্রবৃদ্ধি ও গ্রাহকসংখ্যা বৃদ্ধি উভয় ক্ষেত্রে ইতিবাচক ধারা ফিরে এসেছে। পরপর দুই প্রান্তিকে গ্রাহক প্রতি গড় আয় (এআরপিইউ) হ্রাসের পর চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বেড়েছে। আগের বছরের তুলনায় চলতি বছর মোট রাজস্ব আড়াই শতাংশ কমেছে। মূলত ব্যয়ের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের অতিরিক্ত সতর্কতার ফলে এমনটি ঘটেছে। তবে অধিবর্ষের (লিপ ইয়ার) প্রভাব বাদ দিলে আগের বছরের পারফরম্যান্স বিবেচনায় মাত্র ১ শতাংশ পিছিয়ে আছি আমরা।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বছর র প রথম প র ন ত ক বছর র প র গত বছর র গ র হক দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচন যখনই হোক, প্রস্তুত থাকতে হবে: সিইসি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়ে সরকারের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের এখনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। তিনি বলেছেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনা হলে ইসি সরকারের ‘ভাব’ বুঝতে পারবে। তখন নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে তিনি বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হোক বা এপ্রিলে—যখনই হোক নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সিইসি। গত শুক্রবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠকের পর একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালে রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।

এ বিষয়ে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, আগে বলা হয়েছিল ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। সেই সময়সীমা মাথায় রেখে ইসি প্রস্তুতি শুরু করেছিল। সেভাবে এগিয়েছিল। এখন আবার নতুন ‘ডাইমেনশন’ এসেছে। যৌথ বিবৃতির বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘যে ঘোষণাটা লন্ডনে বসে হয়েছে, এটা আপনারা যেটুকু জানেন, আমি এর বাইরে বেশি কিছু জানি না। আপনারা যেটুকু দেখেছেন মিডিয়াতে, আমিও সেটুকু দেখেছি।’

আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে—এ সংক্রান্ত যৌথ বিবৃতির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমি এটা টেলিভিশনে দেখেছি, এটাকে আমি ফরমাল, অফিশিয়াল ভাবতে পারতেছি না। সরকারের সঙ্গে আমাদের এখনো কথাবার্তা হয় নাই, কী ধরনের সিদ্ধান্ত আসে। আমরা এখন আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে ভাবতেছি। যখনই হবে, যখনই হয় যাতে আমরা ইলেকশনটা “ডেলিভার” করতে পারি।’

সিইসি আরও বলেন, ‘এখন আমরা প্রস্তুতির বাইরে কিছু চিন্তা করছি না। যখন সরকারের সঙ্গে কথা হবে যে ওনারা কী আলোচনা করেছেন, আমরা তো নিশ্চয় ওনাদের ভাব বুঝতে পারব, বুঝে তখন একটা তারিখ, তখন সেটা করব। এখন আমাদের চিন্তা–ভাবনা, ধ্যান–ধারণা, শয়নে–স্বপনে নিজেদের প্রস্তুতি।’

এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন—এটা এখনো তাঁদের কাছে পরিষ্কার নয়। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, গেজেটের মাধ্যমে ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হয়। ছয় মাস–আট মাস আগে ভোটের তারিখ বলার বিধান আইনে নেই।

সিইসি বলেন, যৌথ বিবৃতিতে তিনি যেটা দেখেছেন যে রমজানের আগেও নির্বাচন হতে পারে। সেখানে ‘যদি’ আছে।

নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে সিইসি বলেন, নির্বাচনের জন্য বড় প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো অনেকটা শেষ হয়েছে। সবচেয়ে বড় কাজ ভোটার নিবন্ধন, এটি মোটামুটি শেষ।

চলতি বছরের হালনাগাদে যাঁদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে, সে তালিকা চূড়ান্ত হবে আগামী বছরের ২ মার্চ। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে তাঁরা ভোট দিতে পারবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, তফসিল ঘোষণার আগে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত থাকতে হয়। সাধারণত ভোটের তারিখের মাস দুয়েক আগে তফসিল ঘোষণা করা হয়। যেদিন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে, তার আগে যাঁদের ১৮ বছর পূর্ণ হবে তাঁদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে ইসি চেষ্টা করবে। এ জন্য আইনে কিছুটা পরিবর্তন আনার চিন্তা করছে ইসি। সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে—এই ওয়াদা তিনি দিতে পারবেন না। তাঁরা যথাসম্ভব চেষ্টা করবেন, যাতে তরুণ প্রজন্মকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

কোনো কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। তাদের আস্থায় আনতে ইসি কী করবে—এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও দেশের ভালো চায়। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তাদের অনেক ধরনের কথাবার্তা বলতে হয়। এগুলো তিনি রাজনৈতিকভাবে দেখেন।

সিইসি আরও বলেন, কেউ বিপক্ষে না থাকলে বুঝতে হবে কোনো ‘কোয়ালিটি’ নেই। বিপক্ষে কেউ বললে তখন শোধরানোর সুযোগ থাকে। এ জন্য কেউ বিরুদ্ধে বললে তিনি আহত হন না। তিনি এ ধরনের সমালোচনাকে স্বাগত জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