সমকাল: বাংলাদেশে এখন স্বর্ণের দর ঘন ঘন পরিবর্তন হচ্ছে। কী কারণে দামে এত অস্থিরতা?

সমিত ঘোষ: স্বর্ণের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক পরিবর্তনশীল। কারণ, স্বর্ণ একটি সেভিংসের বিষয়। এটি বিভিন্ন পুঁজিবাজারে বা কমোডিটি মার্কেটে প্রভাবশালী দেশগুলো কেনা-বেচা করে থাকে। এ কারণে দাম প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়। স্বর্ণ একটি স্থায়ী সম্পদ। এটি তার বাহকের অর্থের নিরাপত্তা হিসেবে কাজ করে। বিশ্ববাজারে পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশেও দর পরিবর্তন হয়। এরই প্রতিফলন হিসেবে গত মাসে দেশে বেশ কয়েক বার দামের পরিবর্তন হয়েছে। 

সমকাল: আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দর পরিস্থিতি এখন কেমন? ভবিষ্যৎ কেমন হবে বলে মনে করছেন?

সমিত ঘোষ: বৈশ্বিক নানা পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দামে ঊর্ধ্বগতি রয়েছে। ইতোমধ্যে স্বর্ণের আউন্স তিন হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বৈশ্বিক সংস্থা গোল্ডম্যান স্যাকস ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের অভিমত বলছে, আগামী কয়েক বছরে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম সাড়ে ৪ হাজার ডলারে পৌঁছাতে পারে। যদি এই ধারণা সত্যি হয় তাহলে অবশ্যই এই দর হবে অতি উচ্চমুখী ও অস্বাভাবিক। 

সমকাল: ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম বেশি কেন?

সমিত ঘোষ: প্রতিটি দেশের যে কোনো পণ্যের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে সে দেশের মুদ্রার মান এবং পণ্যটির সরবরাহ ব্যবস্থা গুরুত্ব বহন করে। ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের চেয়ে বাংলাদেশে দাম তুলনামূলকভাবে আংশিক বেশি। এর কারণ হলো, বাংলাদেশে বৈধপথে স্বর্ণ আসার ক্ষেত্রে রয়েছে উচ্চ হারের কর ব্যবস্থা, যা ভরিপ্রতি ৪ হাজার টাকা। দুবাইয়ের সঙ্গে তুলনা করলে দাম অতি উচ্চ। দেশে স্বর্ণ বৈধপথে আনার অনাগ্রহের কারণে দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে মিল রাখতে হয়। টাকার মানের দিক দিয়েও বিবেচনা করতে হয়। ফলে বাংলাদেশে দাম আংশিক বেশি হয়। তবে দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাজুস আরও স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করছে। 

সমকাল: বর্তমানে কোন মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে বাজুস দাম নির্ধারণ করে?
সমিত ঘোষ: বাজুসের দাম নির্ধারণের সময় তেজাবি স্বর্ণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক দামকেও বিবেচনায় নিয়ে থাকে। তেজাবি স্বর্ণের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে ও স্বর্ণ আনতে যে কর পরিশোধ করতে হয় সেটি হিসাব করা হয়। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে দর কত তা পর্যবেক্ষণ করা হয়। এ সব বিষয় মিলিয়ে দেশে দাম নির্ধারণ করা হয়।

সমকাল: দাম বাড়ার কারণে বিক্রির ওপর কোনো প্রভাব পড়ছে কি? 
সমিত ঘোষ: দাম অত্যধিক বেড়ে যাওয়ার কারণে গ্রাহকের ক্রয়সীমার বাইরে চলে গেছে স্বর্ণের গহনা। তাছাড়া মানুষের চাহিদার বিবেচনায় স্বর্ণ অপেক্ষাকৃত কম প্রয়োজনীয়। খুব বেশি দরকার না হলে মানুষ সাধারণত স্বর্ণের গহনা কেনে না। কয়েক বছর ধরে এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এতে বিক্রি নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। করোনা অতিমারি দেখা দেওয়ার পর থেকে গত পাঁচ বছরে দাম বাড়ার কারণে বিক্রি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে দেশীয় বাজারে। 

সমকাল: গত পাঁচ বছরে স্বর্ণের কোন শ্রেণির ক্রেতা বেশি ছিল? মধ্যবিত্ত, না কি উচ্চবিত্ত?
সমিত ঘোষ: বিগত ৫ বছর বিবেচনায় স্বর্ণ সম্পূর্ণ রূপে উচ্চবিত্তের হাতে চলে গেছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণি কেনা কমিয়েছে। নিম্নবিত্তরা স্বর্ণের গহনাকে এখন দুর্লভ বস্তু মনে করে। এভাবে ক্রেতা কমে যাওয়ায় এর প্রভাব সরাসরি পড়েছে দোকানিদের ওপর। 

সমকাল: আপনার দীর্ঘ ব্যবসা জীবনের অভিজ্ঞতায় আলোকে জানতে চাই কখন এবং কীভাবে স্বর্ণে বিনিয়োগ করা উচিত? 

