চট্টগ্রামে দেড় যুগ আগে কালভার্ট নির্মাণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) প্রকৌশলীদের সরেজমিন পরিমাপে মেলে অনিয়মের প্রমাণ। কাজ কম করে বেশি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে সেই সময় চারটি মামলা করে দুদক। কিন্তু একই কাজের পরিমাপ করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকৌশলীরা কোনো অনিয়ম খুঁজে পাননি বলে প্রতিবেদন দিয়েছেন গত বছর। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সম্প্রতি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে দুদক। এতে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন।
মামলার ১৩ বছর পর হঠাৎ এক আসামির আবেদনে দুদক সাড়া দেওয়ার পরই ফের পরিমাপ হলো এবং কোনো অনিয়ম না হওয়ার সার্টিফিকেট মিলল। ‘বিতর্কিত’ কাজকে সঠিক বলে সার্টিফিকেট দেন এলজিইডির প্রকৌশলীরা।
এর আগে প্রতিটি মামলার ক্ষেত্রে দুদকের পাঁচ থেকে আট কর্মকর্তা তদন্ত করেছেন। এজাহারে দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে মামলা করা হলেও তদন্ত শেষে প্রমাণ না মেলার কথা বলে সম্প্রতি চার মামলার ১৯ আসামিকে দুর্নীতির দায় থেকে অব্যাহতি দিতে সুপারিশ করেছেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা।
২০০৬-০৭ অর্থবছরের প্রকল্পের কাজের ক্ষেত্রে সওজ না এলজিইডি– কোনো সংস্থার পরিমাপ প্রতিবেদন সঠিক, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সওজ প্রকল্পের কাজ শেষ করার পরপরই পরিমাণ করে অনিয়ম ও কাজে গরমিলের প্রমাণ পায়। যে পরিমাণ কাজ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো, তার অনেক বেশি অর্থ তুলে নিয়ে আত্মসাতের চিত্র তুলে ধরা হয়। দীর্ঘদিন পার হওয়ার পর এলজিইডির প্রকৌশলীরা তাদের প্রতিবেদনে কালভার্টগুলোর নিচে পানি থাকায় বেজমেন্টসহ অন্যান্য দিক পরিমাপ করতে না পারার কথা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করলেও প্রকল্পের প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ সঠিক পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদন দিয়েছেন। তারা বলেছেন, যে পরিমাণ কাজ হয়েছে, তার চেয়ে বেশি অর্থ তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। এতেই প্রশ্ন উঠেছে কাদের প্রতিবেদন সঠিক। এ নিয়ে বিস্মিত বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীরা।
প্রবীণ প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, এক কাজে দুই সংস্থার প্রকৌশলীর মত একই হওয়ার কথা। মনে হচ্ছে, আসামিদের কোনো একটি সূত্র ধরে অব্যাহতি দিতে হবে, তাই এমন প্রতিবেদন হয়েছে।
নগরীর অক্সিজেন জংশন থেকে কাপ্তাই রোড পর্যন্ত সংযোগ সড়কের ২০ লটের ক্রস কালভার্ট নির্মাণ শেষে ৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বিল উত্তোলন করেন ঠিকাদার মেসার্স মদিনা ট্রেডিং। ২০০৬-০৭ অর্থ বছরের এই কাজে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ২০০৮ সালে সওজের দুই প্রকৌশলী কালভার্ট পরিমাপ করে কাজের তুলনায় ৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকার বেশি উত্তোলন করার প্রমাণ পান। এ ঘটনায় দুদক বাদী হয়ে সিডিএর তিন প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মামলা করে। ২০২৩ সালে আসামি সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস মামলার কিছু অসংগতি তুলে ধরে ভিন্ন কোনো প্রকৌশল বিভাগ দিয়ে কালভার্টটি পুনরায় পরিমাপ করার আবেদন করেন। তাঁর আবেদন গ্রহনণ করার পর এলজিইডির চার প্রকৌশলী দিয়ে নতুন করে পরিমাপ করানো হয়। পুনঃপ্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘২০০৬ সালে নির্মাণ করা কালভার্টটির ওপর দিয়ে বর্তমানে গাড়ি নিরাপদে চলাচল করছে। প্রকৌশল গাইডলাইন অনুযায়ী নির্মাণ করা হয়েছে বলে বর্তমান কমিটির কাছে প্রতীয়মান হয়। পরিমাপ গ্রহণের সময় কালভার্টের নিচে পানি থাকায় ওই অংশ যথাযথভাবে পরিমাপ করা সম্ভব হয়নি। সবকিছু দেখে এখানে অনিয়ম দেখা যায়নি।’
তদন্ত কর্মকর্তা এ প্রতিবেদন আমলে নিয়ে মামলার আসামি ঠিকাদার হাজি মোহাম্মদ ইসমাইল, সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস, ইকবাল হোসেন মজুমদার ও মো.
