বৈশাখি মেলার যে স্মৃতি আজও ভুলতে পারি না
Published: 26th, April 2025 GMT
চৈত্রের এক ভরদুপুরে বাড়ি ফিরে মাকে বললাম, ‘মা, জানো, এবার নাকি পুজোর মাঠে চড়কপুজোয় মেলা বসবে?’
মায়ের হ্যাঁ-সূচক উত্তরে বুঝলাম, খবরটা তার আগেই জানা। আমি আবার বললাম, ‘মা, এবার নাকি পুতুলনাচ আসবে?’
মা বলল, ‘তাই! কোথায় শুনলি?’
বললাম, ‘ডাক্তার জ্যাঠাদের বাড়ি থেকে মাত্রই শুনে এলাম।’
গ্রামের সর্বজনীন বিষয়গুলোর আলোচনা তখন ডাক্তার জ্যাঠাদের বাড়িতেই হতো। আমি পড়ি প্রাইমারিতে। সেই বয়সে, গ্রামের মেলায় পুতুলনাচ আসবে শুনে আমার মনটাও নেচে উঠল। মাকে বললাম, ‘মা, আমি কিন্তু পুতুলনাচ দেখব।’
ঠিক হলো, মেলায় যদি পুতুলনাচ আসে, তবে আমি আর আমার পাঁচ বছরের বড় ভাই মিলে পুতুলনাচ দেখতে যাব। সেবার মেলায় সত্যিই পুতুলনাচ বসল; ‘ঝুমুর ঝুমুর পুতুলনাচ’। চড়কপূজার পরের দিন, পয়লা বৈশাখের পড়ন্ত বিকেলে দাদা আর আমি মেলায় গেলাম। পশ্চিম আকাশে সূর্যটা তখন লাল আভা ছড়াচ্ছে। মাঠের চারপাশ ঘিরে ছোট ছোট দোকানে নানান রকম জিনিস। মাটির পুতুল, টিনের খেলনা, ঘর-গৃহস্থালির জিনিসপত্র আর মোয়া-মুড়কি, নকুলদানা, বাতাসা, মিষ্টি, রসগোল্লার দোকান। চারদিকে হাঁকডাক, হইহুল্লোড়, গানবাজনার শব্দ। মেলায় ঢোকার পথে হরেক রঙের পান-মসলা দিয়ে পান সাজিয়ে বিক্রি করছে একজন পানওয়ালা।
দাদা আর আমি ঘুরে ঘুরে মেলা দেখছি। দুটি টিনের বাঁশি কিনলাম দুজনে। দাদা টিনের তৈরি একটা মাছের চরকা কিনে দিল আমাকে। সেটা ঘুরালে ক্রমাগত পট পট শব্দ হয়। হঠাৎ দেখি, মাঠের মাঝখানে সবাই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে কী যেন দেখছে। ভিড় ঠেলে সামনে গেলাম। একটা বিশাল জলভরা চাঁড়ি। তাতে ছোট্ট একটা টিনের লঞ্চ ভটভট শব্দ করে ঘুরছে। এ রকম খেলনা আমি প্রথম দেখলাম। খুব ভালো করে লঞ্চটির ভেতরে তাকিয়ে দেখি, পিদিমের মতো ছোট্ট একটা শিখা জ্বলছে। পেছনে বুদ্বুদ জল ঠেলে এগিয়ে চলছে খেলনা লঞ্চটি। পছন্দ হলেও লঞ্চটা কিনতে পারলাম না। কারণ, আমাদের হাতে লঞ্চটা কেনার মতো টাকা ছিল না।
দাদা আমার হাত ধরে নিয়ে গেল পুতুলনাচের প্যান্ডেলের দিকে। সেখানে মাইকে বলছে, ‘আসুন, আসুন। ঝুমুর ঝুমুর পুতুলনাচ দেখুন। ছোট-বড়, ছেলে-মেয়ে, সবাই আসুন। এক টাকা টিকিটের দাম।’
তাঁবুঘেরা বিশাল প্যান্ডেল। ভেতরে ঢোকার জন্য পর্দা দেওয়া ছোট পথ। টিকিট কিনে ভেতরে ঢুকলাম। ঘাসের ওপর খড় বিছিয়ে বসার জায়গা করা। জায়গা পেয়েছি পেছনের দিকে। বাইরে তখন সন্ধ্যা। গোটা কয়েক হ্যাজাকের আলোয় ভেতরটা আলোকিত। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি সামনের ছোট কাপড়ে ঘেরা মঞ্চের দিকে। কিছুক্ষণের মধ্যে প্যান্ডেলটা অন্ধকার হয়ে এল। মঞ্চের আলোয় দেখা গেল, দুদিকে সরে যাচ্ছে সামনের পর্দা। আর তখনই শুরু হলো গান। রংবেরঙের একদল পুতুল সারবেঁধে মঞ্চে প্রবেশ করল। কী অদ্ভুত! পুতুলগুলো গানের তালে নাচছে, গাইছে! গান শেষে পুতুলগুলো নাচতে নাচতে চলে গেল।
এবার একটা রাজা পুতুল আর একটা রানি পুতুল কথা বলতে ঢুকল। পরপরই অন্য রাজ্যের আরেক রাজা, আরেক রানি পুতুল। দুই রাজ্যের দুই রাজপুত্র আর রাজকন্যার মধ্যে কীভাবে বিয়ে হলো, পুতুলনাচে দেখানো হলো সেই কাহিনি। দুই রাজ্যের পুতুলদের আনন্দ নাচে শেষ হলো পুতুলনাচের পালা। আমরা বেরিয়ে এলাম।
