বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ব্যস্ত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে। তবে এই সিরিজে না থেকেও দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিনিয়ত আলোচনায় তাওহিদ হৃদয়। জাতীয় দলের এই ক্রিকেটার চলমান ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে মোহামেডানকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ১২ এপ্রিল হৃদয়ের আম্পায়ারের সঙ্গে অসদাচরণে সৃষ্ট ঘটনার জেরে আক্ষরিক অর্থেই দেশের ক্রিকেটে তোলপাড় চলছে। যা সিসিডিএম (ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্টোপলিস) তো বটেই, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকেই নানা প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। একঝলকে ঘুরে আসা এ পর্যন্ত হওয়ার ঘটনাপঞ্জিতে।১২ এপ্রিল ২০২৫

আবাহনীর মোহাম্মদ মিঠুনের বিপক্ষে পেসার ইবাদত হোসেনের বলে এলবিডব্লু আউট না দেওয়ায় আম্পায়ার তানভীর আহমেদের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হন মোহামেডানের খেলোয়াড়েরা। ঘটনার এক পর্যায়ে মাঠে থাকা অন্য আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদের সঙ্গে তর্কে জড়ান মোহামেডান অধিনায়ক হৃদয়, আঙুল উঁচিয়েও তাঁকে কথা বলতে দেখা যায়। এ ঘটনায় হৃদয়কে এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় (৪টি ডিমেরিট পয়েন্ট)। তবে শাস্তি ঘোষণার আগেই ম্যাচের পর সংবাদমাধ্যমে আম্পায়ারিং নিয়ে সমালোচনা করেন হৃদয়। বলেন, ‘তিনি (সৈকত) একজন আন্তর্জাতিক আম্পায়ার, আমরা তাঁকে সম্মান করি। কিন্তু আমরা নিজেরাও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার।’ একপর্যায়ে এমনও বলেন, ‘ঘটনা যদি অন্যদিকে যায়, আমি মুখ খুলব ইনশা আল্লাহ।’

১৩ এপ্রিল ২০২৫

প্রকাশ্যে আম্পায়ারের সমালোচনার পর হৃদয়কে আরও ৩টি ডিমেরিট পয়েন্ট দেওয়া হয়, যার ফলে তার মোট ডিমেরিট পয়েন্ট দাঁড়ায় ৭। এরপর ম্যাচ রেফারি তাঁকে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা ও ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

১৭ এপ্রিল ২০২৫

মোহামেডানের সুপার লিগের প্রথম ম্যাচে (লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিপক্ষে) হৃদয় খেলেননি। মোহামেডান ওই ম্যাচে ৯‍ উইকেটে হেরে যায়।

২০ এপ্রিল ২০২৫

মোহামেডানের দ্বিতীয় সুপার লিগ ম্যাচে (অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে, বিকেএসপি ৩ নম্বর মাঠে) হৃদয়কে মোহামেডানের একাদশে রাখা হয়। ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য এনামুল হক জানান, কীভাবে নিষেধাজ্ঞা কমানো হয়েছে, তিনি জানেন না। এদিনই তিনি তাঁর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

২২ এপ্রিল ২০২৫

আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা হৃদয়ের শাস্তি ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে আম্পায়ারিং ছাড়ার হুমকি দেন।

আবাহনী–মোহামেডান ম্যাচের যে ঘটনা থেকে নিষেধাজ্ঞার সূত্রপাত।.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম প য় র হ দয়ক

এছাড়াও পড়ুন:

ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা

বছর পাঁচেক আগেও ধান কাটার শ্রমিকেরা বৈশাখ মাসের অপেক্ষায় থাকতেন। বৈশাখে হাওরের বুকজুড়ে সবুজ ধান যখন সোনালি রঙ ছড়াতে শুরু করে, তখন থেকেই দূরদূরান্ত থেকে হাওরে আসতে থাকেন ধান কাটার শ্রমিকেরা। কিন্তু, এই চিত্র দ্রুত বদলাচ্ছে। হাওরের কৃষক এখন ধান কাটার জন্য বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করেন। ফলে কৃষকের শ্রম এবং অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হচ্ছে। তবে, কর্মহীন হয়ে পড়ছেন কৃষি শ্রমিকেরা। বাধ্য হয়ে তারা পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।

