‘ইমপ্যাক্ট’ বুমরার ৪ উইকেট, ৪ হাজারে তৃতীয় দ্রুততম সূর্যকুমার, দুইয়ে মুম্বাই
Published: 27th, April 2025 GMT
জিতলেই পয়েন্টে তালিকার সেরা চারে—এই হিসাব সামনে রেখেই ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে আজ মুখোমুখি হয় মুম্বাই ইন্ডিয়ানস ও লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস। এমন সমীকরণে ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত জিতেছে মুম্বাই। ঘরের মাঠে পাওয়া ৫৪ রানের জয়ে কয়েক ঘণ্টার জন্য হলেও দুইয়ে উঠে এসেছে মুম্বাই।
টসে হেরে ব্যাটিং পাওয়া মুম্বাই করে ৭ উইকেটে ২১৫ রান। রান তাড়ায় ২০ ওভারে ১৬১ রানে অলআউট হয়েছে লক্ষ্ণৌ।
লক্ষ্ণৌর হয়ে আজ প্রথম ওভারটা করেন চোট কাটিয়ে ফেরা মায়াঙ্ক যাদব। ভারতীয় ফাস্ট বোলার এবারের আইপিএলের নিজের প্রথম ওভারে দেন ৬ রান । ১৩০ থেকে ১৪২-১৪৩ কিলোমিটার গতিতে বল করা মায়াঙ্ককে পরের ওভারে টানা দুই ছক্কা মেরে দেন রোহিত শর্মা। ওভারের পঞ্চম বলে অবশ্য প্রতিশোধ নিয়ে নেন মায়াঙ্ক। জায়গায় দাঁড়িয়ে নিরীহ এক ওয়াইড লেংথ বলে কাট করতে গিয়ে শর্ট থার্ডম্যানে ক্যাচ তোলেন ৫ বলে ১২ রান করা রোহিত।
রোহিতের বিদায়ের পর উইল জ্যাকসকে নিয়ে ৫৫ রান যোগ করেন রায়ান রিকেলটন। ব্যক্তিগত ৫ রানে মাথায় রান আউট হতে হতে বেঁচে যাওয়া মুম্বাই ওপেনার ফেরেন ৩২ বলে ৫৮ রান করে। শেষ পর্যন্ত তাঁর ৬ চার ও ৪ ছক্কার ইনিংসটিই হয়ে আছে দলীয় সর্বোচ্চ।
মুম্বাইয়ের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৪ রান করেছেন রিকেলটনের বিদায়ের পর ব্যাটিংয়ে নামা সূর্যকুমার যাদব। ৪টি করে চার-ছক্কায় সাজানো তাঁর ২৮ বলের ইনিংসে। সূর্য ফেরেন ১৮তম ওভারের তৃতীয় বলে দলকে ১৮০ রানে রেখে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে। এর আগেই আইপিএলে ৪ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেন সূর্য। এই মাইলফলকে বলের হিসেবে তৃতীয় দ্রুততম ভারতীয় তারকা। তাঁর চেয়ে কম বলে ৪ হাজারে ছুঁয়েছেন ক্রিস গেইল (২৫৬৮) ও এবি ডি ভিলিয়ার্স (২৬৫৮)। সূর্যর লেগেছে ২৭১৪ বল।
এরপর শেষ ১৫ বলে আরও ৩৫ রান যোগ করে মুম্বাই। নমন ধীর ১১ বলে ২৫ রান করে অপরাজিত ছিলেন। এ ছাড়া ২৮ রানের সপ্তম উইকেট জুটিতে ধীরের সঙ্গী করবিন বশ ১০ বলে করেন ২০ রান।
প্রত্যাবর্তনে ৪ ওভারে ৪০ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন মায়াঙ্ক। ৪২ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন আবেশ খান।
রান তাড়ায় ৬৪ রানের মধ্যে এইডেন মার্করাম (৯), নিকোলাস পুরান (২৭) ও ঋষভ পন্তকে (৪) হারিয়ে ফেলে লক্ষ্ণৌ। এরপর আয়ুশ বাদোনিকে (২২ বলে ৩৫) নিয়ে ৪৬ রানের জুটি গড়েন একটু আশা জাগিয়েছিলেন মিচেল মার্শ (২৪ বলে ৩৪)। ১২তম ওভারে মার্শকে ফেরানো ট্রেন্ট বোল্ট প্রান্ত বদলে ১৫তম ওভারে ফিরিয়ে দেন বাদোনিকেও।
পরের ওভারে রোহিতের ইমপ্যাক্ট বদলি যশপ্রীত বুমরা ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ থেকে পুরোপুরি ছিটকে দেন লক্ষ্ণৌকে। এর আগে মার্করামকেও ফেরানো বুমরা ৪ উইকেট নিতে খরচ করেন ২২ রান। এ ছাড়া ২০ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন বোল্ট।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উইক ট ন য় লক ষ ণ র ন কর
এছাড়াও পড়ুন:
কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়
রাজধানীর সবুজবাগের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের সঙ্গে থাকা আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁকে ছয় টুকরা করে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে কাছের একটি ঝোপের ভেতরে পুঁতে রাখা হয়। এর আগে আজহারুল ইসলাম (গ্রেপ্তার) মুঠোফোনে সবুজবাগের ভাইগদিয়ায় তাঁর ভাড়া বাসায় জাকিরকে (৫৫) ডেকে নেন।
