শুল্ক আলোচনা নিয়ে চীন–যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, কাটছে না অনিশ্চয়তা
Published: 26th, April 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের বিষয়ে সুর নরম করেছিলেন। বলেছিলেন, চীনের সঙ্গে আলোচনা হবে। শুল্ক নিয়ে এই অচলাবস্থারও নিরসন হবে। কিন্তু এখন এ প্রসঙ্গে চীনের বক্তব্য নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সুর নরম হওয়ার পর সারা বিশ্বের শেয়ারবাজারে আবার চাঙা ভাব এসেছিল। কিন্তু গতকাল শুক্রবার বেইজিং স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এখন পর্যন্ত তাদের কথা হয়নি; যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ কথা অস্বীকার করেছেন। এই ঘটনায় আবার নড়েচড়ে বসেছেন বিনিয়োগকারীরা। তাঁরা মনে করছেন, এখনো স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার সময় আসেনি। খবর রয়টার্স ও সিএনবিসির
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুয়ো জিয়াকুন বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্কসংক্রান্ত সমাধান নিয়ে কথা হয়নি। এই শুল্কযুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র শুরু করেছে। এটা যদি অবশ্যম্ভাবী হয়, তা হলে চীন লড়াই করে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র কথা বলতে চাইলে চীনের দরজা খোলা। সেই আলোচনা হতে হবে সাম্য, সম্মান ও পারস্পরিক মুনাফার ভিত্তিতে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, দুই দেশের আলোচনাসংক্রান্ত খবরের বাস্তব ভিত্তি নেই।
চীনের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, চীনের এই বক্তব্য ঠিক নয়। বৃহস্পতিবার সকালেও দুই দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। কারা এই আলোচনায় অংশ নিয়েছে, তা বড় বিষয় নয়। তবে আলোচনায় যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁদের নাম-পরিচয় পরবর্তী সময়ে প্রকাশ করা হতে পারে। কিন্তু বিষয় হলো, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা চলছে।
এদিকে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হে ইয়াডং সিএনবিসিকি বলেন, আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যা বলা হয়েছে, তা বাতিল করে দিতে হবে। তারা যদি প্রকৃত অর্থেই চীনের সঙ্গে আলোচনা চায়, তাহলে চীনের বিষয়ে একতরফা যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেগুলো বাতিল করতে হবে।
ঘটনাচক্রে গতকালই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট দাবি করেছেন, ভারতের সঙ্গে প্রাথমিক বাণিজ্যচুক্তি চূড়ান্ত হতে পারে। ভারতের শুল্ক অত বেশি নয়; অন্যান্য বাধাও কমেছে। সরকারি ভর্তুকিও বেশি নয়। ফলে তাদের সঙ্গে চুক্তি করা অপেক্ষাকৃত সহজ।
এদিকে ট্রাম্পের শুল্কনীতির বিরুদ্ধে নিউইয়র্কের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতে আবেদন জানিয়েছে নিউইয়র্ক, কলোরাডো, অ্যারিজোনা, ইলিনয়সহ যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ১২টি অঙ্গরাজ্য। তাদের বক্তব্য, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ ‘বেআইনি’। যে কারণে অর্থ ব্যবস্থায় সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ঘরে-বাইরে চাপ বাড়ছে ট্রাম্পের ওপর।
বিশ্বের সব দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের অংশ হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন চীনের পণ্যে ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যার প্রতিক্রিয়ায় চীন মার্কিন পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। কিন্তু সব দেশের পণ্যে এই শুল্ক স্থগিত করা হলেও চীনের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। এ অবস্থায় বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তারা ২০২৫ সালের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৩ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ দশমিক ৮ শতাংশ করেছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
লবণ শ্রমিকদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়
“প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে কাজ করি। লবণ তুলি, বস্তা ভরি। কিন্তু যে মজুরি পাই, তা দিয়ে এক বেলার চাল-ডালও কেনা যায় না। লবণ চাষের কাজ করলেও আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়।”
এ কথা কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার তাবলেরচর এলাকার লবণ শ্রমিক জাহেদ আলমের। হাজারো লবণ শ্রমিক দিনভর কড়া রোদে ঘাম ঝরালেও মিলছে না ন্যায্য মজুরি। নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন জাহেদ আলমের মতো শত শত লবণ শ্রমিক।
উত্তর ধুরুংয়ের লবণ চাষি রশীদ আহমদ বলেন, “এবার সাড়ে ৫ কানি জমিতে লবণ চাষ করেছি। এই বছর আবহাওয়া ভালো ছিল, উৎপাদনও হয়েছে। কিন্তু দাম পড়ে যাওয়ায় আমরা লোকসানে যাচ্ছি। প্রতিমণ লবণের উৎপাদন খরচ পড়ে ৩৫০ টাকার মতো, অথচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৮৫ টাকায়। এই লোকসান শ্রমিকদের মজুরিতেও প্রভাব পড়েছে।”
তিনি জানান, মজুরি দিতে না পারায় একদিকে শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে চাষিরাও হতাশ হয়ে পড়ছেন।
আরমান হোসেন নামে আরেক শ্রমিক বলেন, “লবণের কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। লবণের দাম কম পেলেই চাষিরা আমাদের পারিশ্রমিকের ওপর লোকসান চাপিয়ে দেয়। এতে আমরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হই। এই অনিয়ম দূর হোক।”
চাষিরা বলছেন, একদিকে জমির ইজারা, পলিথিন, লবণ পরিবহন, শ্রমিক মজুরি-সব খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে বাজারে সিন্ডিকেট করে দাম নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রতি মণ লবণে তারা ১৭০ টাকার মতো লোকসান গুণছেন। এই লোকসানের কারণে লবণ শ্রমিকরাও দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।
লেমশীখালীর চাষি বেলাল উদ্দিন আকাশ বলেন, ‘‘গত বছর এই সময় প্রতি মণ লবণ বিক্রি করেছি ৪৫০ টাকায়। এখন পাই ১৮৫ টাকা। এতে শ্রমিকের মজুরি দিতেও আমরা হিমশিম খাচ্ছি।”
চাষি আবুল বশর ও সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘সিন্ডিকেট করেই দাম নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে যাতে লবণ উৎপাদন কমে যায়। পরে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করার সুযোগ তৈরি হয়। অথচ এতে মাঠের হাজারো শ্রমিকের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে।”
মহেশখালী লবণ চাষি ঐক্য সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘‘মজুরি না পেয়ে অনেক শ্রমিক লবণের মাঠ ছাড়ছেন। এইভাবে চলতে থাকলে শ্রমিক সংকট হবে।”
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, “চাষিদের ন্যায্য দাম না পাওয়ার কারণে উৎপাদনে অনীহা দেখা দিচ্ছে। এর ফলে শ্রমিকদেরও চাহিদা কমে যাচ্ছে। বাজারে দাম কমে যাওয়ার পেছনের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার জেলার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, টেকনাফ এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় প্রায় ৬৮ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এসব অঞ্চলে উৎপাদিত হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ। মৌসুম শেষে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন, যা দেশের বার্ষিক চাহিদার সমান।