কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহারভুক্ত এক আসামি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এর প্রতিবাদে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে কুষ্টিয়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচিতে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা অংশ নেন।

জামিন পাওয়া আসামি হলেন কুষ্টিয়া পৌরসভার সার্ভেয়ার আবদুল মান্নান (৪৫)। গত শুক্রবার দুপুরে কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়াদি ফকিরপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি ওই এলাকার মৃত আনোয়ার প্রামাণিকের ছেলে।

কুষ্টিয়া মডেল থানা–পুলিশ ও এজাহার সূত্র জানায়, গত বছরের আগস্ট মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হামলায় আহত ইয়ামিন আলী নামের এক যুবকের করা হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মান্নান। ৫ আগস্টের পর তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় তিনি আত্মগোপনে চলে যান। কিছুদিন পলাতক থাকার পর আবার কুষ্টিয়া পৌরসভার দাপ্তরিক কাজে যোগ দেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিহত করতে লাঠি হাতে মান্নানের একটি ভিডিও সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। গ্রেপ্তার এড়াতে মান্নান ১৬ এপ্রিল পৌরসভা থেকে বের হয়ে আর অফিসে যাননি। এর পর থেকেই তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবি জোরালো হয়। গত শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মান্নানকে তাঁর বাড়ির আঙিনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার পর তাঁকে কুষ্টিয়া আদালতে নেওয়া হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) কুষ্টিয়া মডেল থানার উপপরিদর্শক অনুপ কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলার এজাহারে আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অ্যালিগেন্স (অভিযোগ) ছিল না। তারপরও তাঁকে আদালতে নেওয়ার সময় জামিন না দিতে আবেদন করে ফরোয়ার্ডি দেওয়া হয়। জামিনের বিষয়টি সম্পূর্ণ আদালতের বিষয়। এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নাই।’

কুষ্টিয়া আদালতের সদর জিআরও শাখা সূত্র জানায়, গতকাল দুপুরে সাড়ে ১২টার দিকে আবদুল মান্নানকে সদর জিআরও শাখায় নেওয়া হয়। এরপর মান্নানকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। ওই দিন ছুটি থাকায় অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোপাল চন্দ্র সরকার। আবদুল মান্নানের আইনজীবী আদালতে জামিন আবেদন করেন এবং তাঁকে জামিন দেওয়া হয়। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকেই মান্নান আদালতের হাজতখানা থেকে বের হয়ে চলে যান।

আবদুল মান্নানের জামিন পাওয়ার কথা গতকাল রাতে জানাজানি হয়। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়। জামিনের প্রতিবাদে আজ বেলা ১১টার দিকে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। এই কর্মসূচি পরিচালনা করেন কুষ্টিয়া জেলা যুবদলের সদ্য সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য আল আমিন রানা (কানাই)। এ সময় বক্তব্য দেন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্য আবদুল মুঈদ (বাবুল), আবদুল মাজেদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবদুল হাকিম (মাসুদ), সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ জাকারিয়া (উৎপল), জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম (সুমন), জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম, দলের দপ্তর সম্পাদক শাহারিয়া ইমন (রুবেল) প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগের দোসরেরা এখনো থানা ও আদালতে বহাল তবিয়তে আছে। আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে আদালত থেকে ছাত্র–জনতার ওপর হামলাকারীরা দাঁড়ানো মাত্রই জামিন হয়ে যাচ্ছে।

আবদুল মান্নানের জামিন পাওয়ার কথা গতকাল রাতে জানাজানি হয়। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়। জামিনের প্রতিবাদে আজ বেলা ১১টার দিকে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। এই কর্মসূচি পরিচালনা করেন কুষ্টিয়া জেলা যুবদলের সদ্য সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য আল আমিন রানা (কানাই)। এ সময় বক্তব্য দেন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্য আবদুল মুঈদ (বাবুল), আবদুল মাজেদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবদুল হাকিম (মাসুদ), সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ জাকারিয়া (উৎপল), জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম (সুমন), জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম, দলের দপ্তর সম্পাদক শাহারিয়া ইমন (রুবেল) প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগের দোসরেরা এখনো থানা ও আদালতে বহাল তবিয়তে আছে। আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে আদালত থেকে ছাত্র–জনতার ওপর হামলাকারীরা দাঁড়ানো মাত্রই জামিন হয়ে যাচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ ল ম ন ন ন র ব এনপ র সদস য ক দল র গতক ল আওয় ম প রসভ

এছাড়াও পড়ুন:

মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের

এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।

চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।

টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর। 

গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।

দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।

সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত। 

শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।

মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।  

সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