সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আইনজীবীদের এক মতবিনিময় সভায়। এই প্রশাসন জবাবদিহিহীন একটি জায়গা বলেও অভিযোগ তোলা হয়েছে। এর পাশাপাশি বলা হয়েছে, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা হওয়ার পর প্রায় তিন মাস হতে চললেও ছোটখাটো সংস্কার প্রস্তাবও বাস্তবায়ন করা হয়নি। অথচ আইন ও সংবিধান সংশোধন ছাড়াই অনেক সংস্কারকাজ প্রশাসনিক পদক্ষেপের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

‘বিচারব্যবস্থা সংস্কার ও জরুরি করণীয়: প্রসঙ্গ সুপ্রিম কোর্ট’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা গতকাল রোববার বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। এই সভার আয়োজক বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)।

সভায় বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানিম হোসেইন শাওন বলেন, গত ৩১ জানুয়ারি সংস্কার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর তিন মাস হতে চলল। এই সময়ে অভিজ্ঞতা খুব আশাপ্রদ নয়। কারণ, ছোটখাটো উদ্যোগগুলোর বাস্তবায়নও এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, প্রতিবেদনের মধ্যে অনেক কিছু খুব ছোটখাটো প্রশাসনিক পদক্ষেপের মাধ্যমে ঠিক করা সম্ভব এবং খুব কম সময়ের মধ্যে এগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এগুলোর জন্য সংবিধান সংশোধন করা, নির্বাচিত সরকারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। কিছু অংশীজনের সদিচ্ছা থাকলে খুব সহজেই এসব কাজ করা সম্ভব।

সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসন সবচেয়ে বেশি অস্বচ্ছ এবং জবাবদিহিহীন একটা জায়গা বলেও

অভিযোগ করেন আইনজীবী তানিম হোসেইন। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসন কতটা অস্বচ্ছ, সেটার একটা লক্ষণ হলো বেঞ্চ পুনর্গঠন।

কীভাবে বেঞ্চ পুনর্গঠন হয়, জানা যায় না। এই মুহূর্তে সুপ্রিম কোর্টে কজলিস্টে (কার্যতালিকা) কয়েকজন জজের (বিচারকের) বেঞ্চ নেই কেন, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি।

তানিম হোসেইন বলেন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অনেকে মনে করেন, তাঁরা প্রশিক্ষণের ঊর্ধ্বে। তাঁরা অপমানিত বোধ করেন যদি বলা হয়, প্রশিক্ষণ নিতে হবে। এ রকম কিছু প্রস্তাব সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে আছে।

মতবিনিময় সভার সঞ্চালক ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন। তিনি বলেন, খুব সাধারণ বিষয়গুলোও সমাধান করা যাচ্ছে না। অনেক কিছুর জন্য হয়তো আইনি সংস্কারের প্রয়োজন নেই। অতীতে দেখা গেছে, এ ধরনের সংস্কারপ্রক্রিয়ায় আইনজীবীরাই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরাই পরিবর্তন চান না। একধরনের চর্চায় অভ্যস্ত হয়ে আছেন। এখন আরেকটা নতুন সুযোগ এসেছে পরিবর্তন আনা যাবে কি না, তা নিয়ে একত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এবং কাজ করার।

সংস্কার কমিশন সুচিন্তিত ও সুনির্দিষ্টভাবে সুপারিশ করেছে উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশনা ইমাম বলেন, সুপারিশের মধ্যে অনেকগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে, যদি বাস্তবায়ন করা যায়। যদি বার ও বেঞ্চের সৎ ইচ্ছা থাকে, তাহলে অনেকগুলো সমস্যা সমাধানের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া যাবে। দুর্ভাগ্যজনক হলো সব সময় হয়তো সেই সদিচ্ছা থাকে না।

বিভিন্ন আইন ও অধ্যাদেশ সংশোধনের বিষয়ে রাশনা ইমাম বলেন, তড়িঘড়ি করে সংশোধন করলে হবে না। সংশোধনগুলো করার আগে সব অংশীজনের সঙ্গে পর্যাপ্ত আলোচনার মাধ্যমে সংশোধন করা উচিত। না হলে বাস্তবায়নে নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের চর্চা ও পদ্ধতির অধঃপতন ঘটেছে বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো.

