সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন একটি ‘জবাবদিহিহীন জায়গা’
Published: 28th, April 2025 GMT
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আইনজীবীদের এক মতবিনিময় সভায়। এই প্রশাসন জবাবদিহিহীন একটি জায়গা বলেও অভিযোগ তোলা হয়েছে। এর পাশাপাশি বলা হয়েছে, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা হওয়ার পর প্রায় তিন মাস হতে চললেও ছোটখাটো সংস্কার প্রস্তাবও বাস্তবায়ন করা হয়নি। অথচ আইন ও সংবিধান সংশোধন ছাড়াই অনেক সংস্কারকাজ প্রশাসনিক পদক্ষেপের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
‘বিচারব্যবস্থা সংস্কার ও জরুরি করণীয়: প্রসঙ্গ সুপ্রিম কোর্ট’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা গতকাল রোববার বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। এই সভার আয়োজক বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)।
সভায় বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানিম হোসেইন শাওন বলেন, গত ৩১ জানুয়ারি সংস্কার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর তিন মাস হতে চলল। এই সময়ে অভিজ্ঞতা খুব আশাপ্রদ নয়। কারণ, ছোটখাটো উদ্যোগগুলোর বাস্তবায়নও এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, প্রতিবেদনের মধ্যে অনেক কিছু খুব ছোটখাটো প্রশাসনিক পদক্ষেপের মাধ্যমে ঠিক করা সম্ভব এবং খুব কম সময়ের মধ্যে এগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এগুলোর জন্য সংবিধান সংশোধন করা, নির্বাচিত সরকারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। কিছু অংশীজনের সদিচ্ছা থাকলে খুব সহজেই এসব কাজ করা সম্ভব।
সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসন সবচেয়ে বেশি অস্বচ্ছ এবং জবাবদিহিহীন একটা জায়গা বলেও
অভিযোগ করেন আইনজীবী তানিম হোসেইন। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসন কতটা অস্বচ্ছ, সেটার একটা লক্ষণ হলো বেঞ্চ পুনর্গঠন।
কীভাবে বেঞ্চ পুনর্গঠন হয়, জানা যায় না। এই মুহূর্তে সুপ্রিম কোর্টে কজলিস্টে (কার্যতালিকা) কয়েকজন জজের (বিচারকের) বেঞ্চ নেই কেন, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি।
তানিম হোসেইন বলেন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অনেকে মনে করেন, তাঁরা প্রশিক্ষণের ঊর্ধ্বে। তাঁরা অপমানিত বোধ করেন যদি বলা হয়, প্রশিক্ষণ নিতে হবে। এ রকম কিছু প্রস্তাব সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে আছে।
মতবিনিময় সভার সঞ্চালক ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন। তিনি বলেন, খুব সাধারণ বিষয়গুলোও সমাধান করা যাচ্ছে না। অনেক কিছুর জন্য হয়তো আইনি সংস্কারের প্রয়োজন নেই। অতীতে দেখা গেছে, এ ধরনের সংস্কারপ্রক্রিয়ায় আইনজীবীরাই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরাই পরিবর্তন চান না। একধরনের চর্চায় অভ্যস্ত হয়ে আছেন। এখন আরেকটা নতুন সুযোগ এসেছে পরিবর্তন আনা যাবে কি না, তা নিয়ে একত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এবং কাজ করার।
সংস্কার কমিশন সুচিন্তিত ও সুনির্দিষ্টভাবে সুপারিশ করেছে উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশনা ইমাম বলেন, সুপারিশের মধ্যে অনেকগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে, যদি বাস্তবায়ন করা যায়। যদি বার ও বেঞ্চের সৎ ইচ্ছা থাকে, তাহলে অনেকগুলো সমস্যা সমাধানের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া যাবে। দুর্ভাগ্যজনক হলো সব সময় হয়তো সেই সদিচ্ছা থাকে না।
বিভিন্ন আইন ও অধ্যাদেশ সংশোধনের বিষয়ে রাশনা ইমাম বলেন, তড়িঘড়ি করে সংশোধন করলে হবে না। সংশোধনগুলো করার আগে সব অংশীজনের সঙ্গে পর্যাপ্ত আলোচনার মাধ্যমে সংশোধন করা উচিত। না হলে বাস্তবায়নে নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের চর্চা ও পদ্ধতির অধঃপতন ঘটেছে বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো.
