ফাইনালে অনিশ্চিত এমবাপ্পে, বড় ধাক্কা রিয়ালের
Published: 26th, April 2025 GMT
কোপা দেল রে'র ফাইনালের আগে রিয়াল মাদ্রিদের তারকা ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপ্পের খেলা নিয়ে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। শনিবার দিবাগত রাতে সেভিয়ার এস্তাদিও লা কার্তুখায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার বিপক্ষে শিরোপার লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে দুই দল। তবে গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে এমবাপ্পেকে হয়তো বেঞ্চেই বসে থাকতে হবে।
স্প্যানিশ সাংবাদিক মিগুয়েল অ্যাঞ্জেল তোরিবিওর বরাতে জানা গেছে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে আর্সেনালের বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগে গাঁটের চোটে পড়া এমবাপ্পে এখনও পুরোপুরি সেরে ওঠেননি। ওই ম্যাচে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়ার পর থেকে তিনি অ্যাথলেটিক বিলবাও এবং গেটাফের বিপক্ষে রিয়ালের লিগ ম্যাচগুলোও মিস করেছেন। ধারণা করা হচ্ছিল, বার্সার বিপক্ষে ফাইনালের আগেই তিনি ফিট হয়ে উঠবেন, তবে শেষ মুহূর্তের আপডেটে দেখা যাচ্ছে, তা সম্ভব হচ্ছে না।
ইতালিয়ান সাংবাদিক ফ্যাব্রিজিও রোমানো এক্সে জানিয়েছেন, এমবাপ্পে এখনও ফিট হতে পারেননি। আজকের এল ক্লাসিকো ফাইনালে এমবাপ্পেকে বেঞ্চেই থাকতে হচ্ছে।
চোট পাওয়ার আগে থেকেই এবারের মৌসুমে বার্সেলোনার বিপক্ষে বিশেষ কিছু করতে পারেননি এমবাপ্পে। মৌসুমের আগের দুই 'এল ক্লাসিকো'তে রিয়াল মাদ্রিদ ৯-২ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে। এমবাপ্পে কেবলমাত্র স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে একটি গোল করেছিলেন, ম্যাচের পঞ্চম মিনিটে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই ম্যাচও রিয়াল হারায় ৫-২ গোলে।
এদিকে, ম্যাচের আগে রেফারিং নিয়েও বিতর্কে জড়িয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। কোপা দেল রে ফাইনালের জন্য রিকার্দো দে বুরহোস বেনগোয়েচিয়াকে রেফারি নিয়োগ করা হয়েছে। তবে মাদ্রিদের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তিনি পক্ষপাতিত্ব করতে পারেন। এমনকি মাদ্রিদের অফিসিয়াল টিভি চ্যানেলে তাকে প্রকাশ্যে সমালোচনা করা হয়েছে।
রেফারি নিজে জানান, এই সমালোচনার কারণে তার ছেলে স্কুলে হয়রানির শিকার হয়েছে। রিয়াল মাদ্রিদ স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের কাছে রেফারি পরিবর্তনের অনুরোধ জানালেও তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। প্রতিবাদ হিসেবে ফাইনালের প্রাক-ম্যাচ কার্যক্রম বয়কট করে রিয়াল। ম্যাচ বয়কটের গুঞ্জন থাকলেও সেই পথে যায়নি লস ব্লাঙ্কোসরা। তবে আজ এমবাপ্পের অনুপস্থিতি রিয়াল মাদ্রিদের জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ল য় ন এমব প প ফ ইন ল র এমব প প
এছাড়াও পড়ুন:
গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও
রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।
গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।
পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো।
ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।”
আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”
রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”
গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।”
উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।
ঢাকা/আমিরুল/ইভা