দাম বাড়ায় পাঁচ বছরে দেশে স্বর্ণের বিক্রি কমেছে ৫০ শতাংশ
Published: 25th, April 2025 GMT
সমকাল: বাংলাদেশে এখন স্বর্ণের দর ঘন ঘন পরিবর্তন হচ্ছে। কী কারণে দামে এত অস্থিরতা?
সমিত ঘোষ: স্বর্ণের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক পরিবর্তনশীল। কারণ, স্বর্ণ একটি সেভিংসের বিষয়। এটি বিভিন্ন পুঁজিবাজারে বা কমোডিটি মার্কেটে প্রভাবশালী দেশগুলো কেনা-বেচা করে থাকে। এ কারণে দাম প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়। স্বর্ণ একটি স্থায়ী সম্পদ। এটি তার বাহকের অর্থের নিরাপত্তা হিসেবে কাজ করে। বিশ্ববাজারে পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশেও দর পরিবর্তন হয়। এরই প্রতিফলন হিসেবে গত মাসে দেশে বেশ কয়েক বার দামের পরিবর্তন হয়েছে।
সমকাল: আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দর পরিস্থিতি এখন কেমন? ভবিষ্যৎ কেমন হবে বলে মনে করছেন?
সমিত ঘোষ: বৈশ্বিক নানা পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দামে ঊর্ধ্বগতি রয়েছে। ইতোমধ্যে স্বর্ণের আউন্স তিন হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বৈশ্বিক সংস্থা গোল্ডম্যান স্যাকস ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের অভিমত বলছে, আগামী কয়েক বছরে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম সাড়ে ৪ হাজার ডলারে পৌঁছাতে পারে। যদি এই ধারণা সত্যি হয় তাহলে অবশ্যই এই দর হবে অতি উচ্চমুখী ও অস্বাভাবিক।
সমকাল: ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম বেশি কেন?
সমিত ঘোষ: প্রতিটি দেশের যে কোনো পণ্যের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে সে দেশের মুদ্রার মান এবং পণ্যটির সরবরাহ ব্যবস্থা গুরুত্ব বহন করে। ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের চেয়ে বাংলাদেশে দাম তুলনামূলকভাবে আংশিক বেশি। এর কারণ হলো, বাংলাদেশে বৈধপথে স্বর্ণ আসার ক্ষেত্রে রয়েছে উচ্চ হারের কর ব্যবস্থা, যা ভরিপ্রতি ৪ হাজার টাকা। দুবাইয়ের সঙ্গে তুলনা করলে দাম অতি উচ্চ। দেশে স্বর্ণ বৈধপথে আনার অনাগ্রহের কারণে দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে মিল রাখতে হয়। টাকার মানের দিক দিয়েও বিবেচনা করতে হয়। ফলে বাংলাদেশে দাম আংশিক বেশি হয়। তবে দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাজুস আরও স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করছে।
সমকাল: বর্তমানে কোন মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে বাজুস দাম নির্ধারণ করে?
সমিত ঘোষ: বাজুসের দাম নির্ধারণের সময় তেজাবি স্বর্ণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক দামকেও বিবেচনায় নিয়ে থাকে। তেজাবি স্বর্ণের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে ও স্বর্ণ আনতে যে কর পরিশোধ করতে হয় সেটি হিসাব করা হয়। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে দর কত তা পর্যবেক্ষণ করা হয়। এ সব বিষয় মিলিয়ে দেশে দাম নির্ধারণ করা হয়।
সমকাল: দাম বাড়ার কারণে বিক্রির ওপর কোনো প্রভাব পড়ছে কি?
সমিত ঘোষ: দাম অত্যধিক বেড়ে যাওয়ার কারণে গ্রাহকের ক্রয়সীমার বাইরে চলে গেছে স্বর্ণের গহনা। তাছাড়া মানুষের চাহিদার বিবেচনায় স্বর্ণ অপেক্ষাকৃত কম প্রয়োজনীয়। খুব বেশি দরকার না হলে মানুষ সাধারণত স্বর্ণের গহনা কেনে না। কয়েক বছর ধরে এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এতে বিক্রি নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। করোনা অতিমারি দেখা দেওয়ার পর থেকে গত পাঁচ বছরে দাম বাড়ার কারণে বিক্রি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে দেশীয় বাজারে।
সমকাল: গত পাঁচ বছরে স্বর্ণের কোন শ্রেণির ক্রেতা বেশি ছিল? মধ্যবিত্ত, না কি উচ্চবিত্ত?