ই-জুডিশিয়ারি ও ভার্চ্যুয়াল কোর্ট প্রসারের ক্ষেত্রে মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্যসচিব এ এম জামিউল হক।
সভায় বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কাজী জাহেদ ইকবাল, মো. মোশাররফ হোসেন, এস হাসানুল বান্না প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা যেভাবে পড়বেন
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের সুবিধার জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ পঞ্চম পর্বে থাকছে বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ বিষয়ে প্রস্তুতির পরামর্শ। পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী রিয়াজুর রহমান।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ মূলত আইনজীবীদের পেশাজীবনের অনুসরণীয় বিধিমালা। এ আইন থেকে আইনজীবী তালিকাভুক্তি লিখিত পরীক্ষায় দুটি প্রশ্ন আসবে। উত্তর দিতে হবে একটি। নম্বর থাকবে ১০।
প্রশ্নপত্রের মানবণ্টন দেখেই বোঝা যাচ্ছে আইনটি কেমন হতে পারে। মূলত বার কাউন্সিলের গঠন, আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা এবং একজন আইনজীবী হিসেবে সমাজের প্রতি, মক্কেলের প্রতি, সহকর্মীদের প্রতি যেসব দায়িত্ব পালন করতে হবে, তা এ আইনে বলা হয়েছে। বাস্তবধর্মী ও পেশাজীবনে অতি চর্চিত একটি আইন হলো বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২। এ আইন থেকে বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা করলে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।
যেমন বার কাউন্সিল কীভাবে গঠিত হয়, বার কাউন্সিলের কার্যবালি কী, সদস্যরা কীভাবে নির্বাচিত হন, কতগুলো কমিটি রয়েছে, কমিটির কাজ কী কী—এগুলো পড়তে হবে। অনেকেই আছে বার কাউন্সিল ও বার অ্যাসোশিয়েশনের মধ্যে পার্থক্য বোঝেন না। এটি ভালো করে রপ্ত করতে হবে। এমন প্রশ্ন হরহামেশা পরীক্ষায় আসে।
এ ছাড়া বার ট্রাইব্যুনালের গঠন ও কার্যাবলি, আইনজীবীদের পেশাগত অসদাচরণের জন্য কী কী ধরনের শাস্তি রয়েছে, বার কাউন্সিল কি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে সুয়োমোটো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে—বিষয়গুলো কোনোভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না। অনুচ্ছেদ ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩২ এবং বিধি ৪১, ৪১ক ও ৫০–এ এসব বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। সেগুলো ভালো করে পড়তে হবে। অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা, একজন আইনজীবী হিসেবে আরেক আইনজীবীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তর জানতে হবে। এসব বিষয় থেকে নিয়মিত প্রশ্ন আসে।
পেশাগত বিধি অংশে রচনামূলক প্রশ্ন আসতে পারে। যেমন পেশাগত বিধি এবং নীতিমালার আলোকে আদালতের প্রতি, মক্কেলের প্রতিসহ আইনজীবীদের প্রতি ও জনসাধারণের প্রতি একজন আইনজীবীর দায়িত্ব ও কর্তব্য পর্যালোচনা করতে বলা হয়। বর্তমান ঢাকা বারসহ বেশ কয়েকটি বার অ্যাসোশিয়েশনে এডহক কমিটি রয়েছে। এডহক বার কাউন্সিলের গঠন ও ফাংশনস সম্পর্কে প্রশ্ন আসতে পারে। এগুলো ভালো করে পড়তে হবে।
অনেক সময়ে আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরসংক্রান্ত মুসাবিদা করতে দেওয়া হয়। তাই এই মুসাবিদা নিয়মিত অনুশীলন করবেন। মনে রাখবেন, মামলার মুসাবিদা ও আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগের মুসাবিদার ধরন কিন্তু এক নয়। তাই যেকোনো ভালো একটি বই থেকে ফরমেটটি দেখে নেবেন এবং অনুশীলন করবেন। একই সঙ্গে বিগত কয়েক বছরের প্রশ্ন সমাধান করবেন। এ আইন থেকে বিগত বছরের প্রশ্ন রিপিটও হয়।
একটি বিষয় মনে রাখবেন, আইনটি সহজ বলে অবহেলা করার সুযোগ নেই। কারণ, কৃতকার্য হওয়ার জন্য এই ১০ নম্বর অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে।