ইস্টার সানডের আগের দিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন খ্রিষ্টানদের ছুটির দিন উপলক্ষে সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন। অন্যবারের মতো এবারও তিনি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন। ইউক্রেনীয় গণমাধ্যমের খবর জানাচ্ছে, রাশিয়া ডোন হামলা ও গোলাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছিল। যথারীতি ইউক্রেনের সাধারণ নাগরিকদেরও লক্ষ্যবস্তু করেছে তারা।

পুরোটা সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অব্যাহতভাবে বলে আসছেন যে শান্তি অর্জিত হবে। এমনকি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক রুবিও যখন বলছেন যে অগ্রগতি না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতার পথ থেকে সরে আসতে পারে। তারপরও ট্রাম্প আশাবাদ প্রকাশ করে যাচ্ছেন যে চুক্তি সম্ভব।

ইস্টার সানডেতে ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, ‘আশা করা যায়, রাশিয়া ও ইউক্রেন এ সপ্তাহেই চুক্তিতে পৌঁছাবে।’

এক সপ্তাহ আগে রাশিয়া ইউক্রেনের সামি শহরে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা চালায়। ২ শিশুসহ ৩৪ জন নিহত হন, আহত হন আরও কয়েক ডজন। এমন রক্তাক্ত হামলাও মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করতে পারেনি। তিনি এটাকে ভুল বলে বর্ণনা করেছেন।

দায়িত্ব নেওয়ার তিন মাস পর এটা এখন স্পষ্ট যে ইউক্রেনে ট্রাম্প নাটকীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁকে এখন অনুধাবন করতেই হবে যে সাহসী প্রতিশ্রুতি দেওয়া সহজ কিন্তু বাস্তবায়ন করা কঠিন। তিনি ২৪ ঘণ্টায় যুদ্ধ শেষ করতে পারেননি, ১০০ দিনেও সেটা পারবে না।

ট্রাম্পের নেতৃত্বে ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতা করার তাড়নাটা ফিকে হয়ে গেছে এবং এখানে তাদের কৌশলটাও অপরিষ্কার। একজন প্রেসিডেন্ট যিনি নিজেকে ‘চুক্তি প্রণেতা’বলে গর্ব প্রকাশ করতেন, তাঁকে এখন সিদ্ধান্তহীন বলে মনে হচ্ছে।

এটা যদি চলতে থাকে তাহলে ট্রাম্প দুই ক্ষেত্রে ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বেন। এক.

মধ্যস্ততাকারী হিসেবে, দুই. মিত্র হিসেবে। তাঁর বর্তমান ভূমিকা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রকে দুর্বল করছে না, রাশিয়াকেও আগ্রাসন চালাতে উৎসাহিত করছে।

এখন পর্যন্ত পুতিনের অবস্থানের কোনো বদল হয়নি। তিনি ক্রিমিয়া ও ইউক্রেনের যে চারটি অঞ্চল রুশ সেনাবাহিনী আংশিক দখলে নিয়েছে, তার স্বীকৃতি দাবি করেছেন। কিয়েভের জন্য ন্যাটোর সদস্যপদ নয় ও ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর আকার ছোট করা। তিনি ইউক্রেনে সরকার পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন। যুদ্ধ চলাকালে ইউক্রেনে নির্বাচন দেওয়ার দাবিও তিনি জানিয়েছেন।

পুতিন বুঝতে পারছেন যে তিনি শক্তিশালী অবস্থান থেকে দর-কষাকষি করছেন এবং সে কারণেই কোনো ধরনের সমঝোতা করতে অস্বীকার করছেন তিনি। ট্রাম্পের কাছে এখন এমন কিছু নেই যে এখানে তিনি সুবিধা করতে পারেন। এ কারণেই তাঁর কৌশল হলো ইউক্রেনকে চাপ দিয়ে রাশিয়ার কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করানো। ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তাসংক্রান্ত নীতি পরিবর্তন করে তিনি পুরো বিষয়টিকে আরও খারাপ করে তুলেছেন।

প্রথমে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন ইউক্রেনকে আর অস্ত্র, গোলাবারুদ ও গোয়েন্দা তথ্য দেবেন না। পরে অবশ্য তিনি তাঁর অবস্থান কিছুটা পাল্টান। পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে অনুমোদন দেওয়া সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু নতুন কোনো প্যাকেজ অনুমোদন দেবেন না বলে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন।

ইউক্রেনের জন্য পরাজয় কোনো বিকল্প নয়। এই দেশ এখনো দাঁড়িয়ে আছে এবং ভবিষ্যতে লড়াই চালিয়ে যাবে, তার কারণ হলো, এর স্বাধীনতা ও মুক্তি ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এমনকি ট্রাম্প যদি একটা ‘খারাপ চুক্তি’ মেনে নেওয়ার জন্য ইউক্রেনের ওপর আরও চাপ দেন, তারপরও ইউক্রেনের কোনো নেতা এ ধরনের চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন না। কারণ, এর মানে হলো রাজনৈতিকভাবে ধ্বংস হওয়া।