এ ছাড়া এলজিইডির প্রকৌশলীদের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে অন্য তিনটি মামলার মধ্যে সিডিএর একই প্রকল্পের একটি ক্রস কালভার্ট নির্মাণে সওজের প্রতিবেদনে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৯০৪ টাকা আত্মসাতের দায় থেকে ঠিকাদার ইসহাক চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস, ইকবাল হোসেন মজুমদার, মো. ইলিয়াছ ও জাহাঙ্গীর আলমকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়। এই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ৫২ হাজার ৫৪১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা আরেকটি মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতি দিতে সুপারিশ করা হয়। ৪ লাখ ৯ হাজার ৪০৬ টাকা আত্মসাতের অন্য একটি মামলা থেকেও ঠিকাদার শামসুল আলম এবং প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসসহ আসামিদের অব্যাহতির সুপারিশ করেছে দুদক।
এ প্রসঙ্গে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এর উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) তিন-চারটি দুর্নীতি মামলার তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের সুপারিশ আমি যোগদানের আগেই করা হয়েছিল। কমিশন তা অনুমোদন করায় আসামিদের অব্যাহতির সুপারিশ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হচ্ছে। এর বেশি কিছু আমার জানা নেই।’
অন্য একটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মো. ফজলুল বারী বলেন, এলজিইডির প্রকৌশলীদের পরিমাপ প্রতিবেদনে অনিয়মের প্রমাণ না পাওয়ায় মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প র তদন ত কর কর মকর ত র পর ম প স ড এর
এছাড়াও পড়ুন:
অফিসে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে জুতাপেটা করার অভিযোগ
টাঙ্গাইলের মধুপুরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশালীন আচরণের অভিযোগে নারী অভিভাবকরা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বারকে জুতাপেটা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার দুপুরে মধুপুরের আকাশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, গত বছরের এপ্রিলে আকাশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন আব্দুল জব্বার। গতকাল দুপুরে হঠাৎ করেই কয়েকজন নারী অভিভাবক তাঁর কক্ষে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলা করেন। এ সময় সহকারী শিক্ষক সাজেদা বেগমসহ কয়েকজন তাদের হাত থেকে শিক্ষককে রক্ষার চেষ্টা করেন। এতে তাদের ওপরও ক্ষিপ্ত হন হামলাকারীরা। পরে স্থানীয় কয়েকজন যুবক গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় স্থানীয়রা বিদ্যালয় মাঠে সমবেত হয়ে প্রধান শিক্ষকের বিচার দাবি করেন।
হামলায় অংশ নেওয়া জাহিন ওরফে জাহি ও ঝুমা বেগম বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বার পড়ানোর সময় মেয়েদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছেন। একই অভিযোগ করেন সুমি বেগম নামে আরেকজন।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাজেদা বেগম বলেন, ‘আমি বিষয়টি সকালেই জানতে পেরে স্যারকে জানিয়েছিলাম। স্যার তখন অফিস কক্ষেই ছিলেন। আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই হামলাকারীরা অফিসে প্রবেশ করে হামলা করেন। এক পর্যায়ে জুতা দিয়ে পেটাতে থাকেন। আমরা অনেক কষ্টে তাঁকে হামলাকারীদের কবল থেকে উদ্ধার করি।’
মারধরের শিকার প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বার বলেন, ‘আমার মেয়েকে স্থানীয় এক যুবক উত্ত্যক্ত করত। তাকে বিভিন্ন সময়ে বোঝানো হয়েছে। কথা না শোনায় তাকে শাসন করা হয়েছিল। সেই ছেলে ষড়যন্ত্র করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তদন্ত করলে সত্য ঘটনা বেরিয়ে আসবে।’ তিনি বলেন, ‘আমি শিক্ষার্থীদের সন্তানের মতো দেখি। সেভাবেই আদর-শাসন করি। তদন্ত করে সঠিক বিষয়টি বের করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
মধুপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের ভাষ্য, বিষয়টি জেনে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম ও নাজমুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।