আবদুল জব্বার স্মৃতি বলীখেলায় টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কুমিল্লার মো. শরীফ। আজ শুক্রবার ঐতিহাসিক লালদীঘি মাঠে অনুষ্ঠিত বলীখেলার ফাইনাল খেলায় তিনি একই এলাকার রাশেদকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। ৩১ মিনিটের এই দ্বৈরথে কেউ কাউকে ছাড় দেননি। তবে কৌশলগত ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় শরীফকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। তিনি ‘বাঘা’ শরীফ নামে পরিচিত।

আজ বিকেল ৪টা থেকে রিংয়ে বলীখেলা শুরু হয়। ৯০ জন বিভিন্ন বয়সী বলী এতে অংশ নেন। বিকেলে বেলুন উড়িয়ে বলীখেলার উদ্বোধন করেন নগর পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ। পুরস্কার বিতরণী পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন।

বলীখেলার শুরু থেকে লালদীঘির মাঠ এবং আশপাশ ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। ঢোলের বাদন ছাপিয়ে গগন কাঁপানো হর্ষধ্বনি তোলেন উপস্থিত নানা বয়সী মানুষ। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের মধ্যে তাঁরা বলীখেলা উপভোগ করতে থাকেন। বলীখেলায় ১৮ বছর বয়সী ফয়সাল যেমন ছিলেন, তেমনি সত্তোরোর্ধ্ব মফিজ উদ্দিনও ছিলেন। ছিলেন ব্যবসায়ী, ছাত্র, চাকরিজীবীরাও।

প্রথম রাউন্ড শেষে কোয়ার্টার ফাইনালে আটজন মুখোমুখি হন। লটারির মাধ্যমে তাঁদের নির্বাচন করা হয়। এই আটজনের মধ্য থেকে জয়ী চারজন সেমিফাইনালে মুখোমুখি হন। এই চারজনই ছিলেন কুমিল্লার। এর মধ্যে ২০২৩ সালের চ্যাম্পিয়ন শাহজালাল বলীকে হারিয়ে দেন গতবারের রানারআপ রাশেদ। দ্বিতীয় সেমিতে শরীফ জিতেছেন কামালের বিরুদ্ধে। তৃতীয় স্থান নির্ধারণীতে জিতেছেন কামাল।

শেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ফাইনাল। এবারও ২০২৪ সালের মতো মুখোমুখি হন শরীফ ও রাশেদ। গতবারের ফাইনালের পুনরাবৃত্তিই হয়েছে। তবে গতবার যেখানে ১১ মিনিটে ফলাফল আসে, এবার তা আসতে সময় লেগেছে। একপর্যায়ে দুজনের যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার প্রস্তাবও নাকচ করে দেন বলীখেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শওকত আনোয়ার। তিনি রিংয়ে উঠে মাইকে ঘোষণা দেন, একজনকে জিততেই হবে।

৩১ মিনিটে এসে শরীফ রাশেদকে ঝাপটে ধরে ফেলে দিতে উদ্যত হন। তখন রাশেদ নিজেকে রক্ষা করতে রিংয়ের রশি ধরে রাখেন। রেফারিরা এই কৌশলকে অবৈধ ঘোষণা করে শরীফকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। শরীফ পেশায় মাংস বিক্রেতা। রাশেদের মুরগির খামার রয়েছে।

এভাবে ফল নির্ধারণ করাকে রাশেদ মেনে নিতে পারেননি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জয়ী শরীফ শিরোপা অক্ষুণ্ন রেখে উৎফুল্ল। তিনি বলেন, ‘এবার একটু বেশি ঘাম ঝরাতে হয়েছে। এই জয়ে আমি আনন্দিত।’ চ্যাম্পিয়ন শরীফ পুরস্কার হিসেবে পান ৩০ হাজার টাকা। রাশেদকে দেওয়া হয় ২০ হাজার টাকা।

প্রতিবছর বাংলা ১২ বৈশাখ এই বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়। বলীখেলাকে ঘিরে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা বসে লালদীঘির আশপাশের এলাকায়। এর আগে বৃহস্পতিবার থেকে লালদীঘির মাঠ ও আশপাশের এলাকায় শুরু হয়েছে বৈশাখী মেলা। ঝাড়ু ও তালপাতার হাতপাখা ছিল নারী-পুরুষের প্রথম পছন্দ। গৃহস্থালির বিভিন্ন সামগ্রী, শিশু-কিশোরদের খেলনা, গৃহসজ্জার জিনিস, তৈজসপত্র, ঝাড়ু, কুড়াল, আসবাব, গাছপালা, কী নেই এই মেলায়! আগামীকাল শনিবার শেষ হবে এই প্রাণের মেলা। ১৯০৯ সালে বকশিরহাটের ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুবসমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে এই বলীখেলার প্রচলন করেছিলেন। এবার ১১৬তম আসর। মাঝখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং করোনার কারণে তিন বছর বলীখেলা হয়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বল খ ল র ফ ইন ল

এছাড়াও পড়ুন:

খামেনিকে হত্যায় ইসরায়েলি পরিকল্পনা আটকে দেন ট্রাম্প

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার ইসরায়েলের পরিকল্পনা কয়েক দিন আগে আটকে দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুজন মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

এমন সময় এ খবর সামনে এসেছে, যখন ইরানে চালানো হামলার প্রথম দিনই দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ পদের প্রায় সব কর্মকর্তাকে হত্যা করে ইসরায়েল। এ ছাড়া ইসরায়েলি হামলায় খামেনির একজন উপদেষ্টাও নিহত হন।

মার্কিন প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘ইরানিরা কি এখন পর্যন্ত কোনো আমেরিকানকে হত্যা করেছে? না। যতক্ষণ না তারা তা করছে, ততক্ষণ আমরা রাজনৈতিক নেতৃত্বের পেছনে লাগার বিষয়ে, এমনকি আলাপও করছি না।’

খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রোববার ফক্স নিউজকে বলেন, ‘কখনো আলাপই হয়নি, এমন অনেক বিষয় নিয়েও খবর প্রকাশ করা হয়েছে। আমি সে বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।’

ফক্সের ‘স্পেশাল রিপোর্ট উইথ ব্রেট বেয়ার’ অনুষ্ঠানে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যা করার দরকার, তা করি।’

নেতানিয়াহু বলেন, ইরানে ইসরায়েলের সামরিক হামলার একটি ফল হতে পারে সরকার পরিবর্তন। তেহরানের সৃষ্ট ‘অস্তিত্বের হুমকি’ দূর করতে ইসরায়েল যা যা প্রয়োজন, তা-ই করবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে চলমান এই সংঘাত ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেড়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, এটি সহজেই শেষ করা যেতে পারে। একই সঙ্গে ইরানকে সতর্ক করে তিনি বলেছেন, যদি ইরান কোনো আমেরিকান লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে, তবে যুক্তরাষ্ট্রও এ সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