এর মানে হচ্ছে, খুব শিগগির ইউক্রেনের গোলাবারুদের মজুত ফুরিয়ে আসবে। রাশিয়া এটা ভালো করেই জানে, সে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর–কষাকষির সুযোগে দেশটি সময়ক্ষেপণ করছে।

ইউক্রেনের সেনাবাহিনী যখন তাদের গুরুত্বপূর্ণ রসদ ফুরিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় দিন পার করছে, তখন রাশিয়া নতুন করে তাদের সেনাবাহিনীতে বিপুলসংখ্যক সেনা নিয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাশিয়া তাদের সেনাবাহিনীতে ১ লাখ ৬০ হাজার নতুন সেনা নিয়োগ দিচ্ছে। এর অর্থ হচ্ছে তারা যুদ্ধের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে তীব্র করবে। ইউক্রেনের কমান্ডাররা সতর্ক করেছেন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই কয়েকটি ফ্রন্টে বড় ধরনের আক্রমণ করবে রাশিয়া।

পুতিনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ট্রাম্প প্রশাসনের স্ব-আরোপিত ‘শান্তি-প্রতিষ্ঠার’ উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে নিজের সুবিধায় কাজে লাগানো। পুতিনের কৌশল হলো, ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তার ভান্ডার নিঃশেষ হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির আলোচনাকে টেনে নিয়ে যাওয়া, যাতে রাশিয়ার সেনাবাহিনী প্রতিরোধহীন অবস্থায় ইউক্রেনের অনেকটা ভেতরে অগ্রসর হতে পারে এবং কিয়েভকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করতে পারে।

ইউক্রেনের জন্য পরাজয় কোনো বিকল্প নয়। এই দেশ এখনো দাঁড়িয়ে আছে এবং ভবিষ্যতে লড়াই চালিয়ে যাবে, তার কারণ হলো, এর স্বাধীনতা ও মুক্তি ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এমনকি ট্রাম্প যদি একটা ‘খারাপ চুক্তি’ মেনে নেওয়ার জন্য ইউক্রেনের ওপর আরও চাপ দেন, তারপরও ইউক্রেনের কোনো নেতা এ ধরনের চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন না। কারণ, এর মানে হলো রাজনৈতিকভাবে ধ্বংস হওয়া।

সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও অভ্যন্তরীণ বিভাজন থাকা সত্ত্বেও ইউরোপের দেশগুলোর সামনে কিয়েভের পূর্ণাঙ্গ মিত্র না হওয়ার বিকল্প নেই। ইউরোপীয়রা জানে, রাশিয়া ইউক্রেনেই থামবে না। এটা তাদের জন্য অস্তিত্বগত হুমকি। কেননা, ক্রেমলিন এরই মধ্যে রাশিয়ার জনগণকে এই বলে প্রস্তুত করছে যে ন্যাটোর দেশগুলোর সঙ্গে একটা ‘মহাযুদ্ধ’ দরকার।

এই হুমকির মুখে ইউরোপীয় দেশগুলো পুনরায় সশস্ত্র হতে চাইছে এবং এর জন্য তাদের সময়ের প্রয়োজন। এর মানে হলো, যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা থাকুক আর না–ই থাকুক, ইউক্রেনের স্বাধীনতা যুদ্ধ বছরের পর বছর ধরে চলবে।

সের্গেই মাইদুকভ একজন ইউক্রেনীয় লেখক। তিনি ‘লাইফ অন দ্য রান: ওয়ান ফ্যামিলি’স সার্চ ফর পিস ইন ওয়্যার-টর্ন ইউক্রেন’ বইয়ের লেখক।

আলজাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ও ইউক র ন র ইউক র ন র স ন ইউক র ন র জন য এর ম ন ধরন র অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপির নির্বাচনী যাত্রা শুরু

সব জল্পনার অবসান হলো—বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন করছেন। তিনি ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩ আসনে প্রার্থী হবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সোমবার বিএনপি ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তাতে দলের দুই শীর্ষ নেতার নির্বাচন করা এবং তাঁদের নির্বাচনী আসনগুলো নিশ্চিত করা হয়। এ ছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও-১ আসনে নির্বাচন করবেন।

তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন, অনেক আগে থেকেই এমন আলোচনা আছে। তবে অসুস্থতার কারণে এবার খালেদা জিয়ার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংশয় ছিল। আবার তাঁর নিজেরও নির্বাচন করার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ ছিল না।

দলীয় সূত্র বলছে, নির্বাচন ঘিরে নানামুখী শঙ্কা, বিশেষ করে ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে নেতৃত্ব দিতে রাজি করানো হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় নেতা-কর্মীরা আনন্দিত।