সমিত ঘোষ: বিগত ৫ বছর বিবেচনায় স্বর্ণ সম্পূর্ণ রূপে উচ্চবিত্তের হাতে চলে গেছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণি কেনা কমিয়েছে। নিম্নবিত্তরা স্বর্ণের গহনাকে এখন দুর্লভ বস্তু মনে করে। এভাবে ক্রেতা কমে যাওয়ায় এর প্রভাব সরাসরি পড়েছে দোকানিদের ওপর।
সমকাল: আপনার দীর্ঘ ব্যবসা জীবনের অভিজ্ঞতায় আলোকে জানতে চাই কখন এবং কীভাবে স্বর্ণে বিনিয়োগ করা উচিত?
সমিত ঘোষ: কখন বিনিয়োগ করা উচিত এটি বলা মুশকিল। বিগত সময়ের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতার আলোকে আমি মনে করি, সামর্থ্য অনুযায়ী সবার স্বর্ণে বিনিয়োগ করা উচিত। স্বর্ণে বিনিয়োগ অবশ্যই একটি সুলভ দিক। একমাত্র এ ধাতুটি গ্রাহককে ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দিতে পারে। স্বর্ণের মতো এত তাড়াতাড়ি কোনো পণ্য তার গ্রাহককে নগদ টাকা দিতে পারে না। একে টাকায় রূপান্তর করা সহজ, আবার তা ব্যবহারেরও যোগ্য।
সমকাল: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
সমিত ঘোষ: আপনাকেও ধন্যবাদ।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জসিম উদ্দিন বাদল
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স বর ণ র দ ম ব যবস র ওপর সমক ল
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে শনিবার
ঢাকায় দুই দিনব্যাপী অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে আগামী শনিবার। এতে অটোমোবাইল, কৃষি যন্ত্রপাতিসহ হালকা প্রকৌশল খাতের ২৬টি স্টল থাকবে। পাশাপাশি শিল্পের সহায়ক প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকবে আরও ১২টি। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
বাংলাদেশ অটোমোবাইলস অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ও অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই প্রদর্শনীর আয়োজন করছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকায় এডিসন প্রাইম ভবনের ছাদে এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। এই ভবনেই বিসিআইয়ের কার্যালয় অবস্থিত।
আজ বৃহস্পতিবার বিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী নিয়ে বিস্তারিত জানান চেম্বারটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী, বিসিআইয়ের পরিচালক মো. শাহেদ আলম, এস এম শাহ আলম, জিয়া হায়দার প্রমুখ।
বিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, হালকা প্রকৌশল খাতে বাংলাদেশে বর্তমানে ছোটবড় প্রায় ৫০ হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই খাতে কাজ করেন ১০ লাখ মানুষ। হালকা প্রকৌশল খাতে স্থানীয় বাজার ১২ বিলিয়ন ডলারের হলেও দেশীয় উৎপাদকেরা অর্ধেক পূরণ করতে পারছেন। তা ছাড়া হালকা প্রকৌশল খাতের বৈশ্বিক বাজারের আকার প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলার। তিনি আরও বলেন, তৈরি পোশাক খাত আর বেশি মূল্য সংযোজন করতে পারবে না। ফলে আমাদের অর্থনীতিকে টেকসই করতে হলে আমাদের অন্য খাতে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে হালকা প্রকৌশল খাত পারে বড় সম্ভাবনার।
অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, প্রতিবছর কৃষিজমি কমছে। কৃষকের বয়স বাড়ছে, তার কারণ তরুণেরা খুব কম কৃষিকাজে আসছেন। বিশ্বের অনেক দেশেই মোট জনগোষ্ঠীর ১০ শতাংশের কম কৃষিকাজে নিয়োজিত। ১০ শতাংশ মানুষ বাকি ৯০ শতাংশের জন্য খাদ্য জোগান দিচ্ছে। সে কারণে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। বাংলাদেশেও কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। তবে বড় অংশই আমদানি করতে হচ্ছে।
আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ১২০০ থেকে ১৫০০ কোটি টাকার কৃষি যন্ত্রপাতির বাজার আছে। তার মধ্যে দেশীয় কোম্পানিগুলো সরবরাহ করছে মাত্র ৪০০ থেকে ৪৫০ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ। নীতিসহায়তা পেলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।