রংপুরে কালবৈশাখীর তাণ্ডব, লন্ডভন্ড ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষেত
Published: 27th, April 2025 GMT
রংপুর জেলায় কালবৈশাখী ঝড়ে রংপুর মহানগরীসহ তারাগঞ্জ, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। পাশাপাশি, ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে গাছপালা ও ফসলের।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত ১১টার দিকে রংপুর জেলার উপর দিয়ে এই ভয়াবহ কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, এ সময় প্রবল ঝোড়ো হাওয়া বইছিল ও সঙ্গে ছিল শিলাবৃষ্টি। এতে আম, লিচু, ভুট্টা, ধান, পাটসহ বিভিন্ন উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কোথাও কোথাও বাতাসের তীব্রতায় পাকাঘরও ভেঙে গেছে। ঝড়ের স্থায়িত্ব কম হলেও এর তাণ্ডবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে শহর ও গ্রামের বিভিন্ন অংশে।
তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালি ইউনিয়নের হাজীপুর গ্রামের বাসিন্দা ওমর মিয়া জানান, ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে তার দুটি পাকাঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
একই ইউনিয়নের আব্দুল জব্বার জানান, ইকরচালি বাজার-সংলগ্ন বড় একটি বটগাছ ভেঙে তিনটি পাকাঘর ও বেশ কয়েকটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছপালা উপড়ে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যায়, যা পরে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের সহায়তায় স্বাভাবিক করা হয়।
পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর, ছাওলা, অন্নদানগর ও কান্দি ইউনিয়নেও কালবৈশাখীর তাণ্ডবে অনেক বাড়িঘর ভেঙে গেছে। বিভিন্ন সড়কে গাছ পড়ে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়। স্থানীয় লোকজন ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা মিলে সেসব গাছ সরানোর কাজ করেন।
ঝড়ে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন, যাদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। তাদের স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তাদের নাম জানা যায়নি। গ্রামাঞ্চলের পাশাপাশি শহরেও পল্লী বিদ্যুৎ ও বিদ্যুৎ লাইনের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।
অন্যদিকে কয়েকদিনের প্রচণ্ড দাবদাহের পর ঝড়-বৃষ্টিতে নগরীতে কিছুটা প্রশান্তি ফিরেছে। রংপুর নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের শাপলা চত্বর এলাকার নাজমুল হাসান বলেন, “গত কয়েকদিন খুব গরম ছিল, আজ ঝড় হলেও বৃষ্টিতে কিছুটা শান্তি পেয়েছি।”
হাজীপাড়া চামড়াপট্টি এলাকার বাসিন্দা ফাহিম মুরশেদ বলেন, “শহরের বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়েছে এবং অনেক ঘরের টিনের চাল উড়ে গেছে। পুরো নগরী এখন লোডশেডিংয়ের কবলে।”
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ৮ নটিক্যাল মাইল এবং বৃষ্টিপাত হয়েছে ২০ মিলিমিটার। তবে সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
এদিকে, রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানিয়েছেন, ক্ষয়ক্ষতির সঠিক চিত্র জানতে স্থানীয় প্রশাসন কাজ শুরু করেছে। পরবর্তীতে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
ঢাকা/আমিরুল/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত হয় ছ উপজ ল ফসল র
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)