সমিত ঘোষ: কখন বিনিয়োগ করা উচিত এটি বলা মুশকিল। বিগত সময়ের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতার আলোকে আমি মনে করি, সামর্থ্য অনুযায়ী সবার স্বর্ণে বিনিয়োগ করা উচিত। স্বর্ণে বিনিয়োগ অবশ্যই একটি সুলভ দিক। একমাত্র এ ধাতুটি গ্রাহককে ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দিতে পারে। স্বর্ণের মতো এত তাড়াতাড়ি কোনো পণ্য তার গ্রাহককে নগদ টাকা দিতে পারে না। একে টাকায় রূপান্তর করা সহজ, আবার তা ব্যবহারেরও যোগ্য।

সমকাল: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
সমিত ঘোষ: আপনাকেও ধন্যবাদ।

 সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জসিম উদ্দিন বাদল

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স বর ণ র দ ম ব যবস র ওপর সমক ল

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের মধুসহ ২৪ পণ্য পেল জিআই সনদ

মণিপুরি শাড়ি, গামছা, লিচু, আম, মধুসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ২৪টি পণ্যকে জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) নিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সভায় এই সনদ দেওয়া হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। 

সভায় শিল্প সচিব ওবায়দুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচক ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। মেধাসম্পদ দিবসের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিল্পী, অভিনেত্রী ও সংগীত পরিচালক আরমিন মুসা। 

সভায় শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, দেশের প্রথম পণ্য হিসেবে জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে জামদানি শাড়ি। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫৫টি পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেল। জিআই পণ্য দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে লালন করে। এই পণ্যের বাজারজাতকারীদের ন্যায্য স্বীকৃতি এবং পারিশ্রমিক নিশ্চিত করতে হবে। ফলে স্থানীয় উদ্যোক্তা বা উৎপাদনকারীদের ক্ষমতায়ন হবে।

এ সময় তিনি জিআই পণ্যের তালিকা সমৃদ্ধ করার পর সেগুলো বাণিজ্যিকভাবে বিকশিত করার আহ্বান জানান। 

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক উৎসব গান। এ দেশের মানুষ গানের মাধ্যমে ভাব প্রকাশ করে, যা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে। সংগীত নিয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় বড় প্রকল্পের কাজ করছে। দেশের মানুষ কিছু দিনের মধ্যে তা দেখতে পাবে। সংগীতের কপিরাইট নিশ্চিত করতে হবে। 

নিবন্ধন সনদপ্রাপ্ত ২৪টি ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হলো– নরসিংদীর লটকন, মধুপুরের আনারস, ভোলার মহিষের দুধের কাঁচা দই, মাগুরার হাজরাপুরী লিচু, সিরাজগঞ্জের গামছা, সিলেটের মণিপুরি শাড়ি, মিরপুরের কাতান শাড়ি, ঢাকাই ফুটি কার্পাস তুলা, কুমিল্লার খাদি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টি, গোপালগঞ্জের ব্রোঞ্জের গয়না, সুন্দরবনের মধু, শেরপুরের ছানার পায়েস, সিরাজগঞ্জের লুঙ্গি, গাজীপুরের কাঁঠাল, কিশোরগঞ্জের রাতাবোরো ধান, অষ্টগ্রামের পনির, বরিশালের আমড়া, কুমারখালীর বেডশিট, দিনাজপুরের বেদানা লিচু, মুন্সীগঞ্জের পাতক্ষীর, নওগাঁর নাকফজলি আম, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের জামুর্কির সন্দেশ এবং ঢাকাই ফুটিকার্পাস তুলার বীজ ও গাছ। 

সভায় এসব জিআই সনদ বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড, সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক ও নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার নাকফজলি আমচাষি সমবায় সমিতির কাছে হস্তান্তর করা হয়। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