বাইরে তখন দোকানে দোকানে আলো। ক্রেতার ভিড়। আমার চোখে তখনো পুতুলনাচের দৃশ্য। পুতুলগুলো এত জীবন্ত নাচল কী করে! বাড়িতে গিয়ে মায়ের কাছে শুনতে হবে। মা নিশ্চয়ই জানে এই পুতুলনাচের রহস্য।
আরও পড়ুনজীবনের প্রথম উপার্জন, তা–ও আবার বছরের পয়লা দিনে১৯ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বলল ম
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের মধুসহ ২৪ পণ্য পেল জিআই সনদ
মণিপুরি শাড়ি, গামছা, লিচু, আম, মধুসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ২৪টি পণ্যকে জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) নিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সভায় এই সনদ দেওয়া হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সভায় শিল্প সচিব ওবায়দুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচক ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। মেধাসম্পদ দিবসের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিল্পী, অভিনেত্রী ও সংগীত পরিচালক আরমিন মুসা।
সভায় শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, দেশের প্রথম পণ্য হিসেবে জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে জামদানি শাড়ি। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫৫টি পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেল। জিআই পণ্য দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে লালন করে। এই পণ্যের বাজারজাতকারীদের ন্যায্য স্বীকৃতি এবং পারিশ্রমিক নিশ্চিত করতে হবে। ফলে স্থানীয় উদ্যোক্তা বা উৎপাদনকারীদের ক্ষমতায়ন হবে।
এ সময় তিনি জিআই পণ্যের তালিকা সমৃদ্ধ করার পর সেগুলো বাণিজ্যিকভাবে বিকশিত করার আহ্বান জানান।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক উৎসব গান। এ দেশের মানুষ গানের মাধ্যমে ভাব প্রকাশ করে, যা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে। সংগীত নিয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় বড় প্রকল্পের কাজ করছে। দেশের মানুষ কিছু দিনের মধ্যে তা দেখতে পাবে। সংগীতের কপিরাইট নিশ্চিত করতে হবে।
নিবন্ধন সনদপ্রাপ্ত ২৪টি ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হলো– নরসিংদীর লটকন, মধুপুরের আনারস, ভোলার মহিষের দুধের কাঁচা দই, মাগুরার হাজরাপুরী লিচু, সিরাজগঞ্জের গামছা, সিলেটের মণিপুরি শাড়ি, মিরপুরের কাতান শাড়ি, ঢাকাই ফুটি কার্পাস তুলা, কুমিল্লার খাদি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টি, গোপালগঞ্জের ব্রোঞ্জের গয়না, সুন্দরবনের মধু, শেরপুরের ছানার পায়েস, সিরাজগঞ্জের লুঙ্গি, গাজীপুরের কাঁঠাল, কিশোরগঞ্জের রাতাবোরো ধান, অষ্টগ্রামের পনির, বরিশালের আমড়া, কুমারখালীর বেডশিট, দিনাজপুরের বেদানা লিচু, মুন্সীগঞ্জের পাতক্ষীর, নওগাঁর নাকফজলি আম, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের জামুর্কির সন্দেশ এবং ঢাকাই ফুটিকার্পাস তুলার বীজ ও গাছ।
সভায় এসব জিআই সনদ বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড, সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক ও নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার নাকফজলি আমচাষি সমবায় সমিতির কাছে হস্তান্তর করা হয়।