তিন বছর হলো ধান কাটার পেশা ছেড়েছেন মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের মো. মকবুল মিয়া। এখন তিনি সারাবছর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান।

আরো পড়ুন:

খুলনার বরফশ্রমিক
নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি

ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত

মকবুল মিয়া বলেন, ‘‘আগে বছরের ছয় মাস বর্ষায় নৌকা বাইতাম, আর হুগনা সিজন আইলে নিজের জমি চাষ করতাম, আবার মাইনষের জমিতেও কামলা দিতাম। যা আয় অইতো তাই দিয়া আমরার ছয়জনের সংসার চইল্যা যাইতো। কিন্তু, যহন থেইক্যা নতুন নতুন মেশিন হাওরে আইতাছে, তহন থেইক্যা আমরার আর বেইল নাই।’’

‘‘কেউ আর আমরারে আগের মতন দাম দেয় না। কাম করলেও ঠিকমতো টেহা পাই না, তাই পুষায় না,’’ বলেন এই কৃষিশ্রমিক।

মকবুলের মতো ধান কাটা, মাড়াই, রোদে শুকানো, ঝাড়া, কাঁধে বহন করার মতো স্বাধীন পেশা ছেড়েছেন অষ্টগ্রামের ফয়জুল, ইটনার শামছুল মিয়া, নিকলীর ফরিদ উদ্দিনসহ অসংখ্য শ্রমিক। এক সময় যারা এ পেশায় দলবেঁধে কাজ করতেন, এখন দৃশ্যপট পুরোটাই ভিন্ন। ধান কাটার পেশা বদলে তারা এখন কেউ রিকশাচালক, কেউ চায়ের দোকানদার, কেউ চটপটি-ফুচকার দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

তারা বলছেন, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির গতির সঙ্গে তারা কখনো তাল মেলাতে পারবেন না। কৃষকরাও তাদের শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছেন না। বেশি জমি যাদের আছে তারাও আধুনিক পদ্ধতির প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন। যে কৃষক অল্প জমিতে চাষাবাদ করেছেন, তারাও আর পয়সা খরচ করে কৃষিশ্রমিকের ওপর নির্ভর করছেন না। তারা পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা নিচ্ছেন। ফলে খেটে খাওয়া শ্রমিকেরা পড়েছেন বিপাকে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমির ধান কাটতে প্রচুর সময় লাগে। ফসল কাটার পরে বহন ও মারাই করা, তারপর বস্তায় সংরক্ষণ করার জন্যও অনেক শ্রমিকের দরকার। এটুকু ৬ থেকে ৭ জন শ্রমিকের সারা দিনের কাজ। তার জন্য মজুরি গুনতে হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। কিন্তু, এ কাজে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করলে সময় এবং অর্থ দুটোই কম লাগে।

বৈশাখে বর্ষার পানি ও বৈরী আবহাওয়া না থাকায় কৃষকেরা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটছেন। বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে ঝড়-তুফান শুরু হলে পাকা ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে তারা যে পদ্ধতিতে ধান কাটা সহজ এবং দ্রুত হয় সেই পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার পুরো জেলায় এক লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওর এলাকাতেই আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। ফলন ভালো হওয়ায় এই ধান থেকে এবার প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ধান কাটতে এ বছর হাওর অঞ্চলে ৩৫ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত আছেন। এই সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধান কাটতে কৃষক কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ ৪১৩টি ধান কাটার যন্ত্র ব্যবহার করছেন। 

জেলা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ উদ্দিন বলেন, ‘‘মানুষের পেশা পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের বিভিন্ন পেশা বেছে নিতে হয়। কিন্তু, কৃষি এমন একটা পেশা, যারা এ পেশা রপ্ত করেছেন তাদের জন্য নতুন পেশায় আসা খুব কঠিন। বর্তমানে কৃষিকাজে যেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, তাতে কৃষিশ্রমিকেরা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।’’

‘‘শুধু কৃষিতেই নয়, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে,’’ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারকেই সুদৃষ্টি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান, মাঠে যদি কৃষক ও শ্রমিক ন্যায্য শ্রমমূল্য না পান, তাহলে কৃষিও একদিন হুমকির মুখে পড়বে।’’

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