স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, নানা কারণে আসন্ন নির্বাচন বিএনপির জন্য খুব স্বস্তিদায়ক না-ও হতে পারে। খালেদা জিয়াকে নির্বাচন করতে রাজি করানোর মধ্য দিয়ে সার্বিকভাবে নির্বাচনের গুরুত্বটা আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে নতুন কোনো জটিলতার উদ্ভব হলে, সেটা মোকাবিলায়ও তাঁর ভোটে অংশগ্রহণ পরিস্থিতির ওপর একটা প্রভাব ফেলবে।

জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে সোমবার ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। বাকি ৬৩টি আসনে প্রার্থিতা পরে ঘোষণা করা হবে।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, স্থগিত রাখা কিছু আসনে প্রার্থিতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে। আর কিছু আসন জোট ও সমমনা দলগুলোর প্রার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে, যাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে।

ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, বিএনপির চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির ১২ জন সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। অন্যরা হলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১), মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ (ঢাকা-৮), গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (ঢাকা-৩), আবদুল মঈন খান (নরসিংদী-২), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১০), ইকবাল হাসান মাহমুদ (সিরাজগঞ্জ-২), সালাহউদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার-১), হাফিজ উদ্দিন আহমদ (ভোলা-৩) এবং এ জেড এম জাহিদ হোসেন (দিনাজপুর-১)।

স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তবে তিনি বলেছেন, এটি প্রাথমিক তালিকা। প্রয়োজন বোধ করলে স্থায়ী কমিটি প্রার্থিতা পরিবর্তন করতে পারবে।

এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।

সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে প্রার্থী ঘোষণার আগে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী সভা হয়। সেখানে জুলাই সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়েও আলোচনা হয়। পরে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকেরাও উপস্থিত ছিলেন।

এবারের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তাঁকে ফেনী-৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবনে প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছি। দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে, সে আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ। আমি আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করব, সালাম জানাব।’

যে কারণে ঢাকার সাতটি আসন ফাঁকা

ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি সাতটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, ঢাকায় প্রার্থিতা নিয়ে মারাত্মক পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই। তাঁদের ধারণা, নির্বাচনী সমঝোতার জন্য আসনগুলোতে প্রার্থিতা স্থগিত রাখা হয়েছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সাতটি আসনের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পাটির (এনসিপি) সঙ্গে সমঝোতা হলে তাদের জন্য অন্তত তিনটি আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে। এ তালিকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজেপি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নামও আছে।

তবে এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।

ঢাকা-৯ আসন স্থগিত রাখা হলেও সেটা কার জন্য, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সেখানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খানকে (সোহেল) প্রার্থী করা হতে পারে বলে দলে আলোচনা আছে।

ঢাকা-১৪: মায়ের ডাক-এর সানজিদা

ঢাকা-১৪ আসনে এবার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়লেন এস এ খালেকের ছেলে এস এ সিদ্দিক (সাজু)। সেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের ব্যক্তিদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলামকে (তুলি) প্রার্থী মনোনীত করেছে বিএনপি। এই আসনে ইতিমধ্যে জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার মীর আহমদ বিন কাসেমকে (আরমান)। তিনি আট বছর গুম ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পান।

সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে দলটি অভ্যন্তরীণ জরিপসহ সাংগঠনিক উপায়ে প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন করেছে। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের নাম প্রকাশ করে নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু করল বিএনপি।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিগত ১৫-২০ বছর ভোট দিতে পারেনি। এখন জাতি উৎসাহিত হচ্ছে ভোটের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি পূরণ করার লক্ষ্যে বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণা করে একটা বড় পদক্ষেপ নিল। ইতিমধ্যে অনেকে মাঠে চলে গেছেন, এ ঘোষণার পর বাকিরাও মাঠে যাবেন। এর মাধ্যমে ভোটের একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হবে।

১০ নারী প্রার্থী

ঘোষিত ২৩৭ আসনের প্রার্থী তালিকায় নারী রয়েছেন দশজন। এর মধ্যে অন্যতম বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বাকিরা হলেন সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর, ফরিদপুর-২ আসনে শামা ওবায়েদ ইসলাম, ফরিদপুর-৩ আসনে নায়াব ইউসুফ আহমেদ, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, শেরপুর-১ আসনে সানসিলা জেবরিন, ঝালকাঠি-২ আসনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, যশোর–২ আসনে সাবিরা সুলতানা, ঢাকা-১৪ আসনে সানজিদা ইসলাম ও নাটোর-১ আসনে ফারজানা শারমিন।

মনোনয়ন না পেয়ে দুই মহাসড়ক অবরোধ

মাদারীপুর-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করে কামাল জামান মোল্লাকে। এর প্রতিবাদে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর অনুসারীরা রাত আটটার দিকে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর অনুসারীরা সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