রুহুল কুদ্দুস। দুর্নীতি আর চুরির একটা সীমা থাকা দরকার—এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটা (আদালত অঙ্গন) দুর্নীতির একটা আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এর মূল কারণ হচ্ছে এখানে অব্যবস্থাপনাকে ব্যবস্থাপনা করে ফেলা হয়েছে। সিস্টেম (ব্যবস্থা) পরিবর্তন করে দুর্নীতি এখনই শেষ করা সম্ভব। এমন সিস্টেম আনতে হবে, যেন কর্মকর্তা–কর্মচারীরা ঘুষ খাওয়ার সুযোগ না পান, ঘুষ নিতে চাইলেও যাতে নিতে না পারেন।

ই-জুডিশিয়ারি ও ভার্চ্যুয়াল কোর্ট প্রসারের ক্ষেত্রে মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্যসচিব এ এম জামিউল হক।

সভায় বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কাজী জাহেদ ইকবাল, মো. মোশাররফ হোসেন, এস হাসানুল বান্না প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ আইনজ ব

এছাড়াও পড়ুন:

পটিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র বাবুল কারাগারে

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার মামলায় পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও পটিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র আইয়ুব বাবুলকে (৫৯) কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হলে তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করেন। পরে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ নুরুল ইসলাম জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। 

আইয়ুব বাবুল পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের মহল্লা বাড়ির মৃত আমিনুর রহমানের ছেলে।

জানা যায়, গত বছরের ৪ আগস্ট দুপুরে পটিয়া পৌরসদর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। 

এ ঘটনায় গত বছরের ১৯ আগস্ট দুপুরে পটিয়া আল জামিয়া আল ইসলামিয়া জমিরিয়া কাসেমুল উলুমের (পটিয়া মাদরাসা) ছাত্র মো. নুরুল হাসান ৭৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ২৫০-৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলায় আইয়ুব বাবুল এজাহারনামীয় আসামি। এছাড়াও বিএনপি অফিসে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট, বিস্ফোরক ও হত্যাচেষ্টাসহ আরও তিনটি মামলার তিনি এজাহারনামীয় আসামি ছিলেন।

আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুর রশিদ সমকালকে বলেন, ‘পটিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র আইয়ুব বাবুল হাইকোর্ট থেকে ৮ সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে ছিলেন। মঙ্গলবার নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে বিচারক তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আইয়ুব বাবুল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা একাধিক মামলার আসামি।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পটিয়া পৌরসভা নির্বাচনে পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. আইয়ুব বাবুল নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রথম বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভোট পেয়েছিলেন ১৪ হাজার ৮৩৬টি। অন্যদিকে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপির প্রার্থী নুরুল ইসলাম সওদাগর পেয়েছিলেন ১ হাজার ৪৯৪ ভোট। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শ্রম আদালতে ঝুলছে ২২ হাজার মামলা
  • মাওলানা রইস হত্যার বিচার দাবি জানিয়ে ১০২ নাগরিকের বিবৃতি
  • বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও কিশোর গ্যাংয়ের মামলায় আসামিপক্ষে সরকারি আইনজীবীদের না দাঁড়ানোর নির্দেশ
  • চিন্ময় দাসের জামিন স্থগিতের আদেশ প্রত্যাহার, রোববার ফের শুনানি
  • চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন, শুনানি হতে পারে রোববার
  • আনিসুল-সালমান-মামুন রিমান্ডে, নতুন মামলায় গ্রেপ্তার আতিক
  • আবারও নিরপরাধ দাবি হিটু শেখের, ভিন্ন কথা সাক্ষীদের
  • কিউআর কোডসহ অনলাইন যাচাই ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় পদক্ষেপ নিতে কমিটি গঠনের নির্দেশ
  • মেরাদিয়ায় পশুর হাট বসানো যাবে না: হাইকোর্ট
  • পটিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র বাবুল কারাগারে