বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন: কুষ্টিয়ায় হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি জামিনে মুক্ত, প্রতিবাদে পরদিন বিক্ষোভ
Published: 27th, April 2025 GMT
কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহারভুক্ত এক আসামি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এর প্রতিবাদে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে কুষ্টিয়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচিতে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা অংশ নেন।
জামিন পাওয়া আসামি হলেন কুষ্টিয়া পৌরসভার সার্ভেয়ার আবদুল মান্নান (৪৫)। গত শুক্রবার দুপুরে কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়াদি ফকিরপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি ওই এলাকার মৃত আনোয়ার প্রামাণিকের ছেলে।
কুষ্টিয়া মডেল থানা–পুলিশ ও এজাহার সূত্র জানায়, গত বছরের আগস্ট মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হামলায় আহত ইয়ামিন আলী নামের এক যুবকের করা হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মান্নান। ৫ আগস্টের পর তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় তিনি আত্মগোপনে চলে যান। কিছুদিন পলাতক থাকার পর আবার কুষ্টিয়া পৌরসভার দাপ্তরিক কাজে যোগ দেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিহত করতে লাঠি হাতে মান্নানের একটি ভিডিও সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। গ্রেপ্তার এড়াতে মান্নান ১৬ এপ্রিল পৌরসভা থেকে বের হয়ে আর অফিসে যাননি। এর পর থেকেই তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবি জোরালো হয়। গত শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মান্নানকে তাঁর বাড়ির আঙিনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার পর তাঁকে কুষ্টিয়া আদালতে নেওয়া হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) কুষ্টিয়া মডেল থানার উপপরিদর্শক অনুপ কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলার এজাহারে আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অ্যালিগেন্স (অভিযোগ) ছিল না। তারপরও তাঁকে আদালতে নেওয়ার সময় জামিন না দিতে আবেদন করে ফরোয়ার্ডি দেওয়া হয়। জামিনের বিষয়টি সম্পূর্ণ আদালতের বিষয়। এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নাই।’
কুষ্টিয়া আদালতের সদর জিআরও শাখা সূত্র জানায়, গতকাল দুপুরে সাড়ে ১২টার দিকে আবদুল মান্নানকে সদর জিআরও শাখায় নেওয়া হয়। এরপর মান্নানকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। ওই দিন ছুটি থাকায় অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোপাল চন্দ্র সরকার। আবদুল মান্নানের আইনজীবী আদালতে জামিন আবেদন করেন এবং তাঁকে জামিন দেওয়া হয়। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকেই মান্নান আদালতের হাজতখানা থেকে বের হয়ে চলে যান।
আবদুল মান্নানের জামিন পাওয়ার কথা গতকাল রাতে জানাজানি হয়। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়। জামিনের প্রতিবাদে আজ বেলা ১১টার দিকে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। এই কর্মসূচি পরিচালনা করেন কুষ্টিয়া জেলা যুবদলের সদ্য সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য আল আমিন রানা (কানাই)। এ সময় বক্তব্য দেন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্য আবদুল মুঈদ (বাবুল), আবদুল মাজেদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবদুল হাকিম (মাসুদ), সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ জাকারিয়া (উৎপল), জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম (সুমন), জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম, দলের দপ্তর সম্পাদক শাহারিয়া ইমন (রুবেল) প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগের দোসরেরা এখনো থানা ও আদালতে বহাল তবিয়তে আছে। আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে আদালত থেকে ছাত্র–জনতার ওপর হামলাকারীরা দাঁড়ানো মাত্রই জামিন হয়ে যাচ্ছে।
আবদুল মান্নানের জামিন পাওয়ার কথা গতকাল রাতে জানাজানি হয়। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়। জামিনের প্রতিবাদে আজ বেলা ১১টার দিকে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। এই কর্মসূচি পরিচালনা করেন কুষ্টিয়া জেলা যুবদলের সদ্য সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য আল আমিন রানা (কানাই)। এ সময় বক্তব্য দেন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্য আবদুল মুঈদ (বাবুল), আবদুল মাজেদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবদুল হাকিম (মাসুদ), সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ জাকারিয়া (উৎপল), জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম (সুমন), জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম, দলের দপ্তর সম্পাদক শাহারিয়া ইমন (রুবেল) প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগের দোসরেরা এখনো থানা ও আদালতে বহাল তবিয়তে আছে। আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে আদালত থেকে ছাত্র–জনতার ওপর হামলাকারীরা দাঁড়ানো মাত্রই জামিন হয়ে যাচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ ল ম ন ন ন র ব এনপ র সদস য ক দল র গতক ল আওয় ম প রসভ
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।