গ্রেপ্তার আজহারুল ইসলাম (৩৯) আজ শুক্রবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আদালত তাঁর জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী (৪৪), মো. রাজীব (২৬) ও স্বপনকে (২৫) পাঁচ দিন করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং বাকিরা রংমিস্ত্রি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সামছুল আমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় দুপুরে তাঁদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আজহারুল আদালত জবানবন্দি দেন। অপর তিনজন জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। পরে তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, জাকির হোসেনের সঙ্গে তাঁদের চারজনের (আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন) বন্ধুত্ব ছিল। তাঁরা একসঙ্গে আড্ডা দিতেন। মাঝেমধ্যে জাকিরের সঙ্গে তাঁর ভাইগদিয়ার ভাড়া বাসায় তাঁরা একসঙ্গে মদ্যপান করতেন। ৪ জুন রাতে জাকির নন্দীপাড়ায় শেখের বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তখন আজহারুল মুঠোফোনে জাকিরকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন। ওই বাসায় আজহার একা থাকতেন। আগেই জাকির তাঁদের জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা আছে এবং ডেমরার আমুলিয়া পশুরহাট থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনবেন। জাকির তাঁর বাসায় পৌঁছানোর পর ওই টাকার ওপর তাঁদের সবার লোভ জাগে। তাঁরা টাকা ছিনিয়ে নিতে গেলে জাকির বাধা দেন। তখন ইস্পাতের পাইপ দিয়ে জাকিরের মাথায় সজোরে আঘাত করেন আজহারুল। এতে জাকির অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর কাছ থেকে এক হাজার টাকার দুটি বান্ডিল ছিনিয়ে নিয়ে সেই টাকা শুক্কুর আলীর কাছে জমা রাখেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতকে জানান, জাকিরকে বাঁচিয়ে রাখা হলে তাঁরা সবাই ফেঁসে যাবেন—এমন আশঙ্কায় জাকিরকে হত্যা করে লাশ গুম করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাকিরের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন তাঁর শরীর টুকরা টুকরা করেন। পরে লাশের ছয়টি টুকরা রঙের দুটি পাত্রে ভরে একটি অটোরিকশায় করে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় নিয়ে যান। শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন অন্য পথ দিয়ে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় আসেন। তখন তাঁরা সবাই মিলে বালতিভর্তি লাশের টুকরাগুলো পাশের ঝোপে নিয়ে যান। এরপর সেখানে খুঁড়ে লাশের টুকরাগুলো পুঁতে রাখেন।
আজহারুল আদালতকে বলেন, জাকিরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া টাকা ভাগাভাগি করার আগেই তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, আজহারুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাহেরচরে। বাকি তিনজন ঢাকার সবুজবাগের ভাইগদিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা।
প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন সপরিবার সবুজবাগ থানার ভাইগদিয়া এলাকায় থাকতেন। ৪ জুন জাকির হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি। পরদিন জাকির নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর মধ্যে জাকিরের খোঁজ না পাওয়ায় তিনি ১০ জুন আজহার আলীসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সবুজবাগ থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এলাকার ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আজহারুলকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আজহারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় জড়িত অভিযোগে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাতে জাকির হোসেনকে ভাইগদিয়ায় দাফন করা হয়।
সবুজবাগ থানার ওসি ইয়াছিন আলী প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে জাকিরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করলেও তদন্তে এখন পর্যন্ত এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাকির হত্যায় আরও একজন জড়িত। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